পশ্চিম আকাশে কালো মেঘ গর্জন করছে। মৃদুলা বাতাসে জড়িয়ে থাকা হিম শীতলতা হয়ত জানান দিচ্ছে ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নেমে আসার আগমনী বার্তা। তা আঁচ করতে পেরে জানালার কাচ নামিয়ে দিয়ে একটু দূরে উল্টো পথের দিকে প্রসারিত দৃষ্টি মেলে থাকা শিশিরের উদ্দেশ্য করে রফিক বলল, ‘স্যার, তাড়াতাড়ি গাড়ির মধ্যে আসুন নয়ত ভিজে যাবেন তো।’
‘রফিক, তুমি গাড়ি নিয়ে চলে যাও। আমার ফিরতে হয়ত একটু দেরি হবে। তুমি আম্মাকে বলে দিও।’ দূর দিগন্তে চোখ রেখেই বলল শিশির।
‘স্যার এই বৃষ্টি ভীষণ ভয়ানক। ভিজে গেলেতো আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আর মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সমস্যা আপনার হতে পারে।’
‘উহ্ রফিক, কথা বাড়াবে নাতো। তুমি চলে যাও আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। আমাকে এখনো অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। যার যার আমানত প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তুমি বুঝবে না কাঁধে আমার অনেক বেশি দায়িত্ব।’ কয়েক মুহূর্ত থামল। তারপর তর্জনী দিয়ে সামনে ইশারা করে বলল, ‘আচ্ছা রফিক দেখ, ঐ যে দূরে একদল দিনমজুর কাজ করছে। বলতে পার তারাও কেন তোমার মতো এই একই চিন্তা করছে না? কেন তারা ভয়ে কাজ ফেলে উঠে আসছে না?’
রফিক কতক্ষণ নির্বাক চেয়ে রইল সেদিকে। তারপর বলল, ‘স্যার, তারা হলো দিনমজুর দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। একদিন কাজ না করলে হয়ত তাদের পরিবারবর্গকে না খেয়েই দিন কাটাতে হবে, তাই নিরুপায় হয়েই তাদের কাজ করতে হয়। তাদের চোখে ভয় বলে কিছু যদি থেকে থাকে তাহলে হয়ত তা হলো তাদের ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ের অনাহারী ছলছলে দৃষ্টি। তাই কাজই মুখ্য বাকি সব গৌণ তাদের কাছে।’
উজ্জ্বল হয়ে উঠলো শিশিরের চোখ দু’টি। হয়ত কাক্সিক্ষত উত্তরই পেয়েছে সে। সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকাল রফিকের দিকে। বলল, ‘এক কঠিন বাস্তবতাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলে তুমি। আমার উত্তরও এর মধ্যেই রয়েছে। তুমি জানো না রফিক, এক দুর্লঙ্ঘ্য গুরুদায়িত্ব আমার কাঁধে আসীন হয়ে আছে যার প্রতি আমি অবহেলিত। কিন্তু তা কতটুকু পালন করতে পারব তার ওপরই নির্ভর করছে আমার পরকাল। তাই আমার অবস্থা আজ ঐ দিনমজুরগণের চেয়েও অতিশয় খারাপ। যাই হোক এতসব তুমি বুঝবে না। তুমি এখন যাও, রফিক। সাবধানে যেও।’
কথা শেষ করেই হাঁটতে আরম্ভ করল শিশির।
সেদিকে তাকিয়ে আছে রফিক।
এতক্ষণ কথা হচ্ছিলো শিশির খান এবং তার ড্রাইভার রফিকের মাঝে।
উপায় না পেয়ে রফিক খালি গাড়ি নিয়েই বাসার পথ ধরলো। হঠাৎ তার মুখে ফুটে উঠেছে বিজয়ীর এক চিলতে প্রশান্তচিত্ত হাসি। রফিক এটাই কামনা করছিল যে শিশির তার কাক্সিক্ষত গন্তব্যে যাক। কিন্তু তাকে সাথে নিলে আরও বেশি খুশি হতো। নিলো না। তবুও রফিক দুই হাত তুলে ধরলো দয়াময় আল্লাহ্ তায়ালার কাছে। ওঁ যেন নির্বিঘেœ সেখানে পৌঁছাতে পারে সেজন্য প্রার্থনা করল। আর শিশির পা বাড়াল রেল লাইনের ওপারের বস্তির দিকে।
টুপটুপ করে বৃষ্টি ঝরছে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। ছিটেফোঁটা বৃষ্টি একত্রিত হয়ে গড়িয়ে পড়ছে তার গাল বেয়ে। আর তার নির্লিপ্ত চোখ এদিক ওদিকে নিগূঢ় পর্যবেক্ষণ করে ফিরছে রাস্তার আশপাশের নিঃস্ব-অসহায় মানুষগুলোর মর্মন্তুদ কর্মকা-।
খুব কাছ থেকে ও অনুভব করতে চেষ্টা করছে তাদের কষ্টগুলো। তাদের কষ্ট দেখে বুকের মধ্যে কোথাও হালকা মোচড় দিয়ে উঠলো। শিশিরের জন্য এই অনুভূতি একদম নতুন। নতুন কেন তা পরে বলব। সে একটু এগিয়ে গিয়ে তাদের ঘর্মাক্ত মুখ পানে তাকাল। বৃষ্টিজলের মধ্যেই ঘর্মাক্ত দিনমজুর মানুষগুলো কাজ করছে। শিশির আশ্চর্য হলো তাদের মুখে ক্লাšিহীন এক অনন্য প্রশান্তির হাসি দেখে। হেসে হেসে কথা বলছে তারা। মুহূর্তেই চোখের সামনে ভেসে এলো তাদের মতো ধনিক শ্রেণীর মানুষগুলোর কথা যাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে সময় কাটায়। কিন্তু মুখে কখনওই এমন নির্মল, অনাবিল হাসির শোভা দেখেনি শিশির।
বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে গেল ওর চেহারা। এলোমেলো চিন্তারা ভিড় করছে স্মৃতিপটে।
কিছু দূর আসতেই ওর নজরে এলো এই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার পাশে রিকশার হুড তুলে একজন বয়োবৃদ্ধ লোক কোন রকমভাবে বৃষ্টি থেকে বাঁচার বৃথা প্রয়াস চালাচ্ছে। শিশির উনার কাছে গিয়ে সালাম দিলো। বৃদ্ধ সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ‘স্যার, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর যাত্রী হিসেবে আপনাকে পেলাম। কিন্তু দেখুন বয়স হয়েছে তাই ঠা-াজনিত কারণে বৃষ্টিতে ভিজতে পারি না। তবুও চলুন। গরিবের আবার বৃষ্টিজল!’ বৃদ্ধ তার সিটে বসতে যাচ্ছিল, বাধা দিল শিশির। তারপর তার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে কথা শুরু করল। বিভিন্ন রকম কথা। একটা পর্যায় পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কিত কথা জানতে চাইলো। আরও কতক্ষণ কথা বলে সেদিনের মতো বাসায় ফিরে এলো। শিশির ফিরছিল আর বৃদ্ধ বিস্ময় বিমোহিত নয়নে সেদিকে চেয়ে ছিলেন।
পরদিন হাফ বেলা অফিসের কাজ করে একাই চলে এলো সেখানে। গতকালের সেই বৃদ্ধের কাছ থেকে জেনে নেয়া ঠিকানা তার গন্তব্য।
রেলপথের পাশ দিয়ে সারি সারি ছোট ছোট খুপরি ঘর। দুইপাশে ঘরবাড়ি আর তার মাঝ দিয়ে এঁকেবেঁকে গেছে একটা সরু রাস্তা।
রাস্তার মাঝে মধ্যে বড় বড় ভাঙা গর্ত। তাতে জমে আছে কতক বর্ষার জল আর তা ঘিরে ভন ভন করে উড়ছে মশা মাছি। এখানে ওখানে স্তূপাকারে রাখা আছে ময়লা-আবর্জনা।
হাঁটছে শিশির মাঝে মাঝে দমকা বাতাসে হঠাৎ করেই নাকে এসে লাগছে বিকট দুর্গন্ধ।
এর আগে কখনো সে এমন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়ায়নি। তবুও কোন এক অদৃশ্য নিশ্চয়তা তাকে সব বাধা উপেক্ষা করে সম্মুখে এগিয়ে যেতে উৎসাহ জোগাচ্ছে। হৃদয়ে যেন আছড়ে পড়ছে অবিশ্রান্ত ঝর্ণার মতো প্রশান্তির কল্লোল ধারা।
আরো একটু ভেতরে প্রবেশ করতেই সে দেখলো বস্তির ছেলে-মেয়েরা তার পিছু পিছু আসছে আর একে অন্যকে দেখিয়ে বলছে,
Ñ ‘এই দেখেছিস লোকটার গা থেকে কত সুন্দর সুগন্ধ আসছে।’
তার কথায় পাশ থেকে আরেকটা মেয়ে মুখে অনিন্দ্য হাসির রেখা টেনে বললো, ‘হবে না, উনি মনে হয় অনেক দামি সেন্ট মাখেন। বকুলতলার মোড়ের দোকানে টিভিতে দেখায়। এরকম দামি জামা গায়ে দেয়া লোকেরা মাখে আমি দেখেছি।’
শিশির তাদের কথায় পিছু ফিরে তাকায় তারপর বাচ্চা দু’টির মুখে আলতো স্পর্শ করে নাম জানতে চাইলো।
বাচ্চা দু’টিও হাসতে হাসতে নিজেদের নাম বলল। তাদের ফোকলা দাঁতের অনিন্দ্য হাসি দেখে খুশিতে নেচে ওঠে ওর মন। কথা শেষ করে বাচ্চা দু’টি নিজেরা নিজেরা কথা বলতে লাগলো কিন্তু শিশিরের দৃষ্টি তখন অন্য দিগন্তে।
ও ভাবতে শুরু করলো। অন্যরকম ভাবনা তাকে আচ্ছন্ন করতে লাগলো। তার মনে পড়ে গেল ছোট বেলাতে পরিবার থেকে পাওয়া ভ্রান্ত ধারণাগুলো।
শিশির তখন অনেক ছোট। বাসা থেকে স্কুল, স্কুল থেকে বাসা এই ছিলো তার চেনা পৃথিবী। চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরের অদৃশ্য বন্দীর জীবন ছিলো ছোট্ট শিশিরের।
সে কখনো বাইরের জগতে মন খুলে বিচরণ করেনি। কখনো পায়নি সবুজ ঘাসে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু শিশিরের স্পর্শ। কখনো পায়নি বিশাল দিগন্তের দর্শন। এ জন্য তাকে যা যতটুকু বোঝানো, শেখানো হয়েছে তার চিন্তাজগৎ ততটুকুর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। মুক্তচিন্তার কোনো অবকাশ ছিল না।
তার পরিবার বাংলার দশটা সেরা পরিবারের একটা। এ জন্য সে বাইরের আনস্ট্যান্ডার্ড ছেলে-মেয়েদের সম্পর্কে একেবারেই আইডিয়ালেস ভাবে গড়ে উঠেছে। ধনে-জনে প্রতিপত্তি থাকলেও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তার পরিবার সায়াহ্নের কালো আঁধারে নিমজ্জিত।
তারই ফলশ্রুতিতে তাকে শেখানো হয়েছে গরিব নামের সংক্ষিপ্ত অর্থ। সে শৈশব থেকেই এই বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছে যে গরিব অসহায় মানুষগুলো খুব দুর্ধর্ষ। তারা মাত্র এক মুঠো অন্নজলের জন্য মানুষের জীবন পর্যন্ত অনায়াসে নিয়ে নিতে পারে। তাদের হাতের নাগালেই নাকি থাকে জীবন-মৃত্যুর মেলবন্ধন। এমনই সব ভ্রান্ত ধারণা তার মন-মননে গেঁথে দেয়া হয়েছে। এ কথা শোনার পর থেকে তার চিন্তা শুধু একটা সমীকরণ মেলাতে থাকে, ‘একমুঠো খাবার তো আমরা খুব সহজেই ডাস্টবিনে ফেলে দিই। কী হবে একবেলা না খেলে?
আমি খেতে চাই না বলেই তো আম্মা প্রতিদিন রাগ করেন। আর সেই একমুঠো খাবারের জন্য গরিব লোকগুলো কিনা একটা তরতাজা জীবন এক নিমিষে নিস্তেজ করে দিতে পারে! যারা এমনটা করতে পারে তারা নিশ্চয় অসভ্যতা আর বর্বরতার ঘোর অন্ধকারে ডুবে গেছে।’
তার সঙ্কীর্ণ ভাবনা-চিন্তা এখানেই মিলিয়ে যায়। কিন্তু এই বিশ্বাসটা তখন থেকেই তার হৃদয়ে গেঁথে যায়। মূল কথা হলো, একবেলা দুই বেলা নয়, একাধারে তিন দিন পর্যন্ত অনাহারী থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণা যে ভোগ করেনি; সে কেমন করে বুঝবে অনাহারীর ক্ষুব্ধতা? তার চিন্তা কখনওই ভুক্তভোগীর বাস্তব অভিজ্ঞতা স্পর্শ করতে পারবে না।
এরপর আজ সে বড় হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার ব্যবসার হালও ধরতে হয়েছে তাকে। ছোট্ট শিশির আজ বুদ্ধি-বিদ্যায়ও অনেক বড় হয়েছে। কিন্তু তার মনে গরিবদের প্রতি সেই ঘৃণ্য দৃষ্টি রয়েই গেছে। সে তাদের গরিব শ্রমিকদের কথা কখনোই মনোযোগ দিয়ে শুনতো না। কখনো উপলব্ধি করতে চাইত না তাদের দুঃখ। সব সময় তাদের থেকে দূরে দূরে থাকতো।
এরই মাঝে এলো শিশিরের জন্মদিন। সারাদিন বাসায় এবং অফিসে নানান পার্টি আর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনের সমাপ্তি ঘটে। নেমে আসে রাতের ঘনীভূত আঁধার। জমকালো ঝাড়বাতির দ্যুতিতে সে আঁধার সহস্র ক্রোশ দূরে চলে গেলো। ঝলমলে হয়ে উঠলো সবকিছু।
জন্মদিন উপলক্ষে প্রচুর উপহার জমা হলো। নানান জনের নানান রকম উপহার।
স্তূপাকার দামি দামি উপহারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ তার নজর কাড়ল সস্তা পেপারে মোড়ানো নীল রঙের একটা উপহার প্যাক। তার ওপর রাখা আছে একটা টাটকা গোলাপ ফুল। হয়ত কেউ এখনই, এইমাত্র রেখে গেছে। ফুল থেকে যেন রাতের স্নিগ্ধ শিশির চুইয়ে পড়ছে। ফোঁটা ফোঁটা শিশিরের ওপর ঝাড়বাতির আলোকরশ্মি পড়ে মুক্তার মতো চিকচিক করছে। ফুলটা তুলে হাতে নিল শিশির। ভালা লাগার এক প্রস্রবণধারা বয়ে গেল তার বুকের মধ্যে।
বেনামি উপহারটি হাতে নিল। হাতে তুলে নিয়ে বেশ কৌতূহল নিয়ে খুললো সেটা। দেখল, দুইটা বই আছে তার মধ্যে। ড্রিংক করার কারণে সে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করছিল তাই ঘোরের মধ্যেই কিছুটা রাগে বইগুলো দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই কয়েকটি অক্ষরের দিকে চোখ পড়াতে ও চমকে উঠল। হাত দু’টি স্তব্ধ হয়ে গেল। সাথে সাথে বই দুটি জড়িয়ে ধরল বুকের সাথে। আমরা বাঙালিরা আর যাই হোক আরবি লেখা দেখলে বেশ সতর্কভাবে তা সংরক্ষণ করি; এই ভেবে যে, এর সাথে অসদাচরণে আল্লাহ্ রাগান্বিত হবেন। তখন আবার হাত পা পচে টচে যায় কিনা!’
সেও চোখেমুখে কতক সেই রকম ভীতি নিয়েই বইটা সযতেœ মাথার কাছে রেখে নিদ্রা গেলো।
কি জানি কি হলো? রাতের মধ্যপ্রহরে শিশিরের ঘুম ভেঙে গেলো। চারিদিক নিশুতি নীরবতা। হঠাৎ করে ওর দৃষ্টি গেল বালিশের দিকে। অনুভূত হলো জাজ্বল্যমান একটা বইয়ের নাম ‘ইসলামি অর্থনীতি এবং জাকাত’। বিষয়টা স্বাভাবিক হলেও অকস্মাৎ চমকে উঠলো।
‘ইসলাম মানে তো জানতাম শুধু নামাজ-কালাম, জিকির-আজকার, তসবিহ-তাহলিল কিন্তু আজ দেখছি ইসলামি অর্থনীতি! এটা আবার এলো কোথা থেকে? প্রণয়নই বা করলো কে? ভারি জটিল প্রশ্নতো! আগে তো এমনটা দেখিনি।’
মনে মনেই কথা বলে উঠল শিশির। উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। ও প্রচন্ড বইপোকা স্বভাবের অফিসের ছুটির সময়গুলো কাটে বই পড়ার মধ্য দিয়ে। তাই এমন নতুন ধাঁচের বই পেয়ে জগতের সব কৌতূহল নিয়ে বইটি হাতে নিল।
ও কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে মোড়কের দিকে চেয়ে রইল। তারপর আস্তে আস্তে মেলতে লাগল পৃষ্ঠা। পড়ছে শিশির। একলাইন, দুইলাইন, তিনলাইন; একপৃষ্ঠা, দুই পৃষ্ঠা, তিন পৃষ্ঠা..! আগ্রহ যেন বেড়েই চলেছে। কোন এক অদৃশ্য আকাক্সক্ষা তাকে বইয়ের মাঝে ডুবিয়ে দিচ্ছে ক্রমাগত। প্রতিটি শব্দগুচ্ছ পর্যন্ত গভীর মনোযোগ সহকারে পড়তে লাগলো ও। অনেকক্ষণ ধরে পড়ল।
পড়ার এক পর্যায়ে তার মনের আকাশ ভয়ের নিকষ কালো আঁধারে ছেয়ে গেলো। রাজ্যের চিন্তারা এসে ভিড় করল তার স্নায়ুতে। মাথার ওপর অনবরত ঘুরছে ফ্যান। মিডিয়াম কাঁটায় চলছে এয়ারকন্ডিশন কিন্তু তা সত্ত্বেও ওর পশমের গোড়া দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম বের হয়ে আসতে লাগল। আজ সে যা পড়লো তা সত্য হলে তার পূর্বপুরুষগণ হয়ত এত দিন জাহান্নামের কোন অন্ধকারে দিনযাপন করছে; ভাবছে শিশির।
সে এবং তার গরিব মানুষদের সাথে কোন ভাবেই মন খুলে মেলামেশা করে না। কিন্তু বইয়ের ভাষা বলছে তাদের কৃতকর্মে বিপরীত। বলা হচ্ছে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার সাথে উত্তম সম্পর্ক গড়ার কথা; কিন্তু তারা তো সবসময় ওদেও এড়িয়ে চলে। তা ছাড়া শিশিরের পূর্বপুরুষদের মধ্যে একেবারেই অনুপস্থিতি ছিল উপচিকীর্ষার। অজানা ভয় তাকে আড়ষ্ট করে ফেলছে। নিশুতি রাতের নীরবতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই বেশি বিগলিত হয়ে নুইয়ে পড়ছে ওর হৃদয়। পূর্ণিমা চাঁদের মুখে এক ফোঁটা আঁধারের প্রলেপ এঁকে দিলে যেমন আদিগন্ত জুড়ে মুষড়ে পড়া- বিধ্বস্ততা প্রতীয়মান হতো তেমনই হয়েছে ওর শান্ত-সরল মুখখানি।
হঠাৎ আঁধারের বুকে এক ফোঁটা আলোকরশ্মির মতো হয়ে উঠলো ওর চেহারা। ছড়িয়ে গেল এক পবিত্র উজ্জ্বলতা।
মনে পড়ে গেল রফিকের বলা কথাগুলো। শিশিরের এক কঠিন বিপদের দিনে রফিক তাকে সান্ত¡না দিয়ে বলেছিল যে, ‘যখন পৃথিবীর সমস্ত দরজা কারো জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তখনও তার জন্য খোলা থাকে মহান রবের সুপ্রসন্ন দরজা। তার মতো দয়ার আর কেউ নেই। তিনি মানুষের জন্য অনুগ্রহ করাকে নিজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নিয়েছেন। এজন্য যতবার তিনি ভয়ঙ্কর শাস্তিবিধানকারীরূপে আসার কথা বলেছেন ততবারই তার পাশে রহিম, রহমান নামক গুণবাচক নামগুলোও ব্যবহার করেছেন। এ জন্য বিপদে ভয় না পেয়ে প্রভুকে ডাকবেন; উনিই একমাত্র যাবতীয় বিপদকালে আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।’
সে একদিন আরও বলেছিলÑ ‘আল্লাহ্ তায়ালা সবচাইতে খুশি হন তখন, যখন সত্যপথ বিচ্যুত কোন বান্দা তাঁর পথে ফিরে আসে; নিজের ভুল বুঝতে পারে। আর যে ভুল করে নতমস্তকে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ্ তাকে পছন্দ করেন।’
ড্রাইভার রফিকের সেই কথাগুলোই আজ ওর দুচোখে আশার আলোর হয়ে ধরা দিলো।
এই নিস্তব্ধ রাতে তার খুব বেশি স্মরণ হতে লাগলো আল্লাহ্ তায়ালাকে। অকপটে নিজের এবং পূর্বপুরুষদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা আর অনুগ্রহ চাইতে লাগলো। সে ভাবতে লাগলো, কী করল তার পরিবার! এমন চরম সত্যকে তারা কিভাবে এড়িয়ে যেতে পারল? শিক্ষা দীক্ষায় অনন্য ছিল তার পূর্বপুরুষ। তবুও তারা সত্য দ্বীন, দ্বীনের চাওয়াগুলো বুঝতে পারল না! অস্ফুট এক আর্তনাদ বের হয়ে এলো বুক চিরে।
হঠাৎ ওর মনে অজানা ভয় এসে বাসা বাঁধতে লাগলো। ভাবতে লাগলো, সত্যিইতো মানুষের জীবনে একটি সেকেন্ডেরও তো গ্যারান্টি নেই। তাহলে যদি আমি এই মুহূর্তে মৃত্যুবরণ করি!
তাহলেতো আমার সাথে একটি কানা কড়িও নিয়ে যেতে পারব না। তখন এত ধন দৌলত খাবে কে? আমার আহল-পরিজন এই সম্পদ নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করে যার যার মতো করে হেসে খেলে জীবন পরিচালনা করবে।
কিন্তু বিনিময়ে আমি কী পাচ্ছি? অথবা পাবো? বইয়ের কথাগুলোকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে ফলাফল আসবে যে, আমার রেখে যাওয়া বংশধররা যদি বিন্দুমাত্র ভাল কাজ করে তাহলে তা যেমন আমার আমলনামায় যোগ করা হবে ঠিক তেমনি ভাবে তাদের শস্যকণা পরিমাণ খারাপ কাজের ভাগও বাদ যাবে না।
মৃত্যুর পরে আমার রেখে যাওয়া ধন-সম্পদ বিষাক্ত সর্প হয়ে আমাকে দংশন করবে!
কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার!
সেই একটি সাপ যদি দুনিয়ার বুকে একবার নিঃশ্বাস ফেলে তবে অনন্তকালের জন্য কখনোই আর সবুজ গাছপালা জন্মাবে না!
ভয়যুক্ত অনুশোচনায় মাথা নুয়ে পড়ছে তার। তাই অশ্রুসজল আঁখি নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার দিকে দু’ হাত তুলে ফরিয়াদ জানাতে লাগলো, ‘হে প্রভু আমাকে অন্তত এই ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিও না। আমার পরিবার সারা জীবন ভুল করেছে কিন্তু আমি আর তা করতে চাই না। দয়া করে আমাকে সুযোগ দানে বাধিত করুন।’
জাকাত না দিলে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে শাস্তি দিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সে ভাবতে লাগল কী এই জাকাত? যা আদায় না করলে মহান প্রভুর নিকট এমন অবশ্যম্ভাবী ভাবে জবাবদিহিতা করতে হবে।
কেন দিতে হবে?
কী করা হবে এই টাকা দিয়ে?
কাকেই বা দিতে হবে?
একের পর এক প্রশ্ন এসে তার মস্তিষ্কে ট্রাফিক জ্যাম বাঁধাতে লাগলো। সে মাথায় হাত দিয়ে বেডের উপর বসে পড়ল।
হঠাৎ তার খেয়াল হলো পাশে রাখা দ্বিতীয় বইটির কথা। সাথে সাথে ছোঁ মেরে বইটি হাতে তুলে নিলো। চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে পাতা উল্টাতে লাগল। এক পৃষ্ঠায় এসে তার চোখ আটকে গেল অনন্য প্রাপ্তিতে উজ্জ্বল উঠলো চোখ মুখ। এই পাতায় সবকিছু আল-কোরআনের রেফারেন্সে লেখা। সে তার উপরোক্ত প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তরগুলো ক্রমান্বয়ে সাজালো শিশির।
‘জাকাত হলো এমন একটা অর্থ ব্যবস্থার মূলনীতি যা প্রণয়ন করেছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। ধনী ব্যক্তিগণ জাকাতের মাধ্যমে প্রভুর দেয়া ধন-সম্পদের বিশুদ্ধতা অর্জন করতে পারে…।’
‘ধনীর বিন্দু বিন্দু ধনের মধ্যেও রয়েছে গরিবের পাওনা। এটা তাদের প্রতি করুণা নয়; ওদের অধিকার। জাকাতের সুষ্ঠু বণ্টনের মধ্যে রয়েছে অন্তরের পরিশুদ্ধতা অর্জন করার অনন্যোপায়।’
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমের মধ্যে বলেছেন,
‘এসব জনপদের দখলমুক্ত করে যে জিনিসই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ফিরিয়ে দেন তা আল্লাহ, রাসূল, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন এবং মুসাফিরদের জন্য। যাতে তা তোমাদের সম্পদশালীদের মধ্যেই কেবল আবর্তিত হতে না থাকে। রাসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সূরা হাশর, আয়াত ৭)
‘যারা ধনী তাদের জাকাত দিতেই হবে। কারণ, মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বিচিত্রতা দিয়ে। কাউকে ধনী, কাউকে মধ্যবিত্ত, আবার কাউকে গরিব হিসেবে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। তাঁর কাছে সবার মূল্য সমান। বরং ধনীর চেয়ে গরিব মানুষগুলোই তাঁর কাছে অত্যন্ত বেশি প্রিয়; যদি ধনী ব্যক্তি আল্লাহ্ ভীরুতায় গরিব ব্যক্তিটির চাইতে উন্নত না হয়। গরিব মানুষগুলো যদি আল্লাহ তায়ালার বিধানাবলিতে পরিপূর্ণভাবে নিজেকে আবৃত করতে পারে তবে তারা ধনী ব্যক্তির অনেক পূর্বেই সীমাহীন শান্তিময় জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ভালোবাসেন, এ জন্য ধনীরাও যদি মূল্যহীন সামাজিক অবস্থানকে পদদলিত করে তাদেরকে ঐ পরম স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসে তাহলে স্রষ্টা তাদেরকেও নহর বিশিষ্ট সুসজ্জিত উদ্যানের সুসংবাদ দিয়েছেন। নতুবা অবর্ণনীয় শাস্তির স্থান জাহান্নাম।’
লেখাগুলো পড়া শেষ হলো। পড়ার পরে শিশিরের মনে কোথা থেকে জানি পবিত্র প্রশান্তি এসে ভরিয়ে তুলছে। হৃদয়ে লাগছে খুশির স্পর্শ। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আগামীকাল থেকেই তার জাকাত মিশন শুরু হবে। তারপর সব নিয়মকানুন জেনে নিয়ে সারারাত জেগে তার সমস্ত সম্পদের প্রাথমিক গণনা শেষ করে, পরদিন প্রত্যুষেই রফিককে নিয়ে শুরু করেছিল যাত্রা।
শিশির দাঁড়িয়ে আছে বস্তির একটা খুপরি ঘরের সামনে। গতকালের দেখা হওয়া সেই বৃদ্ধের বাড়ি এটা। গলা ঝাড়া দিতেই বাইরে বেরিয়ে এলেন বৃদ্ধ এবং উনার সহধর্মিণী। কথাবার্তার এক পর্যায় শিশির তাদেরকে প্রস্তাব দিলো যে, সে চায় বৃদ্ধ মানুষটি যেন আর রিকশা না চালান। এ কথা বলার পর বৃদ্ধ মুখ আঁধার করে জানতে চাইলেন তাদের তো দেখার কেউ নেই। তাহলে রিকশা না চালালে উনারা তো না খেয়ে থাকবেন। শিশির বলল, যে এই বয়সে এতো কষ্ট করা তার দ্বারা অনেক বেশি কষ্টের তাই ও নিজ খরচে উনাদের একটা মুদি দোকান করে দিবে। আল্লাহ্ রহমত করলে তাতেই উনাদের জীবন-জীবিকার একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
বৃদ্ধ ব্যক্তিটি কোনভাবেই কারো করুণা গ্রহণ করতে রাজি নন। শিশির তাকে পবিত্র কোরআনের একটা আয়াত তেলাওয়াত করে শুনালো এবং বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘চাচা সংকোচ করবেন না, এটা করুণা নয়, বরং আপনার অধিকার। আমি আপনার আমানত যথাযথভাবে পৌঁছে দেবার একটা মাধ্যম মাত্র। মনে করুন এগুলো দয়াময় আল্লাহ আমার কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন। আমি শুধু তা লালন করেছি। আজ আমি তা আপনাদের কাছ যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে পেরেছি বলে আল্লাহ তায়ালার নিকট আমার জন্য একটু সাক্ষী দিলেই আমি কৃতজ্ঞ থাকব।
বৃদ্ধ ব্যক্তি হয়ত এতো কিছু বুঝতে পারেননি কিন্তু উনার চোখের কোণ ভিজে উঠলো। শিশির তাকে জড়িয়ে ধরেছিল আগেই। উনার চোখের জলের নিশ্চুপ ধারা শিশিরের ব্লেজার ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে শিশির অনুভব করল ওর মন থেকে অবশিষ্ট বিন্দু বিন্দু অহমিকাও শত ক্রোশ দূরে হারিয়ে যাচ্ছে। সেই স্থান পূর্ণ হচ্ছে জান্নাতি সুখছোঁয়ার পবিত্র স্নিগ্ধতায়।
এরপর থেকে শিশির প্রায়শই দূর-দূরান্তে ছুটে বেড়ায় হৃতসর্বস্ব মানুষগুলোর খোঁজে। আর শুধু জাকাত নয়, নিজের আয় থেকেও গরিব মানুষগুলোকে অকাতরে দান করতে থাকে অজ্ঞাতসারে। ক্রয় করতে থাকে অদৃষ্টপূর্ব জগতের জন্য স্থায়ী নিবাস।
এ কথা আমাদের অশ্রুতপূর্ব নয় যে, যখন স্রষ্টার খুশির জন্য কেউ এক কদম অগ্রসর হয়, স্রষ্টা তখন হৃষ্টমনে তার দিকে দশ কদম অগ্রসর হন। সুবহানআল্লাহ্! শিশির যখন তার মহৎ চিন্তাকে সামনে রেখে পা-বাড়ালো তখন স্রষ্টা তার বিবেক-বুদ্ধিকে প্রসারিত করে দিলেন। শিশির মানুষকে দু’পাঁচশো করে খয়রাত না করে ভবিষ্যতে যেন গ্রহীতার আর কারো দ্বারস্থ না হতে হয় সে জন্য ও একটা মাস্টারপ্ল্যান করল। সে প্রত্যেককে তার অবস্থান অনুযায়ী স্বাবলম্বী হওয়ার উপকরণ দিয়ে সাহায্য করতে লাগল। কাউকে মুদিখানার দোকান, কাউকে বা রিকশা, ভ্যান, কাউকে বা মাথা গোঁজার জন্য এক ফালি জমি অথবা কারো কন্যাদায়ে মুক্ত হস্তে দান করতে লাগলো।
কিছু দিনের মধ্যেই তার মাঝে জেগে উঠল দানশীলতার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। সে খেয়াল করলো কোন এক অদৃশ্য বিশ্বাস তার মনে জায়গা করে নিতে লাগল এবং আস্তে আস্তে তার মনের সকল ত্রুটি বৃষ্টির জলের মতো ভেসে যেতে লাগল। সে তার অধিকাংশ সময়গুলো দিতো ধর্মীয় জ্ঞান আহরণে। যার ফলে ক্রমান্বয়ে তার মন ছুটে চলছে স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার নেশায় ..!
এবং এই নেশা তাকে সময়ের ব্যবধানে পৌঁছে দিলো মসজিদের প্রথম কাতারে।
পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করার কারণে সে অনুভব করে তার হৃদয়ও পূর্ণ হতে থাকে পবিত্র নমনীয়তায়।
ফজরের নামাজ আদায় করে শিশির তাদের ফুলের বাগানে বসে একাগ্রচিত্তে কোরআনুল কারিম তেলাওয়াত করছিলো। হঠাৎ একটা আয়াত পড়ে তার মনের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলো।
আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাঁর ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৬৮)

Share.

মন্তব্য করুন