গ্রীষ্মের ছুটি পড়ে গেছে। স্কুলও বন্ধ দিয়ে দেবে কিন্তু এই ছুটিতে কি করা যায় তাই নিয়ে বন্ধুদের নিয়ে ভাবতে লাগলাম। হঠ্যাৎ রাজন স্যার ও হেড স্যার এসে বলল, মাই ডিয়ার স্টুডেন্টস! তোমাদের জন্যে একটা খুশির সংবাদ আছে।
আমরা তো অবাক। বললাম, স্যার কি খুশির সংবাদ? তখন রাজন স্যার বললেন, আমরা এই গ্রীষ্মের ছুটিতে দুই দিনের জন্যে ভ্রমণে যাচ্ছি। সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লাম। তখন হেড স্যার বললেন, বল তো তোমরা- আমরা কোথায় যাচ্ছি? কেউ বলল রাঙ্গামাটি, কেউ বলল ফয়েস লেক। তখন রাজন স্যার বললেন, আমরা যাচ্ছি কক্সবাজার। সবাই আনন্দে মেতে উঠলাম।
ঠিক হলো ১৮ই এপ্রিল বুধবার চালতাতলী থেকে রওনা দেবো। আমাদের গাইড হিসাবে থাকবেন মহিদুল স্যার, ফরহাদ স্যার এবং রাজন স্যার। আমরা তো আরো খুশি। আমাদের তিনজন প্রিয় স্যারই আমাদের সাথে থাকবেন সারাক্ষণ। মঙ্গলবার সারারাত ভালো করে ঘুম হয়নি, শুধু ভাবছি কখন কক্সবাজার যাবো। কত সুন্দর কক্সবাজার! বইতে, টিভিতে অনেক কক্সবাজার সম্পর্কে পড়েছি, দেখছি।
পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত। লক্ষ্মীপুর থেকে প্রায় ২৯৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কক্সবাজার জেলা। আর চট্টগ্রাম শহর থেকে সড়ক পথে ১৫২ কিলোমিটার দূরে। পৃথিবীর দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র রূপে এখানে গড়ে উঠেছে আধুনিক পর্যটন নগর। বুধবার রাত ৭.০০ টার সময় রওনা দেওয়ার কথা। কক্সবাজার যাওয়ার জন্যে তৈরি হয়ে নিয়েছি। বাড়ি থেকে সকলকে বলে দোয়া নিয়ে রওয়ানা হলাম। পথে দেখা আর তিন বন্ধুর সাথে এবং এক বড় ভাই, তারাও এবার ভ্রমণের সঙ্গী। সবাই মিলে চালতাতলীর উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম। মনে হয় এতক্ষণে গাড়ি এসে গেছে। সবাই অপেক্ষা করছে।
বরাবর ৭.০০ টা। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের গাড়ি এখনও আসেনি। এদিকে আবার বিশ্ব ইজতেমা, তাই গাড়ি সব আগে থেকেই বুকিং হয়ে আছে। দেড় ঘণ্টা পর ঘাড়ি আসল, জননী এক্সপ্রেস। প্রধান শিক্ষক আমাদের দু’টি ব্যানার দিলেন। ব্যানারে লেখা ছিল- ‘মমতাজেন্নেছা মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা সফর ২০১৯ ইং : স্থান কক্সবাজার।’ সবাই গাড়িতে উঠে পড়লাম গাড়ি চলল নিজ গতিতে। গাড়ির মধ্যে সবাই মজা করতে লাগলাম। আমাদের শ্রদ্ধেয় মানিক স্যার সবার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমাদের জন্যে আমি একটা খেলার আয়োজন করেছি গাড়ির মধ্যে। আমরা তো অবাক! ভাবলাম, স্যার আবার কিসের খেলার আয়োজন করলেন? এবার স্যার বললেন, তোমাদের মধ্যে লটারি হবে, যার ভাগ্যে যা উঠবে সে তা করতে হবে। কারোর ভাগ্যে গান উঠল, কারোর ভাগ্যে গজল আবার কারোর ভাগ্যে কৌতুক কিংবা নাটক। এভাবে চলতে লাগল।
চট্টগ্রাম কুটুমবাড়ি হোটেলের সামনে থামলো আমাদের গাড়ি। রাতের খাবার সেরে হালকা হয়ে নিলাম। তারপর আবার সবাই গাড়িতে উঠে পড়লাম। রাত তখন সাড়ে ১২টা, সবাই তখন গভীর ঘুমে। আমার তখন ঘুম আসছে না। মনে শুধু কৌতূহল। অজানাকে জানার তখন সীমাহীন কৌতূহল জাগে। একটু পরে ঘুম চলে আসলো, গাড়ি চলতে থাকলো।
এখনো ৯৭ কিলোমিটার পথ বাকি। ঘুম থেকে ওঠার পর দেখি গাড়ি তখনো চলছে। রাস্তার দিকে চোখ বুলাতেই দেখি এখনো ৩৫ কিলোমিটার বাকি। এখন মাত্র সাড়ে ৪ টা বাজে। আমার পাশে ছিল আমার বন্ধু সেবাজ। ওকে ঘুম থেকে তুলে বললাম, কিরে এখনো ঘুমাচ্ছিস? ও বলল, কিরে এখনো কতটা পথ বাকি আছে রে? আমি বললাম ৩৪ কিলোমিটার। গাড়ির কিছু লোক জেগে আছে এবং কেউ ঘুমিয়ে আছে। আবার চোখ বুঝলাম কিন্তু হঠাৎ কে যেন ধাক্কা দিয়ে বললো, কিরে আর কতক্ষণ ঘুমাবি! চোখ খুলে দেখি বিজয়, ও আমার বন্ধু। ও বললো, তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নাম, আমরা কক্সবাজার এসে গেছি। সবাই মিলে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরলাম হোটেলের দিকে। আগে থেকেই হোটেলের রুম বুকিং করা আছে। হোটেলের নাম ‘হোটেল ডি ওশেনিয়া’ আবাসিক। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম, নাম ‘চড়ুইভাতি রেস্টুরেন্ট’। নাস্তা সেরে হোটেলে গিয়ে জামাকাপড় চেঞ্জ করে চললাম সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে।
সৈকতে গিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম এক নিমেষে। তখনই আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে নিলাম। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাঁটতে লাগলাম। তখন স্যার ও বন্ধুদের আওয়াজ ‘মেহেদি এদিকে আয়।’ সমুদ্রের বুকে সবাই মিলে আনন্দ করতে লাগলাম। সমুদ্রের ঢেউ আমাদের কূল থেকে দূরে নিয়ে যায়। আমরা সবাই আনন্দে মেতে উঠি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত এই কক্সবাজার। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার পর্যটক আসে এই সমুদ্র দেখতে। আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে যাই। অনেক পর্যটকের সাথে কথা বলি আমরা। কিছু বিদেশী পর্যটকও ছিলো, তারাও মুগ্ধ হয়ে গেছেন। সমুদ্রের তীরে দেখলাম ছোট-বড় সকল বয়সের মানুষ বালি দিয়ে মনের মতো করে ঘর, বাড়ি, দালান ইত্যাদি তৈরি করছে। আমার ও কৌতূহল হলো, আমিও একটা প্রাসাদ তৈরি করলাম। আমার সব চেয়ে কাছের প্রিয় বন্ধু এটা দেখে হেসে বলল, ‘কিরে পাগল, এটা কি বানালি।’ আমি বললাম, এটা আমার স্বপ্নে তাজমহল।
সেই সকাল ন’টায় সমুদ্রে নেমেছি আর এখন প্রায় দুইটা বাজে। ভিজে জামাকাপড় নিয়ে সবাই হাঁটা ধরলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে। হোটেলে গিয়ে সবাই গোসল করে জামাকাপড় চেঞ্জ করে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। হেড স্যার সবার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা সবাই এখন যার যার মতো আশেপাশে ঘোরাফেরা করো, তবে সবাই সাবধান থাকবে। আমরা কয়েকজন চলে গেলাম সমুদ্রের তীরে। সেখানে গিয়ে কিছু ছবি তুললাম। আর একটানা হাঁটা শুরু করলাম আমরা চারজন সমুদ্রের তীর ঘেঁষে। আমি, সেবাজ, বিজয় আর সিয়াম। মনের আনন্দে হাঁটতে থাকলাম। সমুদ্রের ঢেউয়ে অজানা কিছু অনুভূতি এসে মনের ভেতর ঘুরপাক খেতে শুরু করে। মন চাচ্ছিলো গভীর সমুদ্রের তলদেশে যেতে।
সমুদ্রের বেলাভূমিতে আমরা চার বন্ধু মোটর চালালাম। কিন্তু মোবাইলের এ্যালবামে সেই স্মৃতিটুকু রাখতে পারলাম না। হাজারো নাম না জানা মানুষ এই পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। সবাই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে। কোথা থেকে আসে এই ঢেউ আবার কোথায় চলে যায়, মনের মধ্যে সারাক্ষণ কৌতূহল বাসা বাঁধতে থাকলো। কত বিশাল এই সমুদ্র সৈকত! যিনি এই বিশাল সুন্দর সমুদ্র বানিয়েছেন না জানি তিনি কত সুন্দর! মনে মনে মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে নিলাম। একজন স্থানীয় শিক্ষিত ভদ্রলোকের সাথে দেখা হলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কক্সবাজারের ইতিহাসের কথা। তখন তিনি বললেন, নবম শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে ১৬১৬ সালে মুঘল অধিগ্রহণের আগে পর্যন্ত কক্সবাজার-সহ চট্টগ্রামের একটি বড় অংশ আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। মুঘল সম্রাট শাহ সুজা পাহাড়ি রাস্তা ধরে আরাকান যাওয়ার পথে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন এবং এখানেই ক্যাম্প স্থাপনের আদেশ দেন। তার যাত্রাবহরের প্রায় একহাজার পালঙ্কী কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা নামের স্থানে অবস্থান নেয়। ডুলহাজারা অর্থ হাজার পালঙ্কী। মুঘলদের পরে ত্রিপুরা এবং আরকান তারপর পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশরা এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
কক্সবাজার নামটি এসেছে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসারের নাম থেকে। কক্সবাজারের আগের নাম ছিল পালংকি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধ্যাদেশ, ১৭৭৩ জারি হওয়ার পর ওয়ারেন্ট হোস্টিং বাঙলার গভর্ণর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তখন হিরাম কক্স পালংকির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন কক্স আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান হাজার বছরেরও পুরানো সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন। এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেন কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই তিনি মারা (১৭৯৯) যান। তার পূর্নবাসন অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এর নাম দেয়া হয় কক্স সাহেবের বাজার। কক্সবাজার থানা প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৪ সালে এবং পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। উনাকে বললাম, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। তিনি বললেন, তোমরাই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তোমরা যদি ইতিহাস সম্পর্কে না জানো তাহলে কি হবে!
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে একদিন । মেহেদি হাসানআবার হাঁটা শুরু করলাম চার বন্ধু সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হোটেলে এসে সবাই পৌঁছে গেছি। প্রধান শিক্ষক সবার উদ্দেশ্যে আবার বললেন, ‘আমরা একটু পরে সমুদ্র সৈকতে যাব সূর্যাস্ত দেখতে। তোমরা সবাই তৈরি হয়ে নিও, কিছুক্ষণ পর আমরা রওনা দেবো।’ বিকেলে সবাই সূর্যাস্ত দেখতে চলে গেলাম সমুদ্র সৈকতে। সাথে আছেন আমাদের গাইড হিসেবে নিযুক্ত তিন জন স্যার এবং শ্রদ্বেয় প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ স্যার। সাথে আছেন শ্রদ্ধেয় রবিউল স্যারও। সবাই একত্রে গেলাম সূর্যস্ত দেখতে। সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সবাই বলল, বাহ…! কি অপরূপ সুন্দর…! সমুদ্র যেন সূর্যকে গিলে খাচ্ছে। আস্তে আস্তে সমুদ্র গোটা সূর্যটাকে গিলে খেয়ে ফেলল! জোয়ার শেষে তখন ভাটা, সমুদ্রের পানি অনেক নিচে নেমে গেছে। তাই তীর থেকে দূরে ছোট একটা দ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে। সবাই সমুদ্রের তীরের দ্বীপে গেলাম, এখানে অনেক শামুক। মনে হয় ভাটার টানে পানি যখন নিচে নেমে গেছে তখন শামুকগুলো বালুর সাথে আটকে গেছে। আমি এবং আমার বন্ধুরা মিলে শামুক সংগ্রহ করলাম। খুব সুন্দর ছোট-বড় সব ধরনের শামুকই। মাঝে-মধ্যে একটা দুইটা রঙিন শামুকও আছে। রাত্রিবেলা সমুদ্রের মধ্যে জন-মানুষ একদমই কম। আমরা সবাই কিছু কেনাকাটার জন্যে মার্কেটে গেলাম। সবাই আচার, বাদাম, শামুকের তৈরি বিভিন্ন পণ্য এবং আরো অনেক কিছু কিনলাম।
নিখুঁতভাবে শামুকের কারুকাজ খুব রোমাঞ্চকর। রাস্তার পাশে থাকা ফুচকাওয়ালার কাছ থেকে আমরা ফুচকা খেলাম। রাত্রে আরো একবার গেলাম সমুদ্রের কাছে এবং সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকলাম সমুদ্রের উপরে তারার মেলা দেখতে খুব সুন্দর। যেন এক অজানা জগতে হারিয়ে গেলাম। মনের মাঝে নানান কৌতূহল আনাগোনা করতে লাগলো।
রাত্রে হোটেলে ফিরে আসার পর প্রধান শিক্ষক বললেন, আজ কক্সবাজারের ইতিহাস ও অবস্থান কী জন্যে বিখ্যাত তা বর্ণনা করবো। তিনি বলেন, কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি পর্যটন শহর। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত যা শহর থেকে বদরমোকাম পর্যন্ত একটানা ১৫৫ কিলোমিটার (৯৬ মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত। রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশান। একসময় কক্সবাজার পানোয়া নামেও পরিচিত ছিল যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। এর আরো একটি প্রাচীন নাম হচ্ছে পালঙ্কি। কক্সবাজার চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কিলেমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কিলোমিটার এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র। ঢাকা থেকে সড়ক পথে এবং বাসযোগে কক্সবাজার যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অবধি রেললাইন স্থাপনের প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে নৈকট্যের কারণে লাবণী পয়েট কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত বলে বিবেচনা করা হয়। নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে সৈকত সংলগ্ন এলাকায় আছে ছোট-বড় অনেক দোকান যা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।
কক্সবাজার জেলার মোট আয়তন ২৪৯১.৮৬ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কক্সবাজার জেলার মোট জনসংখ্যা ২২,৮৯,৯৯০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১১,৯৭,০৭৮ জন এবং মহিলা ১০,৯২,৯১২ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৯২০ জন। মোট জনসংখ্যার ৯৩% মুসলিম, ৫% হিন্দু এবং ২% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। কক্সবাজার জেলা ৮টি উপজেলা, ৮টি থানা, ৪টি পৌরসভা, ৭১টি ইউনিয়ন, ১৮৮টি মৌজা, ৯৯২টি গ্রাম ও ৪টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। ১৮৫৪ সালে কক্সবাজার থানা গঠিত হয় এবং ঐ বছরই কক্সবাজার, চকরিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফ থানার সমন্বয়ে কক্সবাজার মহকুমা গঠিত হয়। পরে টেকনাফ থেকে উখিয়া, মহেশখালী থেকে কুতুবদিয়া এবং কক্সবাজার সদর থেকে রামু থানাকে পৃক করে এই মহকুমার অধীনে তিনটি নতুন থানা গঠিত হয়। ১৯৫৯ সালে কক্সবাজার জেলাকে টাউন কমিটিতে রূপান্তর করা হয়।
১৯৭২ সালে টাউন কমিটি বিলুপ্ত করে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ কক্সবাজার মহকুমাকে জেলায় উনড়বীত করা হয়। সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৩ এপ্রিল বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা থেকে পেকুয়া উপজেলাকে পৃক করা হয়। কক্সবাজার জেলার মূল ভূখণ্ডের উপর দিয়ে প্রবাহিত প্রধান প্রধান নদীগুলো হল মাতামুহুরী নদী, বাঁকখালী নদী ও রেজু খাল। মায়ানমার সীমান্তে প্রবাহিত হচ্ছে নাফ নদী। এছাড়া কুতুবদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপদ্বয়কে কক্সবাজার জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে পৃক করেছে যথাক্রমে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মহেশখালী চ্যানেল। আবার মহেশখালী উপজেলা থেকে মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নদ্বয়কে পৃথক করেছে কোহেলিয়া নদী।
কক্সবাজার জেলার প্রধান দ্বীপ মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, সেন্টমার্টিন (নারিকেল জিঞ্জিরা), শাহপরীর দ্বীপ, মাতারবাড়ী, ছেঁড়া দ্বীপ। প্রধান বন ফুলছড়ি রেঞ্জ, ভুমারিয়াঘোনা রেঞ্জ, মেহেরঘোনা রেঞ্জ, বাঁকখালী রেঞ্জ। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী চকরিয়ায় ১৩ জন লোককে হত্যা করে এবং বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়। এসময় পাকবাহিনী টেকনাফ ডাকবাংলোতে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং রামু, উখিয়া ও টেকনাফ থেকে প্রায় ২৫০জন নিরীহ লোককে ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন : স্মৃতিস্তম্ভ ৩টি, বধ্যভূমি ১টি।
স্যারের মুখে কক্সবাজার জেলার ইতিহাস শুনে এবং গুগল সার্চ করে উইকিপিডিয়ার তথ্য দেখে খুবই অবাক হলাম। কারণ আমার জানা ছিল না কক্সবাজার জেলার এত বড় ইতিহাস আছে। আমারা রাত সাড়ে নয়টার গাড়ি করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। সবাই রাত্রের খাবার খেয়ে নিলাম আমরা সবাই রূপচান্দা মাছ এবং অন্যান্য মাছ ও মুরগির মাংস দিয়ে রাত্রের খাবার শেষ করলাম। কিছুক্ষণ পর বাসে উঠবো, তাই সব কিছু গোছগাছ করে নিলাম। এবং সময়মতো আমরা সবাই আস্তে আস্তে গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়ি চলতে লাগল তার আপন গতিতে কিন্তু আমার মন পড়ে রইলো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।

Share.

মন্তব্য করুন