প্রতিদিনের মতো আজও নলজানি উচ্চবিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে। সপ্তম শ্রেণির ক্লাসে হঠাৎ গণিত শিক্ষক একাধারে নাফিস, রাতুল ও নাজিম নামের তিন জনকে দাঁড় করালো। অপরাধ হলো ওরা তিন জন একে অপরের সাথে ফিসফিস করে কথা বলেছিলো। ওরা হলো একে অপরের প্রাণের বন্ধু। কিছুক্ষণ পর গণিত শিক্ষক বসার অনুমতি দিলো। ওরা তখন ফিস ফিস করে কথা বলেছিলো বিদ্যালয় ছুটির পর গ্রামের করিম চাচার বাগানে পেয়ারা চুরি করে খাবে বলে। কারণ হলো আজ বৃহস্পতিবার। আর বৃহস্পতিবার মানেই হলো বিদ্যালয়ের হাফ ক্লাস।
চার ক্লাস পরক্ষণে বিদ্যালয় ছুটির বেল বাজলো। আর যেই কথা সেই কাজ। বিদ্যালয় ছুটির পর নাফিস, রাতুল ও নাজিম ওরা তিনজন গ্রামের ধান ক্ষেতের মাঝে চিকন পথ ধরে রওনা দিলো করিম চাচার পেয়ারা বাগানের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ পরেই পৌঁছে গেলো করিম চাচার পেয়ারা বাগানে। ওদের মধ্যে নাফিস উঠলো পেয়ারা গাছে। আর রাতুল ছিলো পেয়ারা গাছের নিচে পেয়ারা কুড়ানোর জন্য। অন্য দিকে নাজিম ছিলো পাহারা দেয়ার জন্য পেয়ারা বাগানের এদিক ওদিক। নাফিস রীতিমতো গাছে বসেই পেয়ারা খাওয়া শুরু করে দেয়। পেয়ারায় এক কামড় দেয় আবার গাছ থেকে আরেকটি পেয়ারা ছিঁড়ে রাতুলের কাছে মাটিতে ফেলে। অন্যদিকে নাজিম যেন আগের দিনের রাজ প্রাসাদের প্রহরীর মতো পাহারায় ব্যস্ত। আস্তে আস্তে অনেকগুলো পেয়ারা জমা হলো। তারপর নাফিস গাছ থেকে মাটিতে নামলো।
তিন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলো রাতুলের ব্যাগে পেয়ারাগুলো ভরে বাগান থেকে দ্রুত কেটে পড়ে টেকপাড়ার মাঠে গিয়ে ভাগ করা হবে। ওরা যখন বাগান থেকে বের হলো তখনই সামনে হাজির হলো পেয়ারা বাগানের কর্তা করিম চাচা। এতে ওরা এতটাই ভয় পেয়েছিলো যে, ওদের একেক জনের মুখ ভয়ে লাল হয়ে গিয়েছিলো। তারপর করিম চাচা বললেন, ভয়ের কিছুই নেই। আমি তোমাদের মারবো না তবে কিছু উপদেশ দিবো। এরপর ওদের ভয় অনেকটাই কেটে যায়। করিম চাচা বললেন, তোমাদের পেয়ারা খাওয়ার ইচ্ছা জেগেছে তা আমাকে বললেই হতো। দরকার হলে আমি নিজেই পেড়ে দিতাম। এর আগে যারা আমার কাছে পেয়ারা চেয়েছে আমি সবাইকেই দিয়েছি। আজ এই বাগানটি যদি আমার না হয়ে গ্রামের অন্য কারো হতো তাহলে এ নিয়ে বিচার বসে যেতো। এতে কি তোমাদের বাবা-মায়ের মর্যাদা বাড়তো। নিশ্চয়ই না। বরং গ্রামের সকলের কাছে অপমানিত হতে হতো। এতে তোমাদের বাবা-মায়েরা কষ্ট পেতেন। বাবা-মাকে কষ্ট দিলে জীবনে কখনোই সফলতা আনা যায় না। কারো কোনো জিনিস নিতে হলে অনুমতি প্রয়োজন। যদি অনুমতি না পাওয়া যায় তাহলে সেই জিনিসের আশা করা যাবে না। এরপর ওরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। করিম চাচা আরো বলেন, তা ছাড়া আমরা যে কাজই করি না কেন তা আমাদের সৃষ্টিকর্তা সর্বদাই দেখেন। সৃষ্টিকর্তা কখনই খারাপ কাজকে পছন্দ করে না। করিম চাচার উপদেশ শুনে ওরা প্রত্যেকেই নিজেদের দোষটা বুঝতে পারলো। চাচা তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। এরপর কিছুক্ষণ পর তারা ধান ক্ষেতের মাঝের সেই চিকন পথ ধরে টেকপাড়ার মাঠের দিকে চলে আসে।

Share.

মন্তব্য করুন