‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা,
চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।’
চাঁদকে আমরা আদর করে মামা বলে ডাকি। আবার গল্পে আছে, এই চাঁদমামার বুকে বাস করে এক বুড়ি। সে সব সময় চরকা কাটে। বাস্তবে চাঁদ আমাদের মামাও না আর সেখানে কোনো বুড়িও বাস করে না। চাঁদ হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। অনেক আগের দিনের মানুষ এ কথা জানত না। তারা ভাবত, চাঁদ হয়ত একটা প্রাণী, যার প্রতিদিন জন্ম হয়, তারপর মারা যায়। এরপর পিথাগোরাসের সময় থেকে মানুষ ভাবতে শুরু করল যে চাঁদ একটা গ্রহ। তারও অনেক পরে গ্যালিলিও দুরবিন দিয়ে চাঁদের চেহারা দেখেন। তিনি অবশ্য দুরবিনে কোনো চাঁদের বুড়িকে চরকা কাটতে দেখেননি। তার বদলে দেখেছিলেন চাঁদের পাহাড় আর খানাখন্দ। মানুষ অবশ্য তত দিনে জেনে গেছে চাঁদ আসলে পৃথিবীর উপগ্রহ। চাঁদে যাওয়ার স্বপ্নটা অনেক পুরনো হলেও তা বাস্তব হয়েছে। মানুষ চাঁদের মাটিতে পা রাখতে সমর্থ হয়েছে।
মানুষের চন্দ্র জয়ের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে এ মাসে।
আবার নতুন করে চন্দ্রযানের জন্য নেওয়া হচ্ছে প্রস্তুতি। চাঁদে যাবার স্বপ্ন বরাবরই মানুষের ছিল। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। এত দূরে চাঁদ, তাই বলে সেখানে যাওয়ার স্বপ্ন কিন্তু বন্ধ হয়নি। চাঁদে যাওয়া নিয়ে প্রথম লিখেন জুল ভার্ন নামের এক ফরাসি লেখক। তিনি প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে চাঁদে যাওয়ার উপায় নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলেন। যে যানে করে চাঁদের বুকে মানুষ প্রথম পা রেখেছিল, তার আবিষ্কার হয়েছিল এখন থেকে হাজার বছর আগে। এর নাম রকেট।
চীন দেশে প্রথম রকেট আবিষ্কৃত হয়। তবে এখন থেকে কয়েক দশক আগে রাশিয়া আর এর আশপাশের দেশ মিলে সোভিয়েত ইউনিয়ন নামের একটা দেশ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটা যুদ্ধ শুরু হয়, সেটা হচ্ছে কে আগে চাঁদে যাবে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা প্রথম সফলভাবে মহাকাশে, মানে পৃথিবীর বাইরে রকেট পাঠাতে সক্ষম হন। তাঁদের মহাকাশে ছোঁড়া প্রথম রকেটের নাম ছিল স্পুটনিক। আর প্রথম যিনি মহাকাশে যেতে সক্ষম হন, তাঁর নাম ইউরি গ্যাগারিন। তিনি ১৯৬১ সালে ভোস্টক নামের এক যানে করে মহাশূন্য থেকে ঘুরে আসেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রও পিছিয়ে ছিল না। এই ঘটনার কিছুদিন পরে অ্যালেন শেপার্ড নামে যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক প্রথম মহাকাশে যান। এখন থেকে ৪৫ বছর আগে, ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে একটি রকেট ছাড়া হয়। স্যাটার্ন ভি নামের একটি রকেট রওনা দেয় চাঁদের উদ্দেশে। এর আগের এই রকম অনেক যাত্রার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাই এই অভিযানের নাম ছিল অ্যাপোলো-১১।
এই যানে ছিলেন তিনজন ব্যক্তি। তাঁদের নাম নীল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স। রকেটের উচ্চতা ছিল ১০০ মিটার। পৃথিবী থেকে রওয়ানা হওয়ার তিন দিন পরে তাঁরা চাঁদে পৌঁছান। কিন্তু চাঁদের কোন জায়গায় নামা সহজ হবে, সেটি বের করার জন্য তাঁরা ৩০ বার চাঁদের চারপাশে চক্কর দেন।
অ্যাপোলো থেকে চাঁদের বুকে নামার জন্য একটি বিশেষ যন্ত্র বানানো হয়েছিল- ঈগল। সেটি ২০ জুলাই রাত আটটায় চাঁদের বুকে অবতরণ করে। ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই। যুক্তরাষ্ট্রে তখন রাত ২টা বেজে ৫৬ মিনিট। ঈগল থেকে একটা মই নেমে আসে। সেই মই বেয়ে নেমে আসেন নীল আমস্ট্রং। চাঁদের বুকে প্রথম একজন মানুষের ছাপ পড়ে। এরপর সেই মই বেয়ে নেমে আসেন বাজ অলড্রিন। তাঁরা দু’জনে মিলে চাঁদের বুকে হেঁটে বেড়ান আর ফেরার পথে নিয়ে আসেন চাঁদের মাটি।
অবশ্য চাঁদের একেবারে কাছে থেকেও মাইকেল কলিন্স চাঁদের বুকে নামতে পারেননি। যাতে আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন ঠিকমতো চাঁদে নামতে ও অ্যাপোলো নামক যানে ফিরে আসতে পারেন, তিনি সেই গুরুদায়িত্ব পালন করেন। ২৪ জুলাই এই তিন নভোচারী নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসেন। তাঁদের বীরের বেশে বরণ করে নেয়া হয়।
এরপর আরও ২২ জন ব্যক্তি চাঁদে গিয়েছেন। এভাবে মানুষ স্বপ্নকে পূরণ করেছে। আজ থেকে আরও পঞ্চাশ বছর পর মানুষ চন্দ্র অভিযানের শততম বর্ষ পালন করবে। তখন হয়ত সেখানে বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় মানুষের বসবাস শুরু হবে। তৈরি হবে নতুন এক সভ্যতা।
Share.