একজন ভালো মানুষ কেমন হতে পারে, এ কথা ভাবতেই প্রথমে যার চেহারাটা চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে, সে হচ্ছে বাবা। জারীর এখনো কিশোর। তাই সুযোগ হয়নি অনেক মানুষের সাথে মেশার। অনেক মানুষকে পরখ করার সময়ও
আসেনি। শুধু বাবাকেই দেখেছে দু’চোখ ভরে। তাই বাবার ভেতরের সৌন্দর্যটা সে অনুভব করতে পারে হৃদয় দিয়ে। বাবার অনেক ভালো কাজের মধ্যে একটা কাজ তাকে বেশি আকর্ষণ করে। আর তা হচ্ছে, মানুষকে সুন্দরের পথে আহ্বান। সত্যের পথে ডাকা। বাবা যখন বাইরে বের হন, সুযোগ পেলেই বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলেন। মিষ্টি ভাষায়। কোমল সুরে। খোঁজ-খবর নেন। বলেন, কোন কাজে আল্লাহ খুশি হন। কোন কাজে জীবন সুন্দর হয়। কো কাজে নিশ্চিত হয় জান্নাত। এমনকি, রিকশায় চড়েও রিকশাওয়ালা মানুষটির সাথে প্রাণ খুলে কথা বলেন। জানতে চান সবকিছু। এরপর বলেন, ভাই, আজ সব সালাত আদায় করেছেন তো? হ্যাঁ বললে, ধন্যবাদ দেন। না বললে, বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, পরকালের কষ্ট দুনিয়ার চেয়েও বেশি। আর আল্লাহকে খুশি করতে পারলে, জান্নাতে মনেই থাকবে না পৃথিবীর কষ্টের কথা!
একদিন জারীর বলল, বাবা! তুমি যে কাজ করছো, এর বিনিময়ে কী পাবে তুমি? আর না করলেইবা কী এমন ক্ষতি হবে? বাবা বললেন, আমি আল্লাহর আদেশ পালন করছি। আর এ আদেশ পালন না করলে, আমাকেও শাস্তি পেতে হবে। যদি নিজে অনেক ভালো কাজ করি, তারপরও। এরপর একটি হাদিস শোনালেন। যেখানে একটি উপমা দেয়া হয়েছে এভাবে-
“একটি জাহাজ। যাতে একটি গোত্র আরোহণ করল। কেউ নিচতলায়, কেউ ওপরতলায়। নিচতলার লোকেরা ওপরতলায় পানি আনতে গেলে ওপরের লোকজন কষ্ট অনুভব করত। তাই, নিচতলার এক লোক কুঠার দিয়ে জাহাজের তলা ছিদ্র করতে লাগল। এটা দেখে ওপরের লোকেরা বলল, কী হয়েছে তোমার? সে বলল, তোমরা কষ্ট পাও, অথচ আমার পানির প্রয়োজন। এখন যদি তারা তার হাত ধরে এ কাজ থেকে দূরে রাখে, তাহলে তারা তাকেও বাঁচাবে, নিজেরাও বাঁচবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দেয়, তাহলে তাকেও ধ্বংস করবে, নিজেরাও ধ্বংস হবে।” (বুখারি)
জারীর বুঝল যে, কাউকে মন্দকাজ করতে দেখলে তা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। দিতে হবে সুন্দর উপদেশ। আর তাই তো, বাবার পথ ধরেই হাঁটতে চায় সে। মানুষকে ডাকতে চায় সত্যের পথে, সুন্দরের পথে।

Share.

মন্তব্য করুন