গরিব পরিবারের একমাত্র সন্তান সামি। বয়স মাত্র নয় বছর। নদীর কিনারে জেগে ওঠা চরে, দোচালা চনের ঘরে বসবাস মা-বাবার সাথে। বাবা রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতেন। কিন্তু গত বছর রোড় অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান তিনি। এখন পাশের বাড়িতে কাজ করে কোন রকমে দিন কাটে মা-ছেলের। একটি জটিল রোগে মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। হঠাৎ একরাতে অসুস্থতা বেড়ে যায়। তখন রাত তিনটা। মায়ের চিৎকার সহ্য করতে পারছে না সামি। ডুকরে ডুকরে কাঁদছে মায়ের পাশে বসে। একা বাড়ি হওয়ায় সাহায্যের জন্য আসার মতো নেই কেউ। মা বলল- ‘বাবা সামি রহিম ডাক্তারকে ডেকে আনতে পারবে?’ মমতাময়ী মায়ের দিকে তাকিয়ে পারবে বলে জবাব দিল সামি। চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে পড়লো সে।
ডাক্তারের বাড়ি তাদের বাড়ি থেকে আধা ঘণ্টা হাঁটার পথ। নিরুপায় হয়ে বুকে সাহস নিয়ে হাঁটা শুরু করলো সামি। বাহিরে তখন গভীর রাতের বিদঘুটে অন্ধকার। আঁকাবাঁকা মাটি রাস্তার দু’পাশে বড় বড় গাছ। পাশে জঙ্গলে ভরা বিশাল কবরস্থান। এ ভয়ঙ্কর পরিবেশে সামনে হেঁটে চলছে সামি। একটু পরেই থমকে দাঁড়ালো সে। একটু দূরে কবরস্থানের পাশে সাদা কি যেন দেখছে পাচ্ছে! ভয়ে চিৎকার করে উঠলো সে। শিউরে উঠলো তার পুরো শরীর। সরে পড়লো একটি গাছের আড়ালে। চিন্তা করতে থাকলো কী হতে পারে এটি।
কিছুক্ষণের মধ্যে তার মনে পড়লো এটি চারাগাছ ঘেরাও করে রাখা একটি সাদা বস্তা। গতকাল বিকেলে তার মা এটি দিয়েছিল। এই বিশ্বাসে সে আবার সামনে চলতে লাগলো। দেখতে পেল তার ধারণা সঠিক। এভাবে ঘন অন্ধকারে সামনে অগ্রসর হতে থাকলো সামি। হঠাৎ আবার দেখতে পেল, তার পেছনে পেছনে সাদা বিড়ালের মতো একটি প্রাণী হাঁটছে। সামি ভয়ে দৌড় দিল। হাঁফাতে হাঁফাতে পাশে এক বুড়ি মহিলার ঘরে উঠলো। বয়স্কা মহিলা খুব পরহেজগার। তখন তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করছিলেন। সামিকে তিনি আগ থেকে চিনতেন।
কিন্তু এত রাতে তাকে দেখে আশ্চর্য হলেন বুড়ি মহিলা। তাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কোথা থেকে এসেছো বাবা? তোমার কী হয়েছে? তখন সামির পুরু শরীর থর থর করে কাঁপছিল। চেহারায় ভয়ের চাপ। একটু পরে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে সব ঘটনা খুলে বলল সামি। সব শুনে বুড়ি মহিলা সামিকে নিয়ে ডাক্তার বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। বুড়ি মহিলার একহাতে তসবি আরেক হাতে হারিকেন। একটু এগুতেই দেখতে পেল একটি বড় সাপ আঁকাবাঁকা হয়ে বসে আছে রাস্তার মাঝে। সাপ দেখে ভয়ে বুড়ি মহিলাকে জড়িয়ে ধরলো সামি।
বুড়ি মহিলা যেমন পরহেজগার তেমন সাহসী। তিনি দাঁড়িয়ে সূরা নাস ও সূরা ফালাক পড়ে সাপের দিকে ফুঁ দিলেন। তখন সাপটি রাস্তা থেকে সরে দূরে চলে যায়। উভয়ে আবার পথ চলতে চলতে ডাক্তার বাড়িতে পৌঁছে যায়। ডাক্তারকে জাগিয়ে তুলে সমস্যা বুঝিয়ে বলেন বুড়ি মহিলা। ডাক্তার দেরি না করে দ্রুত ওষুধপত্র নিয়ে তাদের সাথে রওনা দিল। পথ চলতে চলতে পৌঁছে যায় সামির বাড়িতে। তখনো তার মা ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি স্যালাইন লাগিয়ে দিলেন। সাথে একটি ইনজেকশনও দিলেন। ফলে সামির মায়ের ব্যথা আস্তে আস্তে কমতে লাগলো। এক পর্যায়ে সুস্থ হয়ে উঠলো।

Share.

মন্তব্য করুন