জিলহজ মাসের চাঁদ উঠেছে। এই মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা, পবিত্র কোরবানির ঈদ। সাকিবের মনে যেন আনন্দ আর ধরে না। ও এখন থেকেই দিন গোনা শুরু করেছে। এবার ঈদে খুব মজা করবে। ছোট মামা আসবেন ঈদ করতে ওদের সাথে। ছোট মামাকে নিয়ে ও আব্বুর সাথে হাটে যাবে গরু কিনতে। বন্ধুদের আগে থেকেই এসব কথা বলে রেখেছে।
সাকিব অপেক্ষায় আছে আব্বু কবে হাটে যাবেন গরু কিনতে। সেদিন ও বন্ধুদের কাউকে সাথে নেবে। এবার ঈদে ছোটমামা আসছে ওদের সাথে ঈদ করতে। তাই সাকিব আনন্দে আটখানা। ও ফোনে মামাকে জানিয়েছে একটু আগে চলে আসতে; যাতে গরু কিনতে হাটে যেতে মামাকে সঙ্গে নেয়া যায়। ভাবতে ভাবতেই ছোট মামা এসে হাজির হলেন। বাড়িময় আনন্দের সাড়া পড়ে গেল। সাকিব ও বোন সাদিকা ছোট মামাকে নিয়ে খুব মাতামাতি করতে লাগল। এবার গরু কেনার পালা।
এনামুল কবীর সাহেব সকাল থেকেই হাটে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাকিবের ছোট মামা আরিফ সে প্রস্তুতিতে যোগ দিলেন। শ্যালক-দুলাভাইয়ে মিলে মোটামুটি একটা পরিকল্পনা করলেন। হাটে যেতে কাকে-কাকে সাথে নেবেন, গরু এনে কোথায় রাখবেন। কী খাওয়াবেন ইত্যাদি। সাকিব এসে বায়না ধরে বসলো:
: আব্বু! আমি হাটে যাব।
: সে কি; তুমি কেমনে যাবে। অনেক দূরের পথ, তাছাড়া গরু নিয়ে হেঁটেও আসা লাগতে পারে।
: পারবো। আমি মামার সাথে যাবো।
Ñ মামা বললেন, ঠিক আছে যাবে, এখন চুপ করো। ছেলের এত আগ্রহ দেখে কবীর সাহেব শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন। কবীর সাহেব আসরের নামাজের পর পরই হাটে এসে পৌঁছলেন। সিরাজগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় হাট ‘তালগাছি’ উল্লাপাড়া উপজেলা সদর থেকে সাত-আট মাইল দক্ষিণে করতোয়া নদীর তীরে গড়ে উঠেছে এই হাট। যোগাযোগ এখন খুব ভালো। বাসে আসতে আধা ঘণ্টা সময় লাগে। সাকিবরা উপজেলা সদরের বাসিন্দা। সাকিব এর আগে কখনো পশুর হাট দেখেনি। বিচিত্র রঙবেরঙের পশু দেখে অভিভূত হয় ও। গরু ছাগল ভেড়া ছাড়াও উটও এসেছে হাটে। সাকিব বলে, মামা একটা উট কিনলে হয় না। কবীর সাহেব দূর থেকে শুনে স্মিত হাসেন। তিনি ছেলেকে কাছে ডেকে নেন। বলেন, বাবা আজ আমরা উট কিনতে না পারলেও একদিন আমরা ঠিকই উট কিনব কেমন।
: আব্বু একটা উটের দাম কত?
: তা হবে লক্ষাধিক টাকা। শেষ পর্যন্ত সারা হাট ঘুরে সাকিবের পছন্দমতই একটা বাদামি রঙের ষাঁড় কেনা হলো। গরুর মালিক একজন গৃহস্থ খুব যতœ করে পুষেছিলেন। তিনি আমাদের হাতে গরু তুলে দিয়ে বিদায় নিলেন। সাকিবরা একজন শ্রমিক ভাড়া করে নিয়ে গিয়েছিল। তাকে গরু নিয়ে আসার দায়িত্ব দিয়ে ওরা বাসে চাপলো। রাত ১০টা নাগাদ গরু এসে পৌঁছলো। সাকিব আগেই বন্ধুদের খবর দিয়েছে। সবাই এসেছে গরু দেখতে। তাগড়া টকবগে ষাঁড়। খুব ছোটাছুটি করতে চাইছে। কিছুক্ষণ পর পরই হামবা হামবা ডাকছে। বাড়ির ভেতরের আঙিনায় একটা চালাঘরে গরু বেঁধে রাখা হলো। গরু দেখতে দেখতেই মাঝরাত হয়ে এলো। সবই একে একে ঘরে ফিরলো। সাকিবও রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে বাইরে হইচই শুনে সাকিবের ঘুম ভাঙলো। ও দু’চোখ রগড়াতে রগড়াতে বাইরে এসে শুনলো, গরু ছুটে গেছে। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল। ও মামার কাছে এসে বললো এখন কী হবে। খবর পেয়ে ওর বন্ধুরা এসে হাজির। ওরা সাকিবকে আশ্বস্ত করে বলল, ‘চিন্তা করিস না। আমরা এক্ষুনি সবাই খুঁজতে বেরুবো। কোথাও না কোথাও পাওয়া যাবেই।’ দুপুর গড়িয়ে এলো। কোথাও গরু পাওয়া গেল না। সাকিব ও তার বন্ধুরা হতাশ হয়ে ফিরে আসে। আব্বু-আম্মুকে একসঙ্গে চিন্তামগ্ন দেখে এগিয়ে যায় সাকিব।
: কি কোন খোঁজ পেলে?
: না। কোথাও পাওয়া গেল না। এখন কী করবে।
: কি আর করা। সামনে আরো দুটো দিন আছে। একটা হাট পাওয়া যাবে। খাসি একটা কিনে আনতে হবে।
এবার আম্মু আশাবাদের কথা শুনালেন, ‘দেখো গরু ঠিকই পাওয়া যাবে। গরু তার মালিক গৃহস্থের বাড়ি গেছে। পোষা গরু। একটা মায়া আছে না। এমন ঘটনা অনেক ঘটে।’ আম্মুর কথায় সাকিব আশায় বুক বাঁধে। কবীর সাহেব গৃহস্থের বাড়ি লোক পাঠাবার কথা ভাবেন।
হেমন্তের সোনাঝরা বিকেল। মেঘমুক্ত আকাশ। একটু একটু শীত পড়তে শুরু করেছে। সময়টা কাজে লাগাতে সাকিব ছোট মামাকে নিয়ে সারা পাড়া আরও একবার ঘুরে আসে কিন্তু গরুর দেখা মেলে না। এখনই সন্ধ্যা নামবে। সাকিব আম্মুর কাছে গিয়ে বসে। ওদিকে সাদিকা গরু নিয়ে আসার জন্য বায়না ধরেছে। এমন সময় বাড়ির প্রধান ফটকে হামবা ডাক শোনা যায়। সবাই সচকিত হয়ে ওঠে। সাকিব ছুটে যায়। হ্যাঁ। এই তো আমাদের কুরবানির গরু। সবার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক খেলে যায়। গৃহস্থ নিজে এসেছেন গরু ফেরত দিতে। তাহলে আম্মুর কথাই ঠিক হলো। সাকিব বেরিয়ে যায় বন্ধুদের খবর দিতে।

 

Share.

মন্তব্য করুন