এ বছর শীত যেন খুব গোপনে এবং হঠাৎ করেই এলো। যদিও অন্যান্য সময় হেমন্তেই শুরু হয়ে যায় শীতের আমেজ। আর সে হিসেবে অগ্রহায়ণকে তো শীত ঋতুর অংশই বলা যায়। এ জন্য আগেভাগেই চলে শীতবস্ত্র কেনার আয়োজন। কিন্তু এবারের শীতের জন্য সালামের কোনো প্রস্তুতিই ছিল না।
একটি কাঁথা গায়ে জড়িয়ে প্রতিদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়েছিল সালাম। শেষরাতের দিকে অনুভূত হলো কনকনে ঠাণ্ডা।
শিউরে উঠলো সে। পরে জানতে পারল, সেদিনই ছিল পৌষ মাসের প্রম দিন।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই গত বছরের শীতের কাপড়গুলো খুঁজে বের করল সে। কিন্তু কাপড়ের ভাঁজ খুলতে না খুলতে তার নিজের কপালেই ভাঁজ পড়ে গেল! ধুয়ে রাখার পরও অনেকদিন আবদ্ধ থাকায় কাপড়গুলো দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে।
রোদে শুকালে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। তবে, সালামের আর ইচ্ছা হলো না সেগুলো পরার।
সেদিন বিকেলেই সালাম কিনে আনল নতুন পোশাক। নতুন কারুকাজ! তার কাছে মনে হলো, শীতঋতু ভালোই!
বিচিত্র সব পোশাকের সাথে সখ্য হয় এ ঋতুতে।
সপ্তাহখানেক পর সালামদের বাড়িতে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কিছু লোক এলো শীতবস্ত্র সংগ্রহের
জন্য। যেগুলো দুস্থ মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হবে। সালাম ভাবল, ভালোই হলো। তার পুরাতন পোশাকগুলো দান
করে দিলে তো কিছু মানুষের খানিকটা হলেও উপকার হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু ঘরে গিয়ে কাপড়গুলো হাতে নিয়ে হঠাৎ আনমনা হয়ে গেল সালাম। চিন্তায় পড়ে গেল সে। এ কাপড়গুলো দান করা কি উচিত হবে? কারণ, এগুলো তো তার নিজেরই পছন্দ নয়। অথচ, সাহাবী আনাস (রা) বর্ণিত একটি হাদিসে সে পড়েছে, রাসূল (সা) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তার অপর ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ না করে।’ (বুখারি) গরিবদের পুরাতন কাপড় দান করা খারাপ কিছু নয় কিন্তু সামর্থ্য থাকলে তো নতুন কাপড় দেয়াই উত্তম।
কিছুটা স্মৃতিতে হারিয়ে গেল সালাম। গত বছর তারাও তাদের স্কুলের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করেছিল। তখন
এমন ময়লা, ছেঁড়া কাপড়ও মানুষ দান করেছিল, যা আসলে পরারই উপযুক্ত ছিল না। আচ্ছা, এটা কি দরিদ্র
মানুষদের সাথে উপহাস নয়?
সালাম তার পছন্দের নতুন কাপড়গুলোই তুলে দিল শীতকাতুরে মানুষদের জন্য। আর তার হৃদয়টা তখন ভরে উঠল এক পবিত্র আনন্দে।

Share.

মন্তব্য করুন