ম্যাজেঙ্গো! ম্যাজেঙ্গো!! এই ম্যাজেঙ্গো!!!
মোয়ারোবিনি গাছটির পিছন দিক থেকে ডাক ভেসে আসছিল। গাছের ডান দিকে গ্রামের বাঁধটি চুপচাপ পড়ে আছে। বাঁধের ওপর বা আশেপাশে কেউ নেই। নীচের মাঠে শুধু ভেড়ার পাল চরছে নীরবে।
তার দু’চোখে এখনো ঘুম লেগে আছে। হাত দিয়ে চোখ ডলে ঘুম তাড়ানোর চেষ্টা করে সে। তারপর একটু একটু করে চোখ খোলে। এক সময় পুরো চোখই খুলে যায়। দেখতে পায়, মোয়ারোবিনি গাছের নিচে ঘাসের সবুজ বিছানায় শুয়ে আছে সে। উপরে ছড়িয়ে আছে বিশাল নীল আকাশ। সূর্যের আলো ছড়িয়ে আছে চারদিকে। মৃদুমন্দ বাতাস এসে লাগছে গায়ে। কি সুন্দর! আহা, সারাদিনটাই যদি এভাবে কেটে যেত! তারপরই লাফ দিয়ে উঠে পড়ে সে। অনেক কাজ রয়েছে তার। কিন্তু তাকে ডাকল কে?
দুই.
ম্যাজেঙ্গোদের পরিবারটি বড়। পাঁচ ভাই আর দু’বোন তারা। সে সবার ছোট। আর বাবা-মা তো আছেই। না, কথাটা ঠিক হল না। একটি নয়, দু’টি মা তাদের। তার মা তাবিয়া হচ্ছে তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। তাদের পরিবারের সবাই একটু আধটু লিখতে ও পড়তে পারে বটে, কিন্তু ঠিকমত লেখাপড়া শেখেনি কেউই। এখন পরিবারে একমাত্র ম্যাজেঙ্গোর সাথেই লেখাপড়ার সম্পর্ক আছে। স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে সে।
আর সবার মত নয় সে। একটু অদ্ভুত টাইপের ছেলেই বলা যায় তাকে। অন্ধকার রাতগুলোতে প্রায় প্রতি রাতেই সে আকাশের তারা গোণে। এজন্য পুবদিকটা বেছে নিয়েছে সে। একেবারে কোণ থেকে তারা গোণা শুরু করে। যতটা পারে গুণে একটা তারাকে শেষ চিহ্ন হিসেবে রাখে। পরে আবার চেষ্টা করে সেখান থেকে গোণা শুরু করতে। তার বিশ্বাস, এভাবে গুণতে গুণতে একদিন আকাশের সব তারা সে গুণে শেষ করতে পারবে। তার মাথার মধ্যে কত যে ভাবনা সব সময় ঘোরাফেরা করে! এ জন্য লোকজনের মাঝে, সমবয়সীদের সাথে খুব একটা দেখা যায় না তাকে। একা কোথাও বসে থাকে সে। কি যেন ভাবে। তার বাবার ভেড়ার একটি ছোট পাল আছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাদের খাবার আর পানি দেয় ম্যাজেঙ্গো। এটা তার নিয়মিত কাজ।
একজন ভালো বন্ধু আছে ম্যাজেঙ্গোর। তিনি হচ্ছেন মায়ুনগা। গ্রামের স্কুলের সবচেয়ে প্রবীণ শিক্ষক। ঐ স্কুলে যখন শিক্ষকের অভাব দেখা দিয়েছিল তখন তিনি স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা শুরু করেন। নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক তিনি। স্কুলের ছেলে-মেয়েদের খুব যত্ন করে ভালোবেসে পড়ান। তাদের পড়িয়ে শান্তি পান। ম্যাজেঙ্গো ছাত্র হিসেবে বেশ ভালো, কিন্তু আর সবার চেয়ে একটু আলাদা। তাই তাকে বিশেষ স্নেহ করেন তিনি।
এত বড় সংসারের সব সদস্যের জন্য আহার যোগানো চাট্টিখানি কথা নয়। কিছু জমি আছে তার বাবার। উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে হয় ম্যাজেঙ্গোর বাবাকে। তারপরও কষ্টেসৃষ্টে চলে সংসার। সবার বড় তিনভাই বাবার সাথে দিনভর জমির কাজ করে। তার চেয়ে একটু বড় ভাইটি বাড়ি দেখাশোনা করে। সারা দিনে দু’বার মাত্র খেতে পায় তারা। প্রতিদিন সকালে নাস্তা হিসেবে সবার জন্য বরাদ্দ হচ্ছে উগালি (ভুট্টার আটা থেকে তৈরি মোটা রুটি) ও এক কাপ চা। সারাদিন আর কিছু মেলে না। তারপর সন্ধ্যায় আবার উগালি ও সবজি।
ক’দিন থেকে একটি নতুন ভাবনা ম্যাজেঙ্গোকে পেয়ে বসেছে। তা হচ্ছে আকাশে ওড়া। মানুষজন বিমানে চড়ে দেশ-বিদেশে যায়। তাদের নিয়ে বিমানগুলো আকাশের কত উঁচু দিয়ে উড়ে যায়। কি মজা! অত উপরে উঠে মানুষের কেমন লাগে, তাদের মনের অবস্থা কেমন হয় তা খুব জানতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন কারো দেখা সে পায়নি যে বিমানে চড়েছে। বড় হয়ে বিমানে সে চড়বেই। পাড়ি দেবে অনেক দূরের পথ। কি যে মজা হবে তখন! সে কথা মনে করে মুখে হাসি ফুটে ওঠে তার। সে শুনেছে, কোনো কিছু যদি মনপ্রাণ দিয়ে চাওয়া যায় তাহলে কোনো না কোনো সময় তা ঠিকই পাওয়া যায়। ম্যাজেঙ্গো মনে মনে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে তার বিমানে চড়ার আশা যেন পূরণ হয়। ক্লাস সেভেনের ছেলেদের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার দিনে অন্য ছাত্রদের মত ম্যাজেঙ্গোও স্কুলে হাজির হয়। স্কুলে একটি নিয়ম আছে। বার্ষিক ফলাফলে যারা প্রম দশজনের মধ্যে থাকবে, স্কুলে তাদের পরবর্তী পড়াশোনার খরচ গ্রামের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। ফল ঘোষণা হলে দেখা গেল, ম্যাজেঙ্গো তাদের মধ্যে নেই। থাকলে খুবই ভালো হত, সে ভাবে। তাহলে তার দরিদ্র বাবার একটু হলেও উপকার হত। কিন্তু এবারে তার স্থান বারোতম। এখন পড়তে হলে তাকে নিজের খরচে পড়তে হবে। কিন্তু তার দরিদ্র বাবা তার লেখাপড়া করার খরচ চালাতে হয়ত রাজি হবেন না। খবরটা বাবার কানে পৌঁছে। তিনি ম্যাজেঙ্গোকে বলেন-
‘আমি আর তোমার পড়ার খরচ চালাতে পারব না।
কোনো কাজটাজ দেখে সেখানে লেগে যাও। দুটো পয়সা ঘরে আনো। তাতে আমার উপকার হবে।’ ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় তার। তার অন্যথা হবে না। পরদিন সকালের খাবার খেল না সে। খেতে ইচ্ছে করল না। সে জানে, তার বাবা যা বলেছে তাই করবে, তার অন্যথা হবে না। তার অর্থ তার আর লেখাপড়া হবে না। বিমানেও কোনোদিন চড়া হবে না তার। অনেক ভাবলো সে। কিন্তু কোনো পথ খুঁজে পেল না।
তিন.
দু’ বছর পেরিয়ে গেছে। ম্যাজেঙ্গোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ। তার একরোখা বাবার যেমন কথা তেমন কাজ। ছেলেকে নিজেদের ভেড়ার পাল চরানোর কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। সকালে ভেড়াগুলো নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে সে। চলে যায় বাঁধের নিচে পড়ে থাকা মাঠে। সেখানে প্রচুর ঘাস। সারাদিন ধরে ভেড়া চরিয়ে সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি ফেরে। তার বাবা ছোট ছেলের উপর খুব খুশি। কারণ, কাজে কোনো ফাঁকি দেয় না সে। দু’বছর হয়ে গেছে। ভেড়ার পাল চরাচ্ছে সে। এ দু’বছরে ভেড়ার পাল যেমন বেড়েছে তেমনি বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। ভেড়া বিক্রি করে কিছু বাড়তি আয়ও হয়েছে তার বাবার, যা সংসারের খুব কাজে লেগেছে।
স্কুল ছেড়ে ভেড়া চরানোর কাজে দিন কাটালেও লেখাপড়া করার কথা ভোলেনি ম্যাজেঙ্গো। আর বিমানে চড়ার আকাক্সক্ষাও তার মন থেকে মুছে যায়নি। প্রতিদিন ভেড়ার পাল নিয়ে বাড়ি থেকে যখন সে বেরোয় তখন তার হাতে থাকে একটি ছোট লাঠি আর কাঁধে একটি ঝোলা। তার মধ্যে থাকে তার বই-খাতা-কলম। বাঁধের নীচের মাঠে ভেড়ার পাল চরতে দিয়ে সে বসে যায় মোয়ারোবিনি গাছের নীচে। সেটিই হয়ে ওঠে তার স্কুলের ক্লাস রুম। মন দিয়ে পড়াশোনা করে সে। ইংরেজি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, ভূগোল, অংকসহ সবগুলো বিষয়েই তার সমান মনোযোগ। ওদিকে ভেড়ার পাল আপন মনে মাঠে ঘাস খেতে থাকে। এদিকে সকাল থেকে একটানা দুপুর পর্যন্ত পড়াশোনা করে সে। নিয়মিতভাবে নিজেই শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজের পড়া ধরে। মাঝে দু’একবার লাঠি হাতে উঠে গিয়ে ভেড়ার পালটার চারপাশে একটা চক্কর দিয়ে আসে। যেন জানিয়ে দেয়- আমি আছি। দুপুরে সূর্য তাতিয়ে উঠলে গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়। তারপর স্কুলের বইয়ের বাইরের বইগুলো পড়ে। সেগুলোতেও তার ভীষণ আগ্রহ।
প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ফেরার পর শুরু হয় তার আরেক কাজ। সে চলে যায় শিক্ষক মায়ুনগার কাছে। হ্যাঁ, পৃথিবীতে এমন দরদী মানুষ দু’একজন আছে বলেই ম্যাজেঙ্গোদের মত কিছু দরিদ্র, অসহায় ছেলের স্বপ্ন বুঝি বেঁচে থাকে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় ম্যাজেঙ্গোর প্রতি মায়ুনগার স্নেহ যে আরো বেড়েছে তা বুঝতে তার কোনো অসুবিধা হয় না। তাকে নিয়মিত পড়া দেখিয়ে দেন তিনি। সে সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাসসহ নানা ধরনের বই এনে দেন তাকে। কোনো কোনে সময় পুরনো হযে যাওয়া খবরের কাগজ ও পত্রিকাও এনে দেন। সে সব বই-পত্রিকা খুব আগ্রহের সাথে পড়ে ম্যাজেঙ্গো। তার সামনে উন্মোচিত হয় বিশাল পৃথিবী, জানা হয় নানা মানুষ ও বিচিত্র ঘটনার কথা। সেই সাথে মায়ুনগা তার জন্য বড় একটি কাজ করেছেন। যদিও সে স্কুলে যেতে পারে না, স্কুল থেকে তার নাম কাটাতে দেননি তিনি। তাছাড়া তার স্কুলের বেতনও তিনি গোপনে পরিশোধ করে যাচ্ছেন। এবার স্কুল ফাইনালের বছর। মায়ুনগা খুব চেষ্টা করেছেন। তাই দু’বছর স্কুলে না গেলেও ম্যাজেঙ্গো এবার বছর শেষে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবে।
এর মধ্যে মায়ুনগার সহযোগিতায় একটি কাজ করেছে সে। তিন মাস আগে তিনি ব্যাপারটি ম্যাজেঙ্গোকে জানিয়েছিলেন। তাঞ্জানিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় আফ্রিকা মহাদেশের স্কুল পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। তবে এর মূল উদ্যোক্তা ইউনেস্কো। রচনার বিষয় ছিল- ‘একজন স্কুল ছাত্রের স্বপ্ন’। ইউনেস্কোর তরফ থেকে এতে প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে দশ হাজার মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে থাকা আরো চারজনকেও পুরস্কৃত করা হবে। সেই সাথে এ পাঁচজনকে এক সপ্তাহের জন্য নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে বেড়ানোর সুযোগ দেয়া হবে। সেই ব্যয়ও ইউনেস্কোই বহন করবে।
মায়ুনগার উৎসাহে তাতে অংশ নেয় ম্যাজেঙ্গো। অনেক খেটে খুটে একটি রচনা লিখে ফেলে। তার লেখা রচনাটি পড়ে বিস্মিত ও মুগ্ধ হন তিনি। তার মনে হয়, ম্যাজেঙ্গোর জ্ঞান, চিন্তার গভীরতা এবং কঠিন বিষয়কে সুন্দর ও সহজ ভাষায় প্রকাশের নৈপুণ্য অত্যন্ত প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি স্কুলের হেড টিচারের মাধ্যমে যথাসময়ে লেখাটি পাঠিয়ে দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তবে এর পরে কী হয়েছে, ঐ রচনা প্রতিযোগিতার ফল প্রকাশ হয়েছে কিনা, সে খবর তিনি আর রাখেননি। হয়ত এ নিয়ে তার মনে তেমন বড় কোনো প্রত্যাশা জাগেনি। আর ম্যাজেঙ্গো নিজেও ব্যাপারটা ভুলে গেছে।
চার.
স্কুলের শিক্ষকদের রুমে বসেছিলেন মায়ুনগা। ক্লাসে যাবার সময় হয়েছে। এ সময় তিনি স্কুলের মধ্যে একটি গাড়ি ঢুকতে দেখলেন। একটু আশ্চর্যই হলেন তিনি। তাদের এই প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামের স্কুলে গাড়ি নিয়ে আবার কে এল! যাক, পরে না হয় জানা যাবে। চক-ডাস্টার হাতে ক্লাসে যাওয়ার জন্য চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান তিনি। দরজায় পৌঁছেন। এ সময় স্কুলের পিয়ন ছুটে আসে। জানায়, হেড টিচার তাকে এক্ষুনি যেতে বলেছেন। অবাক হয়ে তার পিছনে হেঁটে হেড টিচারের রুমে পৌঁছেন মায়ুনগা। সেখানে দু’জন অপরিচিত মানুষ বসে। দেখেই বোঝা যায়, উঁচু পদের লোক তারা। তাকে দেখে হেড টিচার বলেন-
‘আসুন মি. মায়ুনগা। দারুণ একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। তার আগে আপনার সাথে এই স্যারদের পরিচয় করিয়ে দেই। ইনি তাঞ্জানিয়ার শিক্ষা দফতরের মহাপরিচালক মাইকেল চাচা। আর ইনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রিচার্ড জোহান। তা আপনার ছাত্র ম্যাজেঙ্গো কোথায়?’
বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন মায়ুনগা-
‘কেন? কী হয়েছে? ম্যাজেঙ্গো তো স্কুলে আসেনি। বাড়িতে আছে বোধ হয়।’
ম্যাজেঙ্গো যে অনেকদিন স্কুলে আসে না তা আর বলতে পারলেন না তিনি।
এবার কথা বলেন মাইকেল চাচা-
‘মি. মায়ুনগা, ইউনেস্কো রচনা প্রতিযোগিতায় আপনাদের স্কুলের ছাত্র ম্যাজেঙ্গো প্রথম হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, তাঞ্জানিয়ার জন্য এটা এক বিরাট সম্মান। আমরা গতকাল রাতে খবরটি পেয়েছি। শিক্ষামন্ত্রী ভীষণ খুশি হয়েছেন। তিনিই আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন। পনেরো দিনের মধ্যে নিউইয়র্কেত ইউনেস্কো সদর দফতরে যেতে হবে তাকে। সেখানে আনুষ্ঠানিক ভাবে পুরস্কার প্রদান করা হবে। যেহেতু সে স্কুলে আসেনি, তাই তাকে অভিনন্দন জানাতে আমরা তার বাড়িতে যাব। চলুন। আমাদের হাতে সময় কম।
মায়ুনগার মনে হল, সারাজীবনে এর চেয়ে খুশির আর কোনো খবর তিনি শোনেননি। দুই বিশিষ্ট অতিথি ও হেড টিচারকে সাথে নিয়ে ম্যাজেঙ্গোদের বাড়ি পৌঁছলেন মায়ুনগা। কয়েকটি ছোট ছেলে-মেয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় খেলা করছিল। তাদের কাছে প্রথমেত তার বাবার খোঁজ করলেন তিনি। জানতে পারলেন তার বাবা সকালেই মাঠে চলে গেছে কাজ করতে।
‘ম্যাজেঙ্গো কি বাড়িতে আছে?’ জিজ্ঞেস করেন মায়ুনগা।
‘না, ম্যাজেঙ্গোও বাড়িতে নেই।’
বাইরের লোক কথা বলছে শুনতে পেয়ে কথা শুনে ম্যাজেঙ্গোর মা ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। মায়ুনগাকে চেনেন তিনি। তাকে দেখে তার কাছে এগিয়ে যান মায়ুনগা। আর সবার পরিচয় করিয়ে দেন তার সাথে। তারপর আনন্দের খবরটি জানান তাকে। ম্যাজেঙ্গোর মা খবরটি শুনেত প্রথমে কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে থাকেন। তারপর হঠাৎ করেই নড়ে ওঠেন তিনি। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাজেঙ্গোর ভাইকে পাঠান তাকে ডেকে আনতে। তাকে বলেন-
‘এক্ষুনি যেন সে আসে। আমার কথা বলবি। একটুও যেন দেরী না করে।’
পাঁচ.
এবার ভাইকে দেখতে পায় ম্যাজেঙ্গো। সেই তাকে ডাকছিল। কী ব্যাপার? ভয়ের এক দমকা হাওয়া তার বুকে ঝাপটা মারে। গত দু’বছরে বাড়ি থেকে তো তাকে কেউ ডাকতে আসেনি। তাহলে! ভয়ংকর কিছু ঘটেছে কি? ভাইকে জিজ্ঞেস করে সে-
‘কী রে, কী ব্যাপার? কেন এসেছিস?’
সারা পথ দৌড়ে এসেছে ভাই। হাঁফাতে হাঁফাতে বলে-
‘শিগগির বাড়ি যা। মা যেতে বলেছে। এক্ষুনি।’ ভাই বলে।
ম্যাজেঙ্গো বলে-
‘এখন বাড়ি যাব? কিন্তু কেন? কী হয়েছে?’
ভাই বলে-
‘তুই নাকি বড় কি পুরস্কার পেয়েছিস। দু’জন বিরাট লোক এসেছে, সরকারী লোক। সাথে স্কুলের হেড টিচার আর মাইয়ুনগা। যা, শিগগির যা। দেরী করিস না। তুই না ফেরা পর্যন্ত ভেড়ার পাল আমি দেখছি। যা, দৌড়া।’
ম্যাজেঙ্গো বলে-
‘তাহলে তুই ভেড়ার পালের দিকে খেয়াল রাখিস। গাফলতি করিস না যেন। আমি তাড়াতাড়িই ফিরব।’
মাটি থেকে নিজের ঝোলাটা তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে দৌড়ায় ম্যাজেঙ্গো। তার পিছনে পড়ে থাকে বাঁধের নীচের ছড়িয়ে থাকা মাঠ, ভেড়ার পাল। বিস্ময় তার দৌড়ের গতিকে দ্রুততর করে। ম্যাজেঙ্গো বাড়ির দিকে দৌড়ায়। সে জানে না, এখানে তার আর কখনো ফেরা হবে না।
*তাঞ্জানিয়ার তরুণী লেখিকা এলিস রিচার্ডের জন্ম ১৯৯১ সালে। রাজধানী দার-এস-সালামে থাকেন। ছোটদের জন্য গল্প লিখে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। ইংরেজি গল্পটির মূল নাম ‘ফেইথ’। এটি ইন্টারনেট থেকে নেয়া হয়েছে।