বিশ্বে অনেক ধরনের গুহা আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো লবণের গুহা বা সল্ট ক্যাভ। বিশ্বে সল্ট কেভের সংখ্যা খুবই কম। যেগুলো আছে সেগুলোরও বেশির ভাগ আধা মাইলের চেয়ে ছোট। লবণ গুহাগুলো সাধারণত পাওয়া যায় খুবই শুষ্ক অঞ্চলে। প্রায় দুই বছর ধরে গবেষকরা চুইয়ে পড়া লবণের সারি চিহ্নিত করে করে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ম্যালাম গুহার নকশা মানচিত্রে লিপিবদ্ধ করেছেন। ইসরাইলে অবস্থিত আকর্ষণীয় লবণের দণ্ডে ভরা গুহাটির নাম মালহাম। এর আগে ইরানের নামাকদান গুহার অংশ ছিল এটি।
ডেড সি বা মৃত সাগরের কাছেই বিশ্বের দীর্ঘতম সল্ট কেভ বা লবণগুহা আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। গুহাটি ইসরাইলের বৃহত্তম সোদম পাহাড় বেয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কাছে মৃত সাগর বা ডেড সিতে গিয়ে শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ইসরাইলের ইয়োয়াভ নেগেভ ফ্রামকিন এই গুহা খোঁজার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেন। মাটির নিচে প্রায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এটি। এর ব্যাপ্তি এতটাই যে, এই একটি দেশ- বলছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।
১০০টিরও বেশি কক্ষ রয়েছে গুহায়। একেকটি কক্ষ প্রায় ৫ হাজার ৬৮৫ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। মালহাম প্রথম গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমোস ফ্রামকিনের কাজের মাধ্যমে। হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের গুহা গবেষণাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ফ্রামকিন আশির দশকে গুহাটির প্রায় পাঁচ কিলোমিটার মানচিত্র তৈরি করেন। কিন্তু ২০০৬ সালে গবেষকেরা ইরানের কেশম দ্বীপে এই গুহা আবিষ্কার করলে সারা বিশ্বে তা দীর্ঘতম লবণগুহার স্বীকৃতি পায়।
১৫০০ দিন ধরে গুহার এই মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। যদিও এ স্থানটি প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল ৩০ বছর আগে বলে জানান গবেষক এফ্রেম কোহেন। রেডিও কার্বন ডেটিং বলছে, সাত হাজার বছরের পুরনো গুহা এটি। লবণের সঙ্গে আকরিক আর পানি মিশে তৈরি হয়েছে এটি।
ইউরোপীয় ৮টি এবং স্থানীয় ২০টি দল নিয়ে নেগেভ একটি টিম তৈরি করেন। এ দলের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বোয়াজ ল্যান্ডফোর্ড ও তার দল। তার সঙ্গে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বোয়াজ ল্যান্ডফোর্ড ও তার দল। ২০১৮ সালে প্রায় ১০ দিন ধরে গুহার মানচিত্র তৈরি করেন তারা। এ বছর দ্বিতীয় দফা ১০ দিনের অভিযান চালিয়ে গুহাটির ১০ কিলোমিটারের বেশি এলাকা চিহ্নিত করেন তারা। ৮০টি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গুহাপ্রেমী দল মিলে লেজারের সাহায্যে মাপ নেওয়া এবং মানচিত্র তৈরির কাজটি করে। তাদের চোখে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গা।
সোদম পাহাড় নিজেই একটি বিশাল লবণের ব্লক, যার ওপরে রয়েছে পাথরের স্থিতিস্থাপক আস্তরণ। মরুভূমির দুর্লভ বৃষ্টি পাথরের ওই আস্তরণে আটকে থাকে। পানিতে লবণ গলে দীর্ঘদিন ধরে জমে জমে ডেড সি বা মৃত সাগরের দিকে গুহার রূপ নিয়েছে। মরুভূমি থেকে উড়ে আসা ধুলোর কারণে গুহার অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে বিচিত্র নকশা। বিশালাকার লবণের ফলক, ধুলো আর খনিজপদার্থ মিলে অসাধারণ ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে গুহায়। আম্বার বর্ণের ধুলো আর খনিজ মিলে নাটকীয় সৌন্দর্য ধারণ করেছে। লবণ ব্লক থেকে ভেঙে পড়া পাতলা একটি ফলকের নাম রাখা হয়েছে ‘দ্য গিলোটিন’। অন্য একটি হলে যমজ ফলকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য টেনকম্যান্ডমেন্টস’।
এখানে ফ্যাকাশে ও লম্বা লবণের দণ্ডগুলো ঝুলছে গুহার ছাদ থেকে। কোথাও কোথাও কাকের চোখের মতো স্বচ্ছ লবণের স্ফটিকের দ্যুতিতে ঝলমল করছে গুহার দেয়াল। কোথাও আবার দণ্ডের গা বেয়ে চুইয়ে পড়ছে লবণপানি।
পুরো ইসরাইলে এমনটি আর কোথাও নেই, ইসরাইলে ১০ কিলোমিটারের ধারে কাছেও আর কোনো গুহা নেই এমনটাই দাবি করেন গবেষকগণ। গুহার ভেতরে সুড়ঙ্গ, প্যাসেজ, জেটি, মালভূমি মিলে বিশাল এক নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হয়েছে। নেগেভের মতে, এটি ইসরাইলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জটিল একটি কাঠামো। তার দেখা অন্যতম মন্ত্রমুগ্ধকর সৌন্দর্যের অধিকারী মালহাম।
Share.