এই মাত্র শেষ হলো সালাতুল আসর। বাইরে পা রেখেই মনে হলো, আজকের বিকেলটা অন্যরকম সুন্দর! চারদিক কেমন ঝরঝরে। যেন নরম রোদের জাল বিছানো সবখানে। রোদের গায়ে কাঁচা হলুদের রং। আর হালকা বাতাসের কোমল ছোঁয়া তো আছেই। উসামা ভাবল- এই মনোহর বিকেলটাকে সে নিজের করে নেবে। ঘুরে বেড়াবে গ্রামের সবুজপথে। আর দু’চোখে মেখে নেবে ভালো লাগার শীতল অনুভব। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এসেছে উসামা। বাতাসে তার চুলগুলি উড়ছিল, আর সে গুনগুন করে গান গাইছিল-
ও হলুদ রঙের বিকেল তোমায়
ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে হলো, তাই-
ধার নিতে চাই তোমার গায়ের
হলুদ শাড়িটাই।
হঠাৎ চোখে পড়ল- ঐ তো! একটু সামনেই সাজিদের মতো কাউকে দেখা যাচ্ছে। তার বন্ধু সাজিদ। মনে হচ্ছে, কারো সাথে ঝগড়া করছে। দ্রুত এগিয়ে আসল সে। দেখল, যার সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে, সে-ও তার পরিচিত। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। উসামা দু’জনকে থামিয়ে সাজিদকে নিয়ে হাঁটা শুরু করল। যেতে যেতে উসামা বলল- শোনো! তোমাকে একটি গল্প বলছি। একবার আবু বকর (রা) কে এক ব্যক্তি গালি-গালাজ করছিল। রাসূল (সা) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আশ্চর্য হচ্ছিলেন এবং মুচকি মুচকি হাসছিলেন। এক পর্যায়ে, ঐ ব্যক্তি গালির মাত্রা বাড়িয়ে দিলো। তখন আবু বকর (রা) একটি গালির উত্তর দিলেন। রাসূল (সা) রাগ করে উঠে চলে গেলেন। আবু বকর (রা) রাসূল (সা)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন- আমাকে ঐ লোকটি যখন গালি দিচ্ছিল, আপনি বসা ছিলেন। কিন্তু যখনই আমি উত্তর দিলাম, আপনি চলে এলেন। কেন? তিনি বললেন- তুমি যতক্ষণ চুপ ছিলে, ততক্ষণ তোমার পক্ষ নিয়ে একজন ফেরেশতা উত্তর দিচ্ছিল। আর যখন তুমিই তার কথার উত্তর দিয়েছো, তখন ফেরেশতা চলে গেছে। এবং শয়তান উপস্থিত হয়েছে। তাই আমি শয়তানের সাথে বসে থাকতে পছন্দ করিনি। (মুসনাদ আহমদ)।
উসামা বলল- দেখলে তো! কেউ কাউকে গালি দিলে ফেরেশতা তার জবাব দেন। আর কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়লে শয়তান হাজির হয়। ফলে ছোট্ট একটি কথা থেকে বিরাট ঘটনার জন্ম হয়। যে ঘটনা মানুষের সারা জীবনের জন্য দুঃখের কারণ হতে পারে। সাজিদ উসামাকে জড়িয়ে ধরল। বলল, সত্যিই তো! মূর্খদের সাথে অযথা তর্ক-বিতর্ক কোনো কল্যাণই বয়ে আনতে পারে না।
Share.