সাগরছোঁয়া বাণী
রাফীফ হাসান

‘তুমি এক শীতল সাগর!
পৃথিবীর সব কোমলতা
ছুঁয়েছিল তোমার অধর-
তুমি এক শীতল সাগর!’
একটি গল্প পড়তে পড়তেই এমন একটি গীতিকবিতার জন্ম হলো আজ। মহানবী (সা)-এর জীবনী পড়ছিল নিবরাস। তার সবুজ-জীবন পড়তে পড়তে কখনো মনে হয়- তিনি পাহাড়ের চেয়েও অবিচল। কখনো ঝরণার চেয়েও প্রবহমান। আজ মনে হলো, তিনি এক শীতল সাগর। কেমন শীতল? না, এর কোনো উপমা নেই! ইবনে আব্বাস (রা)-এর মুখের কথা। দিমাদ নামের এক ব্যক্তি একবার মক্কায় আসল। সে ঝাঁড়ফুঁক করত। সে শুনতে পেল, নির্বোধ মক্কাবাসীরা বলাবলি করছে- মুহাম্মাদ তো একটা পাগল! দিমাদ বলল, এ লোকটির সাথে যদি আমার দেখা হত! আমার হাতেই হয়তো আল্লাহ তাকে সুস্থ করে তুলতেন। দিমাদ রাসুলের কাছে পৌঁছলো। দেখা হল। এবং অকপটেই সে বলে ফেলল, হে মুহাম্মাদ! আমি জাদুর চিকিৎসা করি। আমার হাতেই আল্লাহ সুস্থ করেছেন অনেককে। এখন আপনার চিকিৎসা করব কি?
এ পর্যন্ত পড়েই নিবরাস শিউরে উঠলো। ভাবল, কেউ যদি এসে তাকে বলে- শুনেছি তুমি নাকি পাগল! আর আমি একজন ভাল চিকিৎসক। আমার চিকিৎসা পেলে তুমি সত্যি সত্যি সুস্থ হয়ে উঠবে- তখন তার কাছে কেমন লাগবে? অথচ রাসূল (সা) গভীর মনোযোগের সাথে তার কথা শুনে গেলেন। চেহারায় রাগ নেই। বিরক্তি নেই। শীতল কণ্ঠে তিনি শুধু বললেন- “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি এবং তাঁরই কাছে সাহায্য চাই। আল্লাহ যাকে পথ দেখান, তাকে কেউ বিপথগামী করতে পারে না। আর যাকে তিনি বিপথগামী করেন, তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আর মুহাম্মাদ হচ্ছেন তাঁর বান্দাহ ও রাসুল।”
দিমাদ তো অবাক। বলল, কথাগুলো আমাকে আবার শোনান তো। রাসুল (সা) তাকে পুনরায় শোনালেন। পরপর তিনবার। এরপর বের হলো তার হৃদয়গলা উচ্চারণ। বলল, “আমি গণকদের কথা শুনেছি। জাদুকরদের কথা শুনেছি। শুনেছি- কবিদের কথাও। কিন্তু এমন কথা তো কোথাও শুনিনি। যে কথা সাগরের গভীর তলদেশ ছুঁয়ে গেছে। আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। আমি ইসলাম গ্রহণ করবো।” শুধু তা-ই নয়, সে কথা দিল- তার গোত্রের লোকদের নিকটও সে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরবে। (মুসলিম)। একটু শীতল আচরণ, কয়েকটি সুন্দর কথা একজন মানুষের মনে কীভাবে ঝড় তুলতে পারে-নিবরাস সে কথাই ভাবছে। চিৎকার করে তার কেবল বলতে ইচ্ছে করছে, তোমাকে ভালোবাসি! তোমাকে ভালোবাসি- হে রাসুল (সা)।

Share.

মন্তব্য করুন