– ‘আম্মা! ও আম্মা, আম্মা!’…
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে মাকে ডাকল রাবেয়া। মা যেন শুনতেই পেলেন না। একনাগাড়ে দৌড়ে চলেছেন সেই কখন থেকে। রাবেয়ার এক হাত শক্ত করে ধরে রাবেয়াকে নিয়ে প্রাণপণে ছুটে চলেছেন। কখনো ভাঙা রাস্তায়, কখনো ঘন ঝোপঝাড়ে, কখনো বা বন আবার উঁচু পাহাড়ে! রাবেয়া কিছুতেই বুঝতে পারছে না, সহজ রাস্তা রেখে কেন ওরা এই বনের মাঝে দিয়ে চলছে। আর এভাবে যাচ্ছেই-বা কোথায়।
এদিকে পা যে আর চলছেই না। সেই সকাল থেকে দৌড়াচ্ছে। এখন সূর্য মাথার ওপরে। এই পর্যন্ত পেটে পড়েনি কিচ্ছু। রাবেয়া আবার ডাকলো, ‘আম্মা! ও আম্মা! একটু থামো। আইয়ো একটু জিরায়া লই!’
থামার কোন লক্ষণ নেই। মা রাবেয়ার কথা বোধ হয় শুনতেই পাননি। বরং চারিদিকে তীক্ষè দৃষ্টি বুলাতে বুলাতে শুধু দৌড়েই চললেন, দৌড়েই চললেন।
– আমার নাম রাবেয়া। সাত বছর আগে আব্বা যেবার আমাদের তিন নাম্বার ট্রাকটা কিনল, আম্মার মুখে শুনছি ঐ বছরই নাকি আমার জন্ম। আমার জন্মে খুশি হইয়া আব্বা ঐ ট্রাকের গায়ে রঙ দিয়া নিজের হাতে লিখল ‘রাবেয়া’। সেই ট্রাকে কইরা আব্বার সাথে কতদিন যে ঘুরতে গেছি, তার হিসাব নাই। কিন্তু সেই দিন বড়ো খারাপ লাগছিলো যেইদিন শুনলাম, বাজারে কারা যেন ঐ ট্রাকটায় আগুন লাগায়া দিছে।
আমাদের আরও দুইটা ট্রাক ছিল। দুই বছর আগে ওগুলোরও একই অবস্থা হইছিলো। কয়েকদিন আগে যখন শেষেরটারও পুড়ানোর খবর শুনলাম, ঐদিন আমার বড় ভাইজান আম্মার কাছে গিয়ে কিসব যেন বলছিল। আমি দূর থেকে দেখলাম, আম্মার সর্বদা হাসি হাসি মুখখানা কেমন মলিন হইয়া আছে। সেদিন রাশেদ ভাইরে ধইরা আম্মা অনেকক্ষণ ধইরা কাঁদছিল। আম্মারে এতো কাঁদতে আমি আর কোনদিনও দেখি নাই। ঐদিন রাতেই যে ভাইয়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো, আর ফিরল না …
– আজ সকালে ঘুম ভাঙল বাড়ির বাইরে চেঁচামেচির আওয়াজে। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম, বাড়ির উঠানে কয়েকজন আর্মি আর লাল কাপড়ে মোড়া ভিক্ষু দাঁড়িয়ে আছে। আব্বা উঠানেই ছিল। তারা আব্বারে অনেকক্ষণ শাসাল। একপর্যায়ে তাদের কয়েকজন মিলে আব্বারে উঠানে শুয়ায়ে ফেললো। মুহূর্তের ব্যবধানে উঠানে আব্বার ধড় মাথা আলাদা হয়ে পড়ে রইলো।
আমি পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে বাইরে দেখতে লাগলাম। একসময় মনে হলো, না! ওটা বাস্তব নয়। নিছক একটা স্বপ্ন। কত স্বপ্নই তো দেখি। একটু পরই আম্মা ডাক দিয়া বলবো- সকাল হইয়া গেছে, তাড়াতাড়ি উঠো। ঘুম ভেঙে দেখবো সব ঠিকই আছে…
– জানি না, তখন আমি চিৎকার করেছিলাম কিনা। কারণ যখন সম্বিত ফিরে পেলাম, তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম বাড়ির বাইরে। আমার হাত ধরে আছে আম্মা। বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আম্মা আমায় নিয়ে দৌড়াতে লাগলো। আমার বুক কাঁপছে। এই বুঝি হায়েনাগুলা ধরে ফেলে আমাদের।
– আমাদের বাড়ির পিছনেই রহিমাদের বাড়ি। আমি আর ও একসাথে যে কতো খেলেছি। কিন্তু হায় ! আজ ওদের বাড়ির এ কি বেহাল অবস্থা। বাড়ির উঠোনে পড়ে আছে কিছু হাঁড়ি পাতিল, ভাঙা কাঠের অংশ। বাড়ির মধ্যে যেন ঝড় বয়ে গেছে।
রহিমাদের বাড়ির পরেই হাফসাদের বাড়ি। আমরা সবাই খেলার সাথী। হাফসাদের বাড়িরও একই অবস্থা। যেন এক তা-ব বয়ে গেছে। উঠোনজুড়ে ছড়িয়ে আছে হাজারো কাপড়ের স্তূপ। একটা শাড়ি বিশাল জায়গা দখল করে মাটিতে লেপ্টে আছে। হাফসাদের পর আরও অনেক পড়শিদের বাড়ি। কিন্তু বাড়িগুলোতে কাউকেই দেখলাম না। সবগুলোই যেন একেকটা বিরান ঘর।
আরে! এদিকে না একটা বস্তি ছিল। আজ যে একদম ফাঁকা। মাটিতে পড়ে আছে শুধু স্থানে স্থানে কালো ছাই। আমি আম্মাকে ডাকলাম। কিন্তু আম্মা বোধ হয় আমার ডাক শুনেই চলনের গতি আরও বাড়িয়ে দিল।
– অনেকদিন আগে গ্রামের কোণের এই গোরস্তানের কাছে সইদের সাথে খেলতে এসেছিলাম। আম্মার তাতে কি রাগ! কেন এখানে এলাম? এখানে একা কেউ আসে না! আরও কত কিছু!
এই গোরস্তানের পেছনেই বন শুরু। এই বন নিয়েও কম কথা! মানুষখেকো জানোয়ার, ভূতপ্রেত, আরও কত রটনা ! কতো রাতে যে আম্মার মুখে এই বনের বাঘ ভাল্লুকের গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। আর আজ কিনা আম্মাই আমায় এই গোরস্তানে নিয়ে এলেন !
– গোরস্তান পেরিয়ে বনেরও অনেকটা ভিতরে ঢুকে গেছি। তবে বনের মাঝে যে শুধু আমরাই, তা নয়। দূরে দূরে গাছের আড়ালে আরও কিছু মানুষ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। তারাও যেন কোথায় ছুটছে। আমি আম্মাকে আবার ডাকলাম, ‘আম্মা! ও আম্মা! আমি যে আর পারতাছি না। একটু থামো!’
আম্মা এবার ধপ করে একটা গাছের গোড়ায় বসে পড়লো। আমি আম্মার কোলে শুয়ে বললাম, ‘আম্মা!’…
কথা শেষ করতে পারলাম না। আম্মা আমায় বুকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো। আমি আর কথা বলতে পারলাম না।
– এভাবে কেটে গেছে কতক্ষণ জানি না। হঠাৎ কারও পায়ের আওয়াজে চমকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি রফিক চাচা সামনে থেকে দৌড়িয়ে আসতেছেন। আমাদের দেখে তিনি বললেন, বনের ওপারে আর্মিরা ধাওয়া করছে। এদিকেই নাকি আসতেছে। এই বলে চাচা দৌড়ে চলে গেলেন।
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, পিছনেও তো আর্মিদের রেখে এলাম। এবার সামনেও। তবে এখন যাবো কোনদিকে?
– আম্মা এবার কি ভেবে বসা থেকে সটান দাঁড়িয়ে গেলো। আবার আমার হাত শক্ত করে ধরে, বাঁয়ের পাহাড়ের দিকে ছুটল।
ঐ পাহাড় নিয়েও যে কতো গল্প শুনেছি! পাহাড়ের চূড়ায় নাকি একটা পুরনো মন্দির আছে। বৌদ্ধরা সেখানে পূজা করে। প্রতি পূর্ণিমাতেই নাকি সেখানে নরবলি দেয়া হয়। নরবলির কথা মনে হতেই আব্বার কথা মনে পড়ে গেলো।
আমি আম্মাকে ডেকে বললাম, ‘আম্মা! আব্বা কি’!… কথা শেষ করার আগেই এক পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম।
– পড়ে গিয়ে পায়ের কিছু অংশ ছুলে গেছে। হাঁটতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কি আর করা! কাউকে বয়ে নিশ্চয় এই বন্ধুর পাহাড়ে চড়া যায় না।
আম্মা আমায় ধরে ধরে আস্তে আস্তে খাড়া ঢাল বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলো। আমিও ধীরে ধীরে আম্মাকে ধরে এগুতে লাগলাম।
– পাহাড়ের চূড়ায় মন্দিরটিকে এই দিনের বেলায়ও কেমন ভূতুড়ে লাগছে। আশপাশে কোন মানুষ নেই। মন্দিরের ভিতরেও কারও সাড়া পেলাম না।
মন্দিরের সামনে কিছু অংশ পাকা রাস্তা। আমি আর আম্মা মন্দির পেরিয়ে পাহাড়ের অপর প্রান্তে চলে এলাম।
পাহাড় পেরিয়ে আবার বন। তারপরেই যে গ্রামটা, ওখানে আমার মামার বাড়ি।
– এবার পাহাড় বেয়ে নিচে নামার পালা। কিন্তু পাহাড়ের এ প্রান্তে এসে নিচে তাকাতেই আঁতকে উঠলাম। আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু। ন্যাড়া মস্তক, সারা গা লাল সালুতে মোড়া। লোকটি আমাদের দেখে বোধ হয় অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো। তার রক্তলাল চোখ দু’টি যেন বলছে, আমাদের সাথে তার হাজার বছরের শত্রুতা।
আমি ভয়ে এইটুকুন হয়ে গেলাম। দেহের সকল শাখা-প্রশাখা যেন বিকল হয়ে গেলো। পা বুঝি মাটিতে নেই। আমি ভেসে ভেসে চলছি। কোনদিকে খেয়াল নেই। দৃষ্টি এক ঐ বৌদ্ধ পুরোহিতের দিকে।
– আম্মা আমাকে তার কাঁধে তুলে ঝড়ের গতিতে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে লাগলো। আস্তে আস্তে সেই পুরোহিত যেন ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেলো। একসময় পাহাড়ের ঢাল শেষ হলো। আম্মা তবু থামল না, দৌড়াতেই লাগলো, দৌড়াতেই লাগলো …
– বনের সীমানা শেষে এক পায়ে চলা রাস্তা। আম্মা বোধ হয় আর পারলো না। রাস্তার ধারে আমাকে কাঁধ থেকে নামিয়ে নিজেও বসে পড়লো। আমার মাথা আর কোন কাজ করছে না। কোনকিছুই ভাবতে পারছি না।
আম্মার নিঃশ্বাসের ফোঁস ফোঁস শব্দের জন্যই বোধ হয় আওয়াজটা শুনতে দেরি হলো। মাটির ওপর শক্ত বুটের ঠক ঠক আওয়াজ। ইতোমধ্যে বেশ কাছে চলে এসেছে।
– আমি আর আম্মা সামনের ধানক্ষেতে গিয়ে লুকোলাম। আর্মিরা আমাদের দেখে ফেলেছে কিনা জানি না। তবে দূর থেকে ভেসে এলো এক ঝাঁক বুলেট বর্ষণের আওয়াজ। জানি না, কাদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে। আমি আর চাপ নিতে পারলাম না; জ্ঞান হারালাম। আম্মা আমাকে তার শিয়রে লুকিয়ে, একা একাই পাকা ধানের মিলনমেলায় নিশ্চুপ প্রহর গুনতে লাগলো।
– যখন জ্ঞান ফিরল, আমি শুয়ে আছি; একটা লম্বা গাছের গোড়ায় হেলান দিয়ে বসে থাকা আম্মার কোলে। আম্মার বাম হাতের একটা অংশ কাপড় দিয়ে পেঁচানো। পরে বুঝলাম, ওখানে গুলি লাগেছে।
আমার সামনে বসে আছেন আমার মামা। আমি চোখ খুলতেই একটা পাত্রে পানি নিয়ে মামা আমার মুখের সামনে তুলে ধরলেন।
পাত্রটি হাতে নিয়ে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলাম, আমরা যেখানে বসে আছি এটা মামাদের গ্রামেরই একটা বাগান। এই বাগানের কাছেই একটা নদী আছে। ঐ নদীর ওপারে নাকি অন্য আরেকটা দেশ।
– আমি তৃপ্তি ভরে পানি পান করলাম। পরমুহূর্তেই অচেনা একজন মামার কাছে এসে কানে কানে কি যেন বলে নদীর দিকে দৌড় দিলেন। মামা আঁতকে উঠে মুহূর্তের মধ্যেই আমায় কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। এবার যথাসম্ভব দ্রুত পা ফেলে নদীর দিকে এগোলেন। পিছে পিছে আম্মাও আসতে লাগলো।
– বাগান থেকে বেরুতেই দেখি শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মামা আমাকে কোল থেকে নামিয়ে একপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। আমাদেরকে এখানেই অপেক্ষা করতে বলে তিনি নদীর দিকে চলে গেলেন। আমি আম্মাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
– গত পরশু বাড়ি থেকে বেরুনোর পর মাঝে পানি ছাড়া পেটে পড়েনি আর কিচ্ছু। ক্লান্ত দুর্বল দেহে আর কতক্ষণই-বা দাঁড়িয়ে থাকা যায়! আম্মা দুই হাঁটু উঁচু করে বালির ওপরই বসে পড়লো। আমিও বসে, আম্মার হাঁটুকে জড়িয়ে ধরে বললাম- ‘আম্মা! আমরা কি আর কখনোই বাড়ি ফিরুম না?’
আম্মা নদীর দিকে তাকিয়ে ছিল। আমার কথায় আম্মার কোন প্রতিক্রিয়াই লক্ষ করলাম না। আম্মা দূরে তাকিয়েই বলল, ‘না রে মা! আমগোর কি আবার কোন বাড়িঘর আছে?’
আমি আরও কিছু বলতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু পেছন থেকে একটা পরিচিত আওয়াজ ভেসে এলো; বুলেটের আওয়াজ। আমাদের চারপাশের লোকগুলো ভয়ে দৌড়াতে লাগলো সামনে নদীর দিকে। আম্মাও আমাকে কোলে তুলে, বুকে আগলে নিয়ে নদীর দিকে দৌড় দিলো। ওদিকে বুলেট বৃষ্টি চলছেই …
– এমন সময় সামনে মাটির নিচে পুঁতে রাখা মাইনের আঘাতে উড়ে গেলো কতক প্রাণ। বিস্ফোরণের আওয়াজে মানুষেরা এবার ডানে বামে ছড়িয়ে পড়লো। কয়েকজন বুলেটের আঘাতে লুটিয়ে পড়লো বালুর ওপরই।
আম্মা হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলো। হয়তো ভাবছিল, এখন কোথায় যাবো? সামনে মাইন, পেছনে গোলাবর্ষণ, ডানে-বামে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কেই-বা দেবে? আমিও আম্মার বুকে লুকিয়ে তাকিয়ে আছি অদৃষ্টের দিকে। ভাবছি, কী অপরাধ আমার? কোন অপরাধে এতকিছু? ঐ যে আম্মা বলতো খেলতে যেও না। তবু খেলতে যেতাম, ওটাই কি অপরাধ? আম্মা বলতো, দুষ্টুমি করো না। তবুও করতাম, ওগুলোই কি অপরাধ? ওগুলোর জন্যই কি বিধাতা আমার ওপর নাখোশ? ওগুলোর জন্যই কি এতকিছু?
– আম্মার হাতের জোর কেমন শিথিল হয়ে আসছে। আম্মা আমায় ফেলে নিজেও বালুর ওপর লুটিয়ে পড়লো। উল্টো হয়ে পেট নিচে দিয়ে মাটির সাথে লেপ্টে আছে আম্মা। আমি আম্মাকে ডাকলাম। হঠাৎ কি হলো? আমায় কোল থেকে নামালে কেন? তুমি জানো না, আমার পায়ে ব্যথা? ওদিকে যে চলছে বুলেট বৃষ্টি। আম্মা ! আম্মা!
লক্ষ করলাম, আম্মার পিঠের কালো বোরখায় তিনটে ফুটো। আম্মাকে জড়িয়ে ধরে আমিও শুয়ে পড়লাম। চিৎকার করে আম্মাকে ডাকলাম। কিন্তু কোন সাড়া নেই। পেছনে তখনও চলছে বুলেট বর্ষণ। একটা এসে লাগলো এবার আমার বাম পায়ে।
– মামা কোত্থেকে এসে আমায় কোলে তুলে নিলেন। জোর করে আম্মার থেকে ছাড়িয়ে নিলেন আমায়। পেছনে ওদের মেশিন চলছেই। কিন্তু আমার ওদিকে কোন খেয়াল নেই। বুলেট বিদ্ধ পায়ের কথাও ভুলে গেলাম। শুধু তাকিয়ে আছি একদৃষ্টে আম্মার নিথর দেহটার দিকে। আর ক্ষীণ স্বরে ডাকছি, ‘আম্মা! আম্মা!’
মামা দৌড়ে একলাফে চড়ে বসলেন নৌকার মাঝে। নৌকা আস্তে আস্তে এগুতে লাগলো। কিন্তু আমি তাকিয়ে আছি আম্মার দিকেই।
– এখনও চলছে বুলেটের ঠাসঠাস শব্দ। তীর থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে আমাদের নৌকা। আম্মার দেহটাও ধীরে ধীরে হয়ে আসছে ঝাপসা। আমি ক্ষীণ স্বরে মনের অজান্তেই ডেকে চলেছি আম্মাকে। আর ভাবছি, ‘না! এসব কিছুই সত্যি নয়। সবই আমার স্বপ্ন মাত্র। একটু পরেই ভেঙে যাবে ঘুম। দেখবো সব ঠিকই আছে। আব্বা-আম্মা, ভাইয়া, সবকিছু। কিন্তু ঘুম কি আসলেই ভাঙবে কখনো?’

Share.

মন্তব্য করুন