‘ও মন, রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’- এ গান ছাড়া যেন আমাদের ঈদই হয় না। শাওয়ালের চাঁদ ওঠার সাথে সাথেই হৃদয়ে বেজে ওঠে এ গানের মধুঝরা সুর। খুশিতে দুলতে থাকে সবাই। আর এ খুশির দোলা থেকে বাদ পড়েনি মাসুমও। আব্বু ঘরে পা রাখতেই দেখলেন- মাসুম, তার ছোটবোন নাবিলা ও সাবিহা সবাই মিলে গান শুনছে। আব্বুও চেয়ার টেনে বসে পড়লেন তাদের সাথে। খুব মনোযোগের সাথে শুনলেন। এরপর বললেন, এ গান থেকে তোমরা কে কী শিখেছো? প্রশ্নটা অদ্ভুত মনে হলো সবার কাছে। মাসুম বলল, না- সেভাবে তো ভাবিনি কখনো! ‘এটা ঈদের গান- খুশির গান’- ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে কিছু বলার চেষ্টা করল নাবিলা। আর সাবিহা বলল- আচ্ছা! গানটা আবার শুনে নিই?

আব্বু মুখে হাসির রেখা টেনে বললেন, দেখেছো তো! আমরা কেবল আনন্দের জন্যই গান শুনি। অথচ এর মধ্যেও যে অনেক কিছু শেখার আছে, জানার আছে- তা আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাবি না। এমন হওয়া উচিৎ নয়। ঈদ মানে শুধু নিজে নিজে আনন্দে বিভোর হয়ে থাকা নয়। এ আনন্দ ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে। সবার মাঝে। কেউ বাদ পড়বে না। ধনী-গরীব, ছোট-বড় এমনটি রাস্তার টোকাই ছেলেটিও। ফুল-কুড়ানি মেয়েটিও। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ধনীদের। আর সে কথাই এ গানে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন কবি। কবি বলেছেন-
যারা- জীবনভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী
সেই- গরীব ইয়াতিম মিসকীনে দে যা কিছু মুফীদ॥

তিন ভাই-বোন যেন ভাবনার কূল পেলো এবার। নাবিলা বলল, তাহলে আমরা আরেকটি ঈদের গান শুনি। আব্বু বললেন, অবশ্যই। এবার বেজে ওঠল-
আজও ঈদের চাঁদ যে হাসে!
তবু আমার হৃদয় কেন
চাঁদের মতো হাসে না-
তাহলে কি ঈদ এখন আর
ঈদের মতো আসে না?

গান শেষ হতেই সাবিহা বলে উঠল- এ গানেও দুঃখী মানুষের প্রতি ভালবাসার কথা ফুটে উঠেছে। হ্যাঁ! ঠিকই-বলল মাসুম। আব্বু বললেন- তাহলে বলো তো, তোমাদের করণীয় কী? -আশপাশের গরীব-দুঃখীদের খাবার দেবো। পোশাক দেবো। ভালোবাসা দেবো। আর তাদের মুখে ফোটাবো শাওয়ালের চাঁদের মতোই সুন্দর একটি হাসি- বলল মাসুম। আর দু’বোন একই সুরে সায় দিলো তার কথায়।

আব্বু বললেন- ও হ্যাঁ! মনে রেখো- এটা কিন্তু তাদের প্রতি করুণা নয়। বরং এটা তাদের ন্যায্য পাওনা। আল্লাহ বলেছেন, “আর তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবী ও বঞ্চিত মানুষদের অধিকার” (সূরা যারিয়াত : ১৯)।

Share.

মন্তব্য করুন