মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য অশেষ নেয়ামত দান করেছেন। অশেষ এই নেয়ামতের মধ্যে প্রকৃতিতে রয়েছে নানা রকমের ফল। স্বাদে বা গন্ধে কোনো ফলের সঙ্গেই অন্য আরেকটি ফলের কোনো মিল নেই। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক ফলই আলাদা-আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। বৈচিত্র্যময় ঋতুতে সমৃদ্ধ আমাদের এই বাংলাদেশ- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ঋতুচক্রে বৈশাখের পরেই আসে জ্যৈষ্ঠ। প্রচন্ড খরতাপে এ মাসে প্রকৃতিতে থাকে নাভিশ্বাস অবস্থা। এর মধ্যেই রকমারি ফলের সমাহার নিয়ে রয়েছে জ্যৈষ্ঠের বাহারি রূপ, রস আর ভিন্ন-ভিন্ন গন্ধ। এ সময় আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ প্রায় সব ধরনের মৌসুমি ফলই পাকতে শুরু করে। বাতাসে থাকে মিষ্টি ফলের মনমাতানো সুগন্ধের হাতছানি। তাই এই সময়ের মধুর রসে ভরা ফলের প্রতি রয়েছে বাঙালি মাত্রেই বিশেষ দুর্বলতা। বলা যায়- এই নান্দনিক সময়ের জন্য প্রতিটি বাঙালিপ্রাণ সারা বছরই প্রতীক্ষায় থাকে। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। সাধারণভাবে ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’ হিসেবে এর পরিচিতি বেশি। কোথাও কোথাও আবার এই মধুমাসকে উপলক্ষ করে মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনিরা ‘নাইওর’ যায়, তারা আপ্যায়িত হয় চিরচেনা রসালো সব ফলে। বিশেষ করে আম-কাঁঠালের সাথে অনেক ক্ষেত্রেই যোগ হয় চিঁড়া-মুড়ি ও খই এবং দুধ-দই। রঙবাহারি ফল আর সুমিষ্ট ঘ্রাণসমৃদ্ধ জ্যৈষ্ঠ তাই বাঙালি জীবনে এক অনন্য দিন হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।
আমাদের প্রকৃতির ছয়-ছয়টি ঋতুই আলাদা-আলাদা বৈশিষ্ট্যের। এই ছয়টি ঋতুর মধ্যে বৈশাখ আর জ্যৈষ্ঠ নিয়ে গ্রীষ্মকাল। ফলের ঋতু হিসেবে গ্রীষ্ম সমধিক পরিচিত। গ্রীষ্মের দিনগুলো উষ্ণ ও শুষ্কতায় থাকে পরিপূর্ণ। সাধারণভাবে মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকেই চূড়ান্তভাবে গরম পড়তে শুরু করে। গ্রীষ্মের দাবদাহে নদী-নালা, খাল-বিলসহ জলাশয়ের পানি শুকিয়ে যায়। এই ঋতুতে দিন বড় আর রাত ছোট হয়। এ সময় পশ্চিমা মৌসুমি বায়ু দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে শুরু করে। আবার পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শীতল ও শুষ্ক বাতাসও বয়ে যায় এ সময়। মহাসাগর থেকে নিয়ে আসা মেঘ বাতাসের সঙ্গে শীতল ও শুষ্ক বাতাস মুখোমুখি হয়ে পরস্পরের কাছাকাছি এলে তা প্রবল ঝড়ের রূপ ধারণ করে। শুরু হয় প্রচন্ড ঝড়। এই ঝড়কে আমরা কালবৈশাখী ঝড় বলে থাকি। যার তান্ডবের কথা আমাদের কারোই অজানা নয়।
ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলাদেশে জলবায়ুগত কারণে অনেক কিছু বদলালেও জ্যৈষ্ঠের মনোলোভা উৎসবে ভাটা পড়েনি এতটুকু। তবে আবহমান কালের ফলের ঘ্রাণে, উৎসবের আমেজে ফিকে হয়ে যায় অসহ্য গরম আর রৌদ্রদগ্ধতার ধকল। জ্যৈষ্ঠের আমরা আদুরে নাম দিয়েছি ‘মধুমাস’। দিকে দিকে আহা কী ফলের বাহার! জ্যৈষ্ঠ বন্দনায় পঞ্চমুখ আমরা সবাই। ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে- এমন খবরেও উদ্বেগের পাশাপাশি রসালো আয়োজনের মুগ্ধতায় মধুময় এ গ্রীষ্মের অপেক্ষায় থাকি আমরা সবাই।
রোদের প্রচন্ড তাপে একটু স্বস্তি পেতে শহর ও গ্রামে মানুষ গাছের ছায়ায় মাদুর পেতে পরিশ্রান্ত-ঘর্মাক্ত শরীর এলিয়ে দেয়। গ্রামবাংলার দুরন্ত শিশু-কিশোরের দল নদী-পুকুর কিংবা খালের পানিতে শীতল হবার শ্রান্তিতে স্বস্তি খুঁজে পায়। অন্যান্য বাংলা মাসের মতোই জ্যৈষ্ঠেরও নামকরণ করা হয়েছে একটি তারার নামে। সে তারার নাম হলো ‘জেষ্ঠা’। সাতাশটি তারার মধ্যে তার অবস্থান আঠারোয়। এ মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- একদিকে প্রকৃতি তেতে ওঠে, গরমে কাতর হয় মানুষ। অন্যদিকে উদার প্রকৃতি মানুষকে তৃপ্ত করার জন্য নানা রকমের পসরা সাজিয়ে রাখে। জ্যৈষ্ঠের প্রকৃতি আমাদের জন্য আগে-ভাগেই ডালি সাজিয়ে রেখেছে দেশীয় রসালো ও সুস্বাদু আম, লিচু, কাঁঠাল, কালোজাম, আনারস, করমচা, জামরুল, আতা, গাব, আমড়া, তরমুজ, ফুটি, বাঙি, বেল, তালশাঁস, খেজুর ইত্যাদি দিয়ে।
জ্যৈষ্ঠ আসার আগেই আমের গায়ে হালকা হলুদ রঙ দেখা দেয়। আমই হলো জ্যৈষ্ঠের প্রধান অমৃত ফল। আমাদের এই উপমহাদেশে আমের চেয়ে স্বর্গীয় ফল আর হয় না। এটা জ্যৈষ্ঠ মাসে পূর্ণতা পেয়ে বিনা বাতাসে ধুপধাপ ঝরতে থাকে। আম কুড়োবার জন্য শিশুরা সব সময় গাছের নিচে করতে থাকে ছোটাছুটি। সে এক অনাবিল দৃশ্য।
আমাদের দেশে প্রায় সবখানে এসব ফল জন্মালেও সোনারগাঁও, রাজশাহী, দিনাজপুর ও ঈশ্বরদীর আম-লিচু বিখ্যাত। পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্মায় জলডুগি আনারস। কাঁঠালের জন্য আবার গাজীপুর প্রখ্যাত।
ফাল্গুন আর চৈত্র মিলে বসন্তকাল। এ সময় ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বাংলার প্রকৃতি। বসন্তের ফোটা ফুল আস্তে আস্তে ফলে পরিণত হয় গ্রীষ্মে এসে। রসে টইটম্বুর নানা রকম ফল দেখে রসনায় পানি আসে না- এ কথা কেউই হলফ করে বলতে পারবে না।
জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রধান ফল আম, জাম, কাঁঠাল আর লিচু। কিন্তু ফলের রাজা আম। কাঁঠাল হলো জাতীয় ফল। অবশ্য আমগাছ পেয়েছে বর্তমানে জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা। আমের কদর সেই প্রাচীনকাল থেকেই। পারস্যের কবি আমীর খসরু চতুর্দশ শতাব্দীতে আমকে ‘হিন্দুস্তানের সেরা ফল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আধুনিককালে বিখ্যাত উদ্যানবিদ পোপেনো আমকে ‘প্রাচ্যের ফলের রাজা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
আমের আদিনিবাস কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমাদের এই জনপদই আমের আদিবাস, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত হয়েছেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭-এ আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় আম দেখে এবং খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ সময়ই আম ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ এবং মাদাগাস্কারে। ১৩৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে আমের চাষ হচ্ছে আফ্রিকায়। ১৬ শতাব্দীতে আম গিয়ে হাজির হয় পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে। ১৬৯০ সালে ইংল্যান্ডে কাচের ঘরে আম চাষের খবর শোনা যায়। সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ইয়েমেনে পৌঁছে যায় আম। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে আম চাষের খবর পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পর্তুগিজদের হাত ধরে জাহাজে চেপে আম যায় আমেরিকা ও ব্রাজিলে। ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে আম পৌঁছায় মেক্সিকোতে। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আমের আঁটি থেকে গাছ হয়।
আমাদের দেশে কত না জাতের আম রয়েছে। তা নাকি হাজার জাতেরও হতে পারে! এখানে কিছু আমের কথা জেনে নেয়া যাক।
ফজলি : আকারে বেশ বড় আকৃতির। সুস্বাদু। শাঁস কমলা রঙের বা লালও হয়। গাছের বৈশিষ্ট্যও বড়। মধ্য জুলাই-মধ্য সেপ্টেম্বরে পাকে।
ল্যাংড়া : পাতলা খোসা ও হালকা বীজবিশিষ্ট জাত। শাঁস হালকা কমলা আভাযুক্ত। মিষ্টি, রসালো ও আঁশবিহীন। এটি ঋতুর মাঝামাঝি অর্থাৎ জুনের শেষভাগ থেকে জুলাই মাসে পেকে ওঠে।
গোপালভোগ : শাঁস গভীর কমলা রঙের। ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে ৩২৫ গ্রাম পর্যন্ত। এই আম গাছে আগাম আসে এবং জুন মাসে পাকে।
কিষাণভোগ : জুন থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে পাকে। এটাকে মধ্য মৌসুমিও বলা যায়।
খীর্সাপাতি : গোপালভোগ আমের চেয়ে সামান্য ছোট আকৃতির। মিষ্টি ও ছোট আঁশবিশিষ্ট। শাঁস হলুদে মেশানো বাদামি। এটাও আগেভাগে আসে, আগেভাগে পেকে ওঠে। থোকা থোকা ফল, লিচুর মতো রাখা যায়।
হিমসাগর : মাঝারি আকারের এই আম ওজনে ৩৭৫ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। পাকে জুন-জুলাই মাসে। ফল রসালো, মিষ্টি ও আঁশবিহীন এবং এর আঁটি ল্যাংড়া আমের মতো ছোট হয়। ত্বক মাঝারি পুরু। মিষ্টতা ও সংরক্ষণশীলতার দিক থেকে অপূর্ব বলা যায়।
কোহিতুর : মাঝারি আকারের এই আম প্রায় ২৫০ গ্রাম ওজনের হয়। রাজশাহীতে জন্মে। শাঁসে রসালো, সুমিষ্ট, কোমল। আমের মধ্য মৌসুমে মানে জুন-জুলাইতে পাকে।
মোহনভোগ : ওজনে ২৭৫ থেকে ৬২৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়। গোলাকার আকৃতির ফল। মাঝারি-নাবী জাতের।
গোলাপখাস : ২৫০ থেকে ৩৭৫ গ্রাম পর্যন্ত ওজনে দাঁড়ায়। মৌসুমের আগেভাগে আসে। মে-জুন মাসে পাকে।
চৌসা : গাছ মাঝারি আকারের। কাঁধ সমান হতে পারে। পাকা ফলের শাঁস হলুদ। বেজায় মিষ্টি। জাত নাবী। জুলাই থেকে আগস্টে পাকে।
আশ্বিনা : এই আমটি সবচেয়ে নাবী জাতের। জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে পাকে। আমের পরেই আসে জামের প্রসঙ্গ। আর এ সময় গ্রামবাংলার প্রতিটি স্তরে ফলে ফলে ফলময় ওঠে। নানারকম ফলের মধুর গন্ধে বাতাসে মৌ মৌ গন্ধ ছড়ায়। মোহনীয় সে গন্ধে পাখি, মৌমাছি, ভোমরারা পাগল হয়। গুনগুন করে ছুটে বেড়ায় এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা একটু ঝড় কিংবা দমকা বাতাস হলেই ছুটে যায় আমতলায়-জামতলায়। ঝরে-পড়া আম, ছিটকে-পড়া জাম কুড়িয়ে পাওয়ার যে আনন্দ, তার কোনো তুলনা মেলে না কিছুতেই। সেজন্যই বোধ করি আমাদের পল্লীকবি জসীম উদদীন বলতে পেরেছেন এভাবে-
‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে/ আম কুড়াতে সুখ,
পাকা জামের শাখায় উঠে/ রঙিন করি মুখ।’
জাম সাধারণভাবে দুই প্রকারের হয়। কালো জাম আর বুনো জাম। কালো জাম বড় আকারের আর বুনো জাম ক্ষুদ্রাকৃতির। কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, দিনাজপুর ও পাবনা এলাকায় এই প্রকারের জাম বেশি চোখে পড়ে। এ ছাড়াও জামের মধ্যে রয়েছে জামরুল, গোলাপজাম প্রভৃতি। এই সময়ে সূর্যের দিকে তাকানো যায় না, যেন গনগনে আগুন ঢালে। তবে জমাট জমাট পুঞ্জ মেঘ ভেসে বেড়ায়। এই দৃশ্যপট খোলা আকাশে অহরহ চলতে থাকে। এই মাসেই সবচেয়ে রসযুক্ত লিচুর ডাল ফলের ভারে নুয়ে পড়ে। লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুর। মাদ্রাজি আর বোম্বাই জাতের লিচু প্রায় সারাদেশেই পাওয়া যায়। মধুমাসের ফলের মধ্যে লিচু একটি অন্যতম নাম।
এ সময়ের ফলের মধ্যে কাঁঠাল একটি। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল হিসেবে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আকারের মজার ফল এটি। কাঁঠাল কেবল জাতীয় ফল নয়, গরিবের ফল হিসেবেও সমধিক পরিচিত। কাঁচা অবস্থায় কাঁঠাল সবজি হিসেবে বেশ আদরণীয়। দুধ-ভাতে আমের যেমন জুড়ি নেই, কাঁঠালের বেলায় ঠিক তা নয়। পাকা কাঁঠাল দুধ-ভাত ছাড়াও খাওয়া যায়। কাঁঠালের শুকনো বীজ কাঠখোলায় ভেজে, সিদ্ধ করে কিংবা সবজির মতো তরকারি হিসেবেও বেশ কদর রয়েছে এর।
আমাদের দেশে পাখিদের একটা অবাধ জগৎ আছে। কোকিল শেষরাতে শুরু করে ডাকাডাকি। দুপুর কিংবা দুপুরের একটু পরে আকাশে উড়ে যায় একলা পাখি। কুটুম পাখি। পাখিটার ডাকের সাথে তাল মিলিয়ে শিশুরা বেশ মজা পায়।
আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কুটুম পাখিটা ডাকতে ডাকতে চলে যায়। এ দৃশ্য একমাত্র বাংলার একান্তই নিজস্ব। পৃথিবীর আর কোথাও এ দৃশ্য চোখে পড়বে না। এটা হয় জ্যৈষ্ঠের দুপুরবেলা কখনো-সখনো। এই মাস হলো পাখিদের পালক রঙিন হওয়ার মাস। শালিকের গায়ে নতুন রঙ আঁচড় কাটে। সবুজ টিয়া পাখির ঠোঁট টুকটুকে লাল। বটের পাখি হরিয়াল গাঢ় সবুজ শরীর নিয়ে বটের ফল খাওয়ার জন্য এক বটবৃক্ষ থেকে অন্য বৃক্ষের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায়।
প্রকৃতিতে ফুটে থাকা নানা রঙের ফুল আমাদের মন কাড়ে। হৃদয়ে দোলা দেয়। চোখ পবিত্র করে। গ্রামবাংলার আনাচ-কানাচে সারাবছরই কোনো না কোনো ফুল আমাদের চোখে পড়ে। গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ফুলের মহিমার আগুনে ছেয়ে যায় গ্রামবাংলার বন-বাদাড়। এ সময় লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া, পারিজাত, জবা, মাধবী, করবী, কড়ই, হলদিয়া, কনকচূড়া, হলুদচূড়া, সোনালু, জারুল, বকুল, বেলি, টগর, জবা, নিমফুল- এমনকি বর্ষা রানির প্রতীক কদমফুল মনোহর শোভা আর মৃদু সুগন্ধি ছড়িয়ে আমাদের অবসন্ন চোখে প্রশান্তি এনে দেয়। এদিকে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মমাস হিসেবেও জ্যৈষ্ঠ পেয়েছে আলাদা মর্যাদা। প্রতি বছর ১১ জ্যৈষ্ঠ বাংলাদেশে নজরুল স্মৃতিধন্য জায়গাগুলোতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে চিরতারুণ্য ও বিদ্রোহী কবির জন্মদিন পালন করা হয়। এ ছাড়াও গ্রামীণ জনপদে বসে মেলা। ঘরে-উদ্যানে, বটতলায় মেলার মাঠে জমকালো আবহে এটিই প্রমাণিত হয়, জ্যৈষ্ঠ উৎসবের মাস, বাংলা প্রকৃতির অলঙ্কার।
গ্রীষ্ম দিয়েই বাংলা নববর্ষ শুরু হয়। নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য এক অনন্য দিন। এ দিনকে কেন্দ্র করে বাংলার মানুষ এক নির্মল আনন্দে মেতে ওঠে। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে বটতলা, হাটখোলায় নানা রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এদেশের সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষজন।
বাংলা নববর্ষের প্রথম মাস বৈশাখ শেষ হতেই এসে হাজির হয় জ্যৈষ্ঠ। থাকে খাজাঞ্চি ভরা উপহার তার ঝুলিতে।
আর একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, কেবলমাত্র মধুমাস এলে ফল খেলেই হবে না, এই অনন্য সাধারণ মাসটিকে বরণ করার পাশাপাশি লাগাতে হবে ফলের গাছ, যত্ন নিতে হবে সেসব গাছের।
মহান আল্লাহ তায়ালার অপূর্ব নেয়ামতের কথা শুরুতেই বলেছি। এ সবকিছু আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সময়ের এই সব ফল আমরা যেমন খাবো, ঠিক তেমনি বাড়ির পাশের গরিব ছেলেটি বা মেয়েটি কিংবা আমার সহপাঠী যেন এ মজার ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল করব।

Share.

মন্তব্য করুন