রাকিব ও জুনাইদ ক্লাস ফাইভে পড়ে। দু’জনে পরস্পর বন্ধু। রাকিবের বাড়ি বগুড়া। জুনাইদের বাড়ি গাইবান্ধা। জুনাইদ মেধাবী ছাত্র। দুষ্টুমি করে না। ক্লাসে সবাই তাকে ভালোবাসে। এমনকি শিক্ষকরাও ভালোবাসে। রাকিব অত্যন্ত দুষ্টু ছেলে। ক্লাসে দুষ্টুমি করে, বাসাতে করে, পথেও করে। দুষ্টুমির জন্য অনেক বকাঝকা খায় এবং মাঝে মাঝে বেত্রাঘাতও খায়। দু’জনে পরস্পর মিল আছে। বাসা তাদের পাশাপাশি। এবার পিইসি পরীক্ষার পর গ্রামের বাড়ি যাবে। অনেকদিন থেকে তারা গ্রামের বাড়ি যায় না। একেতো পরীক্ষা শেষ। তারপর সামনে বিজয়ের মাস। বিজয়ের মাসে স্কুল বন্ধ থাকবে। পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে। খেলাধুলা হবে। স্কুল খোলার পর আবার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় তারা দু’জনেই ভালো। প্রাইজ সব সময় তারা পেয়েই থাকে। জুনাইদ মাঝে মাঝে ছড়া, কবিতা লেখে। তার বাবা একজন গার্মেন্টসকর্মী। রাকিবের মা ও বাবা দু’জনেই গার্মেন্টসকর্মী। শত কষ্টের মাঝেও তারা সন্তানদের মানুষ করার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে।
অনেকদিন থেকে ক্লাসে রাকিব আসে না। জুনাইদ বরাবরই আসে। জিজ্ঞাস করলাম রাকিব কোথায়? বলল জানি না। তোমাদের বলে যায়নি? না! কিছুই জানো না? না! দুষ্টুমি করলে কী হবে তাকে সবাই আদরও করে। আসলে দুষ্টু ছেলেরা সবার আদরের হয়। কয়েক মাস পর রাকিবের বাবার সাথে দেখা। জিজ্ঞাস করলাম, রাকিব কেন স্কুলে আসে না? আপনাদেরকেও দেখি না? উত্তরে বলল, সার আমার বাবা অর্থাৎ রাকিবের দাদা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করার কারণে বাড়িতে চলে গিয়েছি। আমার আর কোনো ভাই নেই সংসারের হাল ধরবে। একমাত্র আমি ছাড়া। তাই ঢাকা ছেড়ে সপরিবারে বাড়ি চলে এসেছি। রাকিবকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। রাকিব ভালো আছে। রাকিব আর দুষ্টুমি করে না। তার ছোট বোনটাও ভালো আছে। তার মাও ভালো আছে। আমি অফিসের কাজ সেরে বাড়িতে চলে যাবো। অফিসের কাজের জন্যই আসা। এদিকে জুনাইদের মন খারাপ। যত দুষ্টুমি করুক না কেন এক ক্লাসে পড়ত। এক সাথে নাস্তা খেত। এক সাথে প্রাইভেট পড়ত। এক সাথে কোচিং করত, ছুটি হলে দু’জন এক সাথে বাসায় ফিরত। দু’জনই ছিল অর্কিড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র। অন্যান্য ছাত্রদের যেমন মন খারাপ, তেমনি শিক্ষকদেরও মন খারাপ। দুষ্টু ছেলেদেরকে যেমন সবাই ভালোবাসে, মেধাবীদেরকেও তেমনি ভালোবাসে। এ ভালোবাসা আমাদের সবার।

Share.

মন্তব্য করুন