হাসমতের দুটো গাই গরু ছিল। দুটোতে যে দুধ দিত তা বেচে কোনমতে সংসার চলতো। কিন্তু সচ্ছল হতে যা লাগে, সে টাকাটা তার থাকে না। হাসমতের বউ একদিন বুদ্ধি দিলো, ভালো জাতের একটা গরু কিনে আনতে। যেসব গরু দশ বারো কেজি দুধ দেয় তেমন গরু। হাসমত চিন্তা করে নিলো। শেষে ছোট গাই দুটো হাটে বেচে, ভালো একটা ইয়া মোটা গাভী কিনে ফেললো।
যেই কথা সেই হলো কাজ। সত্যি সত্যি গরুটা প্রতিদিন দশ কেজি করে দুধ দিতে শুরু করলো। দুধ বেচা টাকা দিয়ে হাসমতের সংসারটা ভালোই চলতে লাগলো। হাসমত বেশ সচ্ছল অনুভব করলো। কিন্তু হলো বিপদ। হাসমত যেদিন হাট থেকে গরুটা কিনে এনেছিল সেদিনই গরুটা মাতবরের চোখে পড়ে যায়। তারপর মাতবর যখন শুনতে পেল, গরুটা দশ বারো কেজি করে দুধ দিচ্ছে, তখনতো লোভে তার জিভ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। হিংসেতে গা জ্বললো।
হাসমতের পাড়ার মতলব আলী ছিলো মাতবরের চেলা। সে মাতবরকে বুদ্ধি দিলো, সে যেন হাসমতের গরুটা কিনে ফেলে। মাতবর মতলবের কথা মতো হাসমতের বাড়ি গিয়ে হাজির। হাসমত তো গন্যি মান্যি লোক দেখে চেয়ার এগিয়ে দিলো। কিন্তু মাতবর বললো অন্য কথা- হাসমত শুনলাম তোমার গরুতে দশ বারো কেজি করে দুধ দিচ্ছে?
হাসমত হাসতে হাসতে বললো, জি জনাব খোদার ফজিলতে দুধ ভালোই দেয়। আপনি বরং এক গ্লাস তাজা গরম গরম দুধ খেয়ে যান। মাতবর বললো- না না হাসমত মিয়া, আমিতো এক গ্লাস দুধ খেতে আসিনি, এসেছি দুধ দেওয়া গরুটা নিতে।
হাসমত মিয়া ‘থ’ মেরে দাঁড়িয়ে গেল। বলেন কি হুজুর! আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন?
– না না, ঠাট্টা আমি করছি না। হাসমত তোমার গরুটা আমার পছন্দ হয়েছে। দেখ কেমন চুপচাপ হাসিখুশি গরু। দুধও ভালো দেয়। শুনেছি কাউকে ঢিশও মারে না।
– জি জনাব, খুব ভালো গরু। হাটে গেলে এমন গরু আপনিও কিনতে পারেন।
– মাতবর বলল, না না হাসমত- হাটে আর কষ্ট করে যেতে চাই না, তোমার গরুটাই আমাকে দাও।
শুনে হাসমতের মাথায় বাজ পড়লো।
– বলেন কি হুজুর!
– না না এমনি এমনি গরু নিতে চাই না, ঐ যে টাকা দিয়ে তুমি গরুটা কিনে এনেছো সে টাকাটাই দেব, এক লক্ষ টাকা। এই কথা বলে মাতবর হাঁক দিলো- কইরে মতলব, গরুটা খুলে নে আর টাকাটা হাসমতের হাতে দিয়ে দে।
হাসমত গরুটার গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বলল। হুজুর এটা আমি পারবো না, আপনি আমারে ক্ষমা করেন। মাতবর চোখ মুখে রাগ রাগ ভাব এনে গরুটার দড়ি ধরে বললো- অন্যায় তো করছিনে, টাকা দিয়ে গরু কিনছি। কি বলিস মতলব? মতলব বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে ফেললো। জি জনাব।
ইতোমধ্যে পাড়ার লোকজন জুটে গেছে- সবাই মাতবরকে গরুটা না কেনার অনুরোধ করলো। কিন্তু মাতবর কারো কোন কথা শুনলো না। গরুটার দড়ি ধরে হ্যাঁচকা টান দিলো। কিন্তু গরু নড়ে না। মতলব মিয়া এক বান্ডিল টাকা, হাসমতের হাতে জোর করে ধরিয়ে দিলো। হাসমতের হাত থেকে টাকাটা আলগোছে পড়ে গেল।
এদিকে কিন্তু গরু নড়ে না। মাতবর খেঁকিয়ে ওঠে, এই মতলব এদিকে আয় গরুকে চাবুক মার। পাড়ার কারো অনুরোধ না রেখে মাতবর গরুর দড়ি ধরে টানতে শুরু করলো। এ দিকে মতলব মিয়া লাঠি দিয়ে যেমনি আঘাত করলো আর অমনি গরুটা মাতবরের কোমর বরাবর একটা বড় রকমের ঢিশ দিয়ে দিলো। আর যায় কোথায়! ঢিশ খেয়ে গরুর দড়ি ছেড়ে কাদা আর গোবরের মধ্যে হুড়মুড় করে পড়ে, কোঁ-কোঁ করে কঁকাতে লাগলো। মতলব মিয়া দৌড়ে গিয়ে মাতবরকে তুলতে গেল আর অমনি গরুটা মতলব মিয়াকেও কোমর বরাবর দিলো ইয়া বড় এক ঢিশ, দু’জনই গোবর আর কাদায় মাখামাখি। লোকজন হাসবে না কাঁদবে। সম্মানী লোক, সবাই মিলে দু’জনকে কোন মতে তুলে আনলো। কিন্তু কোমরের জরুরি চিকিৎসা দরকার, তাই দু’জনকে ভ্যানগাড়িতে তোলা হলো। ভ্যানগাড়িতে যেতে যেতে মাতবরের কণ্ঠে শোনা গেল,
– হাসমত আমি তোর গরুকে জেল খাটাবো। ও গরু আমার দরকার নাই ও একটা দুষ্টু গরু।
দুঃখের মাঝেও হাসমতের মুখ থেকে হাসি বেরিয়ে এলো।

Share.

মন্তব্য করুন