খাবারের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কী সেটা যদি জানতে চাওয়া হয় তবে বেশির ভাগ উত্তরই হবে চকোলেট। শুধু শিশু-কিশোর নয়, কিছু ক্ষেত্রে অনেক বড়দেরও পছন্দের খাবার চকোলেট। এমন মজার একটি খাবার কেউ পছন্দ না করে পারে! চলো, বন্ধুরা আজ তোমাদের এই খাবার সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য জেনে নেই।
তোমাদের মনে প্রথমেই যে চিন্তা আসতে পারে তা হলো চকোলেট খেতে এত মজা লাগে কেন? অনেকেই বলবে হয়ত এমনিতেই মজা লাগে। কিন্তু আসল কারণটা চকোলেট বানানোর মধ্যেই নিহিত।
চকোলেট বানাতে বেশ কিছু উপাদান মেশানো হয় যা চকোলেটকে স্বাদে, গন্ধে মজাদার করে আর একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছা করে।
চকোলেট সাধারণত চিনি, থিওব্রোমিন, ট্রিপটোফেন, ফিনেথাইলামিন ও ক্যাফেইন বিভিন্ন পরিমাণে মেশানো থাকে। তাই চকোলেট এত মজার।
সারা বিশে^ চকোলেট কোম্পানিগুলো নানান স্বাদের চকোলেট বানায়। তার মধ্যে মিল্ক চকোলেটই সবার বেশি প্রিয়। এছাড়া ডার্ক চকোলেট, হোয়াইট চকোলেট অনেকে পছন্দ করে। মিল্ক চকোলেটে দুধ থাকে বুঝতেই পারছ।
আমেরিকায় চকোলেটে শতকরা ১০ ভাগ লিকার থাকতে হয়। আর ইংল্যান্ডে মিল্ক চকোলেটে কমপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ সলিড কাকাউ থাকতে হবে। অন্য দিকে ডার্ক চকোলেটের লিকার এবং ইংল্যান্ডে ৩৫ ভাগ সলিড কাকাউ থাকতে হবে।
আবার চকোলেটের স্বাদ আরো আকর্ষণীয় করার জন্য চকোলেট মিন্ট, কমলা বা স্ট্রবেরির স্বাদ যোগ করা হয়। এ ছাড়া মাঝে মাঝে বাদাম, ফল, ক্যারামেল এমনকি মচমচে দানাশস্যও ব্যবহার করা হয়।
চকোলেট মূলত তৈরি হয় কাকাউ নামক গাছের বীজ থেকে। ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন আজটেকস জাতি কাকাউ গাছকে গভীরভাবে ভক্তি করতো এবং বীজ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করতো। তারা এ গাছকে ক্ষমতা ও সম্পদের উৎস বলে মনে করত।
এরপর আজটেক জাতি আবিষ্কার করল যে কাকাউ বীজ গুঁড়ো করে তার সঙ্গে মসলা মিশিয়ে চমৎকার সতেজকারী ও সুস্বাদু পানীয় বানানো যায়। তবে এ পানীয় বর্তমান সময়ের চকোলেটের তুলনায় অনেক বেশি তিতা স্বাদের ছিল।
১৬ শ’ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ান পর্যটকরা দেশ ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় এ পানীয় সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং এর সঙ্গে মিষ্টি সুগন্ধ মিশিয়ে পান করতে থাকেন। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পৃথিবীতে প্রথম চকোলেটের প্রচলন শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার একশত বছর আগে। তখন থেকেই কাকাউ পানীয় ব্যয়বহুল বিলাসী খাবারের মর্যাদা পায়।
১৮০০ সালের দিকে ছাঁচ পদ্ধতিতে বানানো কঠিন চকোলেট খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়। সে সময় চূর্ণন যন্ত্রের সাহায্যে কাকাউ বীজ গুঁড়ো করে তাপে গলানো হতো। তারপর তা ঢালা হতো বিভিন্ন প্রকার ছাঁচে। তরল কাকাউ ঠা-া হয়ে শক্ত হলে তা পেতো ছাঁচের আকার।
খেয়াল করে দেখবেন অনেক চকোলেট বেশ চকচকে। কেমন যেনো একটা মসৃণ ভাব। ১৮৮০ সালের দিকে সুইজারল্যান্ডের রুডলফ লিন্ড চকোলেটকে নরম ও চকচকে করার জন্য একটু বেশি মাত্রায় চকোলেট মাখন মেশানো শুরু করে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত আছে এবং চকোলেট তাই চকচকে ও নরম।
সে সময় থেকেই চকোলেট মাখনকে ৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় গলানো হয়। যা আমাদের শরীরেরই তাপমাত্রার সমান। তাইতো আমাদের মুখের মধ্যে সহজেই চকোলেট গলে যায়। রুডলকের আবিষ্কৃত চকোলেটই ছিল প্রথম মজাদার চকোলেট।
এত মজার চকোলেট একটু নিয়ম মেনে না খেলে আমাদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। চকোলেট বেশি বেশি খেলে দাঁত পরিষ্কার না করলে নানা রকম জীবাণু আমাদের মুখে ও দাঁতে বাসা বাঁধে। এই জীবাণু আমাদের দাঁতকে নানাভাবে ক্ষতি করে। তাই চকোলেট খেয়ে দাঁত অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
Share.