এই…এই মুন্না কখন মিলাদ খেতে দিবে রে?
এই তো, নবীজির জীবনী বন্দনা শেষ হলে।
জীবনি বন্দনা? তুই যে কেমন কথা বলিস না! বল জীবনী আলোচনা।
তোর কথা-বার্তার ঠিক-ঠিকানা নেই! শিউলি খ্যাট করে মুন্নার কথাকে ধরে বসলো।
মুন্না একটু নরম স্বভাবের, নিজের ওপর আস্থা কম। সে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, কেন এভাবে বলছিস? ঠিকই তো আছে!
লায়লা মুন্নার গায়ে হাত রেখে বলল, কাঁদিসনে। শিউলি তুই না একটু বেশি বেশি কথা বলিস!
এই তোরা থাম তো! সজল হাত উপরে তুলে বলল, ভিতরে নবীজির ওপর আলোচনা হচ্ছে আর বাইরে তোরা ঝগড়া করছিস? রাগ করে তাড়িয়ে দিলে আর মিলাদ খেতে হবে না! চুপচাপ থাক একটু পরেই জিলেপি খেতে দিবে।
এখানে কি দিবে, জিলেপি? খাট্ট বাবু বেশ ভারিক্কী চালে বলল, তোরা এখানে জিলেপি খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছিস?
সজল রেগে গিয়ে বলল, কেন, তুইও তো দাঁড়িয়ে আছিস!
খাট্ট বাবু কাছে এসে চুপি চুপি বলার মতো করে বলল, আরে রাগ করছিস ক্যান? শোন তোরা, লালকুঠি স্কুলের পিছনে যে একটা দোতলা মসজিদ আছে না? জানিস আজ ওখানে এই…আ…আ বড় বড় মিষ্টি আর সিঙ্গারা খেতে দিবে।
কি বললি? যাহ! মিথ্যে গুল মারছিস…! সত্যি… এই যে…। খাট্ট বাবু হাতটা বাড়িয়ে বলল, কার মাথা ছুঁয়ে বলবো?
শিউলি বলল, তোর নিজের মাথা ছুঁয়ে বল, পাপ হলে তোর হবে।
আচ্ছা ঠিক আছে, এই ছুঁয়ে বললাম। এখন বল তোরা এখানে জিলেপির জন্য দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি মিষ্টি সিঙ্গারা খেতে যাবি?
সাজি বলল, কিন্তু বাবু… যেতে যেতে যদি শেষ হয়ে যায়? তাহলে তো সবই শেষ, এটাও গেলো, ওটাও…।
লায়লা বলল, তাছাড়া যেতে আসতে সময় লাগবে তো, বাসায় বকবে।
ধ্যাৎ, তোর সবটাতেই ভয়! তোর মা নামাজ পড়ে না? নামাজ শেষ হওয়ার আগেই আমরা চলে আসবো।
ছোট্ট দলটা অনেক কথা তর্ক ও দোনামোনা করতে করতে সেই লালকুঠি স্কুলের পিছনের দোতলা মসজিদের দিকে হাঁটতে লাগলো।
শুক্রবারের দুপুরবেলা, রাস্তা তাই বেশ ফাঁকা ফাঁকা, ওরা নিরাপদেই বড় রাস্তা পার হয়ে হাঁটতে হাঁটতে দোতলা মসজিদে পৌঁছে গেলো।
গিয়ে জড়সড় হয়ে গেটের কাছে দাঁড়ালো, আর ভিতরে উঁকি দিতে লাগলো, মিষ্টিগুলো কোথায় রেখেছে দেখতে।
খাট্ট বাবু কিন্তু অস্বস্তির মধ্যে আছে। সকালে বাবার কাছে মিষ্টি খাওয়ার বায়না করাতে বড় ভাইয়া বলেছিলো, ‘শোন আজ লালকুঠি দোতলা মসজিদে যাবি। জোহরের নামাজ শেষে মিলাদের বড় বড় মিষ্টি পাবি সাথে সিঙ্গারাও।’
এখন যদি না দেয় তাহলে কি হবে? সজলটা তো কথা শোনাতে ছাড়বে না।
এমন সময় সজল বলল, কি রে বাবু, কি ভাবছিস? একটু ভিতরে গিয়ে দেখ না, আমরা আসতে আসতে মিলাদ শেষ হয়ে গেছে কি না?
আমি একা যাবো? তুইও চল। এই তোরা এখানে থাক, মেয়েরা মসজিদের ভিতরে যেতে নেই।
শিউলি ফোস করে উঠলো, কি বললি? জানিস না, মসজিদের ভিতরে নারী-পুরুষ উভয়ের নামাজের ব্যবস্থা থাকে?
ঠিক আছে, বেশি পণ্ডিতি না করে আপাতত এখানে দাঁড়িয়ে থাকো, আমরা দেখে আসছি। ওরা ভিতরে গিয়ে জানতে পেলো মিলাদ শেষে তবারক বিতরণ শেষ হয়ে গেছে। তবে মিলাদে মিষ্টি সিঙ্গারা ছিলো কিনা সেটা জানা গেলো না।
সজল রেগে গিয়ে বলল, তুই খাট্ট তো তোর মনও খাট্ট! বাসার কাছের মসজিদে জিলেপি খেলে কি হতো? এখন যে ওটাও গেলো এটাও গেলো। বেশি লোভ না তোর?
বাহ! এখন শুধু আমার দোষ দিচ্ছিস যে বড়?
তোরা না এলেই পারতি! খাট্ট বাবুর কথার জোর বেড়েছে। সে মনে মনে মিলাদ না পেয়ে খুশিই হয়েছে, মিলাদে যদি বড় বড় মিষ্টি আর সিঙ্গারা না থাকতো? অহ, তাহলে যে তার কি হতো… তার থেকে এই ভালো।
শিউলি বলল, তোদের কথা শুনে আমার আসাই উচিৎ হয়নি। এখন মার কাছে যে বকুনিটা খেতে হবে না!
সাজি বলল, শুধু কি তোকে? আমার তো ভয়েই অবস্থা খারাপ।
মুন্না বলল, জানিস, মা না আমাকে দর্জির দোকান থেকে ব্লাউজ নিয়ে যাওয়ার টাকা দিয়েছিলো, আমি খুঁজে পাচ্ছি না…। কি হবে এখন বল তো? তোরা তো জানিস মার কী রাগ…।
আমারও ভয় করছে রে! শুμবার দুপুরে আমরা সবাই একসাথে খেতে বসি। বাবা তো এতক্ষণে আমাকে না দেখে মনে হয় ঝিম মেরে বসে আছে! সব এই খাট্টাটার জন্য, বলে বাবুর মাথায় সজল একটা গাট্টা মারলো।
ছোট্ট দলটা ভেঙে যে যার বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। মুন্না তার বাড়ির সামনে এসে আর ভিতরে যাওয়ার সাহস পেলো না, চুপচাপ গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলো। হটাৎ ভিতর থেকে তার মায়ের গলা ভেসে এলো, কে ওখানে? কে রে… মুন্না? কোথায় ছিলি এতক্ষণ? দাঁড়া…আজ তোর একদিন কি আমার একদিন!

Share.

মন্তব্য করুন