ক’মাস পরেই বর্ষাকাল। বৃষ্টির পানিতে কাঠবিড়ালির খড়ের বাসা ভিজে একাকার হয়ে যাবে। বাসায় থাকা যাবে না এক রাতও। কাঠবিড়ালির কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। নতুন বাসার সন্ধানে বের হয়েছে কয়েকবার। মেলেনি।
আজ মাস্টারদের বাগানের পেয়ারা খেতে খেতে কাঠঠোকরার কথা মনে পড়লো কাঠবিড়ালির।
কাঠবিড়ালি বললো কাঠঠোকরাকে-
বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়ে
বাসার ভেতর টুপ
স্যাঁতসেঁতে আর
ভেজা বাসায়-
যায় কি থাকা চুপ?
গাছ খোঁড়লে বাসা হলে
বর্ষাকালে সুখ,
দাও যদি ভাই একটি বাসা
ঘুচবে মনের দুখ।

সব শুনে কাঠঠোকরা বললো, তোমার কষ্টের কথা শুনে আমারও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কি করবো বলো, আমার তৈরি সবগুলো খোঁড়লই ছিলো গাছের শুকনো ডালে। লাকড়ির জন্য মানুষেরা ডাল ভেঙে নিয়ে গেছে। এখন একটি মাত্র খোঁড়ল আছে, সেটা আমি তোমায় দিতে পারবো না।
কাঠবিড়ালি অনুরোধের সুরে বললো, কেন দিতে পারবে না দোস্ত? তোমার না ডাবের পানি খেতে বেশ ভালো লাগে?
ডাবের পানির নাম শুনে কাঠঠোকরার জিবে পানি এসে গেলো।
খানিকটা সুর পাল্টে বললো, ওই খোঁড়লে কাঠশালিক দুটো বাচ্চা দিয়েছে। ওদের পালক গজালে সামনের মাসে ওরা নতুন বাসায় চলে যাবে। তুমি যদি অপেক্ষা করতে পারো তাহলে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।
কাঠঠোকরার কথায় স্বস্তি পেলো কাঠবিড়ালি। অবশেষে বাসার সন্ধান মিললো। এখন আর বর্ষা নিয়ে ভাবতে হবে না। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই বাসাটা পাওয়া যাবে। পর্যাপ্ত পরিমাণের খাবার মজুদ করা যাবে খোঁড়লে। বর্ষাকালে প্রতিদিন খাবারের খোঁজে বের হওয়া যায় না।
কাঠঠোকরা কাঠবিড়ালিকে কাঠশালিকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। বন্ধুত্ব করে নিলো একে অপরের সঙ্গে। কাঠবিড়ালি ডাবের পানি খেতে দাওয়াত দিলো দুই বন্ধুকে।
মাস্টার বাড়ির চারপাশে অনেকগুলো নারিকেল গাছ। এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে চলে কাঠবিড়ালি। আজ সে একা নয়। দুই বন্ধুও এসেছে কাঠবিড়ালির সঙ্গী হয়ে।
কাঠবিড়ালি ভালো আর কচি দেখে দেখে কিছু ডাব ফুটো করে দিলো। কাঠঠোকরা আর কাঠশালিক কচি ডাবের ফুটোয় ঠোঁট ঢুকিয়ে মনের আনন্দে পানি খেতে লাগলো। একটু খেয়েই কাঠশালিকের পেট ভরে গেলো। সে আর খেলো না। উড়ে কড়ই গাছের উঁচু ডালে গিয়ে বসলো। যেতে যেতে কাঠঠোকরাকে তাগিদ দিয়ে গেলো তাড়াতাড়ি ফিরতে।
কাঠঠোকরা খাচ্ছে তো খাচ্ছে। কোনো দিকে খেয়াল নেই তার। শুধু পানি খেয়ে সে তৃপ্ত নয়, সঙ্গে কচি ডাবের ভেতরের নরম নারকেলও যে তার চাই।
খানিকটা লোভ করলো কাঠঠোকরা। আর এতেই বিপদে পড়ে গেলো সে। ডাবের ফুটোয় যেই না পুরো মাথাটা ঢুকালো আর বের করতে পারলো না। বেশ কিছুক্ষণ ডানা ঝাপটালো। কোনো কাজ হলো না। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো কাঠঠোকরা।
এদিকে কাঠবিড়ালিও বেশ দূরে চলে গেলো।
এমন সময় কাঠঠোকরার ডানা ঝাপটানি আর ছটফটানির শব্দ পেয়ে গুলতি হাতে ছুটে এলো দুষ্টু ছেলে শায়ান। তারপর বন্দুক হাতে বের হলেন মাস্টার সাহেব।
কড়ই গাছের উঁচু ডাল থেকে সবই দেখলো কাঠশালিক। মুহূর্তে উড়ে গিয়ে কাঠবিড়ালিকে কাঠঠোকরার বিপদের কথা জানালে কাঠবিড়ালি ছুটে এলো।
কাঠঠোকরা তখনো ছটফট করছিলো। কাঠবিড়ালি তার শক্ত দাঁত দিয়ে ফুটোটা আরো খানিকটা বড় করতেই মাথা বেরিয়ে এলো কাঠঠোকরার।
গুলতি আর বন্দুকের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে গেলো কাঠঠোকরা।
কাঠশালিক বললো, দেখো কাঠবিড়ালি, অন্যের গাছে আমাদের নিয়ে যাওয়া তোমার ঠিক হয়নি। তুমি ও বাড়ির অনেকগুলো নারিকেল নষ্ট করেছো। আর কাঠঠোকরাও নিজেকে সংযত রাখতে পারেনি। লোভ করেছে। তার লোভের কারণে আজ আমাদের সবার প্রাণ যেতে পারতো।
কাঠবিড়ালি আর কাঠঠোকরা মাথা নিচু করে থাকলে কাঠশালিক আবার বললো- আর সবচেয়ে বড় অপরাধ হয়েছে আমার। আমি সবকিছু জেনেশুনেও কেন তোমাদের বাধা দিলাম না।
তিন বন্ধু তাদের নিজেদের ভুলগুলো মেনে নিয়ে অনুতপ্ত হলো। আর কোনোদিন ওরা লোভ করেনি।

 

Share.

মন্তব্য করুন