পানি গবেষক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আইনুন নিশাত বিগত এক যুগ ধরে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ছিলেন। বর্তমানে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে রয়েছেন সম্প্রতি বাংলাদেশে নদী রক্ষার উপায়, নদীকে বাঁচিয়ে শিল্পায়ন, পরিবেশ দূষণ মুক্তকরণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের কিশোর-তরুণদের দায়িত্বসহ নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন কিশোর পাতার সাথে। পাঠকদের জন্য তার চুম্বক অংশ তুলে ধরছেন হাসান সাইদুল।
পানি ছাড়া তো জীবন কল্পনা করা যায় না। তবে সেটা কোন পানি?
প্রবাদ আছে পানির অন্য নাম জীবন। পানি জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। তবে সে পানি আমাদের বিশুদ্ধ করে নিতে হবে। পানি ফুটিয়ে নিলেই আমাদের জন্য তা নিরাপদ। আমরা জেনে শুনেই পানিকে দূষিত করছি। তাই আমাদের পানির ব্যবহারে আরও যতড়ববান হতে হবে এবং পানি অপচয় থেকে দূরে থাকতে হবে। নদী, বন ও বৃক্ষ পরিবেশের অপরিহার্য উপাদান, যা ক্রমশ ধ্বংসের পথে- এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
ধ্বংস কখনও সুখ কিংবা আনন্দের নয়। আমাদের দেশকে চিরসবুজের দেশ বলা হয় অথচ এই সবুজ শব্দটিই দিনের পর দিন হারাতে চলেছে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়ছে আর ক্রমশ কমছে অক্সিজেন। এটা আমাদের জন্য খারাপ সংবাদ। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ আরও ভয়াবহ হবে।
বাংলাদেশে একের পর এক নদী হারিয়ে যাচ্ছে। কিভাবে নদীকে বাঁচানো যায়?
সত্যিকারার্থে নদীকে শুধু একটি শব্দ দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। আমাদের দেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। সে দিক দিয়ে নদীর সঙ্গে আমাদের বেশ মিল রয়েছে। প্রতিটি মানুষের আকার-আকৃতি ও আচরণ যেমন আলাদা, নদীও ঠিক তেমনই। ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা এগুলো অতি বৃহৎ নদী। বিশালত্বের কারণে এসব নদীর গতিপ্রকৃতি বোঝা বেশ জটিল। তিস্তা, সুরমা, কুশিয়ারা, কর্ণফুলী দেশের বড় নদী। ধরলা, বুড়িগঙ্গা, গোমতী, খোয়াই মাঝারি নদী। কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনায় অনেক নদী আছে, বর্ষার সময় যেগুলোতে ভরপুর পানি থাকলেও গ্রীষ্মকালে থাকে না, শুকিয়ে যায়। দেশে একদিকে যেমন জোয়ার-ভাটার নদী আছে, আবার জোয়ার-ভাটা ছাড়াও নদী আছে। নদীর এত সংজ্ঞা দেয়ার পেছনে কারণ হলো- আমাদের প্রতিটি নদীর গতিধর্ম আলাদা করে বুঝতে হবে। নদীর অববাহিকা, নদীর গতিবিধি, সেডিমেন্টের পরিমাণ, জোয়ার-ভাটার প্রভাব এবং নদীর দুই পাড়ের মাটির গুণাবলি- এসব কিছু বিবেচনা করেই আলাদা পরিকল্পনা গ্রহণ করে নদী বাঁচানো সম্ভব। তবে টেকসই পরিকল্পনা করতে হবে।
বন রক্ষার আইন সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমরা যদি বনকে বনের মতো থাকতে দেই, সেটা হবে মঙ্গলজনক। আমরা যদি গাছপালা না কেটে বনকে নিরাপত্তা দেই এবং কোনো ধরনের অসুবিধা না করি- বন তাহলে এমনিতেই ফিরে আসবে। সরকারকে আমরা বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন সংস্কারের কথা বলেছি। বন রক্ষায় সরকারের কাছে আমরা বেশ কিছু প্রস্তাবনাও রেখেছি।
যেভাবে নদী মরে যাচ্ছে, দূষিত হচ্ছে। এমন যদি চলতে থাকে তবে এক দশক পরে কী অবস্থা হতে পারে?
এক দশকের জন্য অপেক্ষা করার কী দরকার? এখনই তো নদীগুলো দূষণের কবলে পড়ে মরে যাচ্ছে। নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। নদী না থাকলে একটি দেশর অবস্থা নিঃসন্দেহে ধ্বংসের কবলে পড়বে।
আমাদের দেশে নদী মরে যাওয়ার কারণ কী?
ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা। আমরা এসব অতি বড় নদীকে কখনো স্পর্শ করিনি। অর্থাৎ অতি বড় নদী থেকে আমরা পানি ব্যবহার করছি না। মাঝারি নদী থেকে কিছু পানি তোলা হচ্ছে। আর ছোট নদী থেকে পুরো পানিই তোলা হচ্ছে। আমরা নিজেরা পাম্পের মাধ্যমে নদী শুকিয়ে সেখানে ধান চাষ করছি। অথচ শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ৭০ শতাংশ পানি প্রবাহিত হয়। পদ্মা দিয়ে ১৫ শতাংশ এবং মেঘনা দিয়ে ৫ শতাংশ প্রবাহিত হয়। অতি বৃহৎ তিন নদী দিয়ে শুকনো মৌসুমে ৯০ শতাংশ পানি প্রবাহিত হয়। আর বাকি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয় অবশিষ্ট ১০ শতাংশ পানি। সেই ১০ শতাংশের পুরোটাই আমরা সেচসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছি। কিন্তু তিন নদীর ৯০ শতাংশ পানি আমরা ব্যবহার করছি না। নদীর পানি ব্যবহারের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। একই সঙ্গে অববাহিকা ও এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নদীরও যে একটা চাহিদা আছে, সেই চাহিদার দিকে এখনো আমরা নজর দেয়া শুরু করিনি। অতি দ্রুত নদীর চাহিদার দিকে আমাদের নজর দেয়া জরুরি।
নগর কিংবা শহরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কতটা পরিবেশ আইন মানা হচ্ছে বলে মনে করেন?
ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশ আইন মানা হচ্ছে বলে মনে হয় না। আমাদের রাজউকের কাছ থেকে কোনো পরিকল্পনা পাস করাতে হলে- এমন কিছু নীতিমালা রয়েছে যেগুলোকে আপনাকে অনুসরণ করতে হবে। আমাদের ভবন নির্মাণে যে বিধিমালা রয়েছে সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে একটি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খোলা জায়গা থাকতে হবে। বাসার ছাদে সোলার প্যানেল বসাতে হবে। পানির লাইন আর গ্যাসের ব্যবস্থা নিয়ে আইন রয়েছে। প্রতিবেশীর সমস্যা না হয় এমন অনেক বিষয়ে সচেতন করেও রয়েছে আইন। আর শুধু আইন করলে হবে না, জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে আইন মানতে। বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল থাকা বাধ্যতামূলক কিন্তু ক’জন এটা করছে খোলা স্থান রাখার কথা আছে, অনেকে রাখছে না। বর্তমানে নতুন যারা বাড়ি করছেন অনেকের মাঝে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। বাড়ির পাশে খালি জায়গা রাখার চেষ্টা করছে।
শিল্প ও কৃষিকাজে পানির বিরাট ব্যবহার, দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করা কি সম্ভব?
অনেক শিল্প-কারখানা আছে, যেখানে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। কাগজ শিল্প, চামড়া শিল্প এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনেও প্রচুর পানি ব্যবহার করা হয়। কৃষির জন্য পানি নাকি শিল্পের জন্য পানি- এই বিতর্ক কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে। শিল্প এবং কৃষি উভয়ের জন্য পানি রাখা উচিত। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে কৃষি আগে। অপচয় রোধ করতে হবে- পানি শোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে- যেটা আমরা এখনো করতে পারিনি।
তিস্তা থেকে অসময়ে পানির প্রভাব পড়ে- বলা চলে বন্যার কারণ…।
হ্যাঁ, অসময়ে পানি এলে দুর্বল স্থান, যেমন- উত্তরের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধায় বন্যা ও নদী ভাঙন হয়। এসময় গুরুত্বপূর্ণ হলো বন্যা ব্যবস্থাপনা।
দেশ ভাগ হওয়ার পর নদী বিষয়ে কী ধরনের পরিকল্পনা করা হয়?
দেশ ভাগ হওয়ার পর ভারত তার অঞ্চলের একটা পরিকল্পনা করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পানি দেয়ার জন্য। পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারও এ ধরনের একটি পরিকল্পনা করে।
আমাদের দেশে আসলে কোন সময় পানির দরকার?
পানির অপ্রয়োজন বলতে কথা নেই। সব সময় পানির প্রয়োজন হয়। তবে আমাদের পানির প্রয়োজন হচ্ছে পুরনো পদ্ধতিতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। আর এখনকার চাষাবাদের কথা মনে করলে পানির দরকার ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত।
বর্ষার পানি ধরে রাখার উপায় কী?
ভারতের সবচেয়ে বেশি পানি গ্রহণ করার ক্ষমতা ১৬ হাজার কিউসেক। উচ্চ পানি প্রবাহের সমাধান করা সম্ভব হবে না, যদি না ভারত সহযোগিতা করে। বর্ষার পানি কাপ্তাই বাঁধে যেমন করে ধরে রাখা আছে, এভাবে ধরে রাখতে হবে তিস্তার পানি। এটা সম্ভব।
আমাদের দেশে ও ভারতের পানির চাহিদার হিসাবটা কী রকম?
আমাদের চাহিদা হচ্ছে আট হাজার কিউসেক। এখন ভারতের একার চাহিদা ১৬ হাজার কিউসেক। মাঝারি প্রবাহের সময় পানি থাকে ২৪ থেকে ২৫ হাজার কিউসেক। দুই দেশ মিলিয়ে চাহিদা ২৪ হাজার কিউসেক।
কেন তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি প্রয়োজন বলে মনে করেন?
বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আট হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। ভয় হচ্ছে ভারত আরও ছয় হাজার কিউসেক নেয়ার তাল করছে। এটা যদি হয় তাহলে তার চাহিদা হয়ে যাবে ৩০ হাজার কিউসেক। আছে ২৫ হাজার কিউসেক। তাহলে ভারত সবটা খেয়ে ফেলবে। আমাদের কি কিছুই দেবে না? এটা নিয়েই আমরা চুক্তি চাই।
নদী ও অববাহিকাভিত্তিক পরিকল্পনা কিভাবে হওয়া দরকার?
তিস্তা নদী ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখানে ভুটান, চীন, নেপাল কেউ নেই। ভারতের সিকিম রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং অঞ্চল এবং বাংলাদেশ। তাহলে এই পুরোটা মিলে একটা পরিকল্পনা করতে হবে।
বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা সমাধান করার উপায় কী?
সিকিমে জলাধার নির্মাণ করে বর্ষায় অতিরিক্ত পানি ধরে রেখে বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে যখন পানি নিয়ে টানাটানি হয় সেটাও মেটানো সম্ভব হবে বর্ষার পানি ধরে রাখা গেলে। তাছাড়া শুকনো মৌসুমে যতটা পানি পাওয়া যায়, দুই দেশ সেটি যৌক্তিকভাবে ভাগ করে নেবে। এই যৌক্তিকের কোনো সূত্র নেই। এটা দুই দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
পানি ধরে রাখতে মূলত কী কী করা দরকার?
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই কাজটি করতে গেলে উজানে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। বাঁধ, জলাধার এগুলো তো লাগবেই। বাংলাদেশ এটার উপকার ভোগ করতে চাইলে এর দায়ভারও বহন করা উচিত। এটা রাজনীতিবিদদের বিষয়। তারা যদি ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে দেয়, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যেহেতু গাইড লাইনটা তৈরি করেছেন, সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কারিগরি মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হবে বলে আমি আশা করি।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের খেলার মাঠগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের শিশু-শিশোরদের বিকাশের জন্য খেলার মাঠ অত্যন্ত জরুরী। এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
আমাদের হতাশা ছাড়া আর কিছু নেই। মাঠ দখল ঠেকাতে আমরাসহ নানা সংগঠন অনুরোধ করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। আদালত ঢাকা শহরের ১০টি খেলার মাঠ, ৬১টি পার্ক ও উদ্যানকে রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। এসব স্থাপনা যারা দখল করেছে তাদের উচ্ছেদ করে বা কোনো স্থাপনা থাকলে তা ভেঙে মাঠ বা পার্ক উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু তা তো আর করা হয়নি! উল্টো খেলার মাঠে গ্যারেজ তৈরি হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে দোকান। আমাদের পক্ষ থেকে আরো একটি দাবি ছিলো- আর তা হলো, এসব মাঠকে দেখভাল করতে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। আমরা বলেছি, সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এটিকে রাখা যাবে না। তারা এটি মানেনি। সিটি কর্পোরেশন আদালতের রায়ও মানেনি। সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে আমরা আদালত অবমাননার মামলা করেছি। মাঠগুলো উদ্ধারের জন্য আমরা অব্যাহতভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে কিশোর-তরুণদের কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায়?
এদেশের কিশোর-তরুণদের দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব। সঠিকভাবে বুঝিয়ে তাদের সামনে এগিয়ে নিলে সব কিছুই সহজ হয়ে যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো- এদের মাঝে বোঝানোর প্রয়োজন রয়েছে পরিবেশকে বিপর্যয় থেকে রক্ষার বিষয়ে। আমরা যদি এই বিষয়টি ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে তথা কিশোর-তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি, তবে তাদের উনড়বয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা অনেক সহজ হবে। আমাদের বাচ্চাদের পরিবেশের সাথে পরিচয় করানো দরকার, প্রয়োজন পাঠ্যসূচিতে এটির অন্তর্ভুক্তি। চতুর্থ শ্রেণী থেকে অনার্স পর্যন্ত পরিবেশ বিষয়ে পড়াশোনা বাধ্যতামূলক করা দরকার। তা হলে সচেতনতা বাড়বে। মানুষকে বোঝানোর কাজটা কঠিন। আর এই কাজটি যদি তরুণদের মধ্যে করা যায় তা হলে আমাদের কাজ হবে অনেক সহজ।
আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তোমাদেরকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।