: আব্বু, ওই দেখো ছোট্ট একটা কুমির!
: কী বলছো তাশভিক! আমাদের ঘরে কুমির?
: জি আব্বু। ওই, ওই যে দেখো ছোট্ট একটা কুমির দেয়ালের ঐ কোনায়?
: (হা হা হা!) ওটা তো টিকটিকি। ওটা আবার কুমির হতে যাবে কেন?
: আমি ইউটিউবে অনেকগুলো ভিডিও দেখেছি আব্বু। সেখানে দেখলাম ওই রকম কুমির। তবে ওই কুমিরগুলো ছিল সাইজে অনেক বড়। আর এই কুমিরটা ছোট।
: আরে বাবা দেখতে একই রকম হলে কী আর কুমির হবে। আসলে এগুলো টিকটিকি। এগুলো আমাদের বাসা বাড়িতে থাকে। আর কুমির ভয়ানক প্রাণী। থাকে পানিতে। তুমি তো ডিসকভারিতে দেখেছো যে পানিতে লুকিয়ে থেকে কিভাবে প্রাণী শিকার করে।
: জি আব্বু, আমি সেদিন দেখলাম একটা পুকুরের মধ্যে কিছু হরিণ পানি খেতে আসছে। পানিতে লুকিয়ে থাকা কুমির লাফ দিয়ে এক হরিণ ছানাকে কামড়িয়ে ধরল। আচ্ছা আব্বু, এই টিকটিকি যে সারাদিন এখানে ঘরের ভিতর থাকে। এরা কী খায়?
: তাশভিক, দেখো কুমির যেমন পশু-পাখি শিকার করে জীবিকা জোগাড় করে। তেমনি টিকটিকিও নানা ধরনের পোকা-মাকড় শিকার করে জীবন ধারণ করে।
: আব্বু, কী কী পোকা-মাকড় শিকার করে টিকটিকি?
: টিকটিকি ঘরের দেয়ালে বা বেড়াতে থাকে। চুপ করে থেকে মশা, মাছি, পিঁপড়া জাতীয় কীট-পতঙ্গ শিকার করে। এ ধরনের কীট-পতঙ্গ খেয়ে আমাদের অনেক উপকার করে।
: আচ্ছা আব্বু, টিকটিকি কি শুধুই আমাদের উপকার করে?
: না, না। শুধু উপকারই করে না। অনেক বড় ধরনের ক্ষতিও করে এই টিকটিকি। একটা ঘটনা বলি শোনো। তুমি তো তোমার বড় ফুফুকে চেনো?
: জি আব্বু। মনোয়ারা ফুফি। ওনার বাড়ি গাবরোলে।
: হ্যাঁ, তোমার ওই ফুফু। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের কথা। তখন তো মোবাইল ছিল না। কাছাকাছি কোনো ধরনের সংবাদ পৌঁছানোর জন্য মাধ্যম ছিল এলাকার ভিক্ষুক বা ভিখারিনীরা। অথবা কোনো লোক যদি কোনো কাজে আত্মীয়দের বাড়ির কাছে যায় তাহলে তাদের মাধ্যমে খবর পাঠাতো। একদিন দুপুরবেলা হঠাৎ খবর এলো যে তোমার মনোয়ারা ফুফু খুবই অসুস্থ। তার মেয়েরাও নাকি খুবই অসুস্থ। যিনি খবর নিয়ে এলেন তিনি জলঢাকা গেছিলেন এক বিশেষ কাজে। ফেরার সময় তোমার ফুফুর বাড়ির কাছের লোকজনের নিকট শুনেছে অসুস্থতার খবর। তোমার দাদাভাই, দাদি আপাসহ ছুটে গেলাম আপার বাসায়। গিয়ে শুনি যে তাদের মারাত্মক ডায়রিয়া হয়েছিল। তাই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালের ডাক্তার বললেন যে, আপা ও তার মেয়েরা টিকটিকির প্রস্রাব পড়েছে এমন খাবার খেয়েছিল। আপা আর তার মেয়েরা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ডায়রিয়ার পর। তাহলে বুঝো যে কী সাংঘাতিক এই টিকটিকি! এই টিকটিকির মল-মূত্র ও খোলস আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকারক।
: আব্বু, তাহলে তো খুব কঠিন অবস্থা। আব্বু, আমি একটা বিষয় খেয়াল করে দেখি যে এরা ছাদে উল্টো দিকে ক্যামন করে ঝুলে থেকে দৌড়াদৌড়ি করে? আমি বিষয়টা বুঝি না। তুমি কী জানো?
: ও আচ্ছা! এই কথা। আসলে টিকটিকি একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি। এই টিকটিকির চার পায়ের তালু খুবই নরম। এই নরম পায়ের তালুগুলো ফাঁপানো থাকে। যখন পা ছাদের সাথে রাখে তখন পায়ের তালুর বাতাস বেরিয়ে যায়। আর নরম পা লেপ্টে যায় ছাদের সাথে।
: বাহ! খুব আশ্চর্যজনক বিষয়তো এটা। আব্বু, আমি মাঝে মাঝে দেখি যে এরা মেঝেতে পড়ে যায়। আর অমনি এদের লেজের কিছু অংশ খুলে গিয়ে নড়াচড়া করে। এটা কেমন করে হয় আব্বু?
: এটাও একটা চমৎকার ব্যাপার তাশভিক। এই টিকটিকির শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় তার লেজটা বেশ দুর্বল ও নাজুক। যখন টিকটিকির ওপর তার শিকারকারী পাখি বা বিড়াল আক্রমণ চালায় তখন টিকটিকি এক ধরনের পদার্থ নিঃসরণ করে তার শরীরে। আর অমনি লেজটা খসে যায়। লেজটা খসে গেলেও নড়াচড়া করার পেছনে কারণ হচ্ছে শিকারিকে ধোঁকায় ফেলে দেয়া। শিকারি যখন দেখবে যে খসে পড়া লেজ নড়াচড়া করছে। তখন সে আক্রমণ চালাতে দ্বিধার মধ্যে ভুগবে। আর এই ফাঁকে মূল টিকটিকি পগারপার হয়ে যাবে। আর এই লেজ দিয়ে টিকটিকি দৌড় বা লাফালাফির সময় নিজের ভারসাম্যও রাখতে পারে।
: আব্বু, সত্যি আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি এই সামান্য টিকটিকির নিপুণতা দেখে।
: তাশভিক, শুনো! তুমি তো আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গিয়েছিলে। আমার সেই নবাব আব্দুল লতিফ হল অনেক পুরনো। সেখানে আমার ২৫৫ নাম্বার রুমে প্রায়ই ইয়া বড় বড় টিকটিকি দেখতাম। সেই টিকটিকির গায়ের চামড়াগুলো প্রায় কুমিরের মতো দেখতে। আমি আমার রুমমেট মোস্তাফিজকে বলতাম দোস্ত দেখ কত্ত বড় কুমির! আমাদের এই ২৫৫ নম্বর রুম একটা চিড়িয়াখানারে দোস্ত। একদিন বেডের নিচে দেখি টুনটুনি পাখির ডিমের মতো কয়েকটা ডিম। আমি আশ্চর্য হয়ে মোস্তাফিজকে বললাম, কিরে আমাদের এই বদ্ধঘরে টুনটুনি পাখির ডিম এলো কোত্থেকে? সে বলল, তাইতো দোস্তো। এই ডিম তো টুনটুনি পাখিরই। বেডের নিচে খানিক দূরে দেখি একট টিকটিকি লেজ নাড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

Share.

মন্তব্য করুন