দরোজায় হঠাৎ ডাকপিয়নের উপস্থিতি। চাররঙা প্যাকেটটা হাতে নিয়ে অবাক হলো জাওহার। ওপরে সুন্দর করে তার নাম লেখা। এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে বারবার দেখল সে। সুন্দর অক্ষরে নিজের নাম দেখতে কার না ভালো লাগে। চোখে-মুখে তার ভীষণ কৌতূহল। প্রেরকের নামটা চেনা চেনা লাগলেও ঠিকানাটা খুব পরিচিত নয়। ভেতরটা পরখ করল অবশেষে। দু’টি বই। একটি ডায়েরি। ছয়টি রঙিন কলম। ছোট্ট একটি চিঠি। চিঠিতে লেখা আছে-
“জাওহার!
আসসালামু আলাইকুম। আমার কথা তোমার মনে আছে কি-না, জানি না। তোমার চমৎকার উপহার আমি সযতনে রেখে দিয়েছি। আজ তোমার জন্য সামান্য ভালোবাসা পাঠালাম। মহানবী (সা) বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরকে উপহার দাও। তাহলে দু’জনের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হবে।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ) এ ভালোবাসা বহমান থাকুক। জান্নাত পর্যন্ত।
-আহমদ তারিক।”
উফ! এতক্ষণে তার ভাবনার জট খুলল। এ যে তারিক মামা। ছোট মামার বন্ধু। এক বছর আগে বেড়াতে এসেছিলেন মামার সাথে। তখন জাওহার তাকে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা একটি ক্যালিগ্রাফি উপহার দিয়েছিল। তার নিজ হাতে আঁকা। কিন্তু এতদিন পরও তাকে ভুলতে পারেননি তিনি! সত্যিই তিনি অনেক ভালো মানুষ। তারিক মামার ভালোবাসায় হৃদয়টা উথলে উঠল তার। ঢেউতোলা নদীর মতো। মহানবীর কথাই তো ঠিক! উপহার দাও, ভালোবাসো!
এ উপহার জাওহারকে ভাবতে শেখাল নতুন করে। কতজনই তো কত উপহার দিয়েছে তাকে। কিন্তু তাদের কাউকে উপহার দেয়ার কথা মনেও হয়নি তার। আহা! নিজেকে আজ স্বার্থপরই মনে হচ্ছে।
না, টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে হলেও সে মহানবীর শেখানো উপহার-সংস্কৃতিকে নিজের মধ্যে ধারণ করবে। এর মাধ্যমে মনের গহিনে ভালোবাসার যে ফুল ফোটে, তার তুলনা কোথায়?
আবু মিনহাল