স্কুল থেকে ফেরার পথে সুমাইয়া হঠাৎ পথের বাঁকে থমকে দাঁড়াল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে ময়লার ডাস্টবিনের দিকে। মধ্যবয়সী এক মহিলার সাথে সুমাইয়ার মতো একটা ছোট মেয়ে। গায়ে ময়লা ছেঁড়া ফ্রক, মাথার চুলগুলো এলোমেলো। একটা পলিথিনের ভেতর থেকে কয়েকটা বাসি রুটি সংগ্রহ করে তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে। মেয়েটা কত অসহায় হলে এমন ময়লা থেকে খাবার তুলে খেতে পারে! আল্লাহ আমাদের যদি তাদের মতো করে দেন তাহলে কি হবে? দৃশ্যটা দেখে এসব কথা ভাবতেই সুমাইয়ার দুই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল।
বাববার আম্মুর কথা মনে পড়ছে। রাত থেকে আম্মু অসুস্থ থাকায় সকালে পরোটার সাথে সবজি দিয়ে নাস্তা করতে বলেছিলেন। কিন্তু সুমাইয়া হালুয়া ছাড়া পরোটা বা রুটি খাবে না। সবজি খেতে তার ভালো লাগে না। এ নিয়ে আম্মু একটু রাগ করেছেন। তিনি অভিমান করে বলেছেন, ‘দেশে অনেক মানুষ আছে এক টুকরো রুটি খেতে পায় না। তারা রাস্তায় ডাস্টবিন থেকে পচা-বাসি খাবার কুড়িয়ে খায়। আর তুমি কিনা পরোটার সাথে সবজি দিয়েছি বলে খেতে চাচ্ছো না! যদি তোমার জন্ম ওদের কোনো পরিবারে হত তাহলে এইটুকু খাবারের জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে বা ডাস্টবিন থেকে পচা-বাসি খাবার কুড়িয়ে খেতে হতো।’ কথাগুলো শুনে আম্মুর ওপর তখন রাগ হয়েছিল। সে জন্য সকালে নাস্তা না করেই স্কুলে এসেছে সুমাইয়া। এখন এই দৃশ্য দেখে আম্মুর কথা বেশি মনে পড়ছে। সুমাইয়া ভাবছে নিশ্চয় সকালের আচরণে আম্মু অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আম্মু তো সবসময় ভালো খাবারই খেতে দেন। কত কষ্ট করে রান্না করেন অথচ আমরা তা না বুঝে শুধু শুধু জেদ করি। এটা খাব না ওটা খাব না বলে খাবার নষ্ট করি। এই সব ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে চলে আসল। কলিংবেল বাজাতেই আম্মু দরজা খুলে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তুমি না খেয়ে স্কুলে গেলে আমার কষ্ট হয় না?’ সুমাইয়ার দুই চোখ তখন ছলছল করছে। আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলছে, ‘সরি! আম্মু আমি তোমাকে সকালে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমাকে মাফ করে দাও।’ আম্মু বিষয়টা আঁচ করতে পেরে মেয়ের কপালে চুমো খেয়ে বললেন, ‘শোনো একবার আবু হুরায়রা (রা) কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তখন খাসির ভুনা গোশত খাচ্ছিলো। তারা তাকে খেতে ডাকলো কিন্তু তিনি আফসোস করে বললেন, নবী (সা) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তৃপ্তি সহকারে পেট ভরে যবের রুটিও খেতে পাননি। এই বলে তিনি না খেয়ে চলে গেলেন।’ (সহীহুল বুখারী হাদিস নং ৫০১২)। ‘আর নবীজি কখনো কোনো খাবারকে মন্দ বলেননি।’ (সহিহুল বুখারী হাদিস নং ৫০০৭)। সুমাইয়া মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। সকালের ঘটনার জন্য সে অনুতপ্ত। সে ভালো মেয়ের মতো ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো, সামনে কয়েক পদের তরকারি ও ভাত। টেবিলের এক কোণে সকালের সেই পরোটা ভাজি এখনো পড়ে আছে। সে পরোটা আর ভাজির বাটিটা টেনে কাছে নিয়ে খেতে শুরু করলো।

Share.

মন্তব্য করুন