জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তার মানে, আর ক’দিন পরেই কুরবানি। কুরবানির ঈদ। চাঁদ দেখার সাথে সাথেই চারদিকে শুরু হয়ে গেছে নানা প্রস্তুতি। আহনাফ তো মহা খুশি। কারণ তাদের কুরবানির গরু ইতোমধ্যেই কেনা হয়ে গেছে। গরুটার গায়ের রং কৃষ্ণচূড়ার মতো টকটকে লাল। দেখতে ভারী সুন্দর!
আহনাফ তার বন্ধুদের সাথে এ নিয়ে গল্প করে। কুরবানির গরুর সাথে তোলা ‘সেলফি’ দেখায় সবাইকে। বন্ধুরা তো অবাক। এত সুন্দর, এত সুঠাম গরু খুব কমই দেখেছে বলে মন্তব্য করে তারা। আপ্লুত হয় আহনাফ। নিজেকে সেরা মনে হয়। তার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক।
হঠাৎ করেই আহনাফ একদিন বিষণ হয়ে পড়ল। আনন্দগুলো কোথাও যেন মিলিয়ে গেছে। মন খারাপ করে বসে আছে একাকী। বাবার চোখে ধরা পড়ল এ দৃশ্য। কাছে এসে বসলেন তিনি। জানতে চাইলেন তার কষ্টের কথা। আহনাফ বলল, এতদিন পর্যন্ত তাদের কুরবানির গরুটাই ছিল সেরা। কিন্তু গতকাল তার বন্ধু আহসানরাও একটা গরু কিনেছে। যেটা তাদেরটার চেয়েও বড় এবং দামি। এ জন্য তার মন খারাপ!
বাবা মুচকি হেসে বললেন, কুরবানি হচ্ছে একটি ইবাদত। আর ইবাদতের সম্পর্ক হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর সাথে। সুতরাং কার পশু কত বড়, কত দামি এ নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। কারণ আল্লাহ এসব পছন্দ করেন না। আল্লাহ দেখেন মানুষের হৃদয়। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, “এগুলোর (কুরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর নিকট পৌঁছে না। তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ : ৩৭) কেউ যদি অন্য কাউকে দেখানোর জন্য কুরবানি করে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তা হবে স্পষ্ট র্শিক। যা ক্ষমার অযোগ্য। তাই কুরবানির পশুর সাথে সেলফি তোলা, বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রচার করা একেবারেই উচিত নয়।
বাবা আরও বললেন, কুরবানির মূল কথাই হচ্ছে তাকওয়া ও ত্যাগ। নবী ইবরাহিম আ. তাঁর শিশুপুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন আল্লাহর নির্দেশেই। আল্লাহর ভালোবাসায়। সুতরাং এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতেই পারে না।
আহনাফ আর মন খারাপ করে বসে থাকল না। কখন তার বন্ধুদেরও বিষয়টা এভাবে বোঝাবে, সেই সুযোগেরই অপেক্ষায় থাকল সে।
আবু মিনহাল