বাড়ির গেটের এদিক ওদিক সব দিকে ভালো করে খুঁজে কোথাও কলিংবেলের সুইচ পেল না ফাহিম। গ্রামের কোনো বাড়ির সদর দরজায় কলিংবেল নেই। ফলে শহর থেকে আসা ফাহিম অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়লো। সে এসেছে তার ফুফুর বাড়ি। এখানে তার ফুফা-ফুফু ও সমবয়সী ফুফাতো ভাই হাসিব থাকে। বার্ষিক পরীক্ষার পর বাবা-মাকে রাজি করিয়ে গ্রামে বেড়াতে এসেছে। অনেকক্ষণ পর গেটে হাত দিয়ে টোকা দিল। পর পর কয়েকটা টোকা দিতেই হাসিব এসে গেট খুলে দিলো। হাসিব ফাহিমকে দেখেই সালাম দিয়ে বললো, ‘আরে ফাহিম, কখন এসেছো? তুমি তো বাসস্ট্যান্ড নেমে আমাকে ফোন দেয়ার কথা ছিল? আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম।’
‘কি চমকে দিলাম তো! আমিও একা একা আসতে পারি দেখলে তো!’ বললো ফাহিম। ভাইপো’কে কাছে পেয়ে হাসিবের আম্মু রাশিদা বেগম আবেগে গলা জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন। খোঁজ নিলেন ফাহিমের মা-বাবার। ফাহিম কখনো একা গ্রামে আসেনি যতবার এসেছে বাবা-মার সাথে। তবে দুই-তিন দিনের বেশি কখনো থাকেনি। তাই কখনো গ্রামটাকে ভালো করে দেখা হয়নি। তাই এবার একাই আগে চলে এসেছে যাতে গ্রামের বন্ধুদের সাথে সময়টা উপভোগ করতে পারে।
একরাশ অভিমান নিয়ে ফাহিম বললো, ‘প্রায় আধা ঘণ্টা হতে চলছে আমি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কলিংবেল না থাকায় কী করবো ভেবে না পেয়ে হাত দিয়ে দরজায় আঘাত করছি। আচ্ছা, একটা কলিংবেল লাগাতে পারেন না আপনারা?’ হাসিব হাসছে, সেই সাথে সবাই হাসছে। তাদের হাসি দেখে ফাহিমের অভিমান যেন আরো বেড়ে গেল। অভিমান ভাঙাতে হাসিব বললো, ‘শোন! আমাদের গ্রামে এখনো শহরের মতো কলিংবেলের প্রচলন শুরু হয়নি। তবে এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা আছে, তোমার জানা না থাকার কারণে একটু কষ্ট করতে হলো।’ আচ্ছা উত্তম ব্যবস্থাটা কী বল শুনি!’ জানতে চাইলো ফাহিম। কোলাহল মুক্ত গ্রামের পরিবেশে কলিংবেলের পরিবর্তে মহান আল্লাহ তায়ালার শিখানো পদ্ধতি আমল করলে এক দিকে সমস্যার সমাধান হয়, অপর দিক দিয়ে নেকিও অর্জন হয়।
ফাহিম তো শোনে তাজ্জব বনে গেল, কুরআনে কী এর সমাধান আছে! হ্যাঁ আছে শোনো তাহলে। আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআনের সূরা নূরের ২৭ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের বাড়ি ব্যতীত অন্য কারো বাড়িতে অনুমতি ছাড়া ও সালাম না দিয়ে প্রবেশ করবে না। এটা তোমাদের জন্য উত্তম পদ্ধতি, আশা করা যায় তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।”
আমাদের প্রিয় নবী (সা:) কারো বাড়ি গেলে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে অনুমতি চাইতেন, বাড়ির ভেতর থেকে কোনো সাড়া না এলে পরপর তিনি তিনবার সালাম দিয়ে অনুমতি চাইতেন। এরপরও যদি কোনো সাড়া না পেতেন তাহলে ফিরে আসতেন।
আল্লাহর দেয়া এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই কলিংবেল সমস্যার সমাধান হয়। কলিংবেল বাজালে হঠাৎ করে একটা শব্দ তৈরি হয় এতে করে পরিবেশের শব্দদূষণ হয় এবং বাড়িতে ঘুমন্ত ছোট শিশু থাকলে তাদেরও ঘুম ভেঙে যায়। কে কলিংবেল বাজালো তা দেখার জন্য গেটের ছিদ্রপথে চোখ রাখতে হয়। কিন্তু সালামের প্রচলন থাকলে শব্দ দূষণরোধ করা যায়। সেই সাথে মানুষের কণ্ঠ শুনে আন্দাজ করা যায়- কে এলো। এর ফলে অন্দরে থাকা পর্দানশীন মহিলারাও নিজেদেরকে অতিথি আপ্যায়নে সহজেই প্রস্তুত করতে পারেন। ফাহিম কথাগুলো যতই শুনছে ততই আশ্চর্য হচ্ছে।
‘আসলেই তো আল-কুরআনের এই পদ্ধতি সর্বোত্তম পদ্ধতি এবং তা বিজ্ঞানসম্মত।’ বললো ফাহিম। হাসিব মাথা নেড়ে বললো, ‘শুধু এই পদ্ধতিই না, প্রকৃতপক্ষে আল-কুরআনের প্রতিটি বিধানই মানুষের বাস্তব জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক আর এসব জানার জন্য আমাদের উচিত অর্থসহ আল-কুরআন পড়া।’ ‘ইয়েস, ঠিক বলেছো।’ সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো ফাহিম।

Share.

মন্তব্য করুন