শৈশবে বৈশাখ
ফজলুল হক তুহিন

আমাদের শৈশবে বৈশাখ এসেছিলো
নতুনের হাঁকেডাকে মনপাখি ভেসেছিলো।

মেঘ ডাকে দিগন্তে ধুলোঝড়ে আম পড়ে
কড়মড় গর্জনে মেঘ উড়ে পাতা ঝরে।

দল বেঁধে দৌড়ঝাঁপে আম কুড়ানোর ধুম
সারাদিন ঘুরিফিরি খাইদাই নেই ঘুম।

ইশকুল মাঠে বসে নাগরদোলার মেলা
হৈ চৈ হুল্লোড় আনন্দে কাটে বেলা।

পথে পথে ঝড়ে ঝড়ে হয়ে উঠি নীল পাখি
ঘুড়ি ওড়ে ডানা মেলে স্বপ্নের বৈশাখী।

নববর্ষ কই
আমিন আল আসাদ

বিশ্বজুড়ে ভীষণতরো
হত্যা ও সংঘর্ষ
ক্যামনে বলি আজকে তোমায়
শুভ নববর্ষ?

আজ সমাজে ভাইয়ে ভাইয়ে
জঘন্য সব দাঙ্গা
নববর্ষে ক্যামনে রাখি
হৃদয়টাকে চাঙ্গা?

আজকে কারা চাপিয়ে দিলো
লড়াই আত্মঘাতী?
ক্যামনে বলো নববর্ষের
আনন্দেতে মাতি?

আরাকানে বিপন্ন আজ
মানবতা-ধর্ম
নববর্ষে পাচ্ছি না তাই
সঠিক সুখের মর্ম

রোহিঙ্গাদের মাঝে আজি
নববর্ষ কই?
তারাওতো বঙ্গবাসীর
বন্ধু এবং সই!

স্বপ্ন
মুহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারী

মনের ভিতর পাখনা মেলে
স্বপ্ন বেড়ায় উড়ে,
রং-তামাশার হাজার ফানুস
মনের আকাশজুড়ে।

স্বপ্নগুলো মেঘ হয়ে যায়
কখনও হয় নদী,
আমার গাঙে জোয়ার আনে
বয় যে নিরবধি।

স্বপ্ন আমার বাঁচিয়ে রাখে
স্বপ্ন চালায় ভেলা,
চলতে থাকে জীবনব্যাপী
রং-বাহারি খেলা।

বাড়িয়ে দেবো হাত
মোস্তফা মাহাথির

আমার শুধুই ইচ্ছে করে ফিকশনে দেই হাত
নিত্য নতুন আবিষ্কারে কাটাই দিবস-রাত।
তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে গ্যালাক্সিতে কান
গ্রহান্তরের মিল্কিওতে করতে অভিযান!
দশ গ্রহতে ছায়াপথে দেখতে আলোর ঢল
আমার চোখও স্বপ্ন আঁকে ইচ্ছেরা টলমল।
কোন গ্রহতে কারা থাকে কী তার অবস্থান
কোথায় কারা আমার মতো করছে অভিমান।
কিন্তু আমার হয় না দেখা হয় না লেখা ছাই
স্বপ্ন পুষি বুকের ভেতর নিত্য অযথাই!
ডাকলে তবু চাঁদের বুড়ি জোসনা ভরা রাত
ইলেকট্রিকের খাম্বা হয়ে বাড়িয়ে দেবো হাত।

আমার গাঁয়ে
আতিফ আবু বকর

আমার গাঁয়ে ভোরের আকাশ কুসুম রাঙা সকাল হয়,
কোকিল কুহু বুলবুলিরা সুরে সুরে কথা কয়।
দূর্বা ঘাসে শিশির জমে রোদের আলোয় ঝিকিমিক,
দিগন্তরা সবুজ সবুজ ফসল ভরা চতুর্দিক।

বিকেল নামে কমল ছুঁয়ে সময় তখন ফেরার ক্ষণ,
গোধূলি বেলা ঘরকে টানে গঞ্জে মাঠের কর্মী জন।
সূর্য লুকায় মেঘের বুকে অনিন্দ্য এক মায়ার জাল,
রাত্রি নামার জানান দিয়ে চমক লাগায় আঁধার কাল।

কুপিবাতির আলোর রেখা জ্বলতে থাকে এশা তক,
রাতের কোলে যায় ঘুমিয়ে পাড়াটা যেন ঘুমের চক।
রাত নিশুতি জেগে থাকে ঝিঁঝিঁপোকা জোছনা আর,
জোনাক জ্বলে মিটিমিটি পুকুর পাড়ে ঝোপের ধার।

চাষি
হোসেন মোতালেব

প্রত্যুষে রোজ পাখিগুলো কিচিরমিচির ডাকে
ঠিক তখনই মোয়াজ্জিনে মধুর আযান হাঁকে।
শান্ত গাঁয়ের প্রান্ত থেকে নিত্য বিহান বেলা
লাঙল কাঁধে মুক্ত মাঠে চলে চাষির খেলা ।

কাজের ফাঁকে মাঠের মাঝে বটপাকুড়ের ছায়ায়
ক্লান্ত চাষি বাজায় বাঁশি করুণ সুরের মায়ায় ।
রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সোনার ফসল ফলায়
তাইতো কৃষক লাঙল জোয়াল পরায় গরুর গলায়।

গরুগুলো তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় জমি চষে
ফল ফসলের স্বপ্ন আঁকে জমির আলে বসে।
জমিই জীবন জমিই মরণ জমির সাথেই খেলা
সোঁদা মাটির গন্ধ শুঁকে কাটে চাষির বেলা।

পুবাল বায়ে গা এলিয়ে কাটে ফসল চাষি
অন্তরে সে সুখের স্বপন আঁকে রাশি রাশি।
গোধূলি রঙ দেয় ছড়িয়ে পশ্চিম আকাশ ভরে
গাঁয়ের চাষি ঠিক তখনই ফেরে নিজের ঘরে।

কই যে গেলো
আবদুর রহমান আজাদ

কই যে গেলো ছেলেবেলা
শৈশবের ঐ সিন,
কানামাছি দাড়িয়াবাঁধা
গোল্লাছুটের দিন।

কই যে গেলো কিশোরকালের
সেই সে বিকেলবেলা,
ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকি
চোর-পুলিশি খেলা।

কই যে গেলো গাছে চড়া
পাখি ধরার ক্ষণ,
পাখির বাসা পাখির ছানা
হিজলের ঐ বন।

কই যে গেলো দুষ্টুমি আর
বাঁদরামির ঐ কাল,
দৌড়াদৌড়ি হুড়োহুড়ি
ডিগবাজি আর ফাল।

কই যে গেলো বাপের ধমক
মায়ের বকাবক,
কাদামাটি গায়ে মেখে
পেত্নি সাজার শখ।

কই যে গেলো সাঁতার কাটা
বর্ষার জলে ওই,
লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপি
কই যে গেল কই!

ইচ্ছে করে
খায়রুল আলম রাজু

ইচ্ছে করে পাখির মতো
উড়ে চলি ভাই,
স্বদেশ ভূমি পাড়ি দিয়ে
ভিন দেশেতে যাই।

ইচ্ছে করে মেঘ হয়ে
নীল আকাশে উড়ি,
ছোট্ট শিশুর চরকা
হয়ে বাতাসে ঘুরি।

ইচ্ছে করে বিশ্বের সব
পাঠশালাতে যাই,
নানান জ্ঞান শিখে
আমি বড় হতে চাই।

Share.

মন্তব্য করুন