গ্রীষ্মের কয়েক দিনের ছুটিতে সজীবের মা সজীবকে নিয়ে তার নানাবাড়িতে বেড়াতে আসে। গ্রামে সমবয়সী মামাতো ভাই নাবিলই তার একমাত্র সঙ্গী। সজীব নানা বাড়িতে এসে নাবিলের সাথে মিলে ভারি দুষ্টুমিতে মেতে উঠেছে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে শুধু বাগানে ছুটে বেড়ানো। খেলাধুলা খুনসুটিতে জম্পেশ সময় কাটে তাদের। সজীব নাবিলকে নিয়ে খেলতে চলে যায় উত্তরের বাগানে। এই বাগানে আগে অনেক গাছ-গাছালি ছিল। এখন শুধু হাতে গোনা কয়েকটা আমগাছ বাগানের উত্তর পাশে, আছে পশ্চিম পাশে আছে কয়েকটা তেঁতুল গাছ। বাগানের বাকি অংশজুড়ে ঘাস আর কচুগাছ জন্মে আছে। এই কচুগাছের ফাঁকে ফাঁকে তারা ফড়িং খুঁজে বেড়ায়। তাদের দু’জনেরই ফড়িং খুব ভালো লাগে। হেলিকপ্টারের মতো চার পাখা নিয়ে ফড়িংগুলো ছুটে বেড়ায় সবুজ লতা-পাতায়। লাল, নীল, খয়েরি কত রঙের ছোট ছোট ফড়িং। কী সুন্দর দুই জোড়া পাখা মেলে এক কচুগাছ থেকে অন্য কচুগাছে গিয়ে চুপ করে বসে পড়ে।
নাবিল দুই আঙুলে সামান্য থুু লাগিয়ে আস্তে আস্তে পা ফেলছে। সজীব তার পিছনে নিঃশব্দে এগোচ্ছে। ‘এই তো ধরে ফেলেছি নীল রঙের ফড়িংটা। সজীব দেখ কত বড় মাথা এটার।’
তারপর সজীব ফড়িংটাকে নিজের হাতে নিলো। বাহ, কী সুন্দর এর পাখাগুলো। আচ্ছা পাখাগুলো যদি না থাকতো তাহলে ফড়িংটাকে কেমন দেখা যেত। সজীব ফড়িংয়ের শরীর থেকে এর পাখাগুলো ছিঁড়ে ফেলে। তারপর নাবিলকে দেখিয়ে বলছে, ‘দেখ ন্যাংটা ফড়িং। হা হা হা…।’
‘ভাই কাজটা ঠিক করিসনি। ফড়িংটার অনেক কষ্ট হয়েছে।’ বললো নাবিল।
‘বাদ দে! চল এবার এটার মাথা ছিঁড়ে দেখি কেমন দেখা যায়।’
‘না ভাই। যদি তোর মাথা এই ফড়িংটা টেনে ছিঁড়তো তখন কেমন লাগতো?’
‘আরে দেখ, মাথাটা ছিঁড়ে ফেলেছি এখন কেমন লাগছে। আচ্ছা নাবিল চল একটা মজার খেলা খেলি, দেখি কে কতগুল ফড়িংয়ের মাথা ছিঁড়তে পারে। আয় আয় চল। ওই যে আরেকটা ফড়িং।’
সজীব একে একে প্রায় দশেক ফড়িং ধরে সবগুলোর পাখা এবং মাথা ছিঁড়তে থাকে। এমনটা করে সে এক পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করে। নাবিল তার এই কাজকে মোটেও সমর্থন করতে পারছে না। এগারোতম শিকারের জন্য সজীব ছুটতেই মনে হলো তার পেছনে নাবিল নেই। পেছনে তাকাতেই দেখলো তার নানাবাড়ির বাগান পেরিয়ে অন্য কোথাও চলে এসেছে। জায়গাটা সম্পূর্ণ অচেনা ঠেকলো। রাস্তা খুঁজে নাবিল আগের জায়গায় ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো, তখনি তার ঘাড়ে একটি হলুদ রঙের অদ্ভুত ফড়িং এসে বসলো। সজীব তটস্থ হয়ে কেঁপে ওঠে। মনে হচ্ছে তার শরীরটা এবার বুঝি ছিন্ন হচ্ছে। মাথাটা কেউ যেন টেনে তুলে নেয়ার চেষ্টা করছে। দুই হাত যেন দুই দিক থেকে প্রবল টান খেয়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। কী ভীষণ যন্ত্রণা! কাতরতায় মরিয়া হয়ে উঠছে নাবিল।
এক চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল সজীবের। সবাই ছুটে এলো। সজীবের মা বলে উঠলো, ‘কী হয়েছে রে? খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস?’
সজীবের স্বপ্নের রেশ এখনো কাটেনি। সামান্য হাঁপিয়ে বলল, ‘মা নাবিল কোথায়?’
‘এইতো আমি।’ নাবিল দাঁড়িয়ে ছিলো পাশেই।
নাবিলকে দেখে সজীব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আবার ঘুমিয়ে গেল এবং শুরু হলো ঠিক আগের স্বপ্ন। দু’জন শিশু হাঁটছে বাগানের ঝোঁপে ফড়িংয়ের সন্ধানে। নাবিল বলে উঠলো, ‘পেয়েছি।’
‘ধরিস না। ওদের কষ্ট হয় ভীষণ। আয় আমরা ওদের বন্ধু হই।’ বললো নাবিল।
হঠাৎ এক বিশাল ফড়িং উড়ে এলো। দু’জনই ভয় পেয়ে গেল। পরক্ষণেই দেখলো তারা বিশাল ফড়িংয়ের পিঠের ওপর। তাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে! কারো মনেই এখন আর ভয় নেই। তবে ফড়িংয়ের পিঠে চড়ে ওরা একে একে পেরিয়ে যাচ্ছে অনেক নদী সরোবর।

Share.

মন্তব্য করুন