গ্রামের খোলা দিগন্তে যাদের বেড়ে ওঠা, তারা একটু দুরন্তই হয় বটে! আর কেউ না হলেও অন্তত আদনানের ক্ষেত্রে
কথাটা শতভাগ ঠিক। নদীতে সাঁতার কাটা, বন-বাদাড়ে পুলিশ সেজে গাছকে পেটানো, কলাগাছে সুঁই ঢুকিয়ে ডাক্তারি
করা থেকে শুরু করে এমন কোনো দুষ্টুমি নেই, যা সে করে না। আসল কথা তো বলাই হয়নি। তার অদ্ভুত এক শখ
রয়েছে। তা হচ্ছে, পাখির বাসা ভেঙে তা দিয়ে খেলাঘর সাজানো। আর বাসায় যদি কোনো পাখির ছানা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। ধরে নিয়ে আসবে। ক’দিন পরেই হয়তো মায়ের স্নেহবঞ্চিত ছানাটা মারা যায়। কিন্তু তাতে তার কী? নতুন আরেকটা ধরে আনতে তার কতক্ষণ সময়ইবা লাগে!
আদনানের বড় ভাই আফফান কবিতা লেখে। পড়াশোনা করে ঢাকায়। সে জানে, সবুজ ও পাখির কাকলিবিহীন শহর
কতটা প্রাণহীন। এবার বাড়িতে গিয়ে আফফান ছোট ভাই আদনানকে উপহার দিলো একটি কিশোর পত্রিকা। যেখানে
তার লেখা একটি কবিতা ছাপা হয়েছে। আদনান পড়া শুরু করল-
তোমার বাড়ির আঙিনাতে ফুলের মাচা
ফুলের ঘ্রাণেই প্রজাপতির হচ্ছে বাঁচা।
সেই ফুলে তো মধু খোঁজে ভ্রমর মেয়ে-
এমন মধুর দৃশ্য যদি দেখেই থাকো
কে আর আছে সৌভাগ্যবান তোমার চেয়ে?
কিন্তু তুমি নিজেই যদি পুষ্প ছেঁড়ো
ভাঙো যদি নবজাতক পাখির বাসা-
এই প্রকৃতি না পায় যদি তোমার কাছে
একটু আদর, একটু স্নেহ-ভালোবাসা-
কেমন করে তুমি সবুজ জীবন পাবে
কেমন করে করতে পারো বাঁচার আশা?
পড়া শেষে আমিন বলল, ভাইয়া! তোমার লেখাটা দারুণ হয়েছে কিন্তু বলো তো, ফুল ছিঁড়ে, পাখি ধরে আমরা যদি
একটু আনন্দ না করতে পারি, তাহলে এসবের প্রয়োজনই বা কী ছিল? আফফান বলল, এগুলো আল্লাহ আমাদের
উপকারের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তাই এগুলো যেখানে যেভাবে আছে, সেখানে সেভাবেই রাখতে হবে। না হলে
পরিবেশের বিপর্যয় নেমে আসবে। যেমন তিনি বলেছেন, ‘তোমরা কি দেখ না! আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে,
আল্লাহ সবই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করে দিয়েছেন।’ (সূরা লুকমান : ২০)
আদনান ভাবল, নাহ্! আল্লাহর দেয়া এই প্রকৃতির সাথে সে আর অন্যায় আচরণ করবে না। প্রকৃতি বাঁচুক প্রকৃতিতেই।

Share.

মন্তব্য করুন