অনেক দিন ধরেই মনটা কেমন ছটফট করছে। আর ঘরে থাকতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। যেন কিছুই ভালো লাগছে না। যদি পাহাড়, নদী অথবা সাগরের কাছে যেতে পারতাম। কিন্তু পরিবারের কাউকে সেটা বলতে পারিনি। বলবোই বা কিভাবে!
এইতো কিছুদিন আগের কথা। একদিন আব্বুজান আমাকে ডেকে বললেন- তোমার বড় ভাইয়ারা তো এবার রাঙ্গামাটি, বান্দরবন ও কক্সবাজারে ঘুরতে যাবে। তুমি তাঁদের সাথে ঘুরতে যাবে নাকি! শুনে আমার মনটা খুবই ভালো হয়ে গেল। এতো ভালো লাগলো যে, সে কথা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আব্বুজানের কথা শেষ না হতেই আমি বললাম- অনেকদিন তো কোথাও যাইনি, ভাইয়াদের সাথে আমি অংশগ্রহণ করবো। আব্বুজান বললেন- তাহলে আমি তোমার ভাইয়াদের সাথে কথা বলি। আমি বললাম ঠিক আছে বলেন। তারপর আমি ছুটে আমার ঘরে চলে আসলাম। আর ভাবতে লাগলাম টুর টা এবার কেমন হবে। সবাই একসাথে থাকলে খুব মজা হবে।
রাতের বেলা আর আমার ঘুম আসছিলো না। প্রায় এক বছর ধরে কোথাও যাওয়া হয় না। বলতে গেলে একঘেঁয়েমির
মতোই আমি দিন কাটাতাম। ভাইয়াদের সাথেআগেও একবার যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু কোনো এক কারণে আর ঘুরতে যাওয়া হয়নি। এতোদিন পর যেহেতু আবার ঘুরতে যাবে- এটা কি মিস করা যায়! আমি আব্বুজানকে বললাম- ভাইয়ারা কবে যাবেন? আব্বুজান বললেন- পনের তারিখে রাত ৯.০০ টায় গাড়ি।
আমি পনের তারিখে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। রাতেই রওনা দেব। ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে বললেন- তুমি রাত ৮.৩০ এর মধ্যে কাউন্টারে থাকবে। আমরা ফকিরাপুল থেকে শ্যামলি বাসে উঠবো। আমি বললাম- ‘ঠিক আছে ভাইয়া।’ সন্ধ্যার পর আমি দ্রুত গুছিয়ে নিলাম। তারপর রাতে সবার আগেই আমি কাউন্টারে পৌঁছে গেলাম। আমি অবাক হয়ে দেখলাম- কেউ আসেনি এখনো। আমি অপেক্ষা না করে সাথে সাথে ভাইয়াকে ফোন করলাম। ভাইয়া বললো- ঠিক আছে তুমি থাক আমি আসছি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখলাম, একে একে সবাই কাউন্টারে এসে হাজির হলেন। আমি তখন ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম- গাড়ি ছাড়বে কখন। ভাইয়া বললেন, রাত ৯.০০ টায়। আমি ভাইয়াদের সাথে কথা বলতে বলতে গাড়ি চলে আসলো। সবাই গাড়িতে উঠলাম। তারপর এখন শুধু গাড়ি ছাড়ার অপেক্ষায় বসে থাকলাম। অবশেষে গাড়ি ছাড়লো। মনের মধ্যে এক আনন্দের স্রোতধারা বয়ে যাচ্ছে।
কখন যেয়ে পৌঁছাবো আর কখন ঘুরবো এই চিন্তাই শুধু হচ্ছে। আর মনের মধ্যে খুশির দোল খাচ্ছে। আমার পাশে আরেক ভাইয়া বসেছিল। আমি বললাম- ভাইয়া, আমাদের ট্যুর কয়দিনের? ভাইয়া বললেন- দুই দিনের। আমি শুনে আমার একটু খারাপ লাগলো যে, মাত্র দু’দিনের জন্য যাবে! যাই হোক, সারা পথ দুই ভাই গল্প করতে করতে গেলাম।
কথা বলতে বলতে এক সময় আমি ভাইয়াকে বললাম, ভাইয়া আমরা প্রথমে কোথায় যাচ্ছি? তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে কিছু বলা হয়নি! আমি বললাম- বলেছে, কিন্তু এখন কোথায় যাচ্ছি সেটা তো জানি না। তখন ভাইয়া একটু হেসে আমাকে বললেন, আমরা প্রথমে রাঙ্গামাটি যাবো। তখন শুনে আমার খুব ভালো লাগলো। দীর্ঘ পথ। অনেক গল্প, হাসি, ঠাট্টা, জোকস্ সবই হয়েছে ভাইয়ার সাথে। কুমিল্লায় এসে বাস থামলো। যাত্রা বিরতি। তখন সবাইকে ভাইয়া বললেন, যে যার মতো হাত-মুখ ধুয়ে গাড়ির সামনে আসবেন। যেই কথা সেই কাজ। সবাই হাত মুখ ধুয়ে গাড়ির সামনে আসলো। তারপর সবার হাতে ভাইয়া ১টি করে খাবারের প্যাকেট দিলেন। এটা এক ধরনের অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। আর এভাবে দাঁড়িয়ে সবাই এক সাথে খেতেও মজাই আলাদা। এভাবে যে খাবার খায়নি সে কখনও বুঝতে পারবে না যে, এর ভেতরেও মজা আছে। রাতের খাবার খেয়ে নিলাম সবাই মিলে। কিছুক্ষণ পর আবার যাত্রা শুরু হলো। কিছু দূর যেতেই দেখলাম- আমাদের সফরসঙ্গীরা সবাই ঘুমে বিভোর। আমি আর আমার পাশের ভাইয়া জেগে আছি। বাইরের অপরূপ দৃশ্য দেখছি আর ভাইয়ার সাথে গল্প করছি। সারা রাস্তা গল্প করে কাটালাম। আর অন্য ভাইয়ারা ঘুমের ভেতরেই রাঙ্গামাটিতে পৌঁছে গেলেন। যদিও তখনও আমরা পৌঁছতে পারিনি। যখন রাঙ্গামাটির রাস্তা দিয়ে আমাদের গাড়ি যাচ্ছিল তখন আমার কাছে মনে হচ্ছিল- যেন উঁচুনিচু-আকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে সাপের মতো করে বাসটি যাচ্ছে। কী সুন্দর করেই না রাস্তাগুলো বানানো হয়েছে।
আকাবাঁকা রাস্তা। তার দুইপাশে ঘন জঙ্গল। আবার কিছু কিছু জায়গায় পাহাড়ের ওপরে স্কুল এবং বসতবাড়িও আছে। কী অপরূপ দৃশ্য! ভোর রাত ছিলো বলে অত ভালো করে দেখতে পারিনি। রাঙ্গামাটিতে ভোর ৫.৪০ এ গাড়ি থেকে আমরা সবাই নামলাম। নেমে পাশের এক মসজিদে নামাজ আদায় করলাম। তারপর পরিচিত এক ভাইয়া আমাদেরকে থাকার হোটেলে নিয়ে গেলেন। শরীর খুবই দুর্বল লাগছে। এতো দীর্ঘ জার্ণি করার পর এখন কেমন যেন লাগছে। হাত পা ছেড়ে দিয়েছে। তারপর সেখানে একটা রুমে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। আমরা সবাই সকালে নাস্তা করে নিলাম। তারপর ট্রলার ভাড়া করলাম। সারাদিন আমরা ট্রলার এ করে ঘুরবো। বলা যায়, ট্রলার ভ্রমণ।

ঘুরে-এলাম-রাঙ্গামাটি-2ট্রলারে উঠার সময় আমার একটু ভয় করলো। যদিও এর আগে তেমন ট্রলারে উঠিনি কখনো। যেতে যেতে দেখলাম লেকের দুই ধারে বিশাল বড় বড় পাহাড়। কী সুন্দর আল্লাহর সৃষ্টি। উঁচু উঁচু পাহাড়ের উপরে দেখলাম দুইতলা ঘর বানিয়েছে। সব মিলিয়ে অসাধারণ চিত্র। একে একে সব জায়গায় গেলাম। বেশ ভালো লাগছে আমার। বৌদ্ধ বিহারে গেলাম। সেখানে বৌদ্ধদের যে রাজা ছিলো তার পিরামিড করা। কাচ দিয়ে পুরো বডিটা ঘিরে রেখেছে। যদিও একেবারে সামনে থেকে দেখতে পারিনি। আরো কয়েকটা জায়গায় ঘুরলাম। অনেক কিছুই সেখানে দেখেছি। সেখানকার রাজাদেরকে দেখলাম। সেখানে দেখলাম উপজাতিরা নিজের হাতে বানানো শিল্প বিক্রি করছে। যেমন- ওড়না, চাদর, বিছানা, পাঞ্জাবী, নিজেদের হাতে বোনা ব্যাগ ইত্যাদি রয়েছে। তারপর দেখলাম- সবাই কিছু না কিছু কিনছে। আমিও খালি হাতে আসিনি, কিনে নিলাম একটা পাঞ্জাবী। তারপর সেখানে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর চলে গেলাম ছোট একটা পাহাড়ে। দেখার তেমন কিছু নেই। তারপরও আধা ঘন্টা সময় কাটালাম।
তারপর চলে গেলাম শুভলং পাহাড়। ভাইয়ারা বলছে সেই পাহাড়ে ওঠা যাবে। আমি বললাম, পাহাড় কি ছো না বড়। বললেন, অনেক বড় প্রায় ২২০০ ফিট! আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি ভাবলাম- ভাইয়া হয়তো আমার সাথে মজা করছে, হয়তো ১০০ কি ২০০ ফিট হবে। আমি একটু হেসে বললাম, এটা কোনো ব্যাপার না। আমি উঠতে পারবো। ভাইয়া বললেন, ঠিক আছে দেখা যাবে!
ঘাটে এসে ট্রলার থামলো। বাইরে থেকে দেখলাম- বেশি ওপরে না পাহাড়টা। যদিও সেভাবে বুঝতে পারছি না। ট্রলার থেকে নেমে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলাম। তারপর দেখলাম সেনাবাহিনীরা রাইফেল হাতে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সামনেই দেখলাম দোকান। সেনাবাহিনীদের দোকান। তারপর ভাইয়ারা দেখি কলা খাওয়াচ্ছেন।
বলছেন- পাহাড়ে উঠতে হবে, এনার্জির দরকার আছে। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম- এতোটুকু উঠতে আবার এনার্জির দরকার হয় নাকি। তারপর আমিও কলা, বিস্কুট, মিষ্টি খেয়ে নিলাম। পাহাড়ির কলা খেতে বেশ মজা লাগলো। এবার পাহাড়ের উপরে ওঠার পালা। প্রথমে সিঁড়িত দিয়ে শুরু হলো। বেশ কিছু উপরে ওঠার পর দেখলাম সিঁড়ি আর নেই। পাহাড়ে উঠতে যেয়ে টের পেলাম আসলে আমি যা ভেবেছি তার থেকেও অনেক অনেক বেশি ওপরে। যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
তারপর দেখলাম, মাটির খাড়া রাস্তা। রাস্তা বললে ভুল হবে, একটু যদি পা পিছলে যায় তাহলেই আমি শেষ। একেবারে খাদে পড়ে যাব। যত উপরে উঠছি গরম ততই বেশি লাগছে। মনে হচ্ছিল আমার থেকে সূর্যের উচ্চতা দুই তিন আঙ্গুলের ব্যবধান। এতটাই গরম লাগছে যে বলে বোঝানো যাবে না। কিছু দূর ওঠার পর মনে হল- আমি আর উঠতে পারবো না। তবে আমি হাল ছাড়তে নারাজ। এখন যদি উঠতে না পারি তাহলে আর মজা কিসের হলো। অনেক কষ্ট করে উঠতে থাকলাম। বানররা যেমন হামাগুড়ি দেয় ঠিক তেমনি আমরাও হামাগুড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। তার কিছুক্ষণ পর দেখলাম- পেছনে তাকিয়ে যে ভাইয়ারে ছিলো তারা আর কেউ নেই। দীর্ঘ দুই ঘন্টা পর আমি উপরে উঠতে পারলাম। উপরে ওঠার পর আর কোন শক্তি আমার ছিলো না। কোনোমতে মাটিতে বসে পড়লাম। মনে হচ্ছিল বুকের ছাটিটা এখনই ফেটে যাবে! হঠাৎ করে আমি তাকালাম, দেখলাম বিশাল বড় একটা নেটওয়ার্ক টাওয়ার বসানো পাহাড়ের ওপর। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। পরে ওইখানকার পুলিশদেরকে বললাম- এই রডগুলো কিভাবে উপরে তুলেছে। তারা যেটা বললো যে, কাঁধে করে উঠিয়েছে। আর ঘরও কি একইভাবে করতে হয়েছে? তারা বললো- হ্যাঁ, ঠিক একইভাবে করেছে। আমি অবাক হয়ে বসে থাকলাম।

ঘুরে-এলাম-রাঙ্গামাটি-5

কাপ্তাই লেক

পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পর চারপাশ দেখতে লাগলাম। কী সুন্দরই না লাগছে! এত সুন্দর যে আর মন চাচ্ছে না নিচে ফিরে যাই। পাহাড় থেকে নিচে তাকাতেই দেখলাম- নৌকাগুলো কতই না ছোট লাগছে। আর দূরের ঘর-বাড়ি এবং নদী সব একসাথে মিশে গেছে। মানুষগুলো তো দেখাই যাচ্ছে না। বড় বড় নৌকাগুলো কতই না ছোট লাগছে। মনে হচ্ছে যেন কাগজের নৌকা বানিয়ে রেখেছে। সবকিছু ছোট ছোট লাগছে। পাশে তাকাতেই দেখলাম, আরেক পাহাড়ের ওপর দিয়ে সূর্য উঁকি মারছে নদীর দিকে। আর পানিতে সূর্যের আলো পড়ায় ঝিকিমিকি করছে। ভারী চমৎকার লাগলো আমার কাছে। এরকম তো আর কোথাও দেখতে পাইনি!
অনেকক্ষণ রেস্ট নেওয়ার পর সবাই মিলে একটি সেলফি তুললাম। আমিসহ মোট ১২ জন ভাইয়া উপরে ছিলাম। সবাই বিজয়ের চিহ্ন দিয়ে ছবি তুললাম। তারপর পাহাড় থেকে নামার পালা। আমি ভেবেছিলাম যে, নামতে অতটা কষ্ট হবে না। কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিলো। ওঠাটা যতটা না কষ্ট ছিলো তার চেয়েও নামাটা অনেক বেশি কষ্টের ছিলো। এক পা নিচে দিতে না দিতে আরেক পা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা যে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। অনেক কষ্ট হলো নামতে। নামার পর দেখি আমার সারা শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠেছে।
আমি পড়েই গেলাম মাটিতে। কিছুক্ষণ পর উঠে বসে পড়লাম। একজন আর্মি আমাকে বললেন- পাশেই কল আছে, হাত মুখ ধুয়ে নিন। আমি হাত মুখ ধুয়ে আবার পানিও খেয়ে নিলাম। তৃষ্ণায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। ভাল পানি না খারাপ পানি সেটা দেখিনি। আগে খেয়ে নেই পরেরটা পরে দেখা যাবে! হাত মুখ ধুয়ে বললাম- ওটা কিসের পানি। তখন লোকটা বললো, ওটা নদীর পানি। আমাকে বললো- আপনি পানি খেয়েছেন কিনা। আমি বললাম, হ্যাঁ খেয়ে ফেলেছি। তাপর ঠাণ্ডা পানি খেয়ে সোটা বোর্ড এ গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সারা শরীরে আর এক বিন্দু শক্তি নেই।
ঘুমে চোখ দুটো ছোট হয়ে যাচ্ছে। এতো ক্লান্তি মনে হয় আর কখনো পায়নি। কিছুক্ষণ পর দুপুরের খাওয়ার আয়োজন করলো সেই ট্রলারের ওপর। এরকম পিকনিক সাধারণত হয় না। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমি নৌকার পাটাতন এ বসে ছিলাম। সবাই ক্লান্তিতে ট্রলারে ঘুমিয়ে পড়লেন। আমিও পাটাতনের ওপর শুয়ে পড়লাম। ঘুম আর ঘুম, মাঝি বাদে সবাই ঘুম! ঘুম থেকে উঠে দেখি বিকাল হয়ে গেছে। রোদটাও আর নেই। এখন আমার খুব আরাম লাগছে।
তারপর ওখান থেকে চলে গেলাম রাঙ্গামাটি উড়াল সেতুতে। ক্লান্তিতে আর ঘুরতে ইচ্ছে করছে না। তারপরও গেলাম। আর কবে আসা হবে তাতো জানি না। সেখান থেকে ঘুরে এসে আবার ট্রলারে উঠলাম। ট্রলার এ জার্ণি ছিলো সব মিলিয়ে প্রায় ১২ ঘন্টা। একটানা বসে আর কতক্ষণ থাকা যায়। যাই হোক, ওখান থেকে চলে গেলাম আমাদের হোটেলে। সেখানে সন্ধ্যায় নাস্তা করে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। চট্টগ্রাম এসে রাতের খাবারটা সেরে নিলাম। তারপর আবারও বাসে উঠলাম।

ঘুরে-এলাম-রাঙ্গামাটি-3

ঝুলন্ত ব্রীজ

রাত ৪.০০টায় কক্সবাজার এ নামলাম। এবার হোটেল খোঁজার পালা। জার্ণি করার পর দেখলাম, সবারই একই অবস্থা! কেউই আর হাটতে পারছে না- আমার তো মোটেই না। তারপর হোটেলে উঠে আগে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। তারপর চিন্তা করলাম এখন ঘুমালে সকাল ১০টার আগে উঠতে পারবো না। আমরা চারজন মিলে চলে গেলাম সমুদ্র পাড়ে।
সমুদ্রের সামনে দাঁড়াতেই আমার কেমন যেন ভয় করছে। কারণ ঢেউয়ের গর্জন এতটাই ভয়ঙ্কর যে সরাসরি না শুনলে সেটা বোঝা যাবে না। তারপর ফজরের আজান দিলো। আমরা নামাজ পড়ে চলে গেলাম হোটেলে। এক ঘুমেই উঠলাম সকাল ১০.৩০টায়। তারপর ভাইয়া দরজায় নক করে বললো, এখন বার্মিজ মার্কেটে যেতে হবে। তারপর বিকালে আমরা যাবো মহেশখালিতে। আমি বললাম, ঠিক আছে ভাইয়া। কেনাকাটা করে আমি হোটেলে চলে আসলাম। তারপর দেখলাম হোটেলে ভাইয়ারা নেই। আমি ফোন দিলাম, তারা বললেন- তাদের একটু দেরি হবে। তখন কি আর করবো। আমি চলে গেলাম সোজা সমুদ্রের কাছে। রোদে অবশ্য ভালো লাগছিলো না। তারপরও বেশ কিছুক্ষণ ছিলাম। তারপর সেখান থেকে হোটেলে এসে গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে চলে আসলাম ছয় নম্বর ঘাটে। ওখানে দুইটা স্প্রিট বোর্ড ভাড়া করেছে। তারপর স্প্রিটবোর্ড এ উঠলাম। বেশ ভালো লাগছে। রওনা দিলাম মহেশখালিতে। সেখানে শুটকির আরৎ। সেখানে যেয়ে বেশ কিছুক্ষণ থেকে আবার রওনা দিলাম আমাদের হোটেলে। সমুদ্রের বুক চিড়ে আমরা যাচ্ছি। খুবই আনন্দ লাগছিলো। তারপর হোটেলে যেয়ে আবার চলে গেলাম বিচে। রাত আটটা পর্যন্ত থেকে চলে গেলাম হোটেলে। তারপর গুছিয়ে নিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার জন্য।
ফেরার সময় আর ভালো লাগছিলো না। তারপরও যেতে হবে, কিছুই করার নেই! আল্লাহ কী সুন্দর করেই না পৃথিবীকে সাজিয়েছেন। একটু সময় পেলেই চলে যাব কোন এক জায়গায়। আরও নতুন কিছুর দেখার জন্য।
বাংলাদেশের মতো এতো সুন্দর জায়গা আমার মনে হয় পৃথিবীতে আর কোথাও নেই!

Share.

মন্তব্য করুন