বেশ কিছুদিন হলো, ক্লাসে আসছে না রেজা। ফাহিম রেজা। কিন্তু এ নিয়ে তার সহপাঠীদের মাথাব্যথা নেই। বরং সবাই খুশি। মহাখুশি। কেউ কেউ বলছে, রেজা মঙ্গলগ্রহে পাড়ি জমাল না কি? তাহলে তো বেচারা মঙ্গলের কপালেও অমঙ্গল আছে!
রেজা! ভীষণ ডানপিটে। কথায় কথায় সে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। তার ভাবখানা এমন যে, ঝগড়া-ঝাটি, মারামারি করলেই বীর হওয়া যায়। এ জন্য ক্লাসে তার একজন বন্ধুও নেই। একজনও নেই, যে তাকে ভালোবাসে। সে না থাকলেই যেন সবাই বাঁচে!
একদিন শ্রেণি শিক্ষক ক্লাসে রেজার কথা তুললেন। রেজা অসুস্থ। ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে তার। এ কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল। একজন তো বলেই ফেলল, ‘মহাবীর আলেকজান্ডার কি তাহলে মশার কাছেই কুপোকাত?’
শিক্ষক বিষয়টি বুঝতে পারলেন। তিনি আগে থেকেই জানতেন সবকিছু। একটু থেমে তিনি বললেন, শোনো! আগামীকাল আমরা তাকে দেখতে যাবো। সবাই। কেউ বাদ যাবে না। তার বিপদের মুহূর্তে তোমাদের কাছে পেয়ে হয়তো সে তার ভুল বুঝতে পারবে।
তিনি বললেন, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া সুন্নাত। প্রিয় নবীর প্রিয় সুন্নাত। রোগীকে দেখতে যাওয়া ও তার সেবা-শুশ্রুষার ব্যাপারে হাদিসে অনেক উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। যেমন, রাসূল সা: বলেছেন, এক মুসলিম যখন অপর মুসলিম ভাইয়ের সেবা-যত্ন করে, তখন সে মূলত জান্নাতের ফল-ফলাদি আহরণে লিপ্ত থাকে এমনকি ফিরে আসা পর্যন্ত।” (মুসলিম)।
শ্রেণি শিক্ষকের আবেগঝরা কথায় অনুপ্রাণিত হলো সবাই। হাজির হলো রেজাদের বাড়িতে। রেজা যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না। মনে হচ্ছে, সে স্বপ্ন দেখছে। এক এক করে সবাইকে বুকে জড়িয়ে ধরল সে। আর ততক্ষণে তার চোখ দুটো হয়ে গেছে অশ্রুনদী। এ অশ্রু অনুতাপের! ভালোবাসার!

আবু মিনহাল

Share.

মন্তব্য করুন