কিশোর পাতা ডেস্ক
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রকাশিত চারটি সংখ্যা নিয়ে দেশব্যাপী আয়োজিত হয় জাতীয় কিশোর পাতা পাঠ প্রতিযোগিতা ২০১৯। যাচাই বাছাই শেষে সঠিক উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে দশজনকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষনা করা হয় গতমাসে।
গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯) এই প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে। পত্রিকার সহকারী সম্পাদক কবি মোস্তফা মাহাথিরের সঞ্চালনায় এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাহিত্য পত্রিকা নতুন এক মাত্রার সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মুজাহিদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রাক্তন মহাব্যবস্থাপক আলী ইমাম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খ্যাতিমান কবি ও কথাসাহিত্যিক দিলারা মেসবাহ, কবি ও গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিন এবং নব্বই দশকের অন্যতম কবি জামশেদ ওয়াজেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কিশোর পাতার নির্বাহী সম্পাদক দাইয়ান ফুয়াদ।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে কিশোর পাতার প্রকাশনা, সৃজনশীল কার্যক্রম ও বর্ণাঢ্য এই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, কিশোর পাতা আজ যে আয়োজন করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। তবে শিশুকিশোরদের জন্য এরকম কাজ আরো ব্যাপকভাবে হওয়া উচিত। কারণ শিশুকিশোররাই আমাদের আগামির ভবিষ্যৎ। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের কাজে কিশোর পাতার মতো দেশের আরো অনেক সংগঠন-সংস্থা এগিয়ে আসলে আমাদের শিশুসাহিত্যকে তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সহজ হবে। এজন্য অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, দেশের জন্য আলোকিত মানুষের কোনো বিকল্প নেই। আবদুলাহ আবু সায়ীদ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে এই কাজকে বহুদূর এগিয়ে নিয়েছেন। সারাদেশের লক্ষ লক্ষ শিশুকিশোরের কাছে তিনি পৌঁছে দিয়ে সৃজনশীল সাহিত্যকে।
কথাসাহিত্যিক দিলারা মেসবাহ বলেন, কিশোর পাতার এই আয়োজন এক কথায় অসাধারণ। আমার শরীর একটু অসুস্থ লাগছিল, মনও খারাপ ছিলো। কিন্তু এখানে এসে এই মুহূর্তে ভালো লাগছে খুব। এখানে সব কিশোরদের দেখছি; কিশোর পাতার এই আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। তারা একদম তৃণমূল পর্যন্ত এই পত্রিকা পৌঁছে দিচ্ছে এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মফস্বল থেকেও প্রতিযোগীদের তুলে এনে পুরস্কৃত করেছে। এটা দেখে ভালো লাগছে খুব। তিনি আয়োজকদের সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এরকম আয়োজন অব্যাহত রাখলে অল্প সময়ে কিশোর পাতা বয়স নির্বিশেষে সবার কাছেই প্রিয় হয়ে উঠবে।
ড. ফজলুল হক তুহিন বলেন, এদেশে কিশোর সাহিত্য খুব কম হয়নি। এই ধারাকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের মধ্যে আলী ইমাম, ফারুক নওয়াজ, আখতার হুসেন, আমীরুল ইসলাম, সেলিনা হোসেন, দিলারা মেসবাহ, ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ অন্যতম। এছাড়া আল মাহমুদ ও শামসুর রাহমানসহ আমাদের প্রধান কবি-লেখকরাও এই ধারায় কম-বেশি কাজ করেছেন। তিনি বলেন, কিশোর পাতার এই জমজমাট আয়োজন আরো বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে কিশোরদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণে। তিনি কিশোর পাতা কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি ও নতুন এক মাত্রার সম্পাদক আল মুজাহিদী বলেন, পৃথিবীব্যাপী আজ আওয়াজ উঠেছে ‘সেইভ দ্য চিলড্রেন’। আমরা আমাদের শিশুদের জন্য একটি বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে চাই। তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে আগামির পৃথিবীর জন্য।
প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদের অভিনন্দন জানাই। যারা আজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছো তোমাদের মনে রাখতে হবে, তোমাদের সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠাই এই দুঃখী বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে। তিনি বলেন, পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ চলছে। সিরিয়ার গ্রাম-শহর বিরান করে ফিরছে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী। কাশ্মীর পুড়ছে। শিশুকিশোররা একটি যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসবের কলকাঠি নাড়ছে তথাকথিত পরাশক্তিরা। তিনি বলেন, অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেবেন না।
জাতীয় কিশোর পাতা পাঠ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্নঅনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার (ল্যাপটপ, নগদ টাকা, সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট) বিতরণ করেন অতিথিরা। প্রথম পুরস্কার বিজয়ী খুলনা বর্ডার গার্ড স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাঈদুর রহমান সাঈদ, দ্বিতীয় নোয়াখালী চরবাটা খাসেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম এবং তৃতীয় ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী মুঈদ ফারদিন আলভী প্রতিযোগীদের পক্ষ থেকে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গল্পকার নুরুল আবসার রাসেল, কবি সীমান্ত আকরাম, ওয়াহিদ জামান, আতিকুর রহমান, সুফিয়ান রায়হান ও তাওহিদ আদনান প্রমুখ।

Share.

মন্তব্য করুন