বন্ধুরা, সাইকেলের কথা শুনলে তোমাদের মন রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে, তাই না? শুধু কি তাই? খুশিতে হাসি হয়তো একেবারে কানে গিয়ে ঠেকে। কেউ কেউ হয়তো সাইকেলে চড়ে বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্নও দেখছো। তোমরা যারা সাইকেল চালাতে ভালোবাস, সাইকেলে চড়ে ঘোরাঘুরি করতে ভালোবাস, এই সাইকেল সম্পর্কে কতটুকু তোমরা জানো? সাইকেল এলো কেমন করে? কে নিয়ে এলো সাইকেল? চলো আজ আমরা জেনে নিই সাইকেলের সব অজানা কথা।

সাইকেল এলো কেমন করে?
১৮১৭ সালে জার্মানির এক ব্যারন, নাম তার কার্ল ড্রাইজ ভন সয়্যারর্বন, তার বিশাল রাজকীয় বাগানের ভেতর দিয়ে দ্রুত গতিতে চলাচলের জন্য কাঠ দিয়ে তৈরি একটি মেশিন তৈরি করেন। এটির সামনে ও পেছনে দু’টি সমানাকৃতির চাকা, যার সামনেরটা একদিক ওদিক ঘোরানো যেতো এবং এটা সংযুক্ত ছিল উঁচু একটা ফ্রেমে যেটায় দুইপা ছড়িয়ে উঠে বসা যেত। সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি যন্ত্রটা চলতো মাটিতে পা দিয়ে ধাক্কা দিলে। সে সময় এটা পরিচিত হয় ড্রাইসিয়েন বা হবি হর্স নামে। এটা অবশ্য খুব বেশি দিন টেকেনি কারণ বাস্তবসম্মত বাহন হিসেবে এটা খুব দক্ষ কিছু ছিল না। কেবল বাগান কিংবা পার্কের বাঁধানো রাস্তাতেই এটা ভালো চলত।
পুরো দুস্তর মেটালিক বাইসাইকেল এলো ১৮৭০ সালে। প্যাডেল দুটো সামনের চাকার সঙ্গে কোনো রকম ফ্রি হুইলিং মেকানিজম ছাড়াই সংযুক্ত ছিল। টায়ারে এলো রাবারের আস্তরণ এবং অভ্যন্তর ভাগ লম্বা স্পোক দিয়ে জোরালো কাঠামো।
 

বাইসাইকেল অর্থ
বাইসাইকেল অর্থ হলো দুই চাকা। আর প্রকৃত অর্থে হাইহুইলের প্রথম এই সাইকেলটির নামই হলো বাইসাইকেল। তখনকার তরুণদের মধ্যে সাইকেলটির জনপ্রিয়তা ছিল বহুদিন, প্রায় ১৮৮০ পর্যন্ত। সে সময়কার তরুণদের গড়পড়তা ছয় মাসের আয়ের সমান ছিল এই সাইকেলটির দাম। এভাবেই শুরু হলো আধুনিক বাইসাইকেলের বিবর্তন। এলো দি ভেলোস্পিড বা বোনশেকার, উঁচু চাকার হাইহুইল বাইসাইকেল এবং তারপর একই মডেলের ট্রাইসাকেল।
ছোটদের জন্য বাইসাইকেল বাইসাইকেলে শুধু বড়রাই চড়বে, ছোটরা চড়বে না, তাই কি হয়? তাই একটু দেরিতে হলেও ছোটদের সাইকেল এলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পরই অর্থাৎ প্রায় উনিশশো আঠারোর শেষ দিকে। মিড (Mead), সিয়ার্স রয়বাক (Sears Roebuck) এবং মন্টগমারি ওয়ার্ড (Montgomery Ward) এমনি বেশ কিছু সাইকেল প্রস্তুতকারকরা বাইক ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটালো একটি নতুন ডিজাইন দিয়ে যেটাকে আজকের দিনে আমরা চিনি ‘ক্লাসিক’ বাইসাইকেল নামে।

সাইকেলের সাতকাহনহাইব্রিড বাইসাইকেল
রোড বাইসাইকেল আর মাউন্টেন বাইসাইকেলের বিভিন্ন সুবিধা এক করে তৈরি করা হয়েছে হাইব্রিড বাইসাইকেল। কম দূরত্বের রাস্তায় ব্যবহার করার জন্য এই সাইকেলের জুড়ি নেই। বেশ আরামদায়ক। উঁচু সিট আর সমানভাবে বসানো হ্যান্ডেল বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই সাইকেল। উঁচু-নিচু রাস্তা বা পাহাড়ি এলাকায় এই সাইকে চালানো যাবে না।

মাউন্টেন বাইসাইকেল
উঁচু-নিচু বা পাহাড়ের ঢালু রাস্তায় চালানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে মাউন্টেন বাইসাইকেল। কম গিয়ার তৈরি করা এই সাইকেলের সামনে ও পেছনে বসানো হয় সাসপেনশন। সাসপেনশন যুক্ত থাকায় উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তায় এই সাইকেল চালানো যায় অনায়াসে। সাসপেনশন যুক্ত থাকায় এবড়োথেবড়ো রাস্তায় চালক ব্যথা কম পান। উঁচু-নিচু ছাড়া সাধারণ রাস্তাতেও এই সাইকেল ব্যবহার করা যায়। তবে অন্যসব সাইকেলের তুলনায় এই সাইকেলের ওজন বেশি।

সাইকেলের সাতকাহনরোড বাইসাইকেল
সাধারণ রাস্তায় চালানোর জন্য বানানো হয়েছে রোড বাইসাইকেল। বিশেষ নকশা, মসৃণ ফ্রেম আর সাধারণ মাপের চাকা দিয়েই বানানো হয়েছে এই সাইকেল। এই সাইকেলের হ্যান্ডেল সামনের দিকে বাঁকানো থাকে। সাধারণ রাস্তায় চালানোর পাশাপাশি হাইওয়েতে চালানো যায় এই সাইকেল। অন্যান্য সাইকেলের তুলনায় এই সাইকেলের ওজন অনেক কম।

বিএমএক্স বাইসাইকেল
ফ্যাট বাইসাইকেলের মতো মোটা চাকা আর রিজিড মাউন্টেন বাইসাইকেলের আদলে বানানো হয়েছে বিএমএক্স বাইসাইকেল। ছোটো ছোটো চাকা আর সমান গঠনে বানানো ফ্রেমের এই সাইকেলে ছোটদের পাশাপাশি বড়দের কাছেও সমান জনপ্রিয়। আকারে ছোট হওয়ায় সহজেই এই সাইকেল নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

সাইকেলের সাতকাহনফ্যাট বাইসাইকেল
মাউন্ট সাইকেলের চেয়ে আরেকটু শক্তপোক্ত করে বানানো হয়েছে ফ্যাট বাইসাইকেল। এই সাইকেলের চাকা দুই থেকে তিন ইঞ্চি মোটা। ফলে ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে রাস্তায় চালানো যায় এই সাইকেল। মোটা ফ্রেমের চাকা হওয়ার কারণে স্যাঁতস্যাঁতে রাস্তাতেও ভারসাম্য ঠিক রাখা যায়। ওজন তুলনামূলক বেশি হওয়ার কারণে ব্যায়ামের জন্যও ব্যবহার করা যায় এই সাইকেল।

সাইকেলের সাতকাহনফিক্সড গিয়ার বাইসাইকেল
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাইকেল রেসিংয়ের জন্য বাঁকানো ট্র্যাক হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভেলোড্রোম। ভেলোড্রোম চালোনোর জন্য বিশেষভাবে বানানো হয় ফিক্সড গিয়ার সাইকেল। সাধারণ ফ্রেমে বানানো এই সাইকেলে ব্যবহার করা হয় মাত্র একটি গিয়ার। সমানভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য চালকে অবশ্যই প্যাডেল ব্যবহার করতে হবে।

সাইকেলের সাতকাহনক্রুইসার বাইসাইকেল
রঙবেরঙের ফ্রেমে সাজানো এই সাইকেলের হ্যান্ডেল কিছুটা বাঁকিয়ে পেছনের দিকে রাখা হয়। যেন চালক সিটে বসে হ্যান্ডেল ধরে সাইকেল সহজেই নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে। পড়ন্ত বিকেলে হাইওয়েতে এই সাইকেল চালানোর কোনো জুড়ি নেই।

সাইকেলের সাতকাহনট্যান্ডেম বাইসাইকেল
দুইজন একসঙ্গে চালানোর জন্য বানানো হয়েছে ট্যান্ডেম বাইসাইকেল। এই সাইকেলে মূল চালকের পেছনেই বসিয়ে দেয়া হয়েছে আর একটি সিট, সাথে যুক্ত করা হয়েছে প্যাডেল। দু’টি আলাদা প্যাডেল চাকায় চেইন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রশস্ত ফ্রেমে বানানো এই সাইকেল চালানো যায় যে কোনো স্বাভাবিক রাস্তায়। কি এই সাইকেলের নাম শুনে সাইকেলে চেপে বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বের হতে ইচ্ছে করছে? হুম, বের হতেই পারো। তবে মনে রাখবে, দু’জনে প্যাডেল ঘুরানোর সমান সুযোগ পেলেও হ্যান্ডেল কিন্তু থাকবে শুধু একজনের নিয়ন্ত্রণেই।

Share.

মন্তব্য করুন