ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে বছরের ভালো দিন। ঈদ মানে নতুন স্বপ্নের ঘোর। ঈদ মানে নিদ্রাহীন ভোর। ঈদ মানে সবর করা। ঈদ মানে ধৈর্যধরা। ঈদ মানে একে অপরের সুখ দুঃখে শরিক হওয়া। ঈদ মানে ভালোবাসা আর মায়া-মমতার সুঁতোয় সবাইকে বেঁধে ফেলা। ঈদ মানে বন্ধুদের খোঁজ নেয়া। সবাই মিলে মজা করা। কারো কষ্ট থাকলে তা দূর করার জন্য উদ্যোগ নেয়া। ঈদ মানে বড়দের শ্রদ্ধা করা। সালাম করা। মজার সাথে ঈদপরবি নেয়া। বিনয়ী হওয়া। বড়দের কাজে সাহায্য করা। ঈদ মানে আব্বু-আম্মুর খুব কাছাকাছি হওয়া। তাদের খুশি রাখার চেষ্টা করা। বাসা কিংবা বাড়ির কাজে তাদের সহযোগী হওয়া। তাদের সাথে জিদ না করা। তারা যা আমার জন্য কিনেছেন তাতেই সন্তোষ্ট থাকা। ঈদ মানে গরীব বন্ধুদের খোঁজ-খবর নেয়া। তাদের কোন অভাব থাকলে তা পূরণ করার চেষ্টা করা। ঈদ মানে ছোট বড়, ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু, সবাই মিলে এক কাতারে শামিল হয়ে নামাজ আদায় করা। আল্লাহর কাছাকাছি হওয়া। মনিবের কাছে মনের কষ্টগুলো জমা রাখা। নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। আগামী দিনগুলোর জন্য ভালো কিছু কামনা করা। সুন্দরের জন্য নিজেকে তৈরি করার সাহায্য চাওয়া।
ঈদ মানে ভালোবাসা বন্ধন
ঈদ মানে আল্লা’র অনুগত হতে শেখা
ঈদ মানে সুকুমার নন্দন।
ঈদ মানে প্রিয় নবীর (স.) একনিষ্ট ভক্ত হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার শিক্ষা নেয়া। তাঁর দেখোনো পথে সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তি খোঁজার চেষ্টা করা। তাঁর ভালোবাসার মতো ভালোবাসা খোঁজা। তাঁর দেখানো পথে এগিয়ে যাওয়া। যারা একমাস রোজা রেখে সিয়ামের বরকতে নিজের পাপগুলো ক্ষমা করে নেয়া। ঈদ মানে নিষ্পাপ হাসি। ঈদ মানে সকলেই খুশি। আমি রোজা রাখলাম না, নামাজ আদায় করলাম না, আব্বু আম্মুসহ গুরুজনের কথা মান্য করলাম না তাহলে কিন্তু ঈদ মানে খুশি নয়। ঈদের খুশি শুধু বাহ্যিক চাকচিক্য, শপিং আর সুন্দর জামা কাপড় পরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বেড়ালেই প্রকৃত খুশিটা আদায় হলো না। কেননা পরকালের জীবনের জন্য ঈদ কোন উপকারই যদি না করতে পারে তাহলে এই ক্ষণিকের খুশি সে সময় কোন কাজে আসবে না। তাইতো ঈদ মানে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের খুশি, মানুষের আনন্দ, দেশ-জাতির কল্যাণ কামনা, সবাই মিলে ভালো থাকা।
ঈদ মানে আলোকের খোঁজ
ঈদ মানে ভালো কিছু
ঈদ হলো ভালো থাকা রোজ।
সমাজে নানা শ্রেণি-পেশার খেটে খাওয়া মানুষ আছে। রিক্সাওয়ালা, ছোটখাটো দোকানদার-হকার, বাসা-বাড়িতে কাজ করা বুয়া বা খালা, জমিতে শ্রমের বিনিময়ে কাজ করা কামলা-কিষাণ। এছাড়াও সমাজের নিম্নবিত্তের নানা ধরনের মানুষ আছে যারা একবেলা পেট পুরে খেতেও পারে না। তাদের ছেলে মেয়েদের কথা একবার চিন্তা করো। তারা যেখানে খেতেই পারে না, তাহলে তাদের লেখাপড়া? নতুন নতুন জামা জুতো? বিলাসী খেলনা? মজার মজার খাবার? এসব কি ওরা উপভোগ করার সুযোগ পায়? পায় না। কিন্তু ওরাও তো মানুষ। ওদেরও একটা শিশুসুলভ মন আছে। ওদেরও মজা করতে ইচ্ছে করে। ওদেরও ইচ্ছে করে তোমার আমার মতো সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় পরে স্কুলে যেতে, ঈদের জামায়াতে নতুন কাপড় পরে আনন্দ করতে। ওদের টাকা নেই বলে, বাবা নেই বলে, মা নেই বলে ওদের আজ বেহাল দশা। কিন্তু ওরাও তো মানুষ। ওরাও তো শিশু!
সব শিশুরই ফুলের মতো মন
চলো সবাই যাই হয়ে যাই
সবার আপন জন।
আগেই বলেছি, ঈদ হলো দুঃখিজনের খোঁজ-খবর নেয়া। অনেকেই ঈদের সময় হরেক রকম জামা কাপড় শপিং করে থাকে। বাবার অনেক টাকা আছে বলে দামি দামি শপিং করে। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ টাকা শপিং করে অভিজাত শপিংমল থেকে। কিংবা বাবা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। বন্ধুরা অনেক মূল্যবান শপিং করেছে বলে সেটা নেয়ার জন্য আব্বু আম্মুর কাছে বায়না ধরে কিংবা মন খারাপ করে বসে থাকে। এটা কি ঠিক? না এটা মোটেই ঠিক নয়। কারণ নিজের যা আছে তাতে খুশি খুঁজে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আমাদের চারপাশে যারা আছে তাদের দিকে তাকাও। ঐ সব মামা-খালাদের দিকে তাকাও। অল্প আয়ের এ মানুষগুলো কতো কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করে। কতো কষ্ট করে তাদের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করে। তবে হ্যাঁ, এ সব পরিবারের কেউ যদি খুব দামি শপিং করে তোমার সামনে আসে তাহলে বুঝতে হবে এটা ‘আলগা ফুটানি’। আলগা ফুটানি মানে বুঝলে? মানে যার জন্য যেটা মানানসই নয় সে এটা করেছে বাবা মার সাথে জিদ করে। আর বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে কখনো বড় মানুষ হওয়া যায়না।
অনেকে আব্বু আম্মুর হাতের নাজুক অবস্থা জেনেও ঈদ আনন্দকে পূর্ণ করার জন্যে নতুন নতুন জামা কাপড়ের বায়না ধরে থাকে। আব্বু আম্মু অনেক কষ্টে সে সব বায়না পূরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু ঈদের পরে গিয়ে আর লেখা পড়ার খরচ যোগাতে পারে না। তখন কষ্টটা আরো বেশি বেড়ে যায়। এ জন্য পরবর্তী অবস্থাকে মাথায় রেখেই ঈদ শপিংয়ের চিন্তা করা উচিত। কেউ কেউ স্কুল জীবনেই মোবাইল ফোনের জন্য আব্বু-আম্মুর কাছে বায়না ধরে এবং কিনেও নেয়। এই বয়সে মোবাইল ফোন কি খুব জরুরী? মোবাইল কেনাটা যতটা কঠিন, তার চেয়ে সেটা মেইনটেইন করাটা আরো বেশি কষ্টকর নয় কি? তোমার যদি মোবাইল থেকে থাকে, তাহলে ভেবে দেখতো কতটা সময় তুমি নষ্ট করেছো মোবাইলের পিছনে? এর ইতিবাচক কোন ফল আছে কি? গেমস খেলে যে সময় নষ্ট হয় তাতে তোমার কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে লেখাপড়ার, বিষয়টি কখনো কি ভেবেছো?
আলগা টাকার ফুটানি আর
অহংকারের গরম
মান ডাকে না বাড়তি আনে
অপমান আর শরম।
মনে করো, নাঈম তোমার বন্ধু। সে তোমার সাথেই পড়ে। ঈদের আগে তুমি তোমার শপিং নিয়ে ওর সাথে শেয়ার করছো। অনেক ভালো ভালো শপিং এর গল্প করছো। সে তোমার বাবার মতো টাকাওয়ালা নয়। সে হয়তো স্বল্প আয়ের ঘরের সন্তান। ওর কাছে তোমার গল্প কষ্টের কারণ হতে পারে। তাই ওর কাছে এসবের গল্প না করে বরং তোমার বাবাকে বলে ওকে কোন কিছু উপহার দেবার ব্যবস্থা করতে পারলে সব চেয়ে ভালো হবে। এখানে ওর সাথে উপহার বিনিময়টাই ঈদ। তবে এটা আব্বু-আম্মুকে ফাঁকি দিয়ে করাটা ঠিক হবে না। কিংবা তোমার কোন বন্ধু খুব বড়লোকের ছেল্।ে ওর বাবার অনেক টাকা আছে। সে অনেক দামি দামি শপিং করেছে। সে সব আবার তোমার কাছে গল্পও করছে। এজন্য তোমার মন খারাপ হতে পারে। তবে এখানে সবর করাটাই কিন্তু ঈদ।
সবর এবং ধৈর্য ধরাও ঈদ
পানির সাথে দাও মিশিয়ে
মিথ্যা স্বপন-জিদ।
তোমার সব আতœীয় স্বজনই যে ধনী হবে তা কিন্তু নয়। যে সব আতœীয় গরীব ঈদের শপিংয়ে তাদেরকে শামিল করাই ঈদ। তোমার দেয়া একটি ছোট্ট উপহার ঐ পরিবারে ঈদের খুশি বয়ে নিয়ে আসবে। যে মহল্লা বা গ্রামে তোমরা থাকো তার আশে পাশে অনেক গরীব লোকের বসবাস। তুমি তোমার মনের মতো অনেক কেনাকাটা করলে কিন্তু ওদের কথা মনে করলে না তাহলে কিন্তু ঈদের খুশি বিনিময় হলো না। বরং যদি ওদের জন্য কিছু উপহার হিসেবে জামা কাপড় কিংবা খাদ্য সামগ্রী পাঠাতে পারো তাহলে ঈদ পৌঁছে যাবে পূর্ণতায়। তোমার মনেও বিশুদ্ধ আনন্দরা খেলা করবে। তুমি পরজীবনেও খুশি থাকবে।
দুঃখিজনের পাশে গিয়ে দাঁড়াই
আপন ভেবে ভালোবেসে
দয়ার হাতটা বাড়াই।
ঈদে আমরা অনেক ধরনের অপচয় করি। আতশবাজি করার জন্য পটকা কিনি, মহল্লা বা গ্রামের কোন মোড়ে সজ্জিত করে সাউন্ডবকস বসিয়ে অতিরিক্ত সাউ- দিয়ে গান বাজনার আয়োজন করি, নানা রকমের পানীয় উপভোগ করি। এগুলো কিন্তু ঈদের আনন্দ নয়। এগুলো কোন মুসলমানের সংস্কৃতিও নয়। কেননা এতে সমাজের কোন কল্যাণ হয় না। বরং এ সব আড্ডায় সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। এ ছাড়া আমরা আনন্দ করছি অন্যদিকে গরীব দুখি মানুষেরা তাদের ছেলে মেয়েদের মুখে একটু ভালো খাবারও তুলে দিতে পারছে না। এটা কি কোন বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাজ হলো? কখ্খনো না।
ঈদের আনন্দকে সামনে রেখে আমাদের সমাজে অনেক ধরনের অনৈতিক কাজ হয়ে থাকে। এগুলোকে আবার ঈদের আনন্দের সাথে মিলিয়ে ফেলা হয়। কোন কোন স্থানে নানা খেলাধুলার নামে জুয়ার আসরও বসে। অযাচিত ও অশ্লীল অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে। নতুন নতুন অশ্লীল সিনেমার নির্মাণ হয়, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ঈদ আনন্দের নামে নানরূপ অশ্লীল অনুষ্ঠানও নির্মাণ করে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতেও তৈরি হয় আনন্দ পাতার নামে নানবিধ রুচিহীন আয়োজন। এগুলো কি ইসলামের নীতি-আদর্শ? যদি ইসলামের আদর্শ না হয়ে থাকে তাহলে ঈদের খুশি হিসেবে এটা কেমন করে চলতে পারে?
ঈদ মানে খুশি তাঁর জন্যই যিনি একটি মাস রোজা করে নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পেরেছে। কিংবা রোজার হক আদায় করে নিজেকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। আমরা যে আনন্দ করছি তা কি সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে? না পৌঁছলে আমাদের অবশ্যই সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে বৈকি! সেইসাথে ইতোপূর্বে যে দুখি মানুষদের কথা বলা হলো তাদের ঈদ শপিংয়ের খবর কি কখনো নিয়েছো। মাত্র ক’টাকা আয় তাদের? সেই সামান্য আয় থেকেই তারা কতো সহজভাবে ঈদের কেনাকাটা করে থাকে। তাদের মুখেও কত মজার হাসি। সেই হাসিকে আরো মধুময় করে তোলা সম্ভব আমাদের একটু সহযোগিতা। এবারের ঈদে সবাই পরিকল্পনা করতে পারি, অন্তত একজনের মুখে হলেও হাসি ফুটাবো একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে। কি পারা যাবে তো? যদি পারা যায় তবেই হবে ঈদের স্বার্থকতা। অনুভব করা যাবে ঈদের নির্মল আনন্দ। তাই বলা যায়-
তোমার আমার বাড়ির পাশে /গবীর দুখির খোঁজ করি
ঈদের খুশির সকল মজা / উপভোগও রোজ করি।

Share.

মন্তব্য করুন