মেঘ-বৃষ্টি আলোর দেশে
ফররুখ আহমদ

মেঘ-বৃষ্টি-আলোর দেশে
সুরুজ ওঠে রাঙা বেশে,
পথের পাশে পদ্ম ফোটে,
মৌমাছিরা আপনি জোটে।
মেঘ-বৃষ্টি-আলোর দেশে
মনটা শুধু বেড়ায় হেসে,
শালিক ডাকে সজনে গাছে
ঝিঙে মাচায় ফিঙে নাচে।
মেঘ-বৃষ্টি-আলোর দেশে
বাদল ধনু হাওয়ায় মেশে
রোদ্দুরে রঙ ঝিলিক দিয়ে
হঠাৎ কোথায় যায় মিলিয়ে।
মেঘ-বৃষ্টি-আলার দেশে
পলাশ ফোটে বনের কেশে,
শিমুল পারুল চ¤পা ডাকে
কর্ণফুলি নদীর বাঁকে।
মেঘ-বৃষ্টি-আলোর দেশে
দূরের মানুষ দাঁড়ায় এসে,
আম কাঁঠালের ছায়ায় ঘেরা
পায় যে কুটির মায়ায় ঘেরা।
মেঘ-বৃষ্টি-আলোর দেশে
সন্ধ্যা নামে দিনের শেষে।
কিসসা কথা সাজ আসরে
শুনি সকল ঘরে ঘরে।

দেশের কথা
আবদুল ওহাব আজাদ

একটি পাখি গাছে বসে ডাকছিল
শিল্পী তখন একটি ছবি আঁকছিল
গাঁয়ের পথে গায়েন তখন গাইছিল
সুরের সুধা সেও খুঁজে পাইছিল।
ফুলের বনে ফুলের সুবাস ছুটছিল
ফুলগুলো সব রঙিন হয়ে ফুটছিল।
সাগর নদী মাতাল হয়ে উঠছিল
ঢেউগুলো সব সাথীর মতো জুটছিল।
সাঁজ আকাশে হাজার তারা জ্বলছিল
সবাই যেন দেশের কথা বলছিল।

ছোট্ট দুইটি ছড়া
মামুন সারওয়ার

ডাকছে পাখি বনজোড়া
কিন্তু আমার মনপোড়া।
বনের ভেতর পা’চলেআসতো যদি মা চলে।
চলে যেতাম মাকে ধরে
জুঁই-চামেলীর শাখে ধরে।
দুধে ধোয়া তুলসি পাতা
সকাল বেলা খুলছি খাতা।
খাতার ভিতর রুল করা
ছন্দ-সুরে ভুল করা।
ভুল কমাতে কাটাকাটি
ছড়া লেখায় খাটাখাটি।

স্বপ্ন তখন কী তুই পাবি পানা !
মুহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারী
মনের ভিতর পাখনা মেলে
স্বপ্ন বেড়ায় উড়ে,
রং-তামাশার হাজার ফানুস
মনের আকাশজুড়ে।
স্বপ্নগুলো মেঘ হয়ে যায়
কখনও হয় নদী,
আমার গাঙে জোয়ার আনে
বয় যে নিরবধি।
স্বপ্ন আমার বাঁচিয়ে রাখে
স্বপ্ন চালায় ভেলা,
চলতে থাকে জীবনব্যাপি
রং-বাহারী খেলা

বিড়াল ছানা
আফসার নিজাম

বিড়াল ছানা বিড়াল ছানা
খাচ্ছো কেনো আমার খানা
আমার স্বাদের ইলিশটাকে
ছুঁ মেরে নাও টুলের ফাঁকে
এখন আমি কি খাবো বল
দুষ্টু তুমি পাজি ও ছল।
আমার ইলিশ তুই খেয়েছিস
দেখবি বিড়াল হবি কানা
বলবি তখন আর খাবো না
আমি তখন খামচে দেবো
আমার ইলিশ কেড়ে নেবো
বুঝবি তখন ওরে পচা
আমার রাগের ভীষণ ফনা।
ভাইয়া এলে বলে দেবো
দুষ্টু দু’কান মলে দেবো
যতোই করিস মানা
মিউ মিউ- কাঁদবি যতো
খুঁচিয়ে তোর করবো ক্ষত
স্বপ্ন তখন কী তুই পাবি পানা !

প্রভু
ওসমান মাহমুদ

তুমি আমার সমস্ত দিন
সন্ধ্যা থেকে ভোর
গভীর গোপন ভাবনা জুড়ে
আবেশ মাখা ঘোর।
তুমি সতেজ জাগ্রত মন
স্বপ্নে বিভোর ঘুম
বিষণœতার দিনশেষে সুখবসন্ত মওসুম।
তুমি আমার সবুজ বাতাস
নিঃশ্বাসে প্রাণ-সুর
ঢেউ ভাঙা এক উছলে ওঠা
স্নিগ্ধ সমুদ্দুর।

ঝরাপাতা ও পথের ধুলো
জনি হোসেন কাব্য

ঝরাপাতা বলল ডেকে, ‘ও ভাই পথের ধুলো?
কেন এমন বেপরোয়া? ক’রো মস্ত ভুলও!
ভুলটা কিসের? এই যে তুমি মানুষ দেখলে ওড়ো,
চুলে-কানে, নাকে-মুখে, পুরো গায়েই ঘোরো!
জনজীবন ভোগাও, আবার ছড়াও নানান রোগও,
শতপ্রকার সমস্যা যে হচ্ছে এসে যোগও!
প্রতিশোধ? না, আনন্দ খোদ? একটু যদি বলো-
কী ক্ষতি কার, কী প্রতিকার এবং ফলাফলও?’
ধুলো তখন মুচকি হেসে বলল, ‘ঝরাপাতাপ্রশ্নগুলোর খুব গুরুত্ব, নয়তো মোটেই যা তা।
বলছি তবে শোনো এবার আমার মুখের বাণী,
মাটি থেকে পথে আসি পাই না যখন পানি।
গাড়ির গরম বাতাস এসে ওড়ায় ইচ্ছেমত,
কেউ বোঝে না মনের কষ্ট কেউ দেখে না ক্ষত।
অবহেলার জীবন কাটাই দোষ কী বলো তাতে?
নানানভাবে মানুষগুলোই দোষী নানানখাতে।’
বলতে গিয়ে ধুলো থামে, অভিমানে ফোলে,
কথা শুনে ঝরাপাতার বিবেক-বুদ্ধি খোলে।
ঠিক তখনি শা-শা শব্দে তিনটি গাড়ি আসে,
ঝরা হঠাৎ ছিটকে পড়ে, কুয়োয় গিয়ে ভাসে।
ধুলোমিয়া কই হারালো? যায়নি পাওয়া তাকে!
দৈত্যবাতাস গুম করেছে হয়তো কারো নাকে।

ঢাকার ছড়া
আলি মেসবাহ

গাড়ীর নিচে রাস্তা আবার
রাস্তা গাড়ীর উপ্রে
রঙের ঢাকা ঢঙের ঢাকা
ঢাকার কতো রূপ্রে !
কিন্তু মনে রঙ কারো নেই
মন হয়েছে রুক্ষ
দুঃখ ভরা শহর এ এক
শহর ভরা দুঃখ।
নষ্ট বায়ু, নষ্ট নদী
নষ্ট গণতন্ত্র
মানুষতো নেই, মানুষ নামে
বেশির ভাগই যন্ত্র!
সুখের নামে যে গান বাজে
সত্যিকারের গান না
লোক দেখানো হাসির নিচে
লুকিয়ে আছে কান্না।
হায়রে শহর ঢাকার শহর
আজব শহর সত্যি
শহর কি আর মনের মতো
আছেরে এক রত্তি!

করছি হেলা
আবদুল হাই ইদ্রিছী

একটি শিশু নাম যে মিশু
কাগজ কুড়ায় নিত্য,
রোদে ঘুরে শরীর পুড়ে
ভারি করে চিত্ত।
মলিন গায়ে, খালি পায়ে
সকাল থেকে সন্ধ্যা,
ভুখা পেটে হেঁটে হেঁটে
খাচ্ছে খাবার গন্ধা।
কাগজ পেতে স্টেশনে
রাত্রি বেলা ঘুমায়,
মনটা ভরে যত্ন করে
মশা-মাছি চুমায়।
পড়া-লেখা হয় না শেখা
অন্ধকারে থাকছে,
হেলায় হেলায় জীবন খেলায়
প্রাণটা ধরে রাখছে।
ওরাই শেষে ভেসে ভেসে
হয় সমাজের বোঝা,
করছি হেলা ছাড়ছি ভেলা
যাচ্ছে না তাই সোজা।

চাষী
ফজলে রাব্বী দ্বীন

এই যে শ্যামল সবুজ দেশে
সোনায় ভরায় কে গো হেসে?
কে গো ফলায় মানিক রতন?
মই জোয়াল আর লাঙল বসন।
তার যে জানি, গামছা মাথায়
গ্রীষ্ম শীত আর রোদে পোড়ায়
সোনার দেহ খানি;
তারাই আমার সোনার দেশের
সোনার মানুষ জানি।

Share.

মন্তব্য করুন