বৃষ্টির পর আকাশে প্রায়ই দেখা যায় রঙধনু। শুধু আকাশে নয়, মাটিপাথরের পৃথিবীতেও দেখা দিতে পারে রংধনু। বৃষ্টির কণা বা জলীয়বাষ্প মিশ্রিত বাতাসের মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো প্রতিসরণের কারণে বাঁকা ধনুকের মতো সাতরঙের বর্ণালি আভায় সৃষ্টি হয় রঙধনু। ঠিক তেমনি পাহাড়েও ফুটে উঠেছে রঙধনুর আলোকচ্ছটা। পাহাড়ের গায়ে রঙের সমাহার। দেখতে একেবারেই শিল্পীর রঙতুলিতে আঁকা জীবন্ত রঙধনুর ছবি। বর্ণিল রঙের এসব পাহাড়ের উচ্চতা কয়েক শ’ মিটার।
চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গানসু প্রদেশের জ্যাংজি ড্যানজিয়া ল্যান্ডফর্ম জিওলোজিক্যাল পার্কে এ পর্বতমালার অবস্থান। এটি কেন্দ্রীয় উত্তর চীনের গান্সু জেলায় লিঞ্জি ও সুনান শহরে ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত, যা সারা বিশ্বের কাছে একটি বিস্ময় বলে পরিচিত। এখানকার ভূমিটি কয়েকশত মিটার উঁচু। যার অধিকাংশই প্রিচিপিটাস ক্লিফ দ্বারা তৈরি। এই ক্লিফগুলো সমভূমিতে ও নদীর পাশে অবস্থিত। সমস্ত ক্লিফগুলো গ্র্যান্ড, মসৃণ এবং ধারাল। পাহাড় সাধারণত খাড়া বা ঢালু হয়। যার কারণে পাহাড়ে উঠতে বা পাহাড় থেকে নামার সময় ভয় লাগে। কিন্তু এই স্থানটি সমতল। তবে কিছু কিছু জায়গায় উঁচু-নিচু রয়েছে।

পাহাড়ের গায়ে রঙধনু । শরীফ বাদল
এখানে পা রাখা মাত্রই পর্যটকদের চোখ ঝলসে ওঠে বেগুনি-নীল-আসমানি-সবুজ-হলুদ-কমলা-লালের বাহারে। তবে তা আকাশে নয়, এই রঙমহল পাহাড়ের গায়েই। দেখে মনে হয় শিল্পী তার মনের মাধুরী দিয়ে রাঙিয়েছেন এই পাহাড়কে। ভূতাত্ত্বিকগণ মনে করেন, জাঙিয়া ডানক্সিয়া পৃথিবীর কোনো এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলাফল। এই শিলাস্তরটির বিভিন্ন রঙ, গঠন, আকার, আয়তন ও ঘনত্ব স্তরটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। জাঙিয়া ডানক্সিয়া সবুজ, হলুদ, নীল এবং আরও অনেক রঙের সমন্বয়ে গঠিত। বিশেষজ্ঞগণের মতে, লাল পাহাড় থেকেই আস্তে আস্তে এসব রঙের সৃষ্টি হয়েছে।

পাহাড়ের গায়ে রঙধনু । শরীফ বাদলডানক্সিয়া ভূমিজোন জুড়ে অনেক লালপাথুরে স্তরের তৈরি হয়েছে। এই স্তরগুলো অদ্ভুত ও চমৎকার আকৃতির। সেখানে কোণ, টাওয়ার, মানুষ, প্রাণী, পাখি ইত্যাদির আকৃতির পাথর রয়েছে। এই পাথরগুলো এতো সুন্দরভাবে সাজানো যে দেখে মনে হয়, তারা প্রাণবন্ত এবং মেঘের ওপর দিয়ে উঁকি মেরে দেখছে। চীনের এই বিস্ময়কর পর্বতশ্রেণী নিয়ে ভূ-বিজ্ঞানীরা বলেন, এই রঙিন পাহাড় তৈরি হতে সময় লেগেছে ২৪ মিলিয়ন বছর। টেকটনিক প্লেটের সরণের ফলে এই পাহাড়ের ঢালগুলো তৈরি হয়। কিন্তু তার গায়ে এই বিচিত্র রঙের বাহার ধরে অন্য কারণে। এই পর্বত মূলত বেলেপাথরে তৈরি। হিমালয় গঠনের অনেক আগে থেকেই এই পাহাড় তৈরি শুরু হয়েছিল। বালি পাথরে জমাট বাঁধার সময়ে তাতে মিশে গিয়েছিল বিভিন্ন খনিজ, গাছপালার অবশেষ ইত্যাদি। সেই মিশ্রণগুলোই এই রঙিন দুনিয়া তৈরি করে। এই পাহাড়ের প্রাথমিক রঙটি কিন্তু একদমই লাল। তার ওপরেই জমেছে অন্য রঙের উপকরণ।
ক্রমাগত রঙের পরিবর্তনে এই পাহাড় তার বর্তমান রূপটি পেয়েছে বলেও জানান ভূ-বিজ্ঞানীরা। উত্তর-পশ্চিম চীনের এই অঞ্চল আজ জনপ্রিয় পর্যটন ক্ষেত্র। পাহাড়টি আজ রঙের পাহাড় বলে পরিচিত।

Share.

মন্তব্য করুন