[বিশ্ববিখ্যাত রুশ সাহিত্যিক লেভ টলস্টয় (জ. ৯ সেপ্টেম্বর, ১৮২৮ – মৃ. ২০ নভেম্বর, ১৯১০) ছিলেন লেখকদের লেখক। তাঁর সাহিত্য প্রতিভা ও অবিস্মরণীয় অবদানের সূর্যালোকে বিশ্ব সাহিত্য আলোকিত হয়ে আছে। তিনি ছিলেন মানবতাবাদী লেখক। তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি ঔপন্যাসিক। ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ ও ‘ আনা কারেনিনা’ উপন্যাস দু’টি টলস্টয়ের অনন্য সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় বহন করছে। এ দু’টি উপন্যাসই বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম সেরা সৃষ্টি হিসেবে স্বীকৃত। তিনি ছিলেন উনিশ শতকের রাশিয়ার অভিজাত সমাজের সদস্য তথা উঁচুতলার মানুষ। কিন্তু তাঁর সাহিত্য সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। বলা হয়ে থাকে যে তাঁর সাহিত্যে অবাস্তব বলে কিছু  নেই। যা দেখেছেন, জেনেছেন তাই সাহিত্যে এনেছেন, অভিজ্ঞতার বাইরে কোনো কিছুকে তিনি সাহিত্যে আনেননি। আমৃত্যু তিনি সৃষ্টি করেছেন বিপুল বিচিত্র সাহিত্য সম্ভার। তাঁর সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য ছিল মানব কল্যাণ ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ সাধন। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু ছোটগল্পও লিখেছেন। এ সব গল্প সাহিত্য স্রষ্টা টলস্টয়কে বিপুল সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। রাশিয়া ও রাশিয়ার বাইরের জনজীবনের ছবি অতুলনীয় নৈপুণ্য ও দক্ষতার সাথে আঁকা হয়েছে গল্পগুলোতে । তিনি ছোটদের জন্যও গল্প লিখেছেন যাতে তুলে ধরা হয়েছে নীতি ও সত্যের জয়। শিশুদের ভবিষ্যত জীবন গঠন ও তাদের অনুপ্রেরণা দানে এ গল্পগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বিখ্যাত গল্পগুলোর মধ্যে ‘ককেশাসের বন্দী’ অন্যতম। এটিকে ছোট উপন্যাসও বলা হয়ে থাকে। এতে একজন বন্দীর মুক্তির অদম্য পিপাসা চিত্রিত হয়েছে।]

ককেশাসের রুশ সেনাদলে ঝিলিন নামে এক তরুণ অফিসার ছিল। একদিন বাড়ি থেকে একটা চিঠি পেল সে। মায়ের চিঠি। মা লিখেছেঃ
“বাবা ঝিলিন! আমি বুড়ো হয়ে গেছি। যে কোনো সময় চোখ বন্ধ করতে পারি। তুই আমার কলজের টুকরো। তাই মরার আগে তোকে একবার দেখে যেতে চাই। তুই আয়, শেষ বিদায় জানিয়ে আমাকে কবরে রেখে যা। তারপর সৃষ্টিকর্তা চাইলে আমার আশির্বাদ নিয়ে আবার চাকরিতে ফিরে যাস। তবে তোর জন্য একটা মেয়ে দেখে রেখেছি। বুদ্ধিমতী, লক্ষী মেয়ে, কিছু সম্পত্তিও আছে। যদি তাকে ভালোবাসতে পারিস তাহলে বিয়ে করে বাড়িতেই থেকে যাস।”
চিন্তায় পড়ে যায় ঝিলিন। এটা ঠিক যে মা খুব বুড়ো হয়ে গেছে। দিন দিন খারাপ হচ্ছে শরীর। তার সাথে আরেকবার দেখা নাও হতে পারে। সুতরাং মাকে দেখার জন্য বাড়ি যাওয়াই উচিত। আর মেয়েটি যদি সুন্দরী হয় তাহলে বিয়ে করতে অসুবিধা কি? ঝিলিন তার কর্নেলের কাছে গেল। ছুটি মঞ্জুর করলেন তিনি। সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিল সে। এবার বাড়ি রওনা হওয়ার পালা। ককেশাসে তখন যুদ্ধ চলছিল। দিন বা রাত যখনি হোক না কেন, একা বা দু’ তিনজনও পথে চলাফেরা করা নিরাপদ নয়। কোনো রুশ যদি ঘোড়ায় চড়ে বা পায়ে হেঁটে দুর্গ থেকে দূরে যেত, তাহলে তাতাররা তাকে হত্যা করত কিংবা ধরে পাহাড়ে নিয়ে যেত। তাই ব্যবস্থা করা হয়েছিল যে সপ্তাহে দু’দিন সৈন্যরা সরকারী মালামাল ও যাত্রীদের এক দুর্গ থেকে আরেক দুর্গে পৌঁছে দেবে।
গ্রীষ্মকাল। সকাল বেলায় মাল বহনকারী সব ঘোড়ার গাড়ি ও যাত্রীদের কাফেলা বা ব্যাগেজ ট্রেন রওনা হল। পাহারাদার সৈন্যরা রাস্তা ধরে মার্চ করে চলেছে। ঝিলিন ছিল ঘোড়ার পিঠে। তার জিনিসপত্র একটা ঘোড়ার গাড়িতে রয়েছে। ব্যাগেজ ট্রেনের সাথে চলছে সেটা। ষোল মাইল পথ যেতে হবে তাদের। ব্যাগেজ ট্রেনের গতি ছিল মন্থর। কখনো সৈন্যরা থেমে দাঁড়াচ্ছিল, কখনো কোনো ঘোড়ার গাড়ির একটি চাকা খুলে আসছিল, কখনো বা কোনো ঘোড়া আর এগোতে চাইছিল না। আর এ রকম প্রতিটি ঘটনার সময়ই সবাইকে থেমে অপেক্ষা করতে হচ্ছিল।
দুপুর হয়ে গেল। তখনো অর্ধেকটা পথ পেরোতে পারেনি তারা। ধুলো ওড়া, গরম একটা দিন। সূর্য খুব রেগে- মেগে তাপ ছড়াচ্ছিল। চারদিকে ঊষর খোলা সমতল ভূমি। রাস্তার পাশে কোথাও একটি গাছ এমনকি একটি ঝোপও নেই যে তার ছায়ায় তারা আশ্রয় নেবে।
ঝিলিন ছিল দলের সামনে। দাঁড়িয়ে পড়ল সে।
ব্যাগেজ ট্রেন তাকে পেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকল। এ সময় তার পিছন থেকে সংকেত শোনা গেল- সৈন্যরা আবার থেমেছে।
সে ভাবতে শুরু করল, এতক্ষণ থেমে অলস সময় কাটানোর চেয়ে নিজের মত ঘোড়ায় চড়ে এগিয়ে যাওয়াই উচিত নয় কি? আমার ঘোড়াটা ভালো। তাতাররা যদি হামলা করেও আমি তাদের কাছ থেকে সহজেই পালাতে পারব। সুতরাং অযথা অপেক্ষা করে লাভ নেই।
ঝিলিন যখন এসব কথা ভাবছিল সে সময় কস্তিলিন নামে এক অফিসার তার দিকে এগিয়ে এল। বন্দুক ছিল তার কাছে। বলল-
: চল ঝিলিন, আমরা নিজেদের মত এগোই।
একদিকে তাতারদের হামলার ভয়, আরেকদিকে ক্ষিদেও পেয়েছে প্রচন্ড, তার উপর ভয়ানক গরম! একেবারে বিশ্রি অবস্থা। দেখ, আমার পোশাক ভিজে উঠেছে ঘামে।
কস্তিলিন স্বাস্থ্যবান, ভারি দেহের মানুষ। তার লাল মুখের ওপর কপাল থেকে ঘাম গড়িয়ে পড়ছিল। ঝিলিন এক মুহূর্ত ভাবল। তারপর জিজ্ঞেস করল-
: তোমার বন্দুক কি গুলিভরা?
: হ্যাঁ। জবাব দেয় কস্তিলিন।
ঝিলিন বলে-
: ঠিক আছে, তাহলে চল। কিন্তু একটা শর্ত : একত্রে থাকতে হবে আমাদের।
তারা ঘোড়ায় চড়ে গল্প করতে করতে রাস্তা ধরে চলতে থাকে। তবে দু’জনের চোখই বারবার রাস্তার দু’পাশ চেয়ে দেখে। সমতল জায়গা বলে অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছিল তারা। সমতল ভূমি পেরনোর পর দেখা যায় সামনে একটি উপত্যকার ভিতর দিয়ে পথটি চলে গেছে। দু’পাশে পাহাড়। ঝিলিন বলে-
: আমাদের এখন পাহাড়ের ওপর উঠে যাওয়াই ভালো।
তাহলে চারপাশ দেখা যাবে। নইলে কিছু বোঝার আগেই তাতাররা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে। কিন্তু কস্তিলিন বলে-
: দরকার কি! চল, আমরা এগিয়ে যাই।
ঝিলিন রাজি হল না। বলল-
: না, ইচ্ছে হলে তুমি এখানে থেকে অপেক্ষা করতে পার, কিন্তু আমি চারপাশটা একটু দেখে আসতে যাচ্ছি।
সে ঘোড়া বাম দিকে ঘুরিয়ে পাহাড়ের উপরের দিকে রওনা হল। তার ঘোড়াটা শিকারের কাজে ব্যবহার করা হত। সে এটাকে একটা ঘোড়ার পাল থেকে শাবক অবস্থায় একশ’ রুবল দিয়ে কিনেছিল এবং নিজেই প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। ঘোড়াটা যেন ডানায় ভর করে ঝিলিনকে ওপরের দিকে নিয়ে চলল । পাহাড়ের চূড়ায় উঠে গেছে প্রায়, তখনি সামনে জনা তিরিশেক তাতারের একটি দলকে দেখতে পেল সে। একশ’ গজেরও কম দূরে ছিল তারা। দলটাকে দেখা মাত্র ঘোড়া ঘুরিয়ে ছুটতে শুরু করে ঝিলিন। কিন্তু ততক্ষণে তাতাররাও দেখে ফেলেছে তাকে। ধাওয়া শুরু করে তারা। ছুটতে ছুটতেই তারা নিজেদের বন্দুক বের করে আনে। ঝিলিন প্রাণপণে ঘোড়া ছুটিয়ে নিচে নামতে নামতে চিৎকার করে কস্তিলিনের উদ্দেশে বলতে থাকে-
: বন্দুক নিয়ে তৈরি হও ।
এদিকে ঘোড়াটার উদ্দেশ্যে বলতে থাকে সে- আমাকে এ বিপদ থেকে বের করে নিয়ে চল বাছা! হোঁচট খাসনে যেন। আমি জানি ঠিক পারবি তুই। একবার বন্দুকের কাছে পৌঁছতে পারলে হয়, তাহলে আর ওরা আমাকে বন্দী করতে পারবে না।
কিন্তু তাতারদের দেখা মাত্র কস্তিলিন তার ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে দুর্গের দিকে ছুটতে শুরু করে। সে একবার ঘোড়ার বাম পাশে আরেকবার ডানপাশে চাবুক মেরে সর্বোচ্চ গতি আদায় করে ছুটতে থাকে। পিছনে ফেলে যাওয়া ধুলোর মেঘের মধ্যে শুধু তার ঘোড়ার লেজের নড়াচড়া চোখে পড়ছিল।
পরিস্থিতি যে ভীষণ খারাপ তা বুঝতে দেরী হল না ঝিলিনের। কস্তিলিন পালিয়েছে। তার মানে বন্দুকের আশা শেষ। তার কাছে আছে শুধু তলোয়ার। এ দিয়ে কি করবে সে? কিন্তু পালাতে হবে। ব্যাগেজ ট্রেনের পাহারাদার সৈন্যদের দিকে যাওয়ার জন্য ঘোড়ার মুখ ঘোরায় ঝিলিন। কিন্তু ছয় জন তাতার তার পালাবার পথ আটকাতে ঘোড়ার পিঠে ছুটে আসছিল। তার ঘোড়াটা ভালো ছিল, কিন্তু তাতারদের ঘোড়াগুলো ছিল আরো ভালো। তাছাড়া তারা রাস্তা জুড়ে ছিল। সে ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে অন্য আরেক পথ ধরতে চাইল, কিন্তু ঘোড়াটা এত জোরে দৌড়াচ্ছিল যে তাকে থামাতে পারল না। সেটা সোজা এগিয়ে গেল তাতারদের দিকে। ঝিলিন ধূসর ঘোড়ার পিঠে আরোহী লাল দাড়িওয়ালা এক তাতারকে দেখতে পেল। লোকটি তার দিকে এগিয়ে এল, চিৎকার করে উঠল দাঁত- মুখ খিঁচিয়ে। ঝিলিন তাকে দেখে মনে মনে বলল- তোমাকে জানি আমি- শয়তানের সাক্ষাত চেলা। আমাকে ধরতে পারলে নিয়ে গর্তের মধ্যে আটকাবে এবং চাবুক মারবে। কিন্তু আমাকে জীবিত ধরতে পারবে না তোমরা। ঝিলিন খুব শক্তিশালি না হলেও সাহসী ছিল। নিজের তলোয়ার বের করে লাল দাড়ি তাতারের দিকে ছুটে যেতে যেতে সে ভাবল- হয় তাকে ঘোড়ার উপর থেকে ফেলে দেব নয় অচল করে দেব।
তখনো এক ঘোড়ার দূরত্বে থাকা তাতারটা এ সময় পিছন থেকে তাকে গুলি করে। গুলি ঝিলিনের ঘোড়াকে আঘাত করতেই সেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তাকে নিয়ে।
ঝিলিন উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে দুটো পাজি তাতার তার উপর চেপে বসেছে। তারা পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে তার দু’ হাত। তবুও হাল ছাড়ে না সে। দু’ তাতারকে গায়ের উপর থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আরো তিন তাতার ঘোড়া থেকে লাফ দিয়ে নেমে আসে। হাতের বন্দুকের বাট দিয়ে ঝিলিনের মাথায় আঘাত করতে থাকে তারা। তার চোখে আঁধার নেমে আসে, লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। তাতাররা তাকে জাপটে ধরে। দু’জন তাতার ঘোড়ার জিন থেকে বাড়তি বেল্ট এনে তার পিছমোড়া করে বাঁধা হাত ফের গিঁট দিয়ে আটকে দেয়। তারা ঝিলিনের মাথার টুপি ছুড়ে ফেলে দেয়, খুলে নেয় বুটজোড়াও। সারা শরীর তন্ন তন্ন করে তল্লাশি করে তারা , জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে । এমনকি তার টাকা-পয়স ও ঘড়িটাও কেড়ে নেয়।
ঝিলিন নিজের ঘোড়াটার দিকে তাকায়। তার পাশেই পড়েছিল বেচারা অসহায় প্রাণী। তখনো বেঁচে ছিল সেটা, পা গুলো শূন্যে ছুঁড়ছিল মরণ যন্ত্রণায়। সেগুলো দিয়ে মাটি ছোঁয়ার শক্তি ঘোড়াটার ছিল না। তার মাথায় গুলি লেগেছে, কালো রক্তে আশপাশের খানিকটা জায়গার মাটি ভিজে কাদা হয়ে গেছে।
এক তাতার জিন খুলে নেয়ার জন্য ঘোড়াটার কাছে পৌঁছে। কিন্তু তখনো সেটা পা ছুঁড়ছে দেখে কোমর থেকে ছুরি বের করে সে। তারপর ঘোড়াটার শ্বাস নালি কেটে দিতেই গলা দিয়ে বাঁশির মত আওয়াজ বেরিয়ে আসে। শেষবারের মত নড়ে উঠে নিথর হয়ে যায় প্রাণীটা।
তাতাররা ঘোড়ার জিন ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে নেয়। তারপর লাল দাড়ি তাতার তার ঘোড়ায় ওঠে, অন্যরা ঝিলিনকে তুলে দেয় তার জিনের পিছনে। সে যাতে পড়ে না যায় সেজন্য লাল দাড়ির কোমরবন্ধের সাথে তাকে বেঁধে দেয়া হয়। তারপর তাতারদের ঘোড়াগুলো দুলকি চালে ছুটে চলে তাদের গ্রামের দিকে। ঝিলিনের কিছু করার ছিল না। ঘোড়ার পিঠে একবার এদিক আবার ওদিকে গড়াচ্ছিল সে। তার মাথা গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছিল লাল দাড়ির দুর্গন্ধময় পিঠে। তাতারের পিঠ ও ঘাড় ছাড়া সামনের আর কিছুই সে দেখতে পাচ্ছিল না। তার মাথার ক্ষত থেকে রক্ত গড়িয়ে চোখের উপর এসে শুকিয়ে গিয়েছিল। জিনের উপর বসে তার অবস্থান যেমন সে পরিবর্তন করতে পারছিল না তেমনি শুকিয়ে যাওয়া রক্তও মুছতে পারছিল না। হাত দুটো এত শক্ত করে বাঁধা হয়েছিল যে তার কন্ঠার হাড় পর্যন্ত ব্যথায় টনটন করছিল।
তারা উঁচু নিচু পাহাড়ি এলাকা দিয়ে অনেক পথ এগোয়। তারপর একটি নদী পেরিয়ে কঠিন পাথুরে পথ ধরে একটি উপত্যকার দিকে এগিয়ে চলে তারা। কোথায় যাচ্ছে তা দেখার চেষ্টা করে ঝিলিন, কিন্তু রক্ত শুকিয়ে তার দু’ চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে চোখ খুলতে পারল না।
গোধূলি নেমে আসতে থাকে। তারা আরেকটি নদী পেরিয়ে পাথুরে পাহাড়ের পাশে পৌঁছে। ঝিলিন জনবসতি থেকে ওঠা ধোঁয়ার গন্ধ পায় নাকে । কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল তারা একটি আউল বা তাতারদের গ্রামে পৌঁছেছে। তাতাররা ঘোড়া থেকে নামে। তাদের ছোট ছেলেমেয়েরা দৌড়ে এসে ঝিলিনকে ঘিরে ধরে। কেউ খুশিতে চিৎকার করতে থাকে, কেউ কেউ তার গায়ে পাথর ছুড়ে মারে।
লাল দাড়ি তাতার ছোট ছেলেমেয়েদের তাড়িয়ে দিয়ে ঝিলিনকে ঘোড়া থেকে নামায়। চাকরকে ডাকে সে।
তার ডাকে সাড়া দিয়ে চিবুকের হাড় উঁচু এক রোগাভোগা তরুণ এগিয়ে আসে। তার গায়ে একটি শার্ট, তা এমন ছেঁড়াখোড়া যে বুক পুরোই উন্মুক্ত হয়ে আছে। তাকে কি যেন নির্দেশ দেয় তাতার। সে চলে যায়। ফিরে আসে শিকল আর ওক কাঠের দুটি টুকরো নিয়ে। সেই কাঠের সাথে লোহার রিং লাগানো, একটি রিঙের সাথে ছিল কব্জা ও তালা।
তাতাররা ঝিলিনের হাত একসাথে করে, তারপর পায়ে শিকল পরিয়ে দিয়ে একটি গোলাঘরের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ধাক্কা দিয়ে তাকে ভিতরে ফেলে দেয় তারা, তালা লাগিয়ে দেয় বাইরে থেকে।
ঝিলিন সারের বস্তার স্তূপের উপর গিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ নিশ্চল হয়ে থাকে সে। তারপর অন্ধের মত হাতড়ে হাতড়ে একটি নরম জায়গা খুঁজে স্থির হয়ে বসে সেখানে।

ককেশাসের বন্দী

২.
সে রাতে ঝিলিন মোটেই ঘুমাতে পারল না। এ সময় রাতগুলো খুব ছোট হয়। তাই শিগগিরই দেয়ালের এক চিলতে ফাঁক দিয়ে দিনের আলো উঁকি দিল। উঠে দাঁড়ায় ঝিলিন, ফাঁকটার কাছে গিয়ে ভেঙ্গেচুরে সেটাকে আরো বড় করে। তারপর তার ভেতর দিয়ে বাইরে তাকায়। একটি রাস্তা চোখে পড়ে। সেটা চলে গেছে পাহাড়ের পাদদেশে। ডানদিকে ছিল তাতারদের একটি কুটির। এক পাশে দুটি গাছ। আঙিনায় শুয়ে একটি কালো কুকুর ও একটি ছাগল। তাদের লেজ টেনে খেলা করছিল শিশুরা। এ সময় এক তাতার তরুণীকে দেখতে পায় সে। দীর্ঘ, ঢোলা, উজ্জ্বল রঙের একটি গাউন পরে আছে তরুণী, তার পাজামা ঢুকে আছে উঁচু বুটের কিনারার ভিতর। তার মাথার উপর ছড়ানো রয়েছে একট কোট, তার উপর সে বহন করছিল ধাতু নির্মিত বিরাট পানি ভরা এক জগ।একটি শিশুর হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিল সে। শিশুটির গায়ে একটি জামা ছাড়া আর কিছু নেই। চলার সময় তাল সামলাতে গিয়ে তরুণীর দেহে ছন্দের সৃষ্টি হচ্ছিল। পানি নিয়ে কুটিরের মধ্যে প্রবেশ করে সে। পরমুহূর্তেই গতকালের দেখা সেই লাল দাড়ি তাতার কুটির থেকে বেরিয়ে আসে। তার গায়ে একটি রেশমি টিউনিক, কোমরে রুপোর হাতলওয়ালা ছুরি আর পায়ে জুতা। মাথায় ভেড়ার চামড়ার লম্বা কালো টুপি। বাইরে এসে হাত-পা ছড়িয়ে শরীরের আড়মোড়া ভাঙ্গে সে, আঙ্গুল চালায় দাড়ির মধ্যে। কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে চাকরকে কিছু একটা নির্দেশ দিয়ে কোথায় যেন চলে যায় সে।
কিছু সময় পর ঝিলিন গোলাঘরের তালা খোলার শব্দ শুনতে পায়। লাল দাড়ি ভেতরে ঢোকে। তার সাথে একজন বেঁটে লোক। তার চোখ দুটি উজ্জ্বল কালো, গন্ডদেশ লাল, ছোট দাড়ি। তবে মুখের ভাব ছিল খুশি খুশি। সারাক্ষণই হাসছিল সে। তার পোশাক ছিল লাল দাড়ির পোশাকের চেয়েও দামি। সোনালি কাজ করা নীল রেশমি টিউনিক পরিহিত লোকটির কোমরে একটি বড় ছোরা ঝুলছে। পায়ে রুপার কাজ করা লাল মরক্কো চপ্পল, তার উপর জুতা। মাথায় সাদা ভেড়ার চামড়ার টুপি।
লাল দাড়ি বিড়বিড় করে কি যেন বলছিল। যেন সে খুব বিরক্ত। দরজার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছোরা নিয়ে খেলা করতে থাকে সে। মাঝে মাঝেই নেকড়ের দৃষ্টিতে চাইছিল ঝিলিনের দিকে। বেঁটে লোকটি ছিল চটপটে ও প্রাণবন্ত, কোথাও স্থির না থেকে সর্বক্ষণ নড়াচড়া করছিল। ঝিলিনের সামনে এসে বসে পড়ে সে, তার কাঁধ চাপড়ে দেয়। তারপর নিজের ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। দাঁত বের করে, চোখ পিটপিট করে, জিভ নেড়ে সে বারবার বলতে থাকে- ‘ ভালো রুশ’, ‘ভালো রুশ’।
ঝিলিন তার কথা বুঝতে পারে না। সে বলে চলে- পানি, আমাকে একটু পানি দাও।
লোকটি হেসে ওঠে। বলে- ‘ভালো রুশ।’ তারপর নিজের ভাষায় কথা বলে চলে।
ঝিলিন মুখ ও হাতের সাহায্যে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করে- আমাকে একটু পানি দাও।
এতক্ষণে লোকটি তার ইঙ্গিত বুঝতে পারে। সে দরজার বাইরে তাকিয়ে ডাক দেয়- দীনা!
একটি বালিকা দৌড়ে আসে। তেরো বছরের মত বয়স, হাল্কা-পাতলা, এ লোকটির মতই দেখতে। ঝিলিনের মনে হয়- বেঁটে লোকটির মেয়ে সে। তারও চোখ দুটি উজ্জ্বল, চেহারা খুব সুশ্রী। বালিকাটি একটি চওড়া হাতা লম্বা ঢোলা নীল গাউন পরে ছিল। কোমর বন্ধনী পরা ছিল না তার। তার গাউনের প্রান্তভাগ,সামনের দিক ও হাতা ছিল লাল। পরনে ছিল পাজামা ,পায়ে চপ্পল। আর চপ্পলের উপর ছিল ঊঁচু হিলের শক্ত জুতা। গলায় রুশ রৌপ্য মুদ্রার তৈরি হার। তার মাথা ছিল খালি, কালো চুলগুলো ছিল রিবন দিয়ে বাঁধা, তাতে সোনার আস্তর লাগানো ধাতু ও রৌপ্য মুদ্রার অলংকার শোভা পাচ্ছিল।
বাবা তাকে কিছু একটা বলতেই সে দৌড়ে চলে যায়। ফিরে আসে ধাতুর একটা জগ হাতে। ঝিলিনের হাতে তা দিয়ে তার সামনে বসে পড়ে সে আর অবাক চোখে তার পানি পান করা দেখতে থাকে। তার সামনে যে লোকটি পানি পান করছে সে যেন কোনো মানুষ নয়, জন্তু।
ঝিলিন পানি খাওয়া শেষ করে তার হাতে জগটি ফিরিয়ে দিতেই একটি ঘটনা ঘটে। বালিকাটি হঠাৎ ভয় পেয়ে বুনো ছাগলের মত পিছনের দিকে এমন ভাবে লাফ দেয় যে তা দেখে তার বাবা হেসে ওঠে। বাবা তাকে আবার কিছু বলতেই সে জগ হাতে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। একটু পর আবার ফিরে আসে একটি গোলাকার থালার উপর খামির ছাড়া তৈরি কিছু রুটি নিয়ে। ঝিলিনের হাতে থালাটা দিয়ে সে উবু হয়ে বসে তার সামনে। বিস্ফারিত চোখে তার খাওয়া দেখতে থাকে। খাওয়া শেষ হলে সবাই চলে যায়। তালা লাগিয়ে দেয়া হয় দরজায়। একটু পর তালা খুলে ঘরে ঢোকে আগে দেখা সে চাকরটি। ঝিলিনের দিকে চেয়ে বলে- আয়দা, মনিব, আয়দা।
বোঝা গেল সে রুশ ভাষা জানে না। ঝিলিন অনুমান করে, চাকরটি তাকে কোথাও যেতে বলছে। চাকরটিকে অনুসরণ করে ঝিলিন। পায়ের শিকলের কারণে সে খুঁড়িয়ে হাঁটে সে। খুব কষ্ট হয় তার। গোলাঘরের বাইরে এসে গোটা দশেক বাড়ির একটি তাতার গ্রাম তার চোখে পড়ে। ছোট মিনারওয়ালা একটি মসজিদও চোখে পড়ে। একটি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে জিন লাগানো তিনটি ঘোড়া , সেগুলোর লাগাম ধরে আছে তিনটি ছোট ছেলে। কালো তাতারটি বেরিয়ে আসে সেই বাড়ি থেকে । ঝিলিনকে ইশারা করে তাকে অনুসরণের জন্য। তারপর সে হেসে ওঠে, নিজের ভাষায় কি যেন বলে , ফিরে যায় বাড়ির ভিতরে।
ঝিলিন খুব সুন্দর একটি ঘরে প্রবেশ করে। ঘরের দেয়ালগুলো মাটির প্রলেপ দিয়ে মসৃণ করা। সামনের দেয়ালের পাশে উজ্জ্বল রঙের কিছু পালকের বিছানা স্তূপ করে রাখা। পার্শ্ব দেয়ালগুলো ঢেকে রাখা দামি কার্পেট ঝালরের কাজ করছে। তাতে রাখা বন্দুক, পিস্তল ও তলোয়ার। সবগুলোর বাঁটই রৌপ্য খচিত। একটি দেয়ালের কাছে পরিষ্কার মাটির মেঝেতে রাখা একটি ছোট স্টোভ। ঘরের একপাশে অনেকটা জায়গা জুড়ে পশমি চাদর বিছানো। তার উপর কম্বল এবং কম্বলের উপর কুশন পাতা। এ কুশনগুলোতে বসে ছিল পাঁচজন তাতার। বেঁটে, লালদাড়ি তাতার ও তিনজন অতিথি। তাদের সামনে একটি গোলাকার পাত্রে কেক, অন্য একটি পাত্রে গলানো মাখন ও এক জগ বুজা (তাতারী পানীয়) রাখা। তারা কেক ও মাখন খাচ্ছিল।
ঝিলিনকে দেখে বেঁটে লোকটি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কার্পেটে নয়, একপাশে খালি মেঝেতে তাকে বসার ইঙ্গিত করে সে। নিজে ফের বসে পড়ে অতিথিদের কেক ও বুজা নিতে অনুরোধ করে। চাকরটি শিকল পরা ঝিলিনকে মেঝেতে বসতে সাহায্য করে। তারপর সে নিজের জুতা খুলে বাইরে রাখা অন্যদের জুতার পাশে রেখে এসে মনিবের কাছাকাছি পশমি চাদরের উপর বসে।
তাতাররা যে যত পারল খেল। খাওয়া শেষ হলে এক মহিলা এসে সব কিছু নিয়ে যায়। তারপর সে নিয়ে আসে একটি সুন্দর গামলা ও বদনা । তাতাররা হাত ধুয়ে নামাজ আদায় করে। নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে তারা। তারপর অতিথিদের একজন ঝিলিনের সাথে রুশ ভাষায় কথা বলে-
: তোমাকে কাজি মোহাম্মদ আটক করেছে- লাল দাড়ির দিকে সে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়, তারপর বিক্রি করে দিয়েছে আবদুল মুরাদের কাছে- বেঁটে লোকটির দিকে ইঙ্গিত করে সে- সেই এখন তোমার মনিব।
ঝিলিন চুপ করে থাকে। এ সময় আবদুল মুরাদ কথা বলতে শুরু করে। হাসতে হাসতে ঝিলিনের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে বলে- সৈনিক রুশ, ভালো রুশ। অতিথি তাতারটি দোভাষীর ভূমিকা পালন করে। সে জানায়, তার মনিব তাকে বাড়িতে চিঠি লিখে মুক্তিপণ পাঠাতে বলছে। যত তাড়াতাড়ি মুক্তিপণ আসবে তত তাড়াতাড়ি সে ছাড়া পাবে।
ঝিলিন এক মুহূর্ত চিন্তা করে। তারপর জিজ্ঞেস করে-
: কত মুক্তিপণ চায় সে?
তাতাররা নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ আলোচনা করে।
তারপর দোভাষী তাতার বলে-
: তিন হাজার রুবল।
: না, আমি এত টাকা দিতে পারব না। সাফ জানিয়ে দেয় ঝিলিন।
আবদুল মুরাদ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হাত নেড়ে
ঝিলিনের সাথে কথা বলতে শুরু করে যেন সে তার
ভাষা জানে। ঝিলিন তার কথা কিছুই বুঝতে না পেরে
দোভাষীর দিকে তাকায়। দোভাষী তখন বলে-
: তুমি কত রুবল দিতে পারবে?
ঝিলিন একটুক্ষণ চিন্তা করে। তারপর বলে-
: পাঁচশ রুবল।
তার জবাব শুনে তাতাররা সবাই একসাথে দ্রুত কথা বলতে শুরু করে। আবদুল মুরাদ চিৎকার করে লাল দাড়িকে গালাগাল দিতে থাকে। তার মুখ থেকে কথা বলার সময় থুু ছিটকে বের হচ্ছিল। লাল দাড়ি চোখ নাচিয়ে আর জিভে টকটক শব্দ তুলে তার কথা শুনে যায়।
কিছুক্ষণ পর সবাই শান্ত হলে দোভাষী বলে-
: পাঁচশ’ রুবল তোমার মনিবের জন্য যথেষ্ট নয়। সে তোমাকে দুশ’ রুবল দিয়ে কিনেছে। কাজি মোহাম্মদের কাছে তোমার মনিব টাকা পায়। সে তোমাকে দিয়ে ঋণ শোধ করেছে। তিন হাজার রুবলের কমে হবে না। তুমি যদি টাকা চেয়ে চিঠি লিখতে অস্বীকার কর তাহলে তোমাকে গর্তে ফেলে চাবুক মারা হবে।
ঝিলিন চিন্তা করে। সে ভয় পেয়েছে বলে তারা যদি বুঝতে পারে তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। সে ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে দোভাষীকে বলে-
: লোকটাকে বলে দাও সে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলে আমি মুক্তিপণের জন্য চিঠি লিখব না। তাহলে সে কিছুই পাবে না। আমি তোমাদের মত কুত্তাদের ভয় পাই না, পাবও না।
দোভাষী তার কথা অনুবাদ করে শোনালে সবাই আবার
আলোচনা শুরু করে।
দীর্ঘসময় ধরে তাদের মধ্যে আলোচনা চলে।
অবশেষে আবদুল মুরাদ উঠে ঝিলিনের কাছে আসে। মাথা ঝাঁকিয়ে বলে – সাহসী রুশ! সাহসী রুশ! তারপর হাসতে হাসতে দোভাষীকে কিছু বলে। সে অনুবাদ করে ঝিলিনকে বলে- এক হাজার রুবল পেলে সে সন্তুষ্ট হবে।
কিন্তু ঝিলিন অনড়। সে বলে-
: আমি পাঁচশ’ রুবলের বেশি দিতে পারব না। যদি তোমরা আমাকে মেরে ফেল তাহলে তাও পাবে না।
তাতাররা অল্প সময় নিজেদের মধ্যে কথা বলে। তারপর তারা চাকরটিকে কি যেন বলে বাইরে পাঠায়। একবার ঝিলিনের দিকে একবার বাইরের দিকে তাকাতে থাকে তারা। একটু পরই ফিরে আসে চাকরটি। তার সাথে স্বাস্থ্যবান এক লোক। তার পায়েও শিকল পরানো। ঝিলিন লোকটিকে দেখে বিস্মিত হয়। সে আর কেউ নয়- কস্তিলিন। তাকে ঝিলিনের পাশে বসতে দেয়া হয়। তারা একে অন্যকে নিজের কাহিনী শোনায়। তাদের কথা বলার সময় তাতাররা কোনো বাধা না দিয়ে নিরবে বসে থাকে। ঝিলিন কস্তিলিনকে নিজের আটক হওয়ার কাহিনী বলার পর কস্তিলিন জানায় তাতাররা কিভাবে তার ঘোড়া থামায়, তার বন্দুকের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় এবং এই আবদুল মুরাদ কিভাবে তাকে কাবু করে আটক করে।
আবদুল মুরাদ উঠে দাঁড়িয়ে কস্তিলিনের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে কিছু বলে। দোভাষী তার মানে করে জানায় যে তারা দু’জন একই মনিবের বন্দী। তাদের মধ্যে যে আগে মুক্তিপণের টাকা আনবে সে আগে মুক্তি পাবে।
ঝিলিনের উদ্দেশ্যে সে বলে-
: তুমি রেগে গেছ। কিন্তু তোমার সঙ্গী খুব ভদ্র। সে বাড়িতে চিঠি লিখেছে। তারা পাঁচ হাজার রুবল পাঠাবে। তাই তাকে ভালো খাবার দেয়া হবে ও তার সাথে ভালো ব্যবহার করা হবে।
ঝিলিন বলে-
: আমার সঙ্গী তার যা ইচ্ছা করতে পারে। সে হয়ত ধনী, কিন্তু আমি নই। আমি যা বলেছি তাই হবে। তোমরা চাইলে আমাকে মেরে ফেলতে পার, তাতে কোনো লাভ হবে না। আমি পাঁচশ’ রুবলের বেশি চেয়ে চিঠি লিখব না।
তাতাররা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর আবদুল মুরাদ উঠে গিয়ে একটি ছোট বাক্স নিয়ে আসে। তার ভেতর থেকে কলম, কালি ও কাগজ বের করে ঝিলিনের হাতে দেয়। তার কাঁধ চাপড়ে ইঙ্গিতে চিঠি লিখতে বলে। বোঝা যায়, পাঁচশ’ রুবলেই সে রাজি।
: একটু সবুর কর- দোভাষীর উদ্দেশ্যে বলে ঝিলিন- তাকে বল যে সে অবশ্যই আমাদের ঠিকমত খাওয়াবে, প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় দেবে ও আমাদের একসাথে রাখবে। এটা আমাদের জন্য বেশি খুশির ব্যাপার হবে। আর আমাদের পা থেকে শিকল অবশ্যই খুলে নিতে হবে। কথাগুলো বলে তাদের মনিবের দিকে চেয়ে একটু হাসে ঝিলিন।

(চলবে)

Share.

মন্তব্য করুন