যদি কাউকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ১০ স্পট বলতে বলা হয়,
আমি বিশ্বাস করি প্রায় সবাই তালিকাতে স্থান দিবে গ্র্যান্ড
ক্যানিয়নকে। আমেরিকা তো বটেই, গ্র্যান্ড ক্যনিয়ন সারা বিশ্বের
মধ্যেই অন্যতম সুন্দর গিরিখাত। এটি বিখ্যাত এর সৌন্দয, সৃষ্টি
রহস্য এবং বৈচিত্রের জন্য। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামটি এসেছেOngtupqa থেকে যার অর্থ বৃহৎ গিরিপথ, যা পুয়েব্লো
আদিবাসীদের দেওয়া। ধারণা করা হয়, তারা প্রথম মানুষ- যারা
ক্যানিয়নে বাস করে আসছে। কিন্তু আধুনিক মানুষের নজরে নিয়ে
আসেনফ্রান্সিস্কো করোনাডো ষোড়শ শতাব্দীতে। তারপর দুজন
পুরোহিত ফ্রান্সিস্কোডোমিংয়েজ এবং ডি এস্কালান্ট আসেন এবং
বিশ্বের কাছের তুলে ধরেন ১৭৭৬ সালে। তারপর সরকার
নৃতত্ত্ববিদ, বিজ্ঞানী, অভিযাত্রীদের তীর্থস্থান হয়ে ওঠে, সারাবিশ্ব
থেকে লোকজন ভীড় করে নজর জুড়িয়ে নেওয়ার জন্য।
রঙ বেরঙ্গের পাহাড়, পাহাড়ে আবার বিভিন্ন পাথর স্তরের ছোপ।
কিংবা পাহাড় নিজেই হয়তো দাঁড়িয়ে আছে নিজেরই কোন এক অ
দ্ভুড সৌন্দর্যে। গিরিপথের বুক চিরে বয়ে চলেছে কলোরাডো নদী।
আর তার তীরে আছে ১৭০০ এর অধিক প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ৩০
এর বেশি প্রজাতির প্রাণী। কি নেই, পাহাড়, সমতল, মরু বা
বরফের ছোয়া। প্রকৃতি যেন তার সম্ভার নিয়ে বসেছে গ্র্যান্ড
ক্যানিয়নে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের উত্তরাংশে অবস্থিত
গ্র্যাান্ড ক্যানিয়ন। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ন্যাশনাল পাকের অংশ বিশাল
গিরিখাত প্রায় দৈর্ঘ্যে ২৭৭ মাইল, প্রস্থে সর্বোচ্চ ১৮ মাইল এবং
সর্বোচ্চ গভীরতা ১ মাইলেরও অধিক। প্রায় ২০০ শত কোটি
বছরের পৃথিবীর সাক্ষী এই গিরিপথ। একে উলটো পর্বতও বলা
হয় এর আকৃতি এবং গভীরতার কারণে। প্রকৃতির এক অসামান্য
বিস্ময়, নান্দনিক, বৈচিত্রময় এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আবার
গ্যান্ড ক্যানিয়নকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। নর্থ রিম এবং সাউথ
রিম। নর্থ রিম দর্শনার্থীদের জন্য সবসময় খোলা থাকে কিন্ত সাউথ
রীম কিছু সময়ের জন্য। নর্থ রিম বেশি দূর্গম এবং শীতে রাস্তা বন্ধ
হয়ে যায়। আবার ভৌগলিক দিক দিয়ে নর্থ রিমের পাহাড়্গুলো
বেশি উঁচু, গড়ে ৮০০০ ফিট। ফলে ঠান্ডাও বেশি। কিন্তু বৃষ্টিপাত
দুই অংশেই লক্ষনীয়। নর্থ রিম অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য স্বর্গ।
কিভাবে তৈরী হলো তা নিয়ে অনেক মতবাদ আছে এবং একেবারে
সঠিক কোন ব্যাখ্যা এখনো বিজ্ঞান দিতে পারেনি। প্রায় ২০০
কোটি বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এই গিরিখাত। গিরিখাতের মাঝে
বয়ে যাওয়া খরস্রোতা কলোরাডো নদী গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন সৃষ্টির
প্রধান কারণ। এই নদীর স্রোত এবং ভূমিক্ষয়ের প্রবাহে বর্তমান
রূপ দিয়েছে। প্রায় ১৭ মিলিয়ন বছর ধরে বয়ে চলেছে কলোরাডো
নদী। যা বিজ্ঞানীদের পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে আবারও ভাবিয়ে
তোলে। বিভিন্ন উৎস থেকে ছড়া ছুটে এসেছে এবং মিশেছে নদীর
সাথে। নদী নিজেও পরিবর্তন করেছে নিজের গতিপথ। এখনকার
কলোরাডো নদী পূর্বের থেকে ৬ কিমি দূর দিয়ে বয়েছে, শুধু তাই
নয় আগেকার গতিপথ এর একদম বিপরীতে বইছে এ নদী।
এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে নদীর বয়ে আনা পলি। সেই পলি
থেকে হওয়া পাথর এবং ভূমিকম্পসহ অন্যান্য নিয়ামক। সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ন নিয়ামক ছিলো খাড়াভাবে নেমে যাওয়া। প্রতি ১
কিলমিটারে নেমে গেছে প্রায় ৩.৫ মিটার। যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে
নদী ২৭০০ মিটার উঁচু। মিসিসিপি নদী মাত্র ৩.৫ সেমি নেমেছে।
কম খাড়াভাবে নেমে যাওয়াতেই মিসিসিপি বা অন্য বড় নদী
একটি করে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরী করতে পারেনি। আজও
কলোরাডো নদী হাফ মিলিয়ন টন পলি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই
খর স্রোতের কারণ। তারপর বৃষ্টি, হাওয়া, ভূমিকম্পের ফলে অদ্ভুত
সুন্দর পাহাড়গুলো তৈরী হয়েছে।

Share.

মন্তব্য করুন