ইংল্যান্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাব্য পুরস্কার ‘বেটজেম্যান পুরস্কার’। দশ বছর বয়স থেকে তেরো বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী কবি এ পুরস্কারের আওতাভুক্ত। ২০১৭ সালের এ কিশোর বয়সী পুরস্কার লাভ করে সিরিয়ান শরণার্থী কিশোরী আমিনাহ আবু কেরেচ। আরব বসন্তের ফলে ছড়িয়ে পড়া গৃহযুদ্ধে সিরিয়া এখন প্রায় বিধ্বস্ত। আমিনার বয়স যখন আট বছর ছিল তখন সে তার পিতা-মাতা তাম্মাম ও ব্যাসমেহ এর সঙ্গে ২০১১ সালে মিসরে চলে আসে। মিসরে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তাদেরকে অনেক কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। আমিনার বড় বোন ফতুন যার বয়স এখন চৌদ্দ বছর। আর আমিনার ছোট্ট ভাই মোহাম্মদ যার বয়স এখন এগারো বছর। এই পাঁচজনকে নিয়ে তাম্মাম ও ব্যাসমেহ দম্পতি নিজ দেশমাতৃকার মায়া ত্যাগ করেছিলেন। আমিনাহর পরিবার দামেস্কের দারাইয়্যা নামক একটি স্থানে বাস করতেন যেটি আসাদ সরকার বিরোধীর কেন্দ্র নামে খ্যাত ছিল। তাই এই পার্শ্বিক অবস্থাও তাদেরকে তাড়িয়ে দিতে উসকানি দিচ্ছিল স্বৈরশাসক আসাদকে। দারাইয়্যাতে একটি ফ্যাব্রিকের দারুণ ব্যবসা ছিল আমিনাহদের। সেটি আজ নিশ্চিহ্ন। মিসর থেকে আমিনাহরা গত গ্রীষ্মে চলে আসে ইংল্যান্ডে। ইংলান্ডের অক্সফোর্ডে ত্রিশটি ভাষা নিয়ে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানে আমিনাহ ও তার বোন ফতুন ইরাকি কবি আদনান আল সায়েকের কাছে কবিতার কলা শিখছে। নিজ মাতৃভূমি সিরিয়ার কথা মনে পড়তেই আমিনাহ মিসরে থাকাবস্থায় কবিতা লেখা শুরু করে। সিরিয়ার স্মৃতিকে কবিতায় ভাস্বর করে রাখতে চায় আমিনাহ। ‘বেটজেম্যান পুরস্কার কমিটি’সহ সংবাদ মাধ্যমগুলো এই কিশোরী কবির কবিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। গভীর অনুভূতি সম্পন্ন কবিতা, বিশ্ব বিবেককে নাড়ানো কবিতা, স্বৈরাচারদেরকে ধিক্কার জানানোর কবিতা, কিশোরের খাতায় অঙ্কিত শান্তির শ্বেত কবুতর ইত্যাদি পুরোধা পেয়েছিল আমিনাহর কবিতা।
‘খধসবহঃ ভড়ৎ ঝুৎরধ’ বা সিরিয়ার জন্য শোকগাথা কবিতাটিতে আমিনাহ তার দেশকে অঙ্কন করতে চেয়েছে। সে কেঁদেছে এ কবিতা লিখতে। সে চায় না আর একটি সৈন্যও তার মুখাবয়ব রূপী সিরিয়ার জমিনে তা-ব চালাক। এই কবিতাটির প্রথমাংশ সে ইংরেজিতে লিখেছিল। বাকি অংশ আরবিতে লিখেছিল। আরবি অংশটুকুর ইংলিশ অনুবাদকরণে সে তার বড় বোন ফতুন এবং শিক্ষকদের সহযোগিতা নিয়েছিল।
আমিনাহ আবু কেরেচ এর পুরস্কার লাভ করা সেই সাড়া জাগানো কবিতাটির অনুবাদ আমি
‘সিরিয়ার জন্য শোকগাথা’ শিরোনামে বাংলায় রূপান্তর করেছি। সেটি হচ্ছে,
সিরিয়ার শ্বেত কবুতরগুলো আমার মাথার ওপরে বিলাপ করছে
তাদের ডাকগুলো আমার চোখে কান্না করছে।
আমি একটি দেশকে আঁকার চেষ্টা করছি
যেটি আমার কবিতার মতই হবে
আর আমি যখন চিন্তা করব তখন আমার চিন্তাকে ভঙ্গ করবে না
যেখানে সৈন্যরা আমার মুখাবয়বের ওপর দিয়ে হাঁটবে না।
আমি এমন একটি দেশ আঁকার চেষ্টা করছি
আমি যদি একজন কবি হই সেই দেশটি আমার যোগ্য হবে
আর অনুমতি দিবে যদি আমি কান্নায় ফেটে পড়ি।
আমি একটি নগর আঁকার চেষ্টা করছি
ভালোবাসার, শান্তির, উৎকর্ষের সম্মিলনের।
অরাজকতা, যুদ্ধ, ধ্বংসাবশেষ ও দুঃখমুক্ত।
পরিশেষে আমিনাহর কবিতার চাওয়া থেকে বর্তমান বিশ্বমোড়লসহ সকল শাসকের কাছে চাওয়া হচ্ছে, আর কোন নগরী ধ্বংস না হোক, উদ্বাস্তু না হোক কোনো পরিবার। মানবতার জয় হোক!

Share.

মন্তব্য করুন