বন্ধুরা আজ আমি তোমাদের রকেট সম্পর্কে বলবো। রকেট একটি বিশেষ ধরনের প্রচলন কৌশল। এটি এমন একটি যান সেখানে রাসায়নিক শক্তির দহনের মাধ্যমে সৃষ্ট উৎপাদকগুলোকে প্রবল বেগে যানের নির্গমন পথে বের করে দেয় এবং এর ফলে উৎপন্ন ঘাতবলের কারণে রকেট বিপরীত দিকে প্রবল বেগে অগ্রসর হয়। এক্ষেত্রে নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র ব্যবহৃত হয়।
বিশে^ অনেক ধরনের রকেট উদ্ভাবিত হয়েছে। এটি ছোট্ট বোতল আকৃতি থেকে শুরু করে বৃহৎ আকৃতির মহাকাশ যানের মতো হতে পারে। এর মধ্যে এরিয়েন ৫ হচ্ছে অন্যতম বৃহৎ আকৃতির রকেট যা দিয়ে কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ করা হয়।
অসম্ভব মেধাবী জার্মান বিজ্ঞানী বার্নার কন ব্রাউন সর্বপ্রথম তরল-জ্বালানি ব্যবহার উপযোগী রকেট আবিষ্কার করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির পক্ষে কাজ করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হন। সেখানেই তিনি আমেরিকার মহাকাশ প্রকল্পে কাজ করেন ও চাঁদে নভোচারী প্রেরণে সহায়তা করেন। তাকে রকেট বিজ্ঞানের জনক নামে অভিহিত করা হয়।
রকেট ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের মধ্যে অনেক কিছু রয়েছে। পেলোড, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, মহাশূন্যচারী, নিয়ন্ত্রণ ও দিকনির্ধারণ ব্যবস্থা। এ ছাড়াও পেলোড-২, ফাস্ট স্টেজ, সেকেন্ট স্টেজ, বুস্টার, নজেল, প্রধান ইঞ্জিন অন্যতম।
রকেট ইঞ্জিন গতানুগতিক ব্যবহারসিদ্ধ ইঞ্জিনের মতো নয়। সাধারণ ইঞ্জিন জ্বালানিগুলোকে উত্তপ্ত করে যা পরে কিছু পিস্টনকে ধাক্কা দেয় এবং পরবর্তীতে তা ঢিলে হয়ে যায়। কাজেই কোনো গাড়ি বা চাকা যুক্ত যানের চাকা ঘুরানোর জন্য ইঞ্জিন পটাবৃত্ত শক্তি ব্যবহার করে। বৈদ্যুতিক মোটরগুলোতেও এই পটাবৃত্ত শক্তি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একটি রকেট ইঞ্জিন চলার জন্য কখনো পটাবৃত্ত শক্তি ব্যবহার করে না।
রকেটের ইঞ্জিনগুলো হল রি-অ্যাকশন ইঞ্জিন। রকেটের নীতি এরকম যে, জ্বালানিটুকু রকেটের মধ্যে থাকে সেটুকু একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় এবং পেছন দিয়ে বেরিয়ে আসে। এই বিক্রিয়ার কারণেই রকেট সামনের দিকে এগিয়ে চলে।
এটি স্যার আইজ্যাক নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রের একটি চমৎকার উদাহরণ। রকেটের সামনে যাবার এই ধাক্কার জন্য দুই ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করে। কঠিন জ্বালানি অথবা তরল জ্বালানি।
কঠিন জ্বালানি ব্যবহৃত রকেটই ইতিহাসের সর্বপ্রথম রকেট। এই রকেট প্রথম প্রাচীন চীনাদের দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছে এবং তখন পর্যন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে।
যেসব রাসায়নিক পদার্থ রকেটের কঠিন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঠিক সেরকম কিছু পদার্থ বারুদ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। তবে রকেট আর বারুদের রাসায়নিক গঠন এক নয়।
তরল পদার্থের জ্বালানি ব্যবহৃত রকেট প্রথম Robert goddard ১৯২৬ সালে প্রথম আবিষ্কার করেন। এ ধরনের রকেটের নকশা উপলব্ধি করা মোটামুটি সহজ।
Goddard প্রথম রকেট তৈরির সময় পেট্রল এবং তরল অক্সিজেন ব্যবহার করেছিলেন যা Cord us tion chomber এ পাম্প করা হয়। এর ফলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তার জন্য রকেট সামনে চলতে শুরু করে।
রকেটের বডি বা দেহ তেমন কোনো প্রভাবশালী জিনিস নয়। রকেটের দেহের কাজ হলো জ্বালানি ধারণ করা। আবার মাঝে মধ্যে এটি একটি কাঁপা সিলিন্ডার হিসেবেও কাজ করে। কারণ এটি বায়ুর সঙ্গে যোগাযোগকৃত পৃষ্ঠীয় দেশকে হ্রাস করে।
রকেটের দৈর্ঘ্য বলে দেয় যে রকেটটি কী রকম কাজ করবে। রকেটের দেহ যত বড় হবে সেটি তত বেশি পৃষ্ঠীয়দেশ সৃষ্টি করবে। এর ফলে পৃষ্ঠীয় দেশ বড় হবে যার ফলে এটি সোজা পথে উড়বে। এ কারণেই অনেক রকেটে পাখা ব্যবহার করা হয় পৃষ্ঠীয়দেশ বাড়াবার জন্য এবং রকেটের পশ্চাৎভাগ স্থির রাখার জন্য।
রকেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নোজ কোন। নোজ কোন দেখলেই বোঝা যায় যে এটি বায়ুম-ল জোর করে ভেদ করার জন্য তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ নোজ কোনই বায়ুর গতিবেগ অনুযায়ী বন্দুকের বুলেটের নকল নকশার মতো হয়ে থাকে। কোনো রকেট কতো দ্রুত বায়ুম-ল ছেদ করবে তা নির্ভর করে নোজ কোনের ওপর।
রকেটের সুপারসনিক গতির জন্য নোজ কোন হতে হবে শঙ্কু আকৃতি বিশিষ্ট। কেননা এটা খুব সহজে বায়ুম-ল ছেদ করতে পারে কোনো বাধা ছাড়াই। কিন্তু সাবসনিক গতির জন্য দরকার গম্বুজাকৃতির নোজ কোন। কেননা এটা সামান্য প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করে কারণ এর পৃষ্ঠীয় দেশ বেশি বড় নয়।
রকেট সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা তো তোমরা পেয়েই গেলে। তোমাদের কি রকেটে চড়তে ইচ্ছা করছে! আমার তো ভীষণ ইচ্ছে করছে। রকেটে চড়ে বিভিন্ন গ্রহে ঘুরবো আর সেখান থেকে নানা রকম তথ্য এনে দেবো তোমাদের! কত মজাই না হতো। তাই না….
Share.