সোনালি ডানার কিশোর
ছিবগাতুল্লাহ্ এক.
মাহমুদ। এলাকার খুব পরিচিত একটি নাম। এলাকার এমন কেউ নেই যে তাকে চেনে না। আর তার কারণ তার চরিত্র। সে একদিকে পড়াশোনায় অনেক ভালো। আরেক দিকে খেলাধুলায়ও। আর ও সবসময় সত্য কথা বলে, কারো বিপদ হলে সাহায্য করে, বড়দের সম্মান করে, ছোটদের আদর করে। সে জন্য এলাকার সকলেই ওকে ভালোবাসে।
প্রতিদিনকার মতো আজও মাহমুদ স্কুল থেকে ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার বিকেলে ঘুম থেকে উঠে খেলাধুলা করে। তবে আজ একটা ব্যাপার তাকে খুব চিন্তিত করে তোলে। তার বন্ধু ফয়সাল আজ খেলতে আসেনি। ফয়সাল তো প্রতিদিনই খেলতে আসে আজ হঠাৎ কী হলো যে ও খেলতে এলো না।
তাই মাহমুদ খেলাধুলার পর সকল বন্ধুকে বলল, দেখ, আজকে ফয়সাল খেলতে আসেনি। আমরা জানি ও কোনদিন খেলাধুলা বাদ দেয় না। আজ কী হলো যে ও আসছে না। তাই আমি চিন্তা করলাম যে, ওদের বাড়িতে গেলে কেমন হয়?
ফরিদ বলল, হ্যাঁ, ঠিকই তো। ওতো আমাদের খুব ক্লোজ বন্ধু। তাই ওর সম্পর্কে একটু চিন্তা করা দরকার। তোর সিদ্ধান্ত একেবারে পারফেক্ট।
বায়েজীদও ফরিদকে সমর্থন দিয়ে একই কথা বলল।
তারপর সকলে মিলে মাহমুদের সঙ্গে ফয়সালের বাড়ি গেল। কিন্তু ফয়সালের বাড়ি যেতেই এক ভয়ঙ্কর মুহূর্তের মুখোমুখি হলো। তারা দেখতে পেল ফয়সালের মা আমেনা বেগম খুব কাঁদছেন। সকলে মিলে তাকে ধরে রাখছে। তারা ফয়সালের বাবা আমিন হাসানকে জিজ্ঞাসা করল, চাচা, কী হয়েছে? চাচী কাঁদছেন কেন?
আমিন হাসান বললেন, ফয়সাল এখন পর্যন্ত স্কুল থেকে ফেরেনি। আমরা স্কুলে গিয়ে অনেক খোঁজ করে দেখেছি কিন্তু কোথাও ফয়সালকে পাইনি। তাছাড়া ওর সকল বন্ধুর কাছেও আমরা ফোন করে খোঁজ করেছি। কিন্তু সেখানেও নেই। তারপর আমরা পুলিশের কাছে ইনফর্ম করেছি। পুলিশ এখন ফয়সালকে খুঁজছে। না জানি আমার ফয়সাল এখন কেমন আছে? বলেই কাঁদতে লাগলেন আমিন হাসান।
সকলেই তাকে সান্ত¡না দিয়ে বলল, চাচা, আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা তো আছি, আমরা দেখছি এখন কী করা যায়? বলেই সকলে সেখান থেকে চলে গেল।

দুই.
– আচ্ছা ফয়সালের কী হতে পারে? ও তো কখনো এরকম করে না। তোর কী মনে হয় মাহমুদ? বলল বায়েজীদ।
– আল্লাহ না করুক। তবে আমার মনে কেমন যেন ক্লু ডাকতে শুরু করেছে। আচ্ছা ওকে কোন কিডন্যাপার ধরে নিয়ে যায়নি তো? বলল মাহমুদ।
– আমারও তাই মনে হয়। ওর বাবা আমিন হাসান এত বড়লোক। অনেক সহায়-সম্পত্তি রয়েছে। আবার সম্পত্তির লোভে কেউ তো তার একমাত্র পুত্র ফয়সালকে কিডন্যাপ করতেই পারে। বলল ফরিদ।
– আচ্ছা আমরা তো ওর জন্য কিছু করতেই পারি। বলল মাহমুদ।
– তোর কি মাথা খারাপ! এসব কাজ পুলিশ-সাংবাদিকরা করবে। আমরা এর মধ্যে ঢুকতে গেলে আমাদেরকেও ওরা খতম করে দেবে। বলল বায়েজীদ।
– দেখ আমরা সাবধানে কাজ-কর্ম করবো। আর আমরা যদি কোন ভালো কাজ করি তাহলে আল্লাহ তো সর্বদাই আমাদের সাথে আছেন। আর আমাদের সহযোগিতা করার জন্য রয়েছেন আমার আসিফ মামা। তিনি আমাদের সকল কাজে সহযোগিতা করবেন। তাছাড়া আমাদের বিভিন্ন নিয়মকানুনও শিখিয়ে দেবেন। বিজ্ঞের মতো করে বলতে লাগল মাহমুদ।
– আচ্ছা তোর যা ভালো মনে হয় কর। তবে মনে রাখিস কোন সাহায্য লাগলে কিন্তু আমরা পিছপা হবো না। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বলবি। আমরা তোর সাথে আছি। সকলেই একসুরে বলে উঠল।
– তোদের সাহায্য ছাড়া আমি কি আর একা একা কিছু করতে পারি। তোরা অবশ্যই আমার পাশে থাকবি।
– ঠিক আছে, তা অবশ্যই থাকব। বায়েজীদ ও ফরিদ বলল।
– তাহলে আজকের মতো আসি। এমনিতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। দেরি করলে আব্বু-আম্মু চিন্তা করবে।
– আচ্ছা আসি তাহলে। আবার কালকে দেখা হবে। গুড বাই। বায়েজীদ ও ফরিদ চলে যেতে যেতে বলল।
– গুড বাই।

তিন.
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে হাত মুখ ধুয়ে রুমে গিয়ে ফয়সালের ব্যাপারে অনেক ভাবল মাহমুদ। সে জীবনে অনেক গোয়েন্দা, অ্যাডভেঞ্চারের বই পড়েছে। সেখানে তার মতই কত না কিশোর কত রহস্যের উদ্ঘাটন করেছে। আর মাহমুদ ফয়সালের ব্যাপারে কাজ করবে। এ কথা ভেবেই তার মধ্যে কেমন গোয়েন্দা গোয়েন্দা ভাব সে অনুভব করল। সে অনুভব করল তার মত কিশোরের শরীরেও অনেক সাহস এবং শক্তি রয়েছে। সেও পারে সবকিছু করতে। সব রহস্যের উদ্ঘাটন করতে। তাই সে রাতের খাবার খেয়ে এই রহস্য উদ্ঘাটন করতে তার প্রিয় আসিফ মামাকে ফোন করে আসতে বলে। যে এই রহস্য উদ্ঘাটনে তার সহযোগী হবে।
সকাল হয়ে গেছে, একটু পরেই আসিফ মামা চলে আসবেন। তা ছাড়া আজ শুক্রবার থাকায় মাহমুদের স্কুলও খোলা নেই। তাই সে মামার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।
টিং টং… টিং টং… করে কয়েকবার বেল বাজল। মাহমুদ বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে দরজা খুলল। দরজা খুলে দেখতে পেল তার প্রিয় মানুষ আসিফ মামাকে। মামা ভেতরে এসে সকলকে সালাম দিলেন।
সালাম দিয়ে আসিফ মামা তার বোন আয়েশা খাতুনকে বললেন, আপা কেমন আছেন?
আয়েশা খাতুন বলল, এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোর আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো?
আসিফ মামা বললেন, জি না। আল্লাহর রহমতে কিছুই হয়নি।
আয়েশা খাতুন বললেন, কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এই মাহমুদ তোর মামাকে বসতে দে।
মাহমুদ বলল, ঠিক আছে…
তারপর মাহমুদ তার মামাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। তারপর মামা ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুম দিলেন। ঘুম থেকে ওঠার পরে মাহমুদ তার মামাকে ফয়সালের সম্পর্কে সব ঘটনা বলতে লাগল। মামা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন।
মাহমুদের বলা শেষ হলে মামা বললেন, আচ্ছা তুই এতো নিশ্চিত হলে কেমন করে যে ফয়সালকে কিডন্যাপ করা হয়েছে?
মাহমুদ বলল, আমরা নিশ্চিত কারণ, ফয়সাল এই পাবনার সকল জায়গা চেনে। হারিয়ে গেলে ও একা একা ফিরে আসতে পারত তা ছাড়া ওর বাবা একজন ধনী ব্যবসায়ী। টাকার লোভে হয়ত কেউ কিডন্যাপ করেছে।
মামা বলল, হতেও পারে। আচ্ছা তাহলে আজকের মত আমরা একটু বিশ্রামও নেই আর পরিকল্পনা করতে থাকি। তারপর কাল থেকে আমাদের অভিযান শুরু। বুঝেছিস? আমার পিচ্চি গোয়েন্দা।
মাহমুদ বলল, না মামা, তা হতে পারে না। কিডন্যাপাররা যদি আজকে পালিয়ে যায়। তাহলে আমাদের সবই তো শেষ।
মামা বলল, শোন, কিছুই শেষ না। কারণ ফয়সালের বাবা অবশ্যই পুলিশকে ইনফর্ম করেছে। আর পুলিশও অবশ্যই সকল রাস্তা ব্লক করে দিয়েছে। আর ব্লক যেহেতু করেছে ওদের পালানোর কোন সম্ভাবনা নেই। ইনশাআল্লাহ…
মাহমুদ বলল, ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে কর তাই হবে।

চার.
পরদিন মাহমুদ স্কুলে গিয়ে ফরিদ, বায়েজীদ, সুমন, রাফি এবং ফরহাদকে মামার সব কথা বলল। আর মামার কথা অনুযায়ী আজকে বিকেল ৫টায় মামার সাথে বটগাছতলায় দেখা করতে বলল।
তারপর মামার কথামত সকলেই ৫টার সময় বটগাছতলায় এসে উপস্থিত হলো। তারপর মামা সবাইকে কিছু দিকনির্দেশনা দিল। এ ছাড়া সকলকে একটি ৫০০ টাকা ভরা খাম দিয়ে দিল। এ ছাড়া পকেটে একটি ছুরি কাপড়ে ভাঁজ করে দিল।
তারপর মামা আজকের অভিযান সম্পর্কে বললেন, আজকে আমরা সবাই দুই দলে ভাগ হয়ে যাবো দল ‘এ’ তে থাকবে ফরিদ, বায়েজীদ আর সুমন এবং দল ‘বি’তে থাকবে মাহমুদ, রাফি এবং ফরহাদ। শোন দল ‘এ’ তোমরা শেগুনপাড়ার রাচি রেস্তোরাঁয় গিয়ে শিঙ্গাড়া, বড়া, পরোটা, ফুসকা যা ইচ্ছা খাবে আর এদিকে ওদিকে নজর রাখবে। আমি দুই দলের কাছে দুইটি মোবাইল ফোন দিয়ে দেবো। কোন সন্দেহজনক লোককে দেখলে আমাকে অবশ্যই কল করবে আর আমি কোন মেসেজে কোথাও আসতে বললে আসবে।
আর দল ‘বি’ তোমরা শিরানপুরে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নজর রাখবে। কিন্তু সাবধানে কাজ করো ওই এলাকায় কিন্তু গুন্ডা-মাস্তানরা বেশি থাকে। আর কোন প্রয়োজন কিংবা সমস্যা হলে আমাকে কল করবে আর আমি কোন জায়গায় আসতে বললে আসবে। আর রাত ৮টার সময় আমার সাথে তোমরা দুই দলই এই বটতলায় দেখা করবে। বুঝেছ? আর যদি তোমরা ফয়সালের কোন সন্ধান পাও সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বলবে আমি পুলিশবাহিনী নিয়ে চলে আসবো। আর চিন্তা করো না তোমরা ভালো কাজ করতে যাচ্ছ অবশ্যই আল্লাহই তোমাদের সহযোগিতা করবেন।
তারপর মামার কথামত দুই দল অভিযানে নেমে পড়ল। মামার কথামত প্রথমে দল ‘এ’ রাচি রেস্তোরাঁয় পৌঁছাল। তারপর দল ‘বি’ শিরানপুরে নজর রাখা শুরু করল।

পাঁচ
– এই দেখতো এইটাই কি সেই রাচি রেস্তোরাঁ? সুমন বলল।
– তাই তো মনে হয়। হ্যাঁ, ওই তো রেস্তোরাঁর নাম লেখা সুন্দর করে ‘রাচি মডার্ন রেস্তোরাঁ, শেগুনপাড়া’ বলল ফরিদ।
– আচ্ছা, বায়েজীদ তুই তাহলে তিন প্লেট পরোটার অর্ডার দে। আর আমরা একটু বসে বসে চারদিকে নজর দেই। বলল সুমন।
তারপর বায়েজীদ গিয়ে তিন প্লেট পরোটার অর্ডার দেয়। আর সুমন আর ফরিদ বসে বসে এদিক-ওদিক নজর দিতে লাগল। কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেল কোন সন্দেহজনক লোকের দেখা ওরা পেল না।
আর অন্য দিকে দল ‘বি’ শিরানপুরের বিভিন্ন জায়গায় নজর রাখতে শুরু করল।
– এই মাহমুদ! কই কোন গুন্ডার তো সন্ধান পেলাম না। বলল ফরহাদ।
– আরে পাবি, পাবি একটু ধৈর্য ধর দেখবি সব সমস্যার সমাধান হবে। বলল মাহমুদ।
– সমাধান না ছাই হবে। কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে কিছুই পেলাম না আর ইনি সমাধান পাবেন। বলল রাফি।
– আ… এতো অস্থির হচ্ছিস কেন? (মামার কল এসেছে দেখে) ও…এই তো মামা কল করেছেন দেখি কী বলে? হ্যালো… মামা কী হয়েছে? কোথায় আসতে হবে? বলল মাহমুদ।
– না…না… মানে এমনিই একটু খবর নিতে ফোন করলাম। কোনো ক্লু পেলি?
– আরে না মামা কতক্ষণ ধরে খুঁজছি কোনো ক্লু পেলাম না। (কথা বলতে বলতেই মাহমুদের পাশ কাটিয়ে একটি কালো গাড়ি চলে গেল আর ফোনটা কেটে গেল) আরে… এটাই তো মনে হয় সেই গুন্ডাদের গাড়ি। ওরা মনে হয় ফয়সালকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। হায় আল্লাহ….. সাহায্য কর। বলল মাহমুদ।
– আমি আমার সাইকেলটা নিয়ে ওদের পিছু পিছু যাই। বলল মাহমুদ।
– সাবধানে যাস। আর মোবাইলে সব বলিস। বলল ফরহাদ
তারপর মাহমুদ ওর সাইকেল নিয়ে ওদের পিছু পিছু ধাওয়া করল। ওরা পাবনা শিরানপুরের হামিদ রোড দিয়ে এগোতে লাগল। কিছু দূর যাওয়ার পরই মাহমুদ ওদের একটি জঙ্গলে ঢুকে যেতে দেখল। তখন সে তার আসিফ মামাকে মোবাইলে কল করল।
– আসসালামু আলাইকুম। কী অবস্থা মাহমুদ?
– এই তো মামা ভালো না। ওরা ফয়সালকে শিরানপুরের হামিদ রোডে নিয়ে গেছে মনে হয়।
– আচ্ছা তুই তাহলে চলে আয়। কালকে আমরা আবার ওখানে যাবো।
-ঠিক আছে।

ছয়.
গতকাল মাহমুদ ফয়সালের কিডন্যাপারদের আস্তানা খুঁজে পায়। তাই আজকে ওরা সেখানে যাবে ফয়সালকে উদ্ধার করতে। ফয়সাল ওদের সকল বন্ধুকে জানিয়ে রাখল। এ ছাড়া ওরা সেই জঙ্গলের কিছু দূরে পুলিশদের থাকতে বলবে। কারণ পুলিশ জঙ্গলে প্রথমেই ঢুকে গেলে ওরা ফয়সালকে মেরেও ফেলতে পারে। সকাল ১০ ঘটিকার সময় ওরা জঙ্গলের উদ্দেশে রওয়ানা হলো।
আসিফ মামা সেখানে পৌঁছে মাহমুদকে বলল, এই মাহমুদ তোরা সাবধানে এগোতে থাক আর প্রয়োজন পড়লে আমাকে মেসেজ করবি আমি পুলিশ নিয়ে চলে আসবো।
মাহমুদ বলল, ঠিক আছে।
তারপর মাহমুদ ও তার সাথীরা সবাই একসঙ্গে খুব সাবধানে জঙ্গলের ভেতরে যেতে লাগল। জঙ্গলের ভেতর গিয়ে তারা একটি বিশাল দোতলা বাড়ি দেখতে পেল।
– এই মাহমুদ, এইটা কি সেই গুন্ডাদের বাড়ি নাকি? ফরহাদ বলল।
– তাইতো মনে হয়। ওরা সম্ভবত এই বাড়িতে ফয়সালকে লুকিয়ে রেখেছে। মাহমুদ বলল।
– আচ্ছা চল তাহলে ভেতরে গিয়ে দেখি কি হয়?
তারপর বাড়ির দরজাটি খোলা থাকার কারণে তারা বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। ঢুকে গিয়ে তারা দেখতে পেল বাড়ির ভেতরে অনেক কক্ষ। কিন্তু হঠাৎ তারা কয়েক দল লোকের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল।
পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে মাহমুদ বলল, এই তাড়াতাড়ি লুকিয়ে পড়।
তারপর তারা পাশের একটি রুমে ঢুকে গেল। দরজাটির কাছে একটা খাটের নিচে তারা আশ্রয় নিল। কিছুক্ষণ পর সেই লোকগুলোর কাছে এলো। তারা শুনতে পেল, ‘বস, ছেলেটাকে তাড়াতাড়ি পাচার করে দিতে হবে। নইলে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে কিন্তু অবস্থা খারাপ হবে বলে দিলাম। আর এমনিতে ওর বাবা পুলিশকে বলেছে আর পুলিশও আমাদেরকে খুব খোঁজাখুঁজি করছে।’ তারপর আরেক কণ্ঠ বলল, ‘ঠিক আছে, তাহলে বাচ্চাটাকে আজকেই চালান করে দিতে হবে।’
তারপর মাহমুদ আসিফ মামাকে দ্রুত মোবাইলে কল করল।
– আসসালামু আলাইকুম, মামা আমরা অপহরণকারীদের খুঁজে পেয়েছি। তুমি তাড়াতাড়ি পুলিশ নিয়ে চলে এসো। ওরা আজকেই ফয়সালকে পাচার করে দেবে।
– ঠিক আছে, আমি তাড়াতাড়ি আসছি।
কিন্তু অসাবধানতার কারণে জোরে কথা বলার কারণে ওরা ধরা পড়ে গেল।

সাত.
– এই পিচ্চি আমাদের সাথে চালাকি করো। এখন বোঝো ঠেলা। অন্যের ভালো করতে গিয়ে এখন নিজেরই খারাপ হয়ে গেল। আমরা এখন তোমাদেরকেও পাচার করব। কণ্ঠ-১ বলল।
– ঠিকই তো, অতি চালাকের গলায় দড়ি। তোমাদেরও তাই হলো। হা…হা….হা….. করে বিশ্রিভাবে হেসে উঠল কণ্ঠ-২।
কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। কিছুক্ষণ বাদেই আসিফ মামা পুলিশ বাহিনী নিয়ে চলে এলো। তারপর সকলেই পালাতে লাগল। মাহমুদ একটি লাঠি দিয়ে কয়েকজনকে আচ্ছাভাবে ধোলাই করল। ফলে তারা আর পালাতে পারল না। পুলিশ ভেতরে এসে ওদের গ্রেফতার করল। তারপর ওরা কয়েক কক্ষ খোঁজার পর ফয়সালকে একটি কক্ষে হাত-পা বাঁধা অজ্ঞান অবস্থায় খুঁজে পেল। এরপর পুলিশ বাইরে গিয়ে পালানো কয়েকজন গুন্ডাকে ধাওয়া করল। অনেকক্ষণ ধরে ধাওয়া করার ফলে ওরাও ধরা পড়ে গেল। তারপরে সকলে ফয়সালকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দিয়ে আসিফ মামার সাথে চলে গেল।
পুলিশ ওদের অনেক বাহবা দিয়ে বলল, তোমরা সত্যিই অনেক সাহসী। তোমাদের মতো সোনার টুকরো যে ঘরে আছে সে ঘরে আর কিছুই লাগে না। তোমাদেরকে এই সাহসিকতার জন্য সরকার থেকে পুরস্কৃত করানো হবে। বলেই পুলিশের ওসি সাহেব চলে গেল।

আট.
পুলিশ পরে ওদের ধরে রিমান্ডে নিয়ে জানতে পারল যে, ওদের এই জঘন্য কাজের নির্দেশদাতা হলেন রাফিদ আহ্সান, যিনি ফয়সালের বাবার সাথে আগে একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। কিন্তু একটি কারণে তাদের মধ্যে ঝগড়া-ঝামেলা বাধে। আর ফয়সালের বাবা আমিন হাসান তাকে সকলের সামনে অনেক অপমান করেন। আর রফিদ আহ্সান চাকরি থেকে বরখাস্ত হন আর আমিন হাসানকে কথা দেন তিনি এই অপমানের প্রতিশোধ নেবেন। আর এজন্য ফয়সালের এই অপহরণ। এখন পুলিশ রাফিদ আহ্সান আর তার গুন্ডাদেরকে জেলে ভরেছেন।
আজ ফয়সাল হাসপাতালে। মানসিক অসুস্থ। তাই ওর আত্মীয় স্বজনসহ সকলেই ওকে দেখতে যায়। সাথে আসিফ মামাও যান। মামা গিয়ে ফয়সালের পাশে বসেন।
ফয়সাল বলে, থ্যাংকস ইউ মামা, আপনি না থাকলে হয়ত আমি আর বাঁচতাম না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মামা বললেন, দেখ সবকিছু করেছে এই তোমার বন্ধুরাই, আমি কিছুই করিনি। সুতরাং তাদেরকেই ধন্যবাদ দাও।
তারপর ফয়সাল সকলের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে বাঁচানোর জন্য সকলকে ধন্যবাদ আমার প্রিয় বন্ধুরা। তোমরা না থাকলে আমি এতদিন আর বেঁচেই থাকতাম না।
তারপর মাহমুদ বলল, আমরা তেমন কিছুই করিনি। সকল কাজই পুলিশ চাচারা করেছেন।
তারপর তারা অনেকক্ষণ ধরে গল্প করতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলেন, এখন আর কোনো চিন্তা নেই। ও এখন পুরোপুরি সুস্থ এবং বিপদমুক্ত। তাই আপনারা ওকে নিয়ে যেতে পারেন। আমরা ওকে রিলিজ করে দিলাম।
তারপর মামার সাথে সকলে ফয়সালকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। তারপর বিকেলে সকলে আবার সেই আগের মতো খেলতে যায়। ফয়সালও ঐদিন খেলতে যায়। অনেকদিন পর ফয়সালকে পেয়ে সকলে খুব খুশি হয় আর ওর সাথে মজা করে খেলতে থাকে। আর মামা বসে বসে ওদের খেলা দেখেন আর আকাশে তাকিয়ে ভাবেন, ওদের মত সোনালি ডানার কিশোর যদি এই বাংলাদেশের সকল ঘরেই জন্ম নিতো তাহলে আর বাংলাদেশে এত অশান্তি থাকত না। সম্পূর্ণ দেশ যেন জান্নাতের বাগান হয়ে যেত।

 

Share.

মন্তব্য করুন