দিঘির পাড়ে একটা রাজহাঁস ঘুমোচ্ছিল। গভীর ঘুম। হঠাৎ কোত্থেকে এক ধাড়ি শেয়াল এসে হাজির সেখানে। রাজহাঁসটাকে পাকড়াও করে ফেলে নিপুণ দক্ষতায়। শিকার এখন হাতের মুঠোয়। শেয়াল মহাখুশি। ভীষণ চর্বিওয়ালা হাঁস। ইশ্শি রে, দেখলেই মন ভরে যায়। সেকেন্ডের মধ্যে জিভে পানি চলে আসে।
উহ, ভুঁড়িভোজটা দারুণ জমবে আজ। আনন্দের চোটে শেয়ালের নাচতে ইচ্ছা করছে ভীষণ। অনেক, অনেকদিন এমন উমদা শিকার করতে পারেনি। আজ কপালটা ভালো। খুব কম আয়াসেই এটাকে বাগে আনা গেছে।
শেয়াল ভাবলো, ব্যাটাকে তো কব্জা করে ফেলেছিই। বিশেষ ঝামেলা পোহাতে হয়নি। খুব সহজেই শিকার করতে পারলাম আজ। ভাগ্যিস, হাঁস-বোকাটা ঘুমে ছিল। জেগে থাকলে ধরা অত সহজ হতো না। এখন আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কয়েক দিনের খাবারদাবার নিয়ে কিচ্ছু ভাবতে হবে না। হাঁসটা তো আমার আয়ত্তেই আছে। বাছাধন যাবে কোথায়? পালানোর কোনো সুযোগ নেই। শেয়াল খুশিতে ডগমগ। সে আরো ভাবলো, ওর সঙ্গে একটু মজা করা যাক। অনেকদিন কারো সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা করা হয় না। খানিক তামাশা করে নিলে সময় কাটবে ভালো। খিদেটা আরো বাড়বে ততক্ষণে। চর্বিওয়ালা মাংস তখন মুখে রুচবে বেশি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। শেয়াল মুচকি হেসে শুধায় রাজহাঁসকে, ‘ওহে বোকাচন্দর রাজহাঁস। একটা কথা জিগ্যেস করি তোমায়। তুমি যদি এভাবে ক্যাঁক করে আমাকে ধরে ফেলতে, কেমন ব্যাপার হতো? তখন তুমি কী করতে বলো তো। সেটা জানবার জন্য খুব কৌতূহল হচ্ছে আমার।’
‘ও, এই কথা। খুবই সহজ প্রশ্ন।’
রাজহাঁস বলতে থাকে, ‘প্রথমে আমার হাত গুটিয়ে নিতাম। তারপর দুই চোখ বন্ধ করে মহান সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিতাম। প্রভুর কৃপার কারণেই তো এই সফলতা। সুতরাং তাকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। না জানালে ভালো দেখায় না। স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানানোর পর গপগপ করে তোমাকে খেয়ে ফেলতাম।’
শুনে শেয়ালের চোখ চকচক করে ওঠে। বলে সে, ‘বাহ, বেশ তো বলেছো। আমিও তাই করবো।’
শেয়াল তেমনটাই করে। এই ফাঁকে রাজহাঁস উড়ে পালায়। এমন একটা মুহূর্তের জন্যই যেন তক্কে তক্কে ছিল সে। মুক্ত হয়ে সে চোখের পলকে উড়ে যায় দূরের কোথাও। নিজের ওপর প্রচণ্ড রাগ হয় শেয়ালের। কপাল চাপড়াতে থাকে। বিড়বিড় করে বলে, ‘ইশ, কী বোকা রে আমি। নিজের দোষেই সব হারালাম। এরপর থেকে প্রার্থনা করবো শিকার পেটে চালান দেওয়ার পর। দাঁড়া ব্যাটা রাজহাঁস, তোকে আমার হাতের নাগালে পেয়ে নিই। তখন মজা দেখিয়ে ছাড়বো।’

Share.

মন্তব্য করুন