অল্প ক’দিনেই অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন খুব নাম করেছে। গেল তিন বছরে তারা প্রচুর বই করেছে। বইয়ের বাঁধাই, প্রিন্ট, অলঙ্করণ সব যেন মনের মাধুরী দিয়ে করছে তারা। তাদের এমন রুচিশীল কাজ দেখে লেখকেরা ভিড় জমিয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই অক্ষরবৃত্ত অফিসে যেন লেখকদের মিলনমেলা বসে! চলে আড্ডা, খানাপিনা ও আনন্দমেলা। এবারের বইমেলায় তারা পঞ্চাশেরও অধিক বই করেছে। চট্টগ্রাম থেকে এত সংখ্যক বই খুব কম প্রকাশকই আনে, কিন্তু অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনের কর্ণধার আনিস সুজন সেটা করে দেখিয়েছে। জিমনেশিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত বইমেলায় তারা দৃষ্টিনন্দন স্টল করেছে, আলোকসজ্জাও করেছে অন্য অনেকের চেয়ে বেশি। তাই চট্টগ্রাম বইমেলায় তাদের স্টলটি সবার চোখে পড়েছে। এ নিয়ে প্রকাশক আনিস সুজনের আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। মেলা শুরুর পর থেকেই তাকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে, যেটা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
বইমেলার শুরুর দশম দিনে গিয়ে একটু দুশ্চিন্তা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তার।দুশ্চিন্তার কারণ হলো, তিনি বইমেলার প্রতিদিনকার হিসাব প্রতিদিনই করে ফেলেন। গত দশদিনে প্রায় নয়দিনই তিনি তার একটি করে বইয়ের হিসাব পাচ্ছিলেন না। প্রথম প্রথম ভেবেছিলেন হয়তো কোথাও পড়ে রয়েছে বা একদিন-দুদিন ভুল হয়েছে। কিন্তু প্রমদিন ছাড়া টানা নয়দিন তার একটি করে বইয়ের হিসাব পাচ্ছিলেন না। এটা হওয়ার কথা নয়। সুজনের সহকর্মী জোহেব। সে-ও সুজনের সাথে কাজ করে। অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন তারও ভালোবাসার জায়গা, যেমনটা সুজনের। সুজন বইয়ের হিসাব না পাওয়ার ব্যাপারটা জোহেবকে বললে সেও চিন্তিত হয়ে পড়ে।
অক্ষরবৃত্তের স্টলে প্রতিদিন বহু লেখক আসেন। স্টলের ভেতরে বসে আড্ডা দেন, ছবি তোলেন আর নিজেদের বইগুলো পাঠকদেরকে অটোগ্রাফসহ তুলে দেন। তো, কোনো লেখককে যে সন্দেহ করবে তারও সুযোগ নেই। কারণ, প্রত্যেক লেখকই তার চেনা ও পরিচিত। অফিসে নিয়মিত আড্ডা দেওয়ার কল্যাণে কমবেশি সবাইকে চেনা হয়ে গেছে। সুজন তার সহকর্মী জোহেবকে একপাশে ডেকে নিয়ে বলল, বইচুরির ব্যাপারটা আপাতত কাউকে বলার দরকার নেই। লেখকেরা শুনলে মাইন্ড করতে পারে!
– তাহলে কী করবেন? একবার বলে দেখলে ভালো হতো না? কেউ চুরি করে থাকলে সতর্ক হয়ে যেত!
– তাও ঠিক, কিন্তু আমি অন্য ব্যবস্থা করতে চাচ্ছি!
– কী ব্যবস্থা? প্রশ্নাতুর চাহনিতে জানতে চাইল জোহেব।
সুজন বলল, আমার এক পরিচিত খুদে গোয়েন্দা আছে, তাকে দিয়ে বইচুরির ব্যাপারটা সুরাহা করব!
– কে সে? পারবে?
– পারার তো কথা। বয়স কম কিন্তু বিচক্ষণ ও সাহসী। শার্প ব্রেইন। এর আগেও তারা একটা ভ-পীরের মাজার হতে দেয়নি!
– কী বলেন?
– হ্যাঁ, শুধু তা-ই নয়, একদল নকল স্বর্ণ বেচা প্রতারককেও সে ধরিয়ে দিয়েছে!
– কিন্তু তার নামটা তো বলবেন!
– আকুভাই। সবাই একনামে আকুভাই হিসেবে চেনে!
– নামটা পরিচিত মনে হচ্ছে, কোথাও শুনেছি হয়তো!
– শুনে থাকতে পারো। তো, তাকে দিয়েই চোরটা ধরার ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছি। এই চোর খুব বিচক্ষণ হবে, নয়তো বইমেলায় হাজার-হাজার মানুষের সামনে থেকে এভাবে চুরি করতে পারার কথা নয়।
– শুধু বিচক্ষণ নয়, সাহসীও হবে।
সেদিন রাতেই সুজন কল দিলো আকুভাইকে। প্রথমবার রিসিভ করেনি সে, দ্বিতীয়বার কল দিলে রিসিভ করে প্রমে সালাম দিলো আকুভাই। সুজনের পরিচয় জানতে পেরে একটা হাসি দিয়ে বলল, সুজন ভাই, কেমন আছেন? অনেকদিন পর…।
– হ্যাঁ, তুমি কেমন আছো? সেই চার বছর আগে তোমার সাথে দেখা, আর কোনো যোগাযোগই তো হলো না!
– ভালো আছি। আসলে আপনিও যোগাযোগ করেননি, আমারও করা হয়ে ওঠেনি! আপনি কেমন আছেন ভাই?
– এই তো আল্লায় রাখছে কোনোমতে! তোমাকে একটা ব্যাপারে কল দিয়েছি…।
– কী ব্যাপারে? বলুন।
– তুমি কি ফ্রি আছো? কথা বলা যাবে?
– হ্যাঁ, হ্যাঁ, বলুন- বিনয়ের সাথে বলল আকুভাই।
– আসলে আমার স্টলে ক’দিন ধরে একটা ঘটনা ঘটে চলেছে। তুমি হয়তো জানো যে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলা শুরু হয়েছে। সেখানে আমিও স্টল দিয়েছি। আমার প্রকাশনা হতে প্রায় পঞ্চাশটি বই প্রকাশ করেছি। ঘটনা হচ্ছে, বইমেলা শুরুর পরদিন থেকে প্রতিদিন আমার স্টল থেকে একটি করে বই চুরি হয়ে যাচ্ছে। প্রথম প্রথমত ব্যাপারটিকে অতটা সিরিয়াসলি নিইনি। কিন্তু টানা নয়দিনে নয়টি বই চুরি হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও চোরটাকে ধরতে পারিনি। আমি নিজে নিজে নজর রেখেও কোনো কিছু করতে পারিনি, তাই চাইছিলাম তুমি যদি এর বিহিত করতে এগিয়ে আসতে!
– সুজন ভাই, শুনেছি এবারের বইমেলা খুব বড়সড় আয়োজনে হচ্ছে! এত বড় আয়োজন থেকে কি চোর ধরা সম্ভব?
– কেন সম্ভব নয়? আমার মনে হচ্ছে তুমিই পারবে এই চোরটাকে ধরতে!
– হা হা করে হেসে আকুভাই বলল, ভাই, আমি আসলে সেরকম কিছু নই, যেমনটা করে আপনি বলছেন। তবু আপনি যখন বলছেন আমি চেষ্টা করে দেখব। এখন বলেন আমাকে কী করতে হবে?
– যদি তোমার সুযোগ হয় তো কালই চলে আসো আমার এখানে, সাথে আরো যাদের আনতে হবে আনো। তোমাদের সব খরচ আমি বহন করব।
– কালই! কাল তো পারব না। আমার পরীক্ষা চলছে, শেষ হবে ছাব্বিশ তারিখ। আমি তারও পরের দিন মানে সাতাশ তারিখ আসতে পারবো!
– সাতাশ তারিখ হলে একটু দেরিই হয়ে যায়! কিন্তু তোমার পরীক্ষাটা গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক আছে, সাতাশ তারিখই আসো, দেখি এর ভেতরে চোরটাকে আমি হাতেনাতে ধরতে পারি কি না!
– হ্যাঁ, আপাতত সেই চেষ্টা করেন। তবে সুজন ভাই, আমার কাছে ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে!
– কোন ব্যাপারটা? সুজন আগ্রহ ভরে জানতে চাইল।
– আকুভাই বলল, এই যে আপনি ছাগল চুরির জন্য যেন গরু মানত করছেন! আপনার বই চুরি হয়েছে হয়তো হাজারখানেক টাকার, কিন্তু আমাদের পেছনে আপনার খরচ হবে তারও বহু বেশি!
– সেটা কোনো ব্যাপার না ভাই। আমার একটা কৌতূহল জন্ম নিল, আমি সেটার শেষ দেখতে চাই। এখানে টাকা কোনো মুখ্য ব্যাপার না!
– তাহলে ঠিক আছে। কাজটা আমি নিলাম। আমরা কয়জন আসতেছি তা সাতাশ তারিখের আগে জানাবো। কথা শেষ করে ফোন রেখে দিলো সুজন।
বইচোরের সন্ধানে । আরকানুল ইসলামএদিকে ফোন রেখে আকুভাই বিষয়টি নিয়ে নিজেও কিছুক্ষণ ভাবল। ভাবতে ভাবতে অভ্যাসবশতঃ তর্জনী দিয়ে একবার মাথা চুলকে নিল। বলার মতো তিন-চারটি কাজ করেছে, সবগুলোতে সফল হয়েছে। এলাকায় তো একনামেই সবাই চেনে।
কাজ যে নিয়েছে সেটা সবুজকে জানাতে হবে। সবুজ ইতিমধ্যে আকুভাইয়ের একান্ত সহচর হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক দুটি কাজেও সবুজ ছিল। বাকিদের ডাকেনি আকুভাই। সবুজ চতুর, বিচক্ষণ ও ধৈর্যশীল। সহজে হতাশ হয়ে হার মানতে রাজি নয়। একসাথে অনেককিছু চিন্তা করার মতো ব্রেইন সবুজের আছে। আকুভাইয়ের সাথে কাজ করতে করতে সেটা দিন-দিন আরো ধারালো হচ্ছে।
এশার নামাজটা আকুভাই সবুজদের মসজিদে গিয়ে পড়ল। সেখানেই পাওয়া গেল সবুজকে, সেও নামাজে এসেছে। সবুজদের মসজিদটা খুব সুন্দর। মসজিদের সামনে দীঘির মতো বিরাট একটা পুকুর, পাকা ঘাট, ঘাটের পাশে হাসনাহেনা ও কামিনি ফুলের গাছ। রাতে যখন হাসনাহেনা সুবাস ছড়ায় তখন মুসল্লিদের মন প্রশান্তিতে ভরে ওঠে, এ-যেন বেহেশতি ঘ্রাণ। আকুভাই নামাজ শেষ করে ঘাটে এসে বসল। পিছু পিছু সবুজওত এলো। আকুভাইকে সবুজ মসজিদের ভেতর দেখলেও কথা বলেনি। বের হয়ে এসে প্রথমে সালাম দিলো। সালামের জবাব নিতে নিতে সবুজের কুশল জিজ্ঞেস করে নিল। তারপর বসা থেকে উঠে মসজিদের পুকুর ঘাটের সিঁড়ি ধরে হেঁটে একপাশে চলে গেল, যেখানে মুসল্লির আনাগোনা নেই। এদিকে আসাতে সবুজ বুঝতে পারল আকুভাই তাকে কিছু একটা বলার জন্য একদিকে নিয়ে এসেছে।
সবুজ নিজ থেকেই বলল, আকুভাই কিছু একটা বলবেন মনে হচ্ছে!
– হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো। একটা বিষয় জানানোর জন্য তোমাদের মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছি।
– কী বিষয় বলেন… আগ্রহের সাথে বলল সবুজ।
কোনো কিছুর রহস্য-টহস্য হলে সবুজ একপায়ে খাড়া! বয়সে চার বছরের ছোট হলেও সাইজে প্রায় আকুভাইয়ের সমান হয়ে উঠেছে সবুজ। গ্রোথ ভালো। ফর্সা চেহারা, ঘনকালো চুল, গোলাপরাঙা ঠোঁটে অপূর্ব লাগে সবুজকে। কথা শুরুর আগে অভ্যাসবশতঃ তর্জনী দিয়ে একবার মাথা চুলকে নিল আকুভাই। তারপরে সবিস্তারে সবুজকে বলল সব। শুনেই সবুজ রাজি হলে গেল, যেন সে এমন একটা কাজের অপেক্ষায় ছিল। আকুভাই বলল, বাড়িতে সমস্যা হবে তোমার? দুই-তিন দিন থাকতে হতে পারে!
– সমস্যা নেই, ম্যানেজ করে নেবো। তা ছাড়া যাচ্ছি তো আপনার সাথেই!
– হ্যাঁ। তবে সুজন ভাই যদি চোরটাকে এরই মধ্যে ধরে ফেলতে পারে তাহলে আমাদের আর না-ও যেতে হতে পারে!
এটা শুনেই সবুজের মনখারাপ হয়ে গেল। সে আকুভাইকে বলল, আপনার সুজন ভাই চোরটাকে ধরতে পারবে না, দেখবেন! সবুজের কথা শুনে আকুভাই হেসে দিয়ে বললেন, ঠিক আছে, দেখা যাক। সাতাশ তারিখ সকালেই রওনা দেবো আমরা। সবুজের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেল আকুভাই।

২.
এই ক’দিনে সুজন কয়েকবার কল দিয়েছে আকুভাইকে। কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার। সুজন জানাল, এখনো প্রতিদিন চুরি হচ্ছে, কিন্তু চোরকে ধরা সম্ভব হয়নি।
আকুভাই বলল, সুজন ভাই, মাঝখানে আর মাত্র একটা দিন, এরপরেই আমরা আসছি। আপনি চিন্তা করবেন না।
তুমি যদি অন্তত একটা দিন আগে আসতে পারতে! কারণ, আটাশ তারিখ বইমেলা শেষ। সাতাশ তারিখ এলে তোমরা সময় পাচ্ছো মাত্র দুইদিন, দুইদিনে কি পারবে?
– সুজন ভাই, আপনাকে বললাম চিন্তা না করতে। দেখবেন, এই দুইদিনেই চোর হাতেনাতে ধরা পড়ে যাবে। কী হবে জানে না, তবুও আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা দিয়ে দিলো আকুভাই। কারণ, সুজনকে হতাশ হতে দেয়া যাবে না।
সাতাশ তারিখ সকালবেলা। আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। আগের দিন সবুজকে বলে রেখেছে কয়টায় রওনা দেবে তা।
সকাল সাতটাকেও মনে হচ্ছে ভোর পাঁচটা। রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা বেড়েছে, মকতবে যাচ্ছে কিছু ছেলে-মেয়ে। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এখনো মকতবে যায়, কোরআন পড়ে।
আকুভাই ও সবুজদের পাড়া আলাদা হলেও গাড়ির স্টপেজ একই। সোয়া সাতটার দিকে সবুজও এসে হাজির। আকুভাই বলল, নাস্তা করেছো?
– হ্যাঁ, করেছি। আপনি?
– আমিও করেছি।
কথা বলতে বলতে দু’জনেই বাস কাউন্টারে এসে হাজির। দু’টো টিকেট কেটে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে দু’জন। সবুজের মনের ভেতর একটা এ্যাডভেঞ্চার এ্যাডভেঞ্চার খেলছে। কী হতে যাচ্ছে- এরকম একটা কৌতূহল বুকের ভেতর দ্রিম দ্রিম করছে। আকুভাইয়ের সাথে কাজ করে মজা। কোনো প্রেশার দেন না, নিজের মতো করেই কাজ করা যায়।
মিনিট দশেক অপেক্ষার পর বাস এলে তারা উঠে পড়ল। নিজেদের টিকেটকৃত সিটে গিয়ে বসল দু’জন। সবুজ বসেছে জানালার পাশে। ওখানে বসতেই তার ভালো লাগে। সেটা আকুভাইও জানে। জার্নি যে সুখকর হবে না তা আগে থেকেই জানত। কারণ, রাস্তার কাজ চলছে। দুইপাশে তিন ফুট করে প্রায় ছয়ফুট রাস্তা বড় হচ্ছে। আগে বারো ফুট ছিল যে রাস্তা সেটা এখন আঠারো ফুট হবে। কিন্তু সেই বছর ধরে কাজ চলছে, কাজের গতি নেই। নিয়মিত যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। গাড়িতে চড়ার সময় মনে হয় নৌকায় চড়ছে- এমন দোলা দোলে গাড়ি। বড় গাড়ি হলে কম বোঝা যায়, সিএনজি অটোরিকশায় পেটের নাড়িভুঁড়ি পর্যন্ত নাড়িয়ে দেয়। বাড়ি গিয়ে রাতে ব্যথার ট্যাবলেট খেতে হয়। তবুও যেন কর্তৃপক্ষের তাগাদা নেই। সরকারি কাজ, হবে আরকী- এই টাইপের একটা মনোভাব!
আকুভাই বলল, সবুজ, কিছু ভেবেছো?
– না, আপনি ইন্সট্রাকশন দিলে সেই পথে হাঁটব আমি।
– নিজ থেকে কিছু প্ল্যান করা যায় না?
– যায়, কিন্তু স্পটে না-গিয়ে কীভাবে কী করি!
– তা অবশ্য খারাপ বলোনি। তোমার কী মনে হয়? চোরটা কি সুজন ভাইদের কাছের কেউ মনে হয়?
– হতে পারে, আবার নাও হতে পারে!
– এটা কি জবাব হলো? দুনিয়ার সব কথার পেছনেই তো এই দু’টো কথা থাকে- হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।
– আসলে স্পটে না-গিয়ে ভাবা যাচ্ছে না!
– আমার কী মনে হয় জানো?
– কী? ঘাড় ঘুরিয়ে আকুভাইয়ের দিকে মুখ করে সবুজ জানতে চাইল।
– আমার মনে হয় চোরটা খুব স্মার্ট হবে, যার কারণে সুজন ভাই তাকে সন্দেহ করতে পারছেন না!
– হ্যাঁ, এটা ঠিক বলেছেন।
– বেঠিক কোনটা বলি?
– না মানে, যেটা বলেছেন সেটা লজিক্যাল! আকুভাই হাসল।
শহরে যখন পৌঁছল তখন ঘড়িতে নয়টা বাজে। আকাশ গোমড়া মুখ থেকে একটু ফর্সা হয়েছে। আসার কথাটা সুজন ভাইকে বললে তিনি ঠিকানা দিয়ে সোজা ওনার বাসায় চলে আসতে বলেন। আকুভাই ও সবুজ সুজনের দেয়া ঠিকানা মতো চলে গেল। বিশাল একটা কলোনি। সব সরকারি কর্মকতারা থাকে। চারদিকে এত এত সবুজ বৃক্ষ যে শহরের মধ্যে একে একটা গ্রাম বলেই মনে হচ্ছে। বিশাল জায়গায় সুউচ্চ মিনার নিয়ে চারদিকে দেয়ালের ঘেরাও করা একটা মসজিদ। নাম আগ্রাবাদ মসজিদ কলোনি। কাগজে-কলমে সিজিএস কলোনি হলেও লোকে মসজিদ কলোনি হিসেবেই বেশি চেনে। এত সুন্দর একটা কলোনি দেখে মনটা ভরে গেল। আকুভাই বা সবুজ কেউই আগে এখানে আসেনি। আরো ভেতরে যেতেই দেখতে পেল সুবিশাল মাঠ! চট্টগ্রাম শহরে এরকম আর কয়টা কলোনি বা আবাসিক এলাকা আছে জানা নেই!
সুজন বাসার সামনে রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছিল আকুভাইদের রিসিভ করার জন্য। কাছে আসতেই বুকে বুক লাগিয়ে কোলাকুলি করে নিল, সবুজের সাথে হ্যান্ডশেক করল।
বইচোরের সন্ধানে । আরকানুল ইসলামসুজন থাকে তার বোনের বাসায়। একটা রুম তার জন্য বরাদ্দ ছিল। সেখানে এনে বসালো আকুভাইদের।
সরকারি কোয়ার্টারগুলো এরকমই, আভিজাত্যের ছাপ থাকে না। আহামরি সুন্দর না হলেও সুজন সাজিয়ে তুলেছে রুমটাকে। বুকশেল্পগুলো এমনভাবে সাজিয়েছে যে কারো নজর কাড়বে। নিশ্চয় ইউটিউব থেকে দেখে এমন সুদৃশ্য বুকশেল্প তিনি রুমে সেট করেছেন। একটা খাট, একটা চেয়ার ও টেবিল, টেবিলে একটা ডেস্কটপ।
আকুভাইয়েরা বসার কিছুক্ষণের মধ্যে নাস্তা নিয়ে এলো সুজন। নাস্তা খেতে-খেতে কুশলাদি জিজ্ঞেস করল। সবুজের সাথেও পরিচিত হয়ে নিল। এর আগে সুজন সবুজকে বা সবুজ খুজনকে দেখেনি। সবুজকে দেখিয়ে সুজন ‘এ-ই তাহলে তোমার খুদে সাগরেদ’- বলে নিজেই হাসতে লাগল।
এই ক’দিনে বইমেলার স্টলে আরো কী কী হয়েছে সব
খুলে বলল আকুভাইকে। সব শুনল আকুভাই।
আকুভাই বলল, সুজন ভাই, মেলা তো তিনটা থেকে শুরু, তাই না?
– হ্যাঁ।
– তাহলে তো মেলা শুরু হতে ম্যালা দেরি আছে। এই সময়টাতে আমরা একটু পতেঙ্গা সি-বিচ থেকে ঘুরে আসব।
– এখনই যাবে? একটু রেস্ট নিয়ে তারপরে যাও!
– না, রেস্টের দরকার হবে না।
– দুপুরে কিন্তু এখানেই খাবে!
– না, সুজন ভাই। মাত্রই যাচ্ছি, ফিরতে কতক্ষণ হয় কী জানি। আপুকে শুধু-শুধু কষ্ট দেয়ার মানে হয় না। দুপুরে আমরা বাইরে খেয়ে নেব। রাতে কিন্তু বাসাতেই খাবো, বাইরে বললেও কিন্তু খাচ্ছি না! আকুভাইয়ের এমন কথায় সুজনসহ সবুজও হো হো করে হেসে দিলো।
সুজনও আর না করেনি। ফ্রেশ হয়ে আকুভাই ও সবুজ বের হয়ে গেল সি-বিচের উদ্দেশে। সবুজ বলল, সি-বিচে যে যাবেন আগে বলেননি যে!
– আমিও তো জানতাম না যে আমরা সি-বিচে যাবো!
– মানে!
– মানে, হঠাৎ মাথায় এলো। এখন বাজে মোটে সাড়ে দশটা। এত দীর্ঘ সময় রুমে বসে থাকব নাকি! তা ছাড়া পতেঙ্গা সি-বিচে এসেছি সেই পাঁচ বছর আগে, তাই সুযোগ পেয়ে একবার ঘুরে আসার চিন্তাটা মাথায় এলো।
– আমিও সেই চার বছর আগে এসেছিলাম! এতদিনে নিশ্চয় অনেক পরিবর্তন এসেছে!
– তাহলে তো আমি তোমার চেয়েও এক বছর পিছিয়ে আছি। তুমি আজ না-গেলেও পারো! এক বছর পরে গেলেও সমস্যা নেই!
সবুজ আবার হো হো করে হেসে দিলো আকুভাইয়ের হাস্যরসে। আকুভাই কথায়-কথায় মজা করতে ওস্তাদ, আকুভাইয়ের এই বিষয়টাও সবুজের খুব পছন্দ।
একটা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে পতেঙ্গার দিকে চলল তারা। আগের চেয়ে রাস্তাঘাট অনেক প্রশস্ত হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি এলাকায় প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। দেখলেই মন ভরে যায়। বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম। সবচেয়ে বড় বন্দর এটা। এখান থেকেই সারা দেশের মালামালগুলো খালাশ হয়। হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতিদিন, যা কল্পনাতীত।
ইপিজেড ক্রস করে সিমেন্ট ক্রসিং ঈসা খাঁ বনৌজা গেটটা দেখার মতো হয়েছে। ইদানীং লোকজন খুব নেভাল নেভাল করে। নেভালে গিয়ে এই করছি, সেই করছি, কাঁকড়া খাইছি, আরো কতো কী বলে! নেভালে যাওয়ার পথেই পড়ে প্রজাপতি পার্ক, আকুভাইয়ের সেটাও দেখার খুব শখ। যাওয়ার পথে সুযোগ হলে একবার দেখে যাবে। সবুজও নিশ্চয় খুব খুশি হবে। পতেঙ্গা সি-বিচে যখন পৌঁছে তখন সাড়ে এগারোটা বাজে। সারি সারি ঝাউগাছ, চারকোণা জমানো পাথর, রাস্তা থেকে বিচের দিকে নামতে সবুজ ঘাস- এককথায় দারুণ। বিচের দিকে যে পাথরগুলো আছে সবগুলোতে রঙের খেলা চলছে! হলুদ, নীল, সাদা রঙ দিয়ে মোহনীয় করে তুলেছে সিডিএ কর্তৃপক্ষ। পাথরের পরেই প্রাচীর দেওয়া। আর বঙ্গোপসাগরের মুহুর্মুহু ঢেউয়ের আঁছড়ে পড়া দেখলে মুহূর্তই যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। এই সময়টাতে যে লোকজন থাকবে না তা আকুভাই আগে থেকেই জানত। তা ছাড়া সে তো লোকজন দেখতে এখানে আসেনি, এসেছে বিচ দেখতে। তবে লোকজন থাকলে একটু আনন্দ বেশি লাগে- এই যা।
সবুজ বলল, এখানে লোকজন তেমন নেই!
– হ্যাঁ। লোকজনের ভিড় বাড়বে বিকেলে। কিন্তু আমরা তো বিকেলে আসতে পারব না, এখন এলাম। তারপরও কিছু লোকজন আছে, কিছু ছেলে-মেয়ে আছে। কেউ কেউ স্কুলের ইউনিফর্ম পরা। নিশ্চয় স্কুল কামাই করে বিচে চলে এসেছে!
আকুভাই ও সবুজ বিচ ধরে হাঁটতে লাগল। পাশাপাশি ছবিও তুলতে লাগল। এ-যেন শুধু বেড়ানো নয়, স্মৃতিও ধরে রাখা। হাঁটতে-হাঁটতে অনেক দূর এসেছে দু’জন। এদিকে লোকজন বলতে গেলে নেইই। তবুও আনমনে হাঁটতে লাগল, নানান কথা বলতে লাগল। আসলে এদিকে এসে মনটাও যেন সাগরের মতো উদার হয়ে গেল।
কিছুদূর গিয়ে দেখল, এক মেয়ে একা পাথরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি ছাড়া আশেপাশে কেউ নেই। এই নির্জনে মেয়েটি কী করছে? কৌতূহল হলো আকুভাইয়ের। আরো কাছে গিয়ে বুঝতে পারল মেয়েটি খুব কম বয়সী, পনেরো-ষোলো বছর মতো হবে।
কাছে গিয়ে আকুভাই বলল, হ্যালো, এক্সকিউজ মি…!
মেয়েটি পেছন ফিরে তাকালো। খুব সুন্দর ও পরিপাটি একটি মেয়ে। আকুভাই বলল, একটু কথা বলা যাবে?
– জি, বলুন…।
– আচ্ছা, সামনে আর কতটুকু বিচ আছে?
– যতটুক দেখতে পাচ্ছেন ততটুকু। একটু বিরক্তির সুরেই বলল মেয়েটি। সবুজ আকুভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। সে বুঝে উঠতে পারল না যে, আকুভাই কেন মেয়েটির সাথে কথা বলতে এলো! সে চুপচাপ দেখে যেতে লাগল।
– তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু এদিকে কতটুকু যাওয়া যাবে, জানো?
– আমি বিচের দারোয়ান না! মেয়েটি বলল।
– তা বুঝতে পারছি। দারোয়ান হলে তো তোমার গায়ে দারোয়ানের ড্রেস থাকত!
এমন কথায় মেয়েটি এবার একটু তাকালো আকুভাইয়ের দিকে। এই সুযোগে আকুভাই বলল, আসলে কিছু মনে করো না। তোমাকে এখানে একা দেখে কথাগুলো বললাম। কথা শুরু করার জন্য। তোমার সাথে কি কেউ এসেছে?
– না।
– একা এসেছো?
– আপনি কেন এসব জিজ্ঞেস করছেন আমাকে? আপনাকে তো চিনি না আমি।
– কিছু মনে করো না, একা একটা মেয়ে এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তো যে কোনো বিপদ হতে পারে!
– এমনিতেই তো বিপদে আছি!
– কী বিপদ তোমার?
– তা জেনে আপনি কী করবেন?
– যদি কোনো ধরনের হেল্প করতে পারি!
– কারো হেল্প লাগবে না আমার। অভিমানের সুরে মেয়েটি বলল।
– তা ঠিক আছে। কিন্তু এখানে কেন এসেছো? এখানে কি তোমাকে কেউ সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে আসবে?
– না, আমি সারাজীবন আর কোনো বিপদ না আসার ব্যবস্থা করতে এখানে এসেছি!
– মানে কী! সুইসাইড! আতঙ্কিত গলায় বলল আকুভাই। সবুজও মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল। আকুভাই বলল, তোমার মাথা কি ঠিক আছে? সুইসাইড করলেই কি সবকিছুর সমাধান হয়ে যায়?
– হ্যাঁ, সবকিছুর সমাধান হয়ে যায়। আমি নিজেই যেখানে থাকব না সেখানে তো আর কোনো সমস্যা থাকার কথা না!
– আচ্ছা। সুইসাইড পনেরো মিনিট পরে করো। আগে আমাকে বলো তো কেন সুইসাইড করতে যাচ্ছো?
মেয়েটি চুপ মেরে আছে। কোনো কথা বলছে না। চোখ দিয়ে যেন অভিমানের আগুন বের হচ্ছে।
আকুভাই আবার বলল, তুমি আগে এখানে বসো। তারপর জানাও। দ্যান সুইসাইড করো। বারবার সুইসাইড করো, সুইসাইড করো বলাতে সবুজ নিজেও দ্বিধায় পড়ে গেল- কেন বারবার সুইসাইডে উৎসাহ দিচ্ছেন আকুভাই!
মেয়েটি একটা পাথরে বসল। বসে আকুভাইয়ের দিকে মুখ করে বলা শুরু করল। সে বলতে লাগল। তাদের বাসা কাজীর দেউড়িতে। নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে তাদের। তার বাবা কাস্টমসে আছেন। মা গৃহিণী। সে গতবছর এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। রেজাল্টও ভালো ছিল, গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছিল ডা. খাস্তগীর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ভার্সিটি কোচিং করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল, কিন্তু কোনোটাতে টেকেনি সে। এই নিয়ে তার মা খুবই হতাশ। কথায় কথায় ভার্সিটিতে না টেকা নিয়ে কথা শোনায়। ভর্তি পরীক্ষার পরের তিন মাস এটা নিয়ে কথা শুনতে শুনতে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে গেছি। এরপর কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন আবার শুরু করেছে। আকুভাই বলল, তো, কোথাও ভর্তি হওনি তুমি?
– হয়েছি। চট্টগ্রাম কলেজে সোশ্যোলজি নিয়ে পড়ছি।
– বেশ করেছো। তোমার আব্বু কী বলেন?
– আব্বু বলেন, ভার্সিটিতে পড়লেই যে লাইফ শাইন হবে এমন কোনো কথা নেই! ইচ্ছাশক্তি থাকলে কলেজে পড়েও লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব। আব্বু নিজেও কলেজে পড়েছেন, ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত দেননি।
– তো, তুমি মায়ের উপর অভিমান করে তুচ্ছ বিষয়টা নিয়ে সুইসাইড করতে চলে এসেছো!
– বিষয়টা আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হলেও তুচ্ছ না, মানুষ মানসিক প্রেশারে থাকলে যে কোনো ডিসিশন নিতে পারে।
– তুমি নিশ্চয় মুসলিম!
– হ্যাঁ!
– তোমার নামটাও তো জানা হলো না!
– সাবরিনা তিন্নি।
– তো, তিন্নি, একজন মুসলিম হিসেবেও তো তুমি সুইসাইড করতে পারো না! তুমি নিশ্চয় জানো যে, পরকাল বলে একটা মৃত্যুপরবর্তী জীবন আছে, যেটা আমরা মুসলিমদের বিশ্বাস করতে হয় না দেখেও।
– হ্যাঁ, জানি।
– আমাদের সমাজে সুইসাইড করা কী?
– জঘন্য অপরাধ।
– সেটার বাইরেও তুমি সুইসাইড করলে প্রমে তোমার বাবা-মাকে পুলিশ থানায় নিয়ে যাবে। তোমার কাছের বন্ধুদের পুলিশ গ্রেফতার করবে। এর বাইরে কত রকমের হয়রানি করবে তার হিসেব নেই। তুমি কি চাও তুমি একজনের জন্য তারা সবাই হয়রানির স্বীকার হোক! তিন্নি চুপ মেরে আছে।
এছাড়াও সুইসাইড তারাই বেশি করে যারা মনে করে পরকাল বলতে কিছুই নেই। যারা মনে করে মৃত্যুর পরপরই সে মাটির সাথে বিলীন হয়ে যাবে। তুমি কেন তাদের মতো এরকম অপরিপক্ব মানসিকতা নিয়ে সুইসাইড করতে যাবে? চাইলে তুমি তোমার কোনো স্যারকে দিয়ে তোমার মাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারতে! সেই চেষ্টা কি একবারও করেছো? একটা জীবন কি এতই সহজ? তোমাকে বড় করতে তারা কতই না কষ্ট সহ্য করেছে, এক সুইসাইডেই তুমি তাদের সব কষ্টকে ভেস্তে দিতে পারো না! তিন্নি আর কোনো জবাব দেয় না, সে কেবলই শুনে যাচ্ছে, সাথে সবুজও।
এবার আকুভাই বলল, ঠিক আছে, এবার তুমি সুইসাইড করতে পারো। তবে তোমার কাছে পনেরো মিনিট সময় নিয়েছিলাম, এখন সেটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট হয়ে গেছে বলে দুঃখিত।
তিন্নি মুখ তুলে আকুভাইয়ের চোখ পড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। আকুভাই তার চেহারাটা একেবারে স্বাভাবিক করে রাখল, যেন তিন্নি সুইসাইড করলেও তিনি কোনো বাধা দেবেন না!
তিন্নি বলল, আমি বাসায় চলে যাব।
– গুড। তোমার এই সুন্দর উপলব্ধির জন্য। তুমি কি এখনই ফিরে যাবে?
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা। আমরা অবশ্য আরেকটু পরে ফিরব। বিচে এসে বেড়ানো হয়নি। তোমাকে একা দেখে এদিকে চলে এসেছিলাম।
– আপনারা কোথায় যাবেন?
– আমরাও ওদিকেই যাব। স্টেডিয়াম পাশে জিমনেশিয়াম হলের মাঠে বইমেলা চলছে, এখান থেকে সোজা বইমেলায় যাব।
– তাহলে তো আমরা কাছাকাছিই যাব। আপনাদের সাথে গেলে কি সমস্যা হবে?
– আরে না, অবশ্যই যেতে পারো।
দুপুরে ওরা একসাথে লাঞ্চ করল সি-বিচ সংলগ্ন একটা রেস্টুরেন্টে। তারপর আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বইমেলার দিকে ফিরল।

(চলবে)

Share.

মন্তব্য করুন