মায়ের দিকে তাকালেই চোখ দুটো শীতল হয়ে আসে তার। পৃথিবীর সব সুখের আলপনা মায়ের চেহারায় খুঁজে পায় সে। মায়ের আঁচলটাকে মনে হয় ‘দুঃখ মোছার অবাক রুমাল’! আর বাবা? তার একেকটা চোখ যেন একেকটা ভালোবাসার নীড়। তার পাশে দাঁড়ালেই মনে হয়, এই তো! একটি বটবৃক্ষের কোমল ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে সে।
মাহমুদ মা-বাবাকে নিয়ে এমনই চিত্রকল্প সাজায় প্রতিনিয়ত। তার চার অক্ষরের এ নামটি যেন চার পৃথিবী স্বপ্ন ধারণ করে আছে। সে ভাবে, মা-বাবা আমার নয়ন শীতলকারী, কিন্তু আমি কি তাদের নয়ন শীতলকারী হতে পারব? আমার চোখে চোখ রেখে তারা কি অনুভব করতে পারবেন- পৃথিবীতে দুঃখ বলতে কিছু নেই! আমি মানুষের মতো মানুষ হলে, হয়তো তারা প্রশান্তি খুঁজে পাবেন। ভাববেন, আহা! জীবন বুঝি সার্থক হলো। কিন্তু এতেই কি তাদের ঋণ শোধ হয়ে যাবে? না, তা তো পৃথিবীর সবকিছুর বিনিময়েও সম্ভব নয়। মা-বাবার সীমাহীন আত্মত্যাগের উপাখ্যান সে যতই কল্পনা করে, ততই সে অস্থির হয়ে ওঠে। মা-বাবার জন্য তাহলে সে কী করতে পারে?
একদিন এ প্রশ্নের চমৎকার এক জবাব খুঁজে পেল সে। আনন্দে তার বুকটা তখন সমুদ্রের ফেনার মতো ফুলে উঠল। একটি হাদিসে সে দেখতে পেল, মহানবী সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, আল্লাহ তা’য়ালা কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে এমন মুকুট পরিয়ে দিবেন, যা হবে সূর্যের চেয়েও জ্যোতির্ময় (আবু দাউদ)।’ মাহমুদ ভাবল, আমি যদি আমার পিতা-মাতাকে এমন অনন্য উপহার এনে দিতে পারি, তাহলে তাদের জন্য এর চেয়ে বড় চমক আর কী হতে পারে? নিজেকে তাহলে প্রস্তুত করতে হবে এখন থেকেই। কুরআনের সাথেই শুরু করতে হবে পথচলা।
মাঝে মাঝে কুরআন বুকে জড়িয়ে সে অনুভব করে ফেরদাউসের ঘ্রাণ। কল্পনা করে, মা-বাবাকে জ্যোতির্ময় মুকুট পরিয়ে সংবর্ধনা দেয়ার সেই অনাবিল দৃশ্য! আহ! কী মধুর, কী আনন্দময় হবে সেই মুহূর্তটি! সেদিন তাদের দু’জনকে জড়িয়ে সে বলবে- ‘কী! দেখেছো তো, আমি তোমাদের কেমন সোনার ছেলে!’ আচ্ছা, তখন কি তারা আবেগে কেঁদে ফেলবেন?
মা-বাবাকে নিয়ে এমন বিরল পরিকল্পনার কথা মাহমুদ কাউকে জানাবে না। এমনকি মা-বাবাকেও না। কারণ, সবাই জেনে ফেললে তাতে কোনো চমক থাকে কি? এটা কেবল কিয়ামতের মহান দিনেই সবাই জানতে পারবে! একদিকে আলো ঝলমলে এক নিরূপম স্বপ্ন, অন্যদিকে কুরআনের নিবিড় পরশ মাহমুদকে যেন সত্যিই অবাক বালকে পরিণত করছে।