দাদুর ঘরে বইয়ের তাকে একটা চেরাগ পেলো অন্তু। পুরাতন চেরাগ। গায়ে মরীচিকা ধরেছে।
অন্তু চেরাগটা হাতে নিয়ে বললো, এটা আবার কী রে? কৌটা?
অন্তু দৌড়ে মায়ের কাছে যায়। চেরাগটা মাকে দেখায়। বলে, মা মা এটা কী? কৌটা?
মা বলেন, না বাবা, এটা কৌটা নয়। এর নাম চেরাগ।
চেরাগ!
হুম চেরাগ।
অন্তুর মনে পড়ে বড়ো আপুর কাছে একটা গল্প শুনেছিলো সে। সেই গল্পে আলাদ্দিনের একটা চেরাগ ছিলো। জাদুর চেরাগ। সেই চেরাগের ভেতরে ছিলো একটা দৈত্য। ইচ্ছেপূরণ দৈত্য। ওই ইচ্ছেপূরণ দৈত্যটা আলাদ্দিনের সব ইচ্ছে পূরণ করতো।
এই চেরাগেও কী ইচ্ছেপূরণ দৈত্য আছে নাকি রে? অন্তু ভাবে। তারপর চেরাগটা নিজের রুমে নিয়ে পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখে সে। যদি আলাদ্দিনের মতো তারও চেরাগে ইচ্ছেপূরণ দৈত্যটা আসে!
দিন যায়, মাস যায়। কিন্তু অন্তুর চেরাগে কোনো ইচ্ছেপূরণ দৈত্য আসে না।
অন্তুর মন খারাপ হয়ে যায়।
সেদিন সন্ধ্যায় বাসায় কেউ নেই।
মা আর বাবা গেছেন শহরে। শপিং করতে।
বড়ো আপু গেছেন তার বান্ধবীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে।
বাসায় শুধু অন্তু একা আছে।
নিজের ঘরে বসে বই পড়ছে সে।
এ সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো। লোডশেডিং!
অন্তু অন্ধকারে হাতড়ায়। চার্জার লাইটটা খোঁজে। জ্বালাবে বলে। অমনি টেবিলে রাখা দাদুর মরীচিকা ধরা চেরাগটা আপনা আপনি বুদ বুদ করে জ্বলে উঠলো। ঘরটা আলোকিত হয়ে গেলো।
অন্তু তো অবাক। চেরাগটা আপনা আপনি জ্বলে উঠলো কিভাবে? চেরাগে তো কোনো সলতে নেই। কেরোসিন তেলও নেই। তেল আর সলতে ছাড়া চোরাগ জ্বলে কিভাবে! ভাবে অন্তু।
কী রে অন্তু, কেমন আছো?
কে কথা বলছে? কে? অন্তু ঘরের চারদিকে তাকায়। দেখে ঘরে কেউ নেই। বললো, আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কে কথা বলছো? কে?
আমি।
কে তুমি?
উহু! তুমি এতো বোকা হলে কী চলে রে অন্তু! আমি কথা বলছি, আমি। সামনে তাকাও; আমাকে দেখতে পাবে।
অন্তু এবার সামনে তাকায়। সামনেও কেউ নেই। বললো, আমি তো সামনেও কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।
এই যে আমি। আমি চেরাগ। চেরাগ কথা বলছি।
অন্তু এবার চেরাগের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলো। দেখলো, সত্যিই তো চেরাগের পেটে স্পষ্ট করে একটি মুখ দেখা যাচ্ছে। সেই মুখে নাক, মুখ, চোখ সবই আছে। অন্তু চেরাগের দিকে তাকাতেই দাঁত বের করে হাসতে লাগলো চেরাগ।
অন্তু তো অবাক!
এতো দিন সে শুনেছে চেরাগের ভেতরে দৈত্য থাকে। ইচ্ছেপূরণ দৈত্য। চেরাগ ঘষা দিলে তবেই সে বের হয়। বের হয়ে মানুষের সাথে কথা বলে। মানুষের সব ইচ্ছে পূরণ করে।
চেরাগ বললো, কি রে অন্তু! কোনো কথা বলছো না যে!
ভাবছি।
কী ভাবছো?
ভাবছি তোমাকে নিয়ে। এতোদিন শুনেছি চেরাগ কথা বলতে পারে না। চেরাগের ভেতরে দৈত্য থাকে। দৈত্যটাই কথা বলে। চেরাগ ঘষা দিলে দৈত্য চেরাগের ভেতর থেকে বাইরে বের হয়ে আসে। কী চাই- জানতে চায়। তারপর ইচ্ছে পূরণ করে দেয়।
অন্তুর কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো চেরাগ। আসলেই তুমি একটা বোকা রে, অন্তু! আস্ত একটা বোকা!
আমি বোকা!
বোকা নয় তো কী?
বোকা কেন?
চেরাগে কখনো দৈত্য থাকতে পারে?
পারে তো। আলাদ্দিনের চেরাগে তো একটা দৈত্য ছিল। ইচ্ছেপূরণ দৈত্য। সে আলাদ্দিনের সব ইচ্ছে পূরণ করতো।
আবারো হো হো করে হেসে উঠে চেরাগ। হাসে আর বলে, আরে বোকা, ওটা তো একটা আরবের রূপকথার গল্প রে।
রূপকথার গল্প!
তা নয় তো কী?
একটু থেমে চেরাগ আবার বলল, অন্তু, তুমি কি জানো আমাকে দিয়ে কেন ইচ্ছেপূরণ দৈত্যের গল্পটা তৈরি করা হয়েছে?
না তো !
তাহলে বলছি শোনো। আমি এই যে ছোট্ট একটি চেরাগ। ছোটো একটি চেরাগ হয়েও কিভাবে ঘরের চারপাশের অন্ধকার দূর করে চারপাশটা আলোকিত করে তুলেছি। আমি এই যে ছোট্ট একটি চেরাগ হয়েও চারপাশে আলোর দ্রুতি ছড়াচ্ছি এ থেকে শিক্ষা নিয়ে জ্ঞানীরা ‘আলাদ্দিনের চেরাগ’ রূপকথার গল্পটি তৈরি করেছেন। যেন আমার কাছে শিক্ষা নিয়ে তোমরাও বড়ো হয়ে তোমাদের চারপাশটা আলোকিত করতে পারো। ভাবতে পারো, একটি ছোটো চেরাগ চারপাশে আলো ছড়াতে পারলে আমি পারবো না কেন? আমি তো অনেক বড়ো।
এমন সময় অন্তুর বাবা মা চলে আসে।
চেরাগ বললো, আজ যাই রে অন্তু, পরে কথা হবে।
সঙ্গে সঙ্গে দুপ করে নিভে গেলো চেরাগটা। আর সাথে সাথেই বিদ্যুৎ চলে এলো। ঘরে আবার ইলেকট্রিসিটি বাল্ব জ্বলে উঠলো।
অন্তু দেখলো চেরাগের গায়ে এখন আর কোনো মানুষের মুখ নেই। চারপাশটা মরীচিকা ধরা।
বাবা মা বললেন, কী রে অন্তু! একা একা ভয় পেয়েছিলে নাকি?
একদম না। বললো অন্তু। কিন্তু সে চেরাগের কথা বাবা মাকে কিছুই বললো না। বলবে কেন? সে তো আলাদ্দিনের বড়ো হওয়ার রহস্য জেনে গেছে। আর তা হলো, পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি।
অন্তু এখন মন দিয়ে বই পড়ে। তাকে যে বড়ো হতে হবে। অনেক বড়ো। আলাদ্দিনের চেয়ে অনেক বড়ো। কারণ সেও যে আলাদ্দিনের মতো পেয়ে গেছে জাদুর চেরাগের গোপন রহস্য! ইচ্ছে পূরণের গোপন চাবি।

Share.

মন্তব্য করুন