কাঁদতে কাঁদতে শাকিরা দাদির কাছে নালিশ দিতে এসে কান্নার জন্য সে কথাই বলতে পারছে না। বারবার দাদি জানতে চাইলেন কী হয়েছে? আব্বু মেরেছে? মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, না। তবে কী হয়েছে বল! শাকিরা দাদির হাত ধরে টেনে নিয়ে বাড়ির বাইরে ভুলুয়ার কাছে গেল। ভুলুয়া হলো শাকিরার প্রিয় ছাগলের নাম। ছোট থেকে এই ছাগল ছানার সাথে শাকিরার বন্ধুত্ব। এখন আর ছোট ছানা নেই, বড় হয়েছে, মাথায় শিং গজিয়েছে। বড় হলেও এখনো শাকিরার হাতেই খাবার খায় ভুলুয়া। সেখানে গিয়ে কানড়বা আরো বেড়ে গেল। হু হু করে কাঁদতে লাগল। শাকিরা ভুলুয়ার গলা জড়িয়ে কাঁদছে এমন সময় দাদি লক্ষ করলেন ভুলুয়ার দু’ চোখ থেকেও অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। দাদি শাকিরার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, কী হয়েছে দিদা ভাই আমাকে বল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে শাকিরা বললো, বাবা কাল ঈদের দিন ভুলুয়াকে কোরবানি দিবে বলেছে। দাদি! তুমি বাবাকে বারণ কর ভুলুয়াকে যেন কোরবানি না দেয়। ভুলুয়া আমার প্রিয় বন্ধু, তাকে ছাড়া আমি কার সাথে খেলবো? বলেই হাউমাউ করে দাদিকে জড়িয়ে ধরল। এতক্ষণে দাদি আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন।
দাদি বললেন, শোনো! তোমাকে একটা গল্প বলি। শুনলে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে। এক ভালো মানুষ ছিল কিন্তু তার কোনো সন্তান ছিল না। এক সময় তার বয়স অনেক হলো ৮০-৮২ বছর হবে। তখন তার মনে হলো তার সন্তান দরকার। তিনি আল্লাহর কাছে চাইলেন এবং আল্লাহ তাকে একটি পুত্রসন্তান দিলেন। সে সন্তানটি তার কাছে অনেক প্রিয়পাত্র হয়ে গেল। বাবার হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করে, খেলাধুলা করে, বাবাকে কাজে সাহায্য করতে পারে। একদিন আল্লাহ তায়ালা ভালো মানুষটাকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। শাকিরা জিজ্ঞাসা করলো কী পরীক্ষা দাদি? দাদি বললেন, আল্লাহ পরীক্ষা করতে চাইলেন যে সে আল্লাহকে বেশি ভালোবাসে নাকি তার এই ছোট আদরের ছেলেটাকে। কিভাবে পরীক্ষা করলেন দাদি? জানতে চাইল শাকিরা। শোনো তাহলে বলছি, একদিন লোকটি তার ছেলেকে ডেকে বললেন, ‘হে আমার প্রিয় পুত্র আমি স্বপ্নে দেখছি যে, আমি তোমাকে আল্লাহর রাহে কোরবানি দিচ্ছি।’ এই কথা শোনে ছেলেটি বুঝলো যে তার পিতা তাকে কোরবানি দিবেন কেননা আল্লাহকে তিনি ছেলের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। কিন্তু ছেলেও কম না। সে বললো, ‘বাবা, আপনাকে আল্লাহ যেভাবে বলেছেন সেভাবেই আমাকে আপনি কোরবানি করুন। ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীলদের মাঝে পাবেন।’ তারপর কী হয়েছে দাদি? জানতে চাইল শাকিরা। দাদি বললেন, পিতা সন্তানকে নিয়ে কোরবানি দিতে গেলেন। কোরবানি দিতে যাবেন এমন সময় আল্লাহ থামিয়ে দিলেন। আল্লাহ খুশি হয়ে জানড়বাত থেকে একটি দুম্বা পাঠিয়ে দিলেন। সেই ভালো মানুষটি এবং ছেলেটি কে জানো? তিনি হলেন মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.) আর তার পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)।
দাদি বললেন, আমরা সবাই আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো? শাকিরা বললো, আমিও আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। তাহলে তোমার প্রিয় জিনিসটাকেই কোরবানি দিতে হবে। শাকিরার মন আবারও খারাপ হলো, তবে অতটা না। সে ভুলুয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বললো, ভুলুয়া আমি তোরে আল্লাহর জন্য কোরবানি দিবো। তুই আল্লাহর কাছে গিয়ে আমার কথা বলবি যে আমি আল্লাহকেও অনেক ভালোবাসি। ভুলুয়া যেন মাথা নাড়লো। শাকিরা দাদির দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল ‘তুমি এসব জানলে কোথা থেকে?’ দাদি বললেন, পবিত্র আল কুরআনে সূরা সফ্ফাতের ১০০ থেকে ১১০ নম্বর আয়াতে এই সুন্দর গল্পটার বিস্তারিত আছে, চল তোমাকে পড়ে শুনাই। শাকিরা দাদির কাছে বসে সরাসরি আল কুরআন থেকে গল্পটা পড়তে শুরু করলো।

Share.

মন্তব্য করুন