রাত ১টা… !
মংডু, রাখাইন।
বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে হিযাজ।
বিকেলে তার ছোট খালু এসেছিল। মায়ের সাথে ফিসফিস করে কিসব আলোচনা করল। তার কিছুই বুঝল না সে। শুধু দেখল মায়ের ভয়ার্ত চেহারা! তার পর থেকেই জিনিসপত্র গোছাতে লেগে পড়েছে মা।
একটা পুঁটলি মত করে তাতে বই, কাপড় আর প্রিয় খেলনাগুলো বেঁধে নিয়েছে হিযাজ। কাল নাকি তারা নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে যাবে। প্রিয় বন্ধু আর বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা শুনে বিষাদে ভরে ওঠে হিযাজের কচি মন। এখন রাত প্রায় ২টা তবুও ঘুম আসছে না হিযাজের। মা তাহাজ্জুদের নামায পড়ছেন। প্রায় এক মাস হলো সে তার বাবাকে দেখেনি!
কয়েকজন বার্মা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলে সেই যে ধরে নিয়ে গেল। তার পর থেকে আর বাবাকে দেখেনি সে।
মাকে বাবার কথা বললেই কেমন যেন করে। আঁচল দিয়ে চোখ মুছে। আর কাঁপা গলায় বলে, ‘তোর বাবা জরুরি কাজে বাইরে গেছে।’
বলেই তাকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদে মা। তাই মাকে আর বাবার কথা জিজ্ঞেস করে না হিযাজ।
বিছানায় শুয়ে বাবার আদরের স্মৃতি মন্থন করছিল সে।
হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ হলো। ধড়ফড়িয়ে ওঠে বসল হিযাজ। বারুদের ঝাঁজাল গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল চারদিক। মা নামায শেষ করে তাকে সান্ত¡না দিচ্ছিলেন।
ঘর থেকে মা শুনতে পেলেন বুটের শব্দ। অনিবার্য বিপদের আভাস পেয়ে মা জ্ঞান হারাল। বাবাকে যেদিন থেকে তুলে নিয়ে গেছে সেদিন থেকে রোজা রাখছিল মা। রাতেও তেমন খান না।
এ সময় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে পাঁচজন বর্মি সেনা। হিযাজের কোলে অচেতন মা।
একজন বন্দুক তাক করল মায়ের বুক বরাবর। আর একজন ক্লাস ফাইভে পড়া ছোট হিযাজের বুকে। হিযাজের ব্যথিত আত্মা দেহ ত্যাগ করার পূর্বে একটি মাত্র বাক্য উচ্চারণ করল, ‘আমি আল্লাহকে বলে দিব’ তার এই কথাটি ইথারে ধ্বনিত হতে লাগল।…

Share.

মন্তব্য করুন