নতুন বছর মানেই নতুন আনন্দ। নির্মল আনন্দই মানুষকে সুন্দর হতে শেখায়। আমরা আনন্দের ভেতর দিয়ে সুন্দর হবো। আনন্দের ভেতর দিয়েই শিখব। শিখতে শিখতেই বড় হবো। শেখার ভেতর দিয়ে বড় হলে সত্যিই আমাদের ভবিষ্যৎ আরো উন্নত হবে। আরো সুন্দর হবে। প্রাণবন্ত হবে। আমরা বড় হতে চাই। আরো বড়। অনেক বড়। এই বড়, দেহে নয় কিংবা সম্পদেও নয়। মানুষ হিসেবে বড়। মন ও মননের দিক থেকে বড়। মনের দিক থেকে বড় না হলে কোনো নতুনকে স্বাগত জানানো যায় না। নতুনকে গ্রহণ করা যায় না। বরণ করা যায় না। নতুনকে গ্রহণ করা না গেলে মানুষ সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। সঙ্কীর্ণতায় ভোগে। মনের দিক থেকে ছোট হয়ে যায়। ছোট মন দিয়ে কখনো বড় কাজ করা যায় না। দিন দিন করে মাস যায়। মাস মাস করে বছর। বছর বছর করে বেড়ে ওঠে জীবন। এভাবেই জীবনের সাথে জীবনকে জোড়া দিয়ে আমরা পথ চলি। আমরা জীবনের জন্য কাজ করি।

জীবনের জন্য এগিয়ে যাই। জীবনের জন্যই পথ চলি। এই পথ চলার মধ্যেই প্রতিদিন নতুন নতুন পরিবেশের সাথে দেখা হয়। এভাবেই আমরা দেখি। দেখতে দেখতে এগিয়ে যাই ভবিষ্যতের দিকে। যে দিনটি চলে যায় সে তো আর ফিরবে না। যে বছর চলে যায় সে বছরও আর ফেরে না। তবুও আমরা চেয়ে থাকি। চেয়ে চেয়ে দেখি গেল বছরটিকে। কিভাবে এলো বছরটি। কিভাবে গেল। খুব অল্প দিনেই যেন চলে গেল। এখন যেন সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। যেন ফুড়ৎ ফাড়ৎ করে চলে যায়। বছর শেষ হয়ে যায়। অথচ টেরই পাওয়া যায় না।
এ কথা খুব সত্য যে, আমরা টের পাই বা না পাই সময় তার নিজের গতিতে চলেই যাবে। কেননা সময় তার নিজের পায়ে হাঁটে। সময় অনন্ত। তার সীমা পরিসীমা নেই। অনন্ত থেকে এসে অনন্তেই মিলে যায়। গত বছরটাও সেই অনন্তের সাথী হয়ে গেছে। সময় তো যাবেই। কারো জন্য সে অপেক্ষায় থাকে না। এ কথা আমরা সবাই জানি। জানি কিন্তু আমরা সবাই সময় সম্পর্কে সচেতন থাকি না। সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগাতে শিখি না কিংবা কাজে লাগাই না। যারা ছাত্র তারা সময় অনুযায়ী লেখাপড়া শেষ করার চেষ্টা করবে। শিক্ষক যিনি তিনিও সময়মতো তার ছাত্রদের পাঠদান করবেন। পাঠদানের জন্য প্রস্তুতি নেবেন। শিক্ষক সময়কে কাজে লাগলে ছাত্ররাও কাজে লাগাতে বাধ্য হবে। বাধ্য না হোক অন্তত সময়কে কাজে লাগানোর কৌশল শিখতে পারবে। যিনি ব্যবসা করেন তাকেও সময়মতো ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। একজন সাংবাদিককেও সময়ের প্রতি অনেক যত্নশীল হতে হয়। আসলে সময়ই তো জীবন। সুতরাং আমাদের সবার উচিত সময়কে খুব সুন্দর করে ব্যবহার করা।

পৃথিবীতে যারা বড় হয়েছেন, বিখ্যাত হয়েছেন তারা প্রত্যেকে সময়কে খুব সচেতনভাবে কাজে লাগিয়েছেন। প্রয়োজন মতো সময়কে ব্যবহার করেছেন। সময়ের সিঁড়ি বেয়ে তারা বেড়ে উঠেছেন। সময়ের সেই সিঁড়িটি আমাদের চিনে নিতে হবে। সিঁড়িতে আরোহণ করার কৌশলও জানতে হবে। তবেই আমরা বড় হতে পারবো। আমাদের সব আশা-আকাক্সক্ষার কথা জানাতে পারবো। যে সময় চলে যায় আমরা তার দিকে বেশিক্ষণ চেয়ে থাকি না। বরং সামনের জন্য অপেক্ষায় থাকি। অপেক্ষা করি নতুনের। নতুনকে স্বাগত জানাতেই আমাদের মন আকুপাকু করে। নতুনে প্রবেশ করতে যদিও ভয় থাকে। তবুও কেন যেন নতুনই সুন্দর।
নতুন জামা-জুতা। নতুন পরিবেশ। নতুন অনুষ্ঠান। এমনকি নতুন দিনও। নতুন বছর নতুন দিন নিয়েই তো আমাদের সামনে হাজির হয়। আমরা প্রাণভরে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। ভাবি নতুন বছর আমাদের আরো নতুন কিছুর সন্ধান দেবে। আরো নতুন সাফল্য দেবে। সাফল্য মানেই তো আরো আনন্দ, আরো উচ্ছ্বাস। আরো বেশি উৎসব। সাফল্যের উৎসবে মানুষ নিজেকে জানতে আরো বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠে।

জীবনে যারা সাফল্য অর্জন করে তারা বরাবরই উদার হয়। তাদের উদারতায় অন্য মানুষেরা উৎসাহিত হয়। মানুষ প্রকৃতি থেকে শেখে। প্রকৃতির সচ্ছলতায় নিজেরা সচ্ছল হয়। প্রকৃতি সব সময় নতুন থাকে। সতেজ থাকে। গাছগাছালি, ফুল, পাখি, বৃক্ষলতা এসবই কেমন তরতাজা। কেমন সবুজ শ্যামল সুন্দর বুড়ো পাতাগুলো ঝরে যায়। বেরিয়ে আসে নতুন পাতা। নতুন পাতার পাশে আসে নতুন কুঁড়ি। নতুন কুঁড়িতে হয় নতুন ফুল। আর নতুন ফুলে মন ভরে ওঠে। মানুষের জীবনে প্রতিটি মুহূর্ত অতি গুরত্বপূর্ণ। তাই মুহূর্তকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। কাজ করার ক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। তা হচ্ছে, যে কাজটি আমরা করব তা যেন সবচেয়ে সুন্দর কাজ হয়। সবার চেয়ে ভালো হয়। এমনকি আমি যে কাজটি গতকাল শেষ করেছি আমার সে কাজটি থেকেও যেন আজকের কাজটি উন্নত হয়। তাহলেই বুঝতে হবে আমরা প্রতিদিন এগিয়ে যাচ্ছি উন্নতির দিকে। সুন্দরের দিকে।

নতুন বছরে সবারই ব্যক্তিগত পরিকল্পনা থাকা চাই। সামষ্টিক পরিকল্পনা তো থাকবেই। থাকবে জাতীয় পরিকল্পনা। মূলত একটি সুন্দর পরিকল্পনা কাজকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এমনকি কাজের সাফল্য নির্ভর করে তার সঠিক পরিকল্পনার ওপর। দুর্বল পরিকল্পনা কিংবা অসম্ভব পরিকল্পনা কোনোটাই কাজের ক্ষেত্রে সহজে সাফল্য এনে দেবে না। বরং অসম্ভব পরিকল্পনা কাজের সাফল্যকে নষ্ট করে দিতে পারে। সফল মানুষেরা বরাবরই সুন্দর পরিকল্পনা নেন আগে। তারপর সে কাজের কৌশল শিখে নেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজের কৌশলও জানতে হবে কিন্তু। যেমন একজন ছাত্র সে কি এক সাথে তার দশটি বিষয় পড়তে পারবে? তাহলে কিভাবে পড়তে হবে। পড়তে হবে একটি একটি করে। এবং যে বিষয়ে যে দিন পড়া প্রয়োজন সে দিন সে বিষয় পড়তে হবে।
আবার দেখা যায়, একটি ক্লাসে একজন শিক্ষক একটি বিষয়ই কিন্তু পড়ান। একজন শিক্ষক একসাথে দু-তিনটি বিষয় পড়ানোর কথা ভাবতেই পারেন না। কেন পারেন না? পারেন না এ কারণে যে, একটি করে পড়ানোই পাঠদানের কৌশল। শিক্ষক এই কৌশলকে অনুসরণ করে থাকেন। অন্য দিকে একটি বিষয়ে পাঠদান করলেও পাঠদানেরও কিন্তু কৌশল আছে। একজন শিক্ষককে সেই কৌশলও কিন্তু জানতে হয় এবং জানতে হয় ছাত্রদের তারা কোন কৌশলে পাঠটি বুঝে নেবে। এভাবেই কৌশল শিখেই শিক্ষক-ছাত্রকে অগ্রসর হতে হয়। একই কথা প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে। প্রতিটি কাজের কৌশল থাকে। একই কাজ একেকজন একেকরকম করে। প্রতিটি ছাত্রও তার নিজস্ব কৌশলে লেখাপড়া করে থাকে একটি বছর শেষ হয়ে গেল। কত হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার ভেতর দিয়ে চলে গেল বছরটি। নতুন বছরের শুরুতে আমাদের কিন্তু ভাবতে হবে আমরা গেলো বছরে কেমন ছিলাম। ভাবতে হবে আমাদের কী কী কাজ করার ছিল। কী কী করেছি, কোন্কো নটা বাকি থেকে গেছে। যে কাজগুলো করেছি তা কেমন করে করেছি এবং তার ফলাফল কেমন হয়েছে। আর যা করতে পারিনি তা কেন হলো না। না হওয়ার পেছনে কী কী সমস্যা সক্রিয় ছিল। কেন আমরা পুরোপুরি সাফল্য লাভ করতে পারিনি। আমরা কী ইচ্ছে করলে ব্যর্থতা এড়িয়ে যেতে পারতাম? এসব চিন্তা আমাদের করতে হবে নতুন বছরকে সামনে রেখে। নতুন বছরে আরো ভাবতে হবে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে। যেসব কাজ গেল বছর আমরা করতে পারিনি অথচ করা খুবই দরকার তা আমাদের করতে হবে নতুন বছরে। সাথে আরো নতুন প্রয়োজনীয় কাজ হাতে নিতে হবে। যে কাজের মাধ্যমে আমরা হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাবো। এগিয়ে যাবো উন্নতি ওআধুনিকতার পথে। আমাদের উন্নতির পথ আমাদের খুলতে হবে। আমাদের সাফল্যের আকাশ আমাদের জাগাতে হবে।

গঠনমূলক সুন্দর কাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদের গড়ে তুলব। গড়ে তুলব আমাদের ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশকে নিয়েও ভাবতে হবে। আমরা যারা এই সবুজ শ্যামল বাংলাদেশের নাগরিক। যারা বাংলাদেশকেই নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করেছি। তাদের প্রত্যেকের দেশ নিয়ে ভাবতে হবে। জাতি নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে এ কথা শুধু মুখে বললে হবে না। কাজের মাধ্যমে আমাদের প্রমাণ করতে হবে। এ দেশের আলো-বাতাস আর মাটি-পানিতে আমি, আমরা বেড়ে উঠেছি। অতএব এই দেশকে ঘিরে আমাদের স্বপ্ন থাকতে হবে। এই দেশকে ঘিরে আমাদের পরিকল্পনাও থাকতে হবে। যারা ভাবেন এই দেশ মাটি আমাদের অস্তিত্বের সাথে জড়িত তারা নিঃসন্দেহে দেশকে ভালোবাসেন। জাতিকে ভালোবাসেন। দেশ-জাতিকে ভালোবাসতে না পারলে প্রকৃতপক্ষে নিজেকেও ভালোবাসা যাবে না। আর যে নিজেকে ভালোবাসতে না জানে সে অন্যকেও ভালোবাসে না। সুতরাং আমরা নতুন বছরে নতুন আয়োজন করবো। নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাবো ভবিষ্যতের দিকে। আমাদের চলার গতি বাড়াবো। আমাদের সাফল্যের ক্ষেত্র বাড়াবো। এই হলো আমাদের নতুন বছরের নতুন স্বপ্ন।

Share.

মন্তব্য করুন