অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের ঘটনা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমেই অনন্য কীর্তি গড়েন পাকিস্তানের তরুণ পেসার মোহাম্মদ হাসনাইন। লাহোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ছিল সেটি। আর হাসনাইনের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন ১৯ বছর বয়সী এ পেসার। আর এর মাধ্যমে ঢুকে যান রেকর্ড বইয়ে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম বয়সী বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড এখন এই তরুণ গতি তারকার দখলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবের পর থেকেই গতি দিয়ে নজর কাড়তে থাকেন এই ডানহাতি পেসার। এ বছর মার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে পাকিস্তান বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে বিশ্রাম দিলে দলে সুযোগ পান উঠতি পেসার হাসনাইন। এরপর বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে ইংল্যান্ড সফরেও ছিলেন দলে। ছিলেন পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলেও। যদিও মোহাম্মাদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কারণে বিশ্বকাপে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি।
গত মাসে পাকিস্তান সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলে ডাকা হয় হাসনাইনকে। আর প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেন হাসনাইন। সেদিন তার বয়স ছিল ১৯ বছর ১৮৩ দিন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড এটি।
ছোটদের বড় কীর্তি । হারুন হাসনাতইনিংসের ১৬তম ওভারের শেষ বলে রাজাপাকসাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন হাসনাইন। নিজের পরের ওভারের প্রথম দুই বলে তুলে নেন দাসুন শানাকা ও শেহান জয়াসুরিয়াকে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নবম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন এই তরুণ। যদিও তার রেকর্ডের দিনে ম্যাচটি জিততে পারেনি পাকিস্তান। লঙ্কানদের কাছে তারা হেরেছে ৬৪ রানে।
বয়সের হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাট্রিকের রেকর্ড দখল করলেন হাসনাইন। তবে সব সংস্করণ মিলিয়ে তিনি দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ বোলার। সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে এই রেকর্ড আরেক পাকিস্তানির। তিনি আকিব জাভেদ। ১৯৯১ সালে শারজায় ভারতের বিপক্ষে ১৯ বছর ৮১ দিন বয়সে হ্যাটট্রিক করেছিলেন পাকিস্তানের পেসার আকিব জাভেদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ডটি তাই তারই রয়ে গেল। আকিব জাভেদের হ্যাটট্রিকটি ছিলো ওয়ানডেতে।
সেই ম্যাচটি ছিলো উইলস ট্রফির ফাইনাল। আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৬২ রান তোলে ইমরান খানের পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে ভালোই শুরু করেছিল ভারত, ১ উইকেটে ৪৭ রান তোলে তারা; কিন্তু সেখান থেকে পরপর তিন বলে রবি শাস্ত্রী, অধিনায়ক আজহারউদ্দিন ও শচীন টেন্ডুলকারকে আউট করেন আকিব জাভেদ। তিন ব্যাটসম্যানই এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন। এই আঘাতের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ভারত। ৭২ রানে ম্যাচ হারে তারা। আকিব জাভেদ সেদিন নিয়েছিলেন ৩৭ রানে ৭ উইকেট। ওয়ানডেতে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ডও সেদিন গড়েছিলেন আকিব। পরে সেই রেকর্ড ভেঙেছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন (৭/৩০)। বর্তমানে রেকর্ডটি শ্রীলঙ্কারই সাবেক পেসার চামিন্দা ভাসের দখলে (৮/১৯)।
ছোটদের বড় কীর্তি । হারুন হাসনাতকম বয়সী বোলারদের হ্যাটট্রিকের তালিকায় একটি জায়গায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে শীর্ষে। সেটি ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত সংস্করণে। হ্যাঁ, টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সী বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটি বাংলাদেশের অলক কাপালির দখলে। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯ বছর ২৪০ দিন বয়সে হ্যাটট্রিক করেছিলেন কাপালি। নিয়মিত বোলার ছিলেন না কখনোই। দলের মূল বোলাররা উইকেট নিতে ব্যর্থ হলে ব্রেক থ্রুর আশায় মাঝেমধ্যে অধিনায়ক বল তুলে দিতেন। ডান হাতে লেগস্পিন করতেন কাপালি। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের শেষ দিকে সপ্তম বোলার হিসেবে কাপালিকে ডাকেন অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ। ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারের শেষ দুই বলে পাকিস্তানের পেসার সাব্বির আহমেদ ও লেগস্পিনার দানিশ কানেরিয়াকে তুলে নেন অলক। পরের ওভারত করতে এসে প্রথম বলেই ফেরান ওমর গুলকে। পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হয়ে যায় এরই সাথে। ওই ইনিংসে অলক বলই করেছিলেন ওই ১৩টিই। যদিও ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরে যায় ৯ উইকেটের ব্যবধানে। তবে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাটট্রিক করার সেই রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি। আরেকটি বিষয় জানিয়েছে রাখি এখানে, টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করেছেন এমন বোলারদের মধ্যে অলক কাপালিই সবচেয়ে কম উইকেটের মালিক। ১৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে তার উইকেট সংখ্যা ৬টি।

Share.

মন্তব্য করুন