শিশিরের মত স্বচ্ছ মনের বন্ধুরা তোমাদের জন্য আজকের লেখাটিও একটি ছোট্ট ছড়া দিয়ে শুরু করতে চাচ্ছি। ছড়াটি হলো‘একটি পেঁচার মূল্য নাকি পঁচিশ লক্ষ কয়/ এই কথাটি শুনলে পেঁচার চোখটা চেয়ে রয়/ মূল্য যদি এতই পেঁচার/ পেঁচা মারা খারাপ ন্যাচার/ এমন কথা মানলে মানুষ তবেই পেঁচার জয়।’

লক্ষ্মীপেঁচা

লক্ষ্মীপেঁচা

হ্যাঁ বন্ধুরা সত্যিই একটি পেঁচা পাখির মূল্য পঁচিশ লক্ষ টাকা। পেঁচা নিশাচর প্রাণী। দিনের বেলায়ও কখনো কখনো দেখা যায় তবে সাধারণত এটি রাতেই বেশি চলাচল করে। এটি মাংসাশী প্রাণী। এ প্রাণীটি ছোট স্তন্যপায়ী যেমন ইঁদুর খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে ল্যাবরেটরিতে একটি পেঁচা ৩০ বছর বাঁচে। বনে জঙ্গলে ধরলাম ২০ বছর বাঁচে। একটি পেঁচা সাধারণত ৫-৬টি ইঁদুর খায় প্রতি দিন। ধরলাম দিনে ১টি করে ইঁদুর খায়। তাহলে বছরে খায় ৩৬৫টি ইঁদুর। বিশ বছরে খায় ২০*৩৬৫ = ৭৩০০টি ইঁদুর। এই ৭৩০০টি ইঁদুর যে পরিমাণ খাদ্য শস্য নষ্ট করে তার মূল্য পঁচিশ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।
তাহলে একটি পেঁচার মূল্য অবশ্যই যৌক্তিক ভাবে পঁচিশ লক্ষ হয়। একটি পেঁচা মেরে ফেলার অর্থ হলো পঁচিশ লক্ষ টাকার ক্ষতি করা। কিন্তু অহরহ এই উপকারী পাখি বন্ধুটিকে আমরা মেরে ফেলছি। এদের আবাস নষ্ট করছি। ফলে পেঁচার সংখ্যা দিন দিন সাংঘাতিকভাবে কমে যাচ্ছে। যা মোটেও ভালো কথা নয়। যে কারণে এই পাখিটি সম্পর্কে আমাদের এখনই জানতে হবে এবং একে প্রকৃতিতে রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে। তোমরা জানলে খুশি হবে ইসরাইল, জর্ডান ও প্যালেস্টাইন অঞ্চলে কৃষি জমির আশপাশ দিয়ে পেঁচার জন্য বাসা বানিয়ে রাখা হয়। তাহলে এসো বন্ধুরা আমরা এই উপকারী প্রাণীটা সম্পর্কে কিছুটা জানার চেষ্টা করি।

খুঁড়ুলে-পেঁচা

খুঁড়ুলে পেঁচা

আঞ্চলিক নাম পেঁচা। পেঁচা আবার কেউবা পেচক নামেও ডাকে। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সবাই এরা নিশাচর শিকারি পাখি।
স্ট্রিজিফর্মিস বর্গভুক্ত এই প্রাণীটির প্রায় ২০০টি প্রজাতি এখনো টিকে আছে। অধিকাংশ পেঁচা ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী যেমন ইঁদুর কীটপতঙ্গ ধরে ধরে খায়। আবার কোন প্রজাতি মাছ ধরে খায়। তবে ইঁদুর হলো এদের প্রধান খাদ্য। ছোঁ মেরে পেঁচারা শিকার ধরে। শিকার ধরে রাখার জন্য এরা বাঁকানো ঠোঁট এবং নখর ব্যবহার করে।
এরা কর্ডাটা পর্বের পক্ষী শ্রেণীর স্ট্রিজিফরমিস বর্গের প্রাণী পাখি। গ্রিনল্যান্ড কুমেরু ও কিছু নিঃসঙ্গ দ্বীপ ছাড়া পৃথিবীর সব স্থানেই পেঁচারা রাজত্ব করে। বাংলাদেশে পাওয়া যায় ১৭টি প্রজাতির পেঁচা। যার মধ্যে ১৫টি স্থায়ী এবং দুটি অতিথি। পেঁচারা গাছের কোটর পাথর বা পাহাড়ের গর্ত পুরানো দালান ইত্যাদি স্থানে বসবাস করে। এরা নিজেরা কোন বাসা তৈরি করে না। বাসা তৈরি করতে পারে না। মাথাটা পেঁচার বড়। মুখখানা চ্যাপটা। মাথার সামনে চোখ। চোখের চারদিকে পালক সাজানো থাকে একে ফেসিয়াল ডিস্ক বলে। পেঁচারা চোখের কয়েক ইঞ্চির মধ্যে অবস্থিত কোন বস্তু পরিষ্কারভাবে দেখতে পায় না। শিকারকে এরা ঠোঁট এবং নখরে অবস্থিত বিশেষ এক ধরনের পালক দ্বারা অনুভব করতে পারে। এরা নিজের কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে দেখতে পায়। শ্রবণশক্তি পেঁচার খুবই প্রখর। একমাত্র শব্দ দ্বারা চালিত হয়ে এরা গভীর অন্ধকারে শিকার ধরতে পারে। এরা ইঁদুরের শস্যদানা চিবানোর শব্দও শুনতে পায়।

ভূমা পেঁচা

ভূমা পেঁচা

বন্ধুরা মেয়ে পেঁচা ছেলে পেঁচার চেয়ে আকারে ২৫% বড় হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পেঁচা প্রায় সাড়ে ৪ ইঞ্চি লম্বা এবং সবচেয়ে বড় পেঁচা ইউরেশিল ঈগল পেঁচা যা দুই ফুট লম্বা হয়। পেঁচার মুখটা মানুষের মুখের মতই প্রায়। চোখ দুটো সামনের দিকে থাকে। পেঁচারা প্রায় নিঃশব্দে উড়তে পারে। পেঁচা ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘাড় ঘোরাতে পারে।
প্রকৃতিতে যে সব পেঁচা দেখা যায় তাদের দুটো গোত্রে ভাগ করা হয়। সাধারণ পেঁচা বা স্ট্রিগিডি এবং লক্ষ্মীপেঁচা বা টাইটোনিডি। কেমন করে ডাকে তার ওপর ভিত্তি করে পেঁচার বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- ভূতুম পেঁচা, হুতুম পেঁচা, নিমপোখ পেঁচা, তুষার পেঁচা, পাহাড়ি পেঁচা, ঘাসবনের পেঁচা, ভূমা পেঁচা বনের বড় পেঁচা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বন্ধুরা পেঁচা নিয়ে নানা কুসংস্কার বা বিশ্বাসবোধ রয়েছে। এগুলো থাকতেই পারে। কিন্তু প্রকৃতিতে পেঁচার অবদান অস্বীকার করার উপায় কারো নেই। কারণ পেঁচা প্রকৃতিতে সত্যিই উপকারী এক প্রাণী। এদের আমাদের ভালোভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। এটা শুধু স্লোগান আর গলাবাজিতে হলে চলবে না। রক্ষা করাটা কার্যে পরিণত করতে হবে। তবেই ভালো থাকবো আমরা ভালো থাকবে প্রকৃতি।

Share.

মন্তব্য করুন